somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচেনা চীনে ১২

১২ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সদাই পাতি ১

কেনাকাটার জন্যে চীনের চেয়ে ভাল জায়গা সম্ভবতঃ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। পশ্চিমারা অবশ্য চীনের এই খ্যাতিটাকে সন্দেহের চোখে দেখে। বিদেশি একটি ওয়েব সাইট শেঞ্ঝেনের সবচে বড় ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেট এসইজি সম্পর্কে লিখেছে ‘এখানে ১০০ ডলারের আইপড ১০ ডলারেও পাওয়া যায় তবে কেনার আগে বুঝে নিতে হবে জিনিষটি কাজ করে কী না কারণ চীনের এদিকটায় ঠগ বাটপাড়ের অভাব নেই।’ শুধু পশ্চিমে নয় এশিয়ার অনেক দেশেও চৈনিকরা ঠগ হিসাবে পরিচিত। কায়ালালামপুরে এক চীনা ক্যাব ড্রাইভার পেট্রোনাস টাওয়ারে যাবো শুনে প্রায় ৩০ মিনিট গাড়ি চড়িয়ে ৩০ রিঙ্গিত বিল নিয়ে চলে যাবার পর বুঝতে পারলাম আমরা পেট্রোনাস টাওয়ারের পাশ থেকেই ট্যাক্সিতে উঠেছিলাম। আমার পরিচত এক বাংলাদেশি শুনে বললেন “বুঝে শুনে ট্যাক্সিতে চড়বেন না! চীনাদের মত ঠগ আর জোচ্চর পৃথিবীতে আর আছে নাকি?’ তাকে আর বললাম না দুবাইতে এক ভারতীয় ট্যক্সিওয়ালা আমার সাথে আরও বড় জোচ্চুরি করেছিল। সিটি সেন্টারের যাবার জন্যে ট্যাক্সিতে ঊঠেছিলাম সিটি সেন্টারের কাছ থেকেই। তার কল্যাণে প্রায় পুরো দুবাই ঘুরতে হয়েছিল ট্যাক্সিতে, খুচরা ফেরত দেয়ার সময় ১০০টাকার নোটের বদলে ১০টাকা ধরিয়ে দিয়ে ছিল। আমি তাড়াহুড়োয় বুঝতে পারিনি।
চীনে আসার পর আমার মনে হয়েছে বিদেশে যাই করুক চীনারা চীনে সজ্জন। সমস্যা হয় ভাষার কারনে। এখানে ১০ ডলারে আইপড বিকোয় ঠিকই, তবে ১০০ ডলারেরটি নয়। চীনারা শুধু যে প্রযুক্তিতে এগিয়েছে তাই নয়, বিভিন্ন ধরণের ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা মাথায় রেখে পণ্য প্রস্তুতের টেকনিকটাও তারা আয়ত্তব করেছে। বাজার দখলের জন্যে একই পণ্যের বিভিন্ন রকম ভার্সন তারা বাজারে ছাড়ে। বাংলাদেশেই চীনের আইফোন বক্রি হতে দেখেছি মাত্র ৫০০০ টাকায়। তাও এক বছরের ওয়ারেন্টি সহ। কেঊ যদি মনে করেন তিনি এই ফোন দিয়ে জীবন কাটিয়ে দেবেন সেটি হবে তার কল্পনার সীমাব্দধতা। এক বছরের পর তার ওই ফোন কট কটির দোকানে বিকোবে কী না তা নিয়েও সন্দেহ আছে।চীনকে সস্তার দেশ মনে করে অনেকেই এই ভুলটা করে।চীনে সস্তার দোকান যেমন আছে দামী জিনিষের দোকানেরও অভাব নেই। কেনা কাটা খুবই আনন্দদায়ক এবং লাভ জনক হয় যদি আপনার প্রয়োজনটা দোকানিকে বোঝাতে পারেন। আমার মত ভাষাকানা মানুষের জন্যে সেটা ছিল প্রায় অসম্ভব।

বিকেলে রোদ কমে এলে প্রায় প্রতিদিনই আমি হাটতে বেরুতাম। স্বাস্থ্য সচেতন বলে নয়্‌, লোঙ্গাগের অলি গলি চেনা আর সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা বোঝার আশায়। চাকচিক্যহীন কমদামী দোকান থেকে কেনা কাটার ইচ্ছাটাও এক্ষেত্রে অনুঘটক হিসাবে কাজ করত। পথের ধারে অবিন্যস্ত দোকানের সারি, ফুটপাতে নিজের খামারের সবজি,ফল মূলের পসরা সাজিয়ে বসা সাদা সিধে দোকানি, ঠেলা গাড়ি কিম্বা ভ্যনের মধ্যে খাবার স্টল চীনে খুব অপরিচত দৃশ্য নয়।এসব জায়গায় ঘুরে ঘুরে হাটুরে মানুষ দেখা আর তাদের সুখ দুঃখ বোঝার বাতিক আমার অনেক পুরনো। আমি নতুন কোথাও গেলে সবচে আগে চেনার চেষ্টা করি মানুষ। আমার ধারনা মানুষকে পরিপূর্ণ ভাবে বুঝতে গেলে ভাষার দরকার হয় বটে তবে সাধারণ মানুষের আনন্দ, বেদনা বোঝার জন্যে দরকার হয় অনুভূতির। হোটেলের কাছেই একটা কাঁচা বাজার আছে। সেখানে বিভিন্ন টাটকা শাক সবজি, আর ফলের ঝুড়ি নিয়ে বসে সম্ভবত গ্রামের মানুষ। তাদের বেশ ভূষা নিত্যদিনের চেনা মানুষদের চেয়ে আলাদা। ফূটপাতে দড়ি অথবা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে বিক্রি হয় মেয়েদের টপস স্কারট সহ হাতে তৈরি পোষাক আশাক। ওভারব্রিজের উপরে ঘড়ি থেকে শুরু করে নানা রকম খেলনাপাতি। ফুটপাতেও চাদর বিছিয়ে বসে কেঊ কেউ। বেশির ভাগ রাতেই সে সব জায়গায় বিজলী বাতি থাকে না। দোকানিরা বসে চারজার লাইট জবালিয়ে। রাস্তার প্রসস্ততা বেশি আর জন ঘনত্ব কম হওয়ায় অসহনীয় মনে হয় না ভীড় ভাট্টা। তবে আমার শুধু দেখে যাওয়ায় হত সার। যাবার সময় ছোট মেয়ে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছিল হাতে। আমার হাত ব্যগেই সেটা থেকে যাচ্ছিল অমলিন।কেনা কাটায় পছন্দের পরেই আসে দাম। বড় শপিং মলে দাম জানতে কষ্ট করার দরকার হয়না এমনকি চীনের ফুটপাতের ঝুড়িতেও অনেক সময় প্রাইস ট্যাগ থাকে, তবে শেঞ্ঝেনের এই দিকটায় দরাদরি করার অনেক সুযোগ আছে। বলা যায় এক দামে বিকোয় না কিছুই।অন্যান্য দেশে ইংরেজি জানুক আর না জানুক দাম কত জিজ্ঞাসা করলে ইংরেজিতে সংখ্যাটা বলে। চীনে প্রথমে নির্বাক তাকিয়ে বাক, তার পর আশে পাশের মানুষ ডেকে আনে এর পর দুই বা ততোধিক চীনা নিজেদের মধ্যে কথা বলেতে থাকে বিদেশি ক্রেতা হয়ে যায় দর্শক। দুয়েক জন ইংরেজির সাথে হাত পা মিলিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে বটে সংখ্যা বলার সময় তাল গোল পাকিয়ে ফেলে। পৃথিবীর তাবৎ শব্দের প্রতিশব্দ আছে চীনা ভাষায়। আমার কাছে মনে হয়েছে চীনাদের সাথে যোগাযগের সেটিই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। বিদেশি শব্দের প্রয়োজন হয়না বলেই ভিনদেশিদের সাথে তাদের যোগাযোগও কম।অনেকে অবশ্য বলেন চীনারা ইচ্ছা করে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে বলেই চীনা সংস্কৃতি কিম্বা আচার আচরন এখনও নিষ্কলুষ রয়েছে।যে যাই বলুক চীন সরকার এখন ইংরেজির মাহত্য বুঝতে পেরেছে। স্কুলে পাঠ্যভুক্ত হয়েছে ইংরেজি। বানিজ্য কেন্দ্র গুলিতেও ইংরেজি জানা লোকের কদর বেড়েছে।

একদিন ভেনকে বলে আগেই চলে এসেছিলাম হোটেলে, আসলে ডাইজেষ্টার খোলা জোড়া করতে করতে একঘেয়েমিতে পায়ে বসেছিল। কিন্ত হোটেল রুমে পৌছাতে না পৌছাতেই কারেন্ট চলে গেল। কারেন্ট না থাকলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে থাকার মত বিড়ম্বনা আর নেই। সকালে অনেক জ্ঞান দিয়েছে ভেন। চীন এখন বিদ্যুতে স্বয়ং সম্পূর্ণ। বাংলাদেশের মত আর যে সব দেশে বিদ্যুৎ সমস্যা প্রকট তাদের জন্যেই পুক্সিন কোম্পানী তৈরি করছে বায়োডাইজেষ্টার। চীনে এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাট নেই বললেই চলে।তার পরে ঘরে ফিরেই গরমে দম আটকে আসার জোগাড়। রিসেপশনে ফোন দিয়ে লাভ নেই জেনেও ফোন করলাম। তারা যথারিতী আমার কথার উত্তর দিতে গলদঘর্ম হয়ে গেল ইংরেজি জড়তার কারনে। সব রাগ গিয়ে পড়লো ভেনের উপর। তাকে ফোন করে দুরবস্থার কথা জানালাম। ভেন কিছুক্ষণ পর জানালো, এটি তেমন কিছু নয় পিংডি ষ্ট্রীটের লাইনে আজকে মেইন্টেনেন্স হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর কারেন্ট চলে আসবে। আরও আধা ঘণ্টা রুমে সিদ্ধ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম রুম থেকে। লিফটও বন্ধ কাজেই নামতে হল সিড়ি দিয়ে।

হোটেলের কাছে হকারস মার্কেটের মত একটা মারকেট আছে ফুটপাতে। ফুটপাত ঠিক নয়, দুই সারি দালানের মাঝখানে এক ফালি লম্বা মাঠের মত একটি জায়গায় পাশাপাশি প্রায় পচিশটি চালাঘর। সেখানে পশরা সাজিয়ে বসে জনা পচিশেক দোকানি। চুলের ফিতে, মানিব্যাগ থেকে শুরু করে জুতা, জামা খাতা পেন্সিল সবই পাওয়া যায় এখানে। দিনের বেলায় দোকান গুলি প্রায় ফাঁকা থাকে। ভীড় বাড়তে থাকে বিকেলে। এখানে একটি জুতো পছন্দ হয়ে গেল। সব জুতোর প্রাইস ট্যাগ আছে শুধু ওই জুতোরই গা খালি। মানে প্রাইস ট্যাগ নেই।অনেক রকম চেষ্টা করেও যখন দাম জানতে পারলাম না। দোকানের ক্যাল্কুলেতার নিয়ে ইশারায় দাম জানাতে বললাম। দকানি জানালো ২০ ইউয়ান মানে ২৪০ টাকা। এরকম চাইনিজ জুতো বাংলাদেশে আটশো তাকার কম নয়। গোল বাঁধলো সাইজ নিয়ে। অনেক কসরত করেও বুঝাতে পারলাম না মাপের ব্যপারটা। ইতমধ্যে আরও দুতিন দোকানের বিক্রেতারা হাজির হয়েছে। তারা প্রথমে আমাকে বুঝাতে চাইল জুতোটি মেয়েদের। আমি তখন ইংরেজি বলা বাদ দিয়ে দিয়েছি। এদের সাথে এংরেজি বলা আর না বলা সমান। স্পষ্ট বাংলায় বললাম তোমাদের এখানে বাজার সদাই আমার কম্ম নয়। ইত মধ্যে সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে। আসে পাশে স্ট্রীট ল্যাম্প গুলো জ্বলতে শুরু করেছে। এতক্ষণে কারেন্ট এসে গিয়েছে
ভেবে হোটেলে ফিরে দেখি কারন্ট এখনও আসেনি। অন্ধকারের মধ্যে লাল পোষাক পরা দুই রিসেপশনিস্ট মহিলা ফুটে আছে ইমারজন্সি লাইটের আলোয়। গায়ে ঘাম নিয়ে নিচেয় দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে হলনা। সিড়ি বেয়ে আট তলায় ঊঠতে থাকলাম। ( অসমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:২৭
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×