আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, মন্দিরে সাপ কেন? আসলে এই মন্দিরটা একটু ব্যতিক্রমী। পৃথিবীতে অনেক রকম মন্দির আছে, কিন্তু মালয়েশিয়ার এ মন্দিরটির কথা শুনলে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না।
পেনাং শহরে অবস্থিত এ মন্দিরে আছে শতাধিক সাপ। এদের বেশিরভাগই বিষাক্ত। শুধু কি তাই! বিষাক্ত এই সাপদের বিষদাঁত কিন্তু ভাঙা হয়নি। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, এ সাপগুলো বন্দি অবস্থায় নেই। তারা ইচ্ছামতো মন্দিরের এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়, খাবার খায়, বিশ্রাম নেয়। এ সাপগুলোর কারণেই স্থানীয় জনসাধারণের কাছে মন্দিরটির নাম সাপ মন্দির।
মন্দিরের মতো এখানকার সাপগুলোও কিন্তু কম ব্যতিক্রমী নয়। অন্যান্য সাপের মতো এরা কাউকে কামড়ায় না। এখানকার সাপের কামড়ে আহত হয়েছে_ এমন রেকর্ড নেই। সে কারণে স্থানীয় অধিবাসীরা সাপগুলো দেখে মোটেই ভয় পান না। হরহামেশাই তারা সাপগুলোর কাছাকাছি যান। একটু সাহসীরা হাতে সাপ নিয়ে খেলা করেন, আদর করেন। কেউ কেউ তো সাপগুলো কাঁধে নিয়ে ছবি তোলেন। পুণ্যার্থীদের দেওয়া খাবার খেয়েই এখানকার সাপগুলো তাদের ক্ষুধা নিবারণ করে।
ঘড়িতে অ্যালার্ম বাজতেই উ সুং চোখ মেলে তাকালেন। ভোর ৫টা বাজে। প্রতিদিন খুব ভোরে মন্দিরে যাওয়া উ সুংয়ের নিয়মিত অভ্যাস। ঘুম থেকে উঠে আজও তিনি মন্দিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। পাশের বনে গিয়ে প্রথমে ফুল কুড়ালেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঝুড়ি ফুলে ফুলে ভরে গেল। এবার ফাঁদগুলোর খবর নেওয়ার পালা। গত রাতে এখানেই ডজনখানেক ইঁদুরের ফাঁদ পেতে রেখেছিলেন। একে একে সেগুলোর দিকে এগুলেন। সব মিলিয়ে চারটা ফাঁদে ইঁদুর আটকেছে। ইঁদুরগুলো দেখে উ সুংয়ের মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ল। ফুল আর ফাঁদে আটকে পড়া ইঁদুরগুলো নিয়ে মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেলেন। সেখানে পেঁৗছে ফুল পুরোহিতের হাতে দিয়ে ইঁদুরগুলো মন্দিরের সাপের দিকে এগিয়ে দিলেন। খাবার দেখে এতক্ষণ ঝিমুতে থাকা সাপগুলোর দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো। হুড়াহুড়ি লেগে গেল তাদের মধ্যে। অবশেষে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী সাপগুলো তাদের খাবার নিয়ে অন্যদের থেকে সরে গেল।
মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে আছে এক লম্বা কাহিনী। চীনের সং সাম্রাজ্যের সময়ে (৯৬০-১২৭৯) চর সো কং নামে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু ছিলেন। ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি চীন থেকে মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে আসেন। একাধারে ৬৫ বছর মানুষের সেবা করে তিনি পেনাংয়ে প্রাণ ত্যাগ করেন। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে স্থানীয় অধিবাসীরা ১৮৫০ সালে মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দির নির্মাণের পর পরই সেখানে কিছু সাপের আবির্ভাব হয়। মন্দিরের পুরোহিত এবং স্থানীয় অধিবাসীরা সাপগুলো না তাড়িয়ে সেখানেই বাস করার সুযোগ দেন। দিন দিন সাপের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে একশ'রও বেশি সাপ মন্দিরের ভেতরে বসবাস করে।
সুত্র ঃ View this link
ওই মন্দিরের বাহারি সাপের ছবি দেখুন এখানে ঃ View this link
বাংলাতে মন্দিরের বিস্তারিত ইতিহাস জানতে এখানে ক্লিকান ঃ View this link