somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মতিঝিল এ জি বি কলোনীর ---সেকাল মায়েরা আর একালের মায়েরা।

১০ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাবা সরকারী চাকুরী করতেন।সেই সুবাদে মতিঝিল এ জি বি কলোনীতে(আইডিয়েল জোন) আমাদের সরকারী বাসা ছিল।আমার জন্ম সেখানেই।সেখানেই বড় হওয়া।আমার ছোট বেলার নিজ চোখে দেখা মতিঝিল এ জি বি কলোনীর তখনকার আর এখনকার মানুষজন আর পরিবেশ নিয়েই আজকের এই লেখা।
১৯৮৩ বা ৮৪ সালের কথা।তখনও প্রাইমারী স্কুলে যাওয়ার সময় হয়নি।ওই সময়ের দিনগুলোর কথা অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে।আমাদের বিল্ডং এ মোট ফ্লাটের সংখ্যা ছিল ৮টি।৮টি পরিবারের সবাই সবাই কে চিনতেন।সব বাসারই আসবাব পত্রের মান ছিল সমান।ঝাকঝমক ছিলই না বলা চলে।আমরা ছোট ছিলাম।অত কিছু বুঝতাম না।তবে সব পরিবারের সাথে সব পরিবারের এত বেশী আন্তরিকতা ছিল যে আমরা ছোটরা ভাবতাম সবাই বুঝি পরষ্প্র আত্নীয়।সরকারী অফিসের সময় তখন ছিল সকাল ৭টা থেকে ২টা পর্যন্ত।সপ্তাহে ৬ দিনই অফিস ছিল আর বৃহসপ্রতিবার ছিল হাফ অফিস।বাবারা সেই সাত সকালেই অফিসে চলে যেতেন।আমরা ছোটারা দেখতাম বাবারা চলে যাওয়ার পর থেকে মায়েরা এক জন আন্য জনের বাসায় যেতেন।কার কি অবস্থা সবাই সবার খোজ নিতেন।কেউ বিপদে থাকলে সবাই জেনে যেতেন,কারো বাসায় ভাল রান্না হলে একজন অন্য জনের বাসায় পাঠাতেন।কেঊ বড় বিপদে পড়লে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ত।মায়েদের আড্ডার ওই সময় আমরা ছোটরা লুকোচুরি খেলতাম।ওই সময়টুকুতে বিল্ডিংয়ের সব ফ্লাটেই আমাদের ছোটদের থাকতো অবাধ যাতায়াত।প্রায় সব ফ্লাটের মায়েরা একজন অন্যজনের সাথে গল্পে মগ্ন থাকাতে প্রায় সব ফ্লাটের ওই সময় দরজা থাকতো খোলা।আমরা ছোটরাও ওই সময় মহাআনন্দে এক ফ্লাট থেকে অন্য ফ্লাটে দৌড়ে বেড়াতাম আর লুকোচুরি খেলতাম।ছুটোছুটিতে অন্যর বাসার বিছানা ,আলনার কাপড় এলোমেলো করে ফেলতাম।সেটা নিয়ে নিজের মায়ের বকুনিও খেতাম,অনেক সময় মারও খেতাম কিন্তু যার বাসার জিনিষ এলোমেলো করে ফেলেছি সেই মা দেখা যেত মায়ের আদর দিয়ে মায়ের মার থেকে বাচাত।অন্য মায়েরা এমনই ছিল সহনশীল।
খেলার সবচাইতে বড় সময় ছিল বিকেলবেলা।প্রায় সব বিল্ডিংয়ের সামনেই খেলার জায়গা আছে।বিকেল বেলায় খেলার সময় বিল্ডিংয়ের প্রায় সমবয়সি সব ছেলেমেয়েরা এক সাথেই খেলা করতাম।
প্রায় সব বাসাতেই ছিল বুড়ো-বুড়ি মানে বাসাপ্রাপ্ত লোকের মা বাবা।যাদের আমরা দাদা দাদী বা নানা নানী বলে ডাকতাম।কলোনীর কারো মৃতুর খবর শুনলে সবাই যেতেন ওই বাসায়।যদি বৃদ্ধের মৃতু হত তাহলে বড়রা কেউ অত চিন্তা করতো না কেউ কিন্তু চাকরী করে এমন কেঊ মৃতুবরন করলে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ত কিভাবে ওই ফ্যমেলী চলবে এটা নিয়ে।ওই ফ্যমেলীর কোন ছেলে বা মেয়ে বা স্ত্রী যদি চাকরীর যোগ্য হয় আর তারা যদি চাকরী চায় তাহলে এই ব্যপারে সবাই সহযোগীতা করত।মৃতু পরবর্তী পেনসনের যাবতীয় কাজ কলোনীতে বসবাসকারী ওই ডিপার্টমেন্টের অন্য লোকেরাই করে দিত।এসব নিয়ে ওই পরিবারের কাউকে ভুগতে হতো না।
কলোনীতে বাসায় কাজের মহিলা যারা কাজ করতো তাদের বুয়া বলে ডাকতাম।দেখা যেত যে বাসায় কাজ শুরু করেছে সে বাসায় ১৫/১৬ বছর ধরে কাজ করছে।ব্যতিক্রম ছিল না যে তা নয়।তবে যাদের বাসায় কাজের লোক কাজ করতে চাইতো না তাদেরকে নিয়ে অন্যরা আড়ালে হাসাহাসি করতো।লজ্জায় দেখা যেত ওই মহিলারা এমনিতেই ঠিক হয়ে যেত।অনেক বাসায় কাজের লোকদের ছেলে মেয়েদের পড়ার সুবিধাও করে দিত।কাজের মহিলারাও তাদের সুখ দুঃখ মালিকের সাথে ভাগাভাগি করতে পারত।কাজের মহিলারাও তাদের কাজের বাইরে অতিরিক্ত কাজ অন্তর থেকেই করে দিত।
উতসবের দিনগুলোতে থাকতো অন্য রকম মজা।ঈদের দিনেতো দিনের বেলাতে কারো বাসার দরজা বন্ধ থাকতো না।শবে বরাতে সব বাসা সব বাসায় খাবার পাঠাবেনই।কলোনীর কারো ছেলে বা মেয়ের কোন কারনে মৃতু হলে সবাই খুব দুঃখ পেতেন।
এই রকম ধারা মোটামুটি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল।ধীরে ধীরে নতুন মানুষরা কলোনীতে আসতে লাগলো ।পুরাতনেরা বিদায় নিতে থাকলো।পরিবেশও ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে লাগলো।নতুন মায়েরা ছিল পুরাতন মায়েদের চাইতে অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত।তাদের বাসাবাড়ির আসবাবও পুরাতনদের চাইতে অপেক্ষাকৃত সুন্দর।তাদের গায়ের পোষাকও পুরাতনদের চাইতে আধুনিক।তাদের সন্তানরাতো আরো আধুনিক।নতুনদের কারো সাথে কারোর তেমন পরিচয় নাই।একই বিল্ডিংয়ে বসবাস করেও কেঊ কাউকে চিনে না।সন্তানরাও কেউ কাউকে চিনেনা অথচ একই জায়গায় বসবাস।আধুনিক মায়েরদের এমন একা একা বসবাস করার কারনে সন্তানরাও খুব সহযে একা একা বসবাস করা শিখে ফেলেছে।এমনকি ২য় তলার বাসিন্দাও ৩য় তলাতে কারা থাকেন তাদের চিনেন না।বাসার দরজা সবসময়ের জন্য বন্ধ।যোগাযোগ শুধু ছিল পুরাতনদের মধ্য।তারাও এক এক করে বিদায় নিল।বলা যায় পুরাতনরা তখন বিদায় নিতে পারলেই বাচে।এখন আর কলোনীতে বাসায় বাসায় বুড়ো বুড়িদের দেখা যায় না কারন এখনকার শিক্ষিত মহিলারা কি দাদা দাদী /নানা নানীদের জায়গা দেন?সন্তানরাও বুড়ো-বুড়িদের দেখতে পারে না।এখন পাশাপাশি দুটো ফ্লাটের আসবাবপত্রেও আকাশ পাতাল ব্যবধান।যে বেশী ঘুষ খেতে পারে তার আসবাবপত্র তত দামী।এখনকার কাজের মহিলারাও কোন বাসায় ৬ মাস পার করতে পারেন না।একই বিল্ডিংয়েও যদি কেঊ মারা যায় তারও কোন খবর থাকে না।মৃতু পরবর্তী পেনসনের যাবতীয় কাযেও আর কেউ বিনে পয়সায় সাহায্য করে না।উতসবের দিনগুলোতেও বিল্ডিংয়ের সবার সাথে সবার দেখা হওয়া দূর্লভ।এখন আর কলোনীতে থাকি না।মাঝে মাঝে যাই।এখনকার এই সব পরিবর্তনগুলো দেখে বিশাসই করতে মন চায়না এইত মাত্র ২৫ বছর আগেও পরিবেশ এমন মধুর ছিল।জানি না আর কয়দিন পর কেমন হয়।তবে এই সব দেখে ভাবি আমাদের ওই সব ক্ষেত মায়েরাই ভাল ছিল।
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×