somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন চলার পথের বাঁকে

০৯ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লোকটার আসল নাম মোঃ মহিউদ্দিন আর ডাক নাম জন। জন্ম ১৯৩৯ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুরে। গ্রামের পাঠশালায় শিক্ষা জীবনের শুরু। তারপর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ শেষ করে এসে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলোসফি বিভাগে। এরপর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার উপর এম.এ ডিগ্রি লাভ করে যোগদান করেন পাকিস্তানের মর্নিং সান পত্রিকায় সাব এডিটর হিসেবে। ১৯৬৯ সালের কথা। এরপর স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পত্রিকাটির সম্পাদক বদলে যান। আসেন এবিএম মুসা পরে এসজিএম বদরুদ্দিন। মহিউদ্দিন এঁদের সাথে কাজ করেন দীর্ঘদিন অর্থাৎ ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। এরপর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। মহিউদ্দিন এরপর পেশা বদল করে ব্যবসায়ে মন দেন। কিন্তু লেখালেখি যার নেশা, তার পক্ষে লেখা ছাড়া থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু সংসার জীবনের নানা টানাপোড়েন তাঁকে কিছুতেই থিতু হতে দেয় নি।
আমার সাথে গত ৭ অক্টোবর ২০১২ তারিখে প্রেসক্লাবের সামনে লোকটির সাথে দেখা। আমি আর আমার সহযোগী সোহরাব আলী তুষার প্রেসক্লাবের কাজ সেরে বাইরে এসে দাঁড়ালা। দাঁড়াতেই লোকটি সালাম দিয়ে কিছু সাহায্য চাইল। লোকটাকে দেখে আমার ভিক্ষুক বলে মনে হচ্ছিল না। কৌতুহল বশত: তার নাম এবং আনুসাঙ্গিক বিষয়ে জেনে নিচ্ছিলাম। এ সময় লোকটি অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলছিলো। আমি ক্রমে ক্রমে বিস্মিত হচ্ছিলাম। তার ভাষ্যমতে, তার লেখা গান নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীত বিভাগে পাঠ্য করা হয়েছে। এছাড়া এমনসব চমকপ্রদ বিষয়ে এবং বাংলাদেশের স্বনামধন্য কিছু ব্যক্তিবর্গের নামে তাঁর উঠাবসা সম্পর্কে তথ্য দিতে থাকলো। আমি বিস্ময়ের উপর বিস্মিত হচ্ছিলাম। আমার সহযোগী প্রথমে লোকটাকে পাত্তা দিতে না চাইলেও পরে কৌতুহলী হয়ে উঠছিলো বেশ বুঝতে পারছিলাম। এদিকে লোকটার সাথে কথা বলতে বলতে দেখলাম চারপাশে একটা ভীড় জমে গেছে। কিন্তু লোকটা সে ব্যাপারে নির্বিকার ছিলো কিন্তু কথা বলার সময় কাঁপুনি রোগীর মতো কাঁপছিলো। বিষয়টি জানতে চাইলে বললেন, এটা উনার কোন রোগ নয় বরং একধরনের মুদ্রাদোষ। ছাত্রাবস্থায় শিক্ষকদের সামনে পড়া দেওয়ার সময় কাঁপতেন কিনা জানতে চাইলে বললেন, না না, কাঁপতাম না। এটা আমার বছর দশেক যাবৎ শুরু হয়েছে। চেহারাটায় একটা মার্জিত ভাব আছে। এমন একটা লোক যে সাহায্য চাইতে পারে তা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলছিলো। যাহোক, তাকে কুড়ি টাকা মানিব্যাগ থেকে বের করে দিতেই দেখলাম, চেহারায় একটা বিব্রতকর ভাব ফোটে উঠলো। আমি জেনে গেলাম, হয়তোবা পকেটমানি জোগাড় করতেই তার অন্যের কাছে এ হাত পাতা। যাহোক, কথা প্রসঙ্গে জানলাম পাকিস্তানের অনেক মন্ত্রী সম্পর্কে যারা উনাকে পাকিস্তানে বিভিন্নভাবে উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগিয়েছেন। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক সম্পর্কে উনার সরল মন্তব্য শুনতে খারাপ লাগছিলো না। আমি বিবর্তন পত্রিকায় কর্মরত। পত্রিকাটির চলতি কপি আমার হাতে ছিলো। উনাকে সেখান থেকে এক কপি দিতেই খুব আগ্রহ ভরে গ্রহণ করলেন। পরে আমার একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে উনার মোবাইল নাম্বারটা চাইতেই দেখলাম, উজ্জ্বল চেহারায় বেদনার ছাপ। বললেন, উনার কোন নাম্বার নেই। পরিবারের সব সদস্যের মোবাইল আছে, তবে তা তাকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। পরিবারের সদস্যরা উনাকে পাগল হিসেবেই ট্রিট করে থাকেন। অথচ আমার সাথে কথা বলার সময় উনাকে আমার পাগল মনে হলো না। সে যাক, আমি তো উনাকে মাত্র মিনিট বিশেক ধরে দেখছি, কথা বলছি। কিন্তু যারা উনার সাথে দীর্ঘদিন একই বাড়িতে একই ছাদের নিচে বাস করছেন, তারা নিশ্চয়ই আমার চাইতে উনাকে ভাল জানবেন। তা নইলে উনি উনার একটা ইংরেজি গান (কম্পোজকৃত ফটোকপি) আমার হাতে দিলেন। এ গানটির বেশ ক’টি কপি দেখলাম উনার ঝোলার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে। উনার কি সত্যিই মস্তিষ্ক বিকার কিনা সেটি বিচারের ভার আমি পাঠকদের দরবারে পেশ করলাম।
মহিউদ্দিনের ইংরেজি গান:
Bangladesh Police in song
To trina
Refrain Police, Police, Police’, say, alo, lolona,
Without police, world in inhuman arena
Bangladesh policemen,
Their women and men
Shun sublunary p[en,
Scaling the heart and mind
For grace of god to find
God is in the heaven
An’ on earth policemen
To maintain peace and order
The matter to be thought over
Policing the Satan
Was started be Adam, the first man,
To check anyone to kill
Just as satanic Kabil
John

এমন একটা লোক, যাকে ফেলে চলেও আসতে পারছিলাম না। উনার প্রতি আন্তরিক হয়ে বারবার উনাকে চা কিংবা অন্যকোন খাবার খাওয়াতে আমি জোরাজোরি করছিলাম কিন্তু উনাকে কোন খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারছিলাম না। আমার আন্তরিক আচরণে লোকটা বললেন, মনে হচ্ছে আমি আমার মায়ের আত্মার সাথে কথা বলছি। উনার কথা শুনে আমি বিস্মিত হলাম। বললাম, এটা কেমন কথা হলো? উনি জানালেন, “আজ বহুদিন পর আপনার সাথে কথা বলে আমার সত্যিই মনে হচ্ছে যে, আমি আমার মায়ের সোলের (আত্মা) সাথে কথা বলছি।” আয় সুবহান আল্লাহ! আমি তো দুনিয়াতে কিচ্ছু না, একটা শুকনো মাটির ঢেলাও আমার চেয়ে মূল্যবান! আমার আচরণে লোকটাকে বেশ সুখি মনে হচ্ছিল। বারবার চা খেতে বলায় বললেন, আমার লাগবে না, আপনি চা খান। আমি তখন অন্য জগতে চলে গেছি। লোকটাকে চা কিংবা অন্য কিছু খাওয়াতে পারলে খুব ভাল লাগতো। সে যাক, কেউ যদি এত অনুরোধের পর না খায় তো করার কিছু নেই। আমার সহযোগীও চা খেতে চাইছিলেন না। অগত্যা আমি প্রেসক্লাবের গেটের মুখে একটা চায়ের দোকানীকে আমার জন্য এক কাপ চা বানাতে বললাম। দোকানী চা বানিয়ে দিলো। অথচ লোকটার সাথে কথা বলতে বলতে আমি এতোটাই তন্ময় হয়ে গিয়েছিলাম যে, কী আর বলবো। শেষকালে আসার সময় চা দোকানীকে টাকা দিতেও ভুলে গেছি। হায় আল্লাহ! আমি যে ঋণী হয়ে রইলাম, এখন কী হবে? মিরপুর ফেরার পর আমার সহযোগীর সাথে বিষয়টি বলতেই সেও আফসোস করলো এবং বললো, আগামী সপ্তাহয় প্রেসক্লাব এলে দোকানীকে চায়ের বিলটা দিয়ে দেবে কিংবা আমি গেলে আমিই দিয়ে দেবো বলে মনস্থ করলাম।
কথা প্রসঙ্গে জানলাম, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই নন, বরং শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উনি দারুণভাবে সফল ছিলেন। কর্মজীবনে পত্রিকা ও বিভিন্ন লেখালেখি সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নিদারুণ পরিহাস, আজ তাকে ভিখারি সাজিয়ে দিয়েছে।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:১১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×