somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেইলি প্যাসেঞ্জার - পর্ব ৫

০৮ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিন্দুকেরা যাই বলুক, আবুল শব্দটার অবস্থান থাকা মানেই ঝামেলা, আমি এই কথা থোড়াই কেয়ার করে বীর বিক্রমে আমার আবুল কোম্পানির, থুক্কু আবুল খায়ের কোম্পানির নুন খেয়ে মাঝে মাঝে গুণ গাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালাইতাম ।কিন্তু সময় অসময়ের বাসযাত্রার ইতি টেনে যখন আমাকে দুম করে গরুর হাটে পাঠায়ে দিল, তখুনি বুঝসি আমার ডেইলি প্যাসেঞ্জার এর কুলখানির সময় হইসে ! ইয়ে মানে, গরুর হাটে পাঠাইসে মানে গাবতলী রেডিমিক্সের ফ্যাক্টরিতে বদলি কইরা দিসে !তারমানে প্রতিদিন মিরপুর টু মতিঝিল বাসযাত্রার আর সেই সাথে অদ্ভুতুড়ে অভিজ্ঞতার সলিল সমাধি । প্রথমদিন গাবতলী গিয়া আশপাশে যতদূর চোখ যায় ,কোথাও লাল রঙের মিক্সার প্ল্যান্টের সাইলোর নাম নিশান দেখতে না পেয়ে গরুর হাটের কাছে এক রিকশা নিলাম। অটো রোলার কোস্টার টাইপ ফীলিংস আসা সু (!) মসৃণ রাস্তায় শরীরের সব কলকব্জা ঢিলা করে নদীর ধারে যখন লাল রং এর সাইলো দেখতে পাইলাম, তখন বত্রিশ ওয়াটের এনার্জি সেভিং বাল্বের মত মুখ ঝলমল করে উঠল। সেই আলোতে চোখে ধাঁধা লেগেই মনে হয় ব্যাটা রিকশাওয়ালা হ্যাচকা টানে ঢালু তে নামার সময় রিকশা সুদ্ধা ভূপাত ধরনীতল। সিমেন্ট মাখা সাদা কাদা, পাথর সবকিছুর অব্যর্থ মিক্সিং কম্বিনেশনে আমার চেহারা যে যথেষ্ট খোলতাই হইছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা ! সেই সাথে এইটাও বুঝলাম, রাস্তার অভিজ্ঞতা আমার কখনই সুবিধার না বেশি ।


তবে এই গরুর হাটে আসার আগ পর্যন্ত যা দুই একটা অভিজ্ঞতা হইসিল, সেইগুলাও ফেলনা না । একবার বাসে আমার সামনের সিটে এক পিচ্চি অনেক ক্ষণ ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করেই যাইতেছিল। রাস্তার পাশে কোন দোকানে lays চিপস দেখে বলা শুরু করল, " আম্মু, লেজ খাব " । পিচ্চির মা একেবারে থ। চোখ কপালে তুলে জিগাইল, কি খাবি? পিচ্চি আবার কয়, লেজ খাব । পিচ্চির মা আবার জিজ্ঞেস করে, ভাল করে বল, বুঝি নাই কি খাওয়ার কথা বললি । পিচ্চি তখন বাস সুদ্ধা কাপায়ে চিল্লায়ে বলল, বলসি না লেজ খাব লেজ খাব লেজ খাব !!!


বনানীর সামনে থেকে এক স্টাইলিশ মেয়ে উঠসে বাসে। আমার পাশের সিটের যাত্রী নেমে যাওয়ায় মেয়েটা পাশেই বসছে। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে কল আসছে। মেয়েটা রিসিভ করার পর, " বেইবি, বাসে একটা সিট পেয়েছি। উফ, এত রাশ ! ওয়েট, আম কলিং ব্যাক। পোলাটারে হোল্ড এ রেখে কল রিসিভ করে আরেকটা। বলতেসে, " হ্যাঁ আম্মু, দেরি হবে, অত চিন্তা কইর না তো। রাখতিসি । " তারপর আবার পোলার সাথে কথা শুরু। দেন বেইবি, বল , তুমি আজ আমাকে বাসায় ড্রপ করলে কি হত ! নটি বয় ! ব্লা ব্লা ব্লা..................... অনেক ক্ষণ কি ভ্যাজর ভ্যাজর করসে শুনিনাই কিন্তু ইংলিশ বাংলা জগাখিচুড়ি শুইনা কানের উপ্রে যেই অত্যাচার চলতেছিল তার বদলা হিসাবে ঠাটায়ে একটা চড় মারার জন্য হাত চুলকাইতেছিল। হঠাত শুনি, মেয়েটা কয় কি , বেইবি, নো , কুটুকুটু বেবি, লাগ কলে না, কান্না কলে না, জানুটা সলি ( সরি) ।এইদিকে সিটের পাশে দাঁড়িয়ে হেল্পার অনেকক্ষণ ধরে টিকিট দেখতে চাইতেছে। মেয়েটার সেইদিকে কোন খেয়াল ই নাই। ঠিক ওইসময় হেল্পার বলে উঠসে, আপা, বাচ্চার কান্দন থামানু হইলে টিকিট টা দিয়েন !


লেগুনায় উঠে এক পিচ্চি ম্যালাক্ষন মায়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতেসে যে সে সিটে বসবে, তার মা কিছুক্ষণ ভালমত বুঝাইছে পরে রেগে গিয়ে বলে, চুপ করে থাক্ক বান্দর ! আর আরেকটা কথা বললে থাবড়া মেরে বাট্টু বানায়ে দিব। পিচ্চি ধমক খেয়ে বাংলা পাঁচের মত মুখ বানায়ে মায়ের কোলে ঝুলন্ত অবস্থায় বসে আছে । এমন সময় এক লম্বা লোক লেগুনায় উঠতে গিয়ে মাথায় দড়াম করে বাড়ি খাইসে। সবাই ভিতরে বলাবলি করতেসে, আহারে ভাই, লম্বা মানুষ কি আর করা । পিচ্চি তখন দুম করে ওর মাকে বলে, আম্মা এই লোকটাকে পিটায়ে বাট্টু বানায়ে দিতা , তাইলেই আর মাথাত বাড়ি খাইত না । পিচ্চির এই মহান সমাধানে অবশ্য লম্বা লোকটার মুখ শুকায়ে আমসি হয়ে গেছিল । এত সহজ সমাধান তার মনে ধরেনাই, বলাই বাহুল্য !


অফিস টাইমে এমনিতেই সবার তাড়াহুড়া , এরকম সময়ে যদি বেরসিক ট্রাফিক পুলিশ বাস থামায়ে গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভারের লাইসেন্স, মেইনটেন্যান্সের কাগজ দেখতে চায়, পাবলিকের মুখ ছোটাই স্বাভাবিক। কিছু পাবলিক আবার এক কাঠি উপ্রে। নিজের ভাড়া এক টাকা বেশি দিবেনা আইন দেখাবে কিন্তু হেল্পার কে তাগাদা দিতেসে পুলিশের পকেটে ৫০ টাকার নোট গুজে দেবার জন্য । হেল্পার ও বুঝসিল তার কাগজ পাতি সুবিধার না , তাই সেও পাবলিকের সমর্থন পাওয়া মাত্র ভাড়া থেকে ৫০ টাকার একটা নোট নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে পকেটে হাত ঢুকায়ে দিসে। পুলিশ ঘটনা বুঝে হাসি দিয়া নাইমা গেছে । এইবার হেল্পার গাড়ি ছাড়ার পর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি অবস্থা। কিছুক্ষণ পর পর গড়াগড়ি দিয়ে হাসে। ড্রাইভার জিগায়, কি হইসে বল দেখি ব্যাটা ?তখন থিকা মৃগী রোগীর মত হাসতে আছস। হেল্পার পকেটে হাত দিয়ে একটা দুমড়ানো মুচড়ানো ১০০ টাকার নোট বের করে দেখায়ে ড্রাইভার কে কইতেসে, পুলিশের পকেট থেকে মারসি। ৫০ টাকা ঢুকাইতে গিয়া ১০০ টাকা বের কইরা আনসি । চোখের সামনে চোরের উপ্রে বাটপারির এতবড় উদাহরন বাস সুদ্ধা পাবলিক ইহজনমে আর দেখসে কিনা সন্দেহ !

ডেইলি প্যাসেঞ্জার - পর্ব ১
ডেইলি প্যাসেঞ্জার - পর্ব ২
ডেইলি প্যাসেঞ্জার - পর্ব ৩
ডেইলি প্যাসেঞ্জার - পর্ব ৪
৩২টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×