somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাশফুল ও দূর্গা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি/ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি/শরৎ তোমার শিশির ধোয়া কুন্তলে /বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলি/আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি-ষড়ঋতুর এই অপরূপ দেশের অনেকটা জুড়েই যে শরতের সৌন্দর্য তার বর্ণনা কবিগুরু অত্যন্ত সুন্দরভাবে দিয়েছেন।আবার নীলাকাশ থেকে কখনো কখনো রবীন্দ্রনাথ মেঘবালিকার বিদায়ের কথা বলেছেন,মেঘ বলেছে যাব যাব। শরতের মেঘ হয় শ্বেত শুভ্র। পেঁজাতুলোর মতো অনায়াস আনন্দে আকাশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে তার অলস ভ্রমণ। শরৎ ঋতুকে নিয়ে সিংহল রাজকণ্যা খনার উক্তি হচ্ছে - খনা বলে চাষার পো, শরতের শেষে সরিষা রো। তবে এবারের শরৎ মেঘের চরিত্রই আলাদা। এ যেন বৃষ্টির গন্ধমাখা জলজ মেঘ। শরতের এই বেয়াড়াপনার কারণে শহুরে জীবনের প্রাত্যহিকতায় হঠাৎই যেন ছন্দপতন ঘটে। তবে এবারের ঈদের আমেজে যেমন কিছু ছন্দ ফিরে পেয়েছিল, তেমনি সনাতন ধর্মাবলীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজার আগমনেও যেন রাজধানীর বুকে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। পূজা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।
আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি,/ পূজার সময় এলো কাছে।/ মধু বিধু দুই ভাই ছুটাছুটি করে তাই/ আনন্দে দুই হাত তুলি নাচে। রবীঠাকুরের এই কবিতার মাধ্যমেই বোঝা যায় দূর্গা পূজার সঙ্গে কাশফুলের যেন আত্মীয়তা রয়েছে। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী দূর্গা আসে কাশফুলকে সঙ্গী করেই । এ যেন বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য এই দূর্গাপূজা ও কাশফুল। বাঙালির বার মাসে তের পার্বনের মধ্যে ঈদ ও দূর্গাপূজা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দুটো উৎসবই আসে ত্যাগ ও আনন্দের বার্তা নিয়ে। শাস্ত্রীয় বিধানে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে এবং চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষে দূর্গোৎসব পালন করা যায়। চৈত্রমাসের দূর্গাপূজা বাসন্তী দূর্গাপূজা এবং আশ্বিন মাসের দূর্গাপূজা শারদীয় দূর্গাপূজা নামে পরিচিত। বাংলায় শারদীয় দূর্গাপূজা অধিক জনপ্রিয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী বাংলা ভাষাভাষিদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা হলেও কোথায়, কখন কিভাবে এর সূচনা হয় তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে অর্থাৎ প্রাচীন কাল থেকেই পাঞ্জাবের হরপ্পা ও সিন্ধুর মহেঞ্জোদারোতে দেবীর পূজা হতো। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং দেবীর পূজা করেছেন। ইতিহাস থেকে আরো জানা যায়, তৎকালীন শ্রীহট্ট বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেটে রাজা গণেশ পঞ্চদশ শতকে প্রথম মূর্তিতে দূর্গা পূজা করেন। ষোড়শ শতকে রাজশাহী অঞ্চলের রাজা কংশনারায়ণ দূর্গাপূজা করেন। পূর্বে রাজা জমিদার মহাজন তথা বিত্তবানরা আত্বীয় স্বজন সমন্বয়ে ধুমধাম করে দূর্গাপূজা করতেন। কালের বিবর্তনে সেই রাজাও নেই , জমিদারও নেই । তবে এখন ধনী গরীব গোত্র বর্ণ সর্বোপরী সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে বর্তমানের দূর্গাপূজা। বর্তমানে সারাদেশে ২৪ হাজার আর ঢাকা মহানগরীতে ১৭৯ টি পূজামন্ডপে উৎযাপিত হবে দূর্গাপূজা । মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এই পূজা। মূলত মহালয়া বোধন আর সন্ধিপূজা -এই তিন পর্ব মিলেই দূর্গোৎসব। পূরাণ মতে, মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয় দেবী পক্ষের। এর আগের পক্ষ হলো পিতৃপক্ষ। আর মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় অর্থাৎ শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে কাত্যায়ানী মুনির কন্যারূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দূর্গা জন্মগ্রহণ করেন। আবার কৃত্তিবাসী রামায়ণে জানা যায় যে , পদ্রযোনি ব্রক্ষার নির্দেশে রাবণ বধের জন্য রামচন্দ্র সাগরের বালুকাবেলায় আয়োজন করেছিলেন দেবী পূজার। এসময় সাগরের গতিপথ দক্ষিণে সরে যায় । অর্থাৎ আশ্বিন মাস হচ্ছে সূর্যের দক্ষিণায়ন কালের অর্ন্তভূক্ত। এই সময়টি হচ্ছে দেবতাদের নিদ্রার কাল। রাবণ বধের কারণে রামচন্দ্র এই অকাল দূর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। এজন্য একে অকাল বোধন বলে। আর মহাষ্টমী ও মহানবমী তিথির সংযোগকালের সন্ধিক্ষণে আয়োজিত হয় সন্ধিপূজার। শাস্ত্রমতে, রাম তার স্ত্রী সীতাকে রাবনের কব্জা থেকে উদ্ধার কতে ১০৮ টি নীলপদ্ম দিয়ে দেবীর পূজা করেছিলেন। রামের সেই বীরত্বকে স্মরণ করতেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ এই পূজা করে।
শারদীয় দূর্গোৎসবের পাঁচদিন ব্যাপি আয়োজনে কুমারি পূজা এক ব্যাতিক্রমী ব্যাঞ্জনা। অষ্টমী তিথিতে প্রতিমার বদলে শুদ্ধাত্মা ভগবতী মা দূর্গার প্রতিক হিসেবে জীবিত কুমারীকে ভক্তিভরে অঞ্জলি দেয়া হয়। হিন্দু শাস্ত্রমতে,এক থেকে ষোল বছরের মেয়েরা কুমারী হিসেবে পূজিতা হবার যোগ্য। সব নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার লক্ষ। যে দেবী সব নারীর মধ্যে বিরাজমান তাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যই দূর্গা পূজার সঙ্গে এ পূজার আয়োজন করা হয়। রামকৃষ্ণমিশন সূত্রে জানা গেছে , এ বছর কুমারী পূজার জন্য একজন কুমারী ইতিমধ্যে নির্বাচন করা হয়েছে। তবে তার পরিচয় পূজার দিন ব্যতিত জানানো হবে না।
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×