somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কথা বলা হয়নি

০৮ ই অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই ৮:৩০ থেকে শুরু হয়ে শেষ হত দুপুর ২ টায়। এভাবেই আমার স্কুলের সময় পার হত। মাঝে একটা ব্রেক দিলে কি হয় স্যাররা কি বোঝেনা আমাদের ক্ষুদা পেয়ে যায়। আম্মু অবশ্য বাসা থেকে টিফিন দিত কিন্তু রোজ রোজ বাসা থেকে নিয়ে যেতে ভাল লাগতনা। স্কুল থেকে বাসা খুব কাছে ছিল তবুও ছুটির পর ক্ষুদা সহ্য করে দারিয়ে থাকতাম একজনের জন্যে। সে আমার সহপাঠী আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু অহনা। যদিও নচিকাতার নিলাঞ্জনার মত আমার তখনও অহনার প্রতি প্রেম জন্মায়নি। খুব ভাল কাটছিল আমাদের সময়। একসাথে স্কুলে যাওয়া এবং একসাথে স্কুল থেকে আসা আমাদের রোজকার রুটিং।আমাদের সেকশন ছিল এলাদা ছেলেরা পদ্মা শাখা আর মেয়েরা মেঘনা শাখা প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর আজ কোন টিচার কি করল তা নিয়ে মজা করতাম। এস, এস, সি পাশ করে অহনা ভর্তি হল ভাওয়াল কলেজে আর আমি ঢাকা কলেজ। তাই আমাদের যোগাযোগ খুব কম হত। তবে বিভিন্ন উৎসবে আমাদের মাঝে মাঝে দেখা হত। তখন কত জমানো কথা যে বলা হত। ওর অভাব আমাকে অনেক তারা করত। ওর হাসি ওর অভিমান কথায় কথায় কান্না করা সবকিছু আমি বড় মিস করতাম। ধীরে ধীরে অনুভব করতে লাগলাম ও আমার মনের একটি বিশেষ স্থান জুড়ে রয়েছে। নজরুলের গানেন লাইটি বারেবার মনে পড়ত “মোর প্রিয়া হবে এসো রামী দিব খুপায় তারার ফুল”। যেহেতু তেমন দেখা হতনা আর ও আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু তাই ভয় পেতাম যদি না করে দেয় তাহলে আমি আমার বন্ধুকেও হারাতে পাড়ি। আমি ঢাকা কলেজেই অনার্সে ভর্তি হলাম আর ও হল ইডেন কলেজে। তাই আমাদের প্রায়ই দেখা হত। মাঝে মাঝে নিউমার্কেটের ফুচকা বা কলা বাগানের মামা হালিম হাওয়া হত। টি এস সি তে আড্ডা বা কোথাও ঘুরতে যাওয়া এভাবেই কাটত আমাদের দিন। প্রতিদিন ভাবতাম আজই বলব ভালবাসি তোমায় হয় আমার হাতটি ধর নয় আমায় শূলীতে চরাও যা ইছে তোমার। তবুও বলি ভালবাসি। কিন্তু এত ভীতুন ডিম ছিলাম যে কাছে গেলে বলতে পাড়তামনা। ও হয়ত বোঝত কিন্তু নিজে কিছুই প্রকাস করতনা। একদিন ওকে বললাম “ প্রেয়সী করে পেতে চাই তারে বারাবে কি সে হাত?” অহনা বলল কাকে পেতে চাস মেয়েটা কে? আমি ভেবচেকিয়ে গেলাম বললাম আছে একজন তুই যেহেতু সবচেয়ে কাছের বন্ধু তকেই বলব সবার আগে। ওকে প্রশ্ন করলাম তর মনের ঘরে কে বসবাস করে ত তো কখনও জানলামনা। কেউ কি আছে? থাকলে কি আর তর মত হাদারামের সাথে বসে বসে বাদাম খাই? রাতে অনেক ভাবলাম তাহলে অহনা কি আমায় চায়? অহনাকে একটা মাসেজ করলাম I don’t know what is love would u care to teach me? মেসেজ করেই ঘামতে শুরু করলাম। ঠিক ৩ ঘণ্টা পর ওর উত্তর আসল ক্লাস নাইন থেকে এ পর্যন্ত কি শিখিয়ে আসছি এখনও যদি না জানস ভালবাসা কি তাহলে বোঝাযায় আমি খুবই বাজে শিক্ষক। তবে এটাই ভাল হয়েছে আমি তর শিক্ষক হয়ে নয় তর পাশে থাকতে চাই তর সহপাঠী, বন্ধু, এবং সহধর্মিণী হয়ে। ও আর একটা কথা এখন থেকে আমরা তুমি করে বলব ঠিক আছে আমার হুতুম পেঁচা। মেসেজটা পড়ে আমার মাঝেছ যেন আমি নেই। অহনাকে ফোন করলাম আমি কথা বলি কিন্তু ও চুপ। কি আশ্চর্য যেই মেয়ের বকবকানিতে কথা বলার সুযোগ পেতামনা আর আজ সে চুপ কেন? ও শুধু বলল আজ চোখ ই মনের সকল কথা বলে দিবে। আমি বললাম আমার ময়না পাখির চোখের ভাষা আমি পরতে চাই এবং তখনই আমি বলব যা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে রয়েছি। তুমি শাহাবাগ আস আমি আসতেছি। অহনার প্রিয় রঙ কালো আর আমার নীল তাই আমি কালো পাঞ্জাবি পরেছি আর ওকে বলেছি নীল শাড়ি পরতে। দু নয়ন ভরে আমার নীল পরীকে দেখার বাসনা নিয়ে এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা হাতে প্রতিক্ষয়ার প্রহর গুনছি কখন আসবে আমার প্রেয়সী। ঐ তো অহনাকে দেখা যায় ঐ রিকশায়। হটাত বিরোধী দলের মিছিল শুরু হলো আর তার উপর পুলিশ ও সরকারি বাহিনির হামলা। চারিদিক টিয়ারসেলের ধুয়ায় আচ্ছন্ন। কিছুই ঠিক মত দেখা যাচ্ছেনা। দৌরে ছুটে গেলাম রাস্তার ঐ পারে যেখানে অহনার মুখটা শেসবার দেখেছিলাম। হুম খুজে পেলাম আমার প্রেয়সীকে রক্তে তার নীল শারি ভিন্ন রঙ ধারন করেছে। তারপর আর কিছু মনে নেই জ্ঞান ফিরে নিজেকে আবিষ্কার করি হাঁসপাতালে পাশে আমার অহনা নেই। দ্রুত ছুটে গেলাম অহনার বাড়ি জানাজা শেষ হয়ে গেছে। ভেবেছেলাম যেই হাত দিয়ে ধরে রাখব তারে আজ সেই হাত দিয়ে মাটি ঢালছি তার কবরে। ও বলত আমার হাত ধরে চলে যাবে দূর কোন অজানায়। কখনও ভাবিনি এ যাত্রা শুধু তার একার হবে।
অহনা তোমাকে বলছি “যদি মন কাদে তুমি চলে এসো এক বরষায়, আমি যে বেচে আছি তোমারই অপেক্ষায়”

এভাবে কত নিরীহ জীবন বলি হবে রাজনৈতিক সহিন্সতায়? এর জন্যেই কি যুদ্ধকরে দেশ স্বাধীন করেছিল? অপেক্ষায় আছি নতুন সূর্যোদয়ের




০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×