দূর হও হাঁচি-কাশি
সাদিয়া ফাতেমা কবীর
সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই রূপা দেখল তার শরীরটা কেমন যেন ম্যাজম্যাজ করছে, গলাটাও ভার হয়ে আছে। ঠাণ্ডা লেগেছে বুঝতে পেরে বিছানা ছাড়তে না ছাড়তেই শুরু হলো একটার পর একটা হাঁচি, থামাথামি নেই। সেই সঙ্গে নাক থেকেও জল গড়াচ্ছে। ঠাণ্ডাটা কীভাবে লাগল ভাবতে গিয়ে মনে পড়ল— কাল ইউনিভার্সিটি থেকে ফেরার পথে রিকশা পেতে খানিকটা দেরি হয়েছিল। সারা দিন ক্লাস, ক্লাসশেষে ল্যাবের পর ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থায় রূপা যখন রিকশার আশায় দাঁড়িয়ে, তখন বলা নেই কওয়া নেই একেবারে ঝুপ করে বৃষ্টি। তাড়াহুড়ায় রিকশায় উঠে পড়াতে তেমন একটা না ভিজলেও একটু-আধটু যে ভিজে যায়নি তা নয়। আর এসবেরই ফল সর্দি আর হাঁচি।
আবহাওয়ার এই হঠাত্ হঠাত্ রূপবদলে রূপার মতোই শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়া মানুষের সংখ্যা হঠাত্ করেই খানিকটা বেড়েছে। চারদিকে চলছে জ্বর-ঠাণ্ডা আর সর্দি-কাশির প্রকোপ। তবে একটু সচেতন হলেই আপনি এ স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন সহজেই। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক এ সময়টায় কীভাবে সুস্থ থাকা যায়।
যারা ঘরের বাইরে কাজ করেন তারা পোশাক নির্বাচনের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। দিনের শুরুতে যদি দেখেন গরমের মাত্রা খুব বেশি, তবে সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে বেছে নিন সুতি। সুতির কাপড় ঘাম শোষণ করে। ফলে ঘাম বসে ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে বৃষ্টি থাকলে সে ক্ষেত্রে ভিজে গেলে সহজেই শুকিয়ে যাওয়ার সুবিধা থাকায় বেছে নিতে পারেন সিনথেটিক কাপড়। আপনার হাতব্যাগে ছাতা বা রেইনকোট রাখতে ভুলবেন না। গাড়িতে চলাফেরা করেন যারা, তারাও গাড়িতে সাবধানতাবশত একটা ছাতা রাখুন। রোদ-বৃষ্টি দুুটো থেকেই ছাতা আপনাকে দেবে সুরক্ষা।
খুব বেশি গরম থেকে এসেই বা ঘর্মাক্ত অবস্থায় স্নান করবেন না। এতে ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। বাইরে থেকে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। শরীরের তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে দিন, তারপর স্নান করুন। যাদের এসিতে থাকা অভ্যাস, তারা স্নানের ঠিক পর পরই এসিতে না এসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর আসুন। এ ছাড়া স্নান করে খুব জোরে চালানো ফ্যানের নিচেও বসবেন না। এতেও ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। এ সময় বৃষ্টিতে ভেজা থেকে বিরত থাকুন। ভিজে গেলে যতটা দ্রুত সম্ভব ঘরে ফিরে সম্পূর্ণ স্নান করুন।
খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকুন। খাদ্য তালিকা সুষম রাখুন। কারণ তা সব সময়, সব পরিস্থিতিতেই আপনার সুস্থতা নিশ্চিত করবে অনেকখানি। আপনাকে দেবে সঠিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। এ জন্য খাদ্য তালিকায় শর্করা, আমিষ, স্নেহের পাশাপাশি ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। প্রতিদিন যেকোনো একটি মৌসুমী ফল খেতে ভুলবেন না। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, যা আপনার চুল, ত্বক থেকে শুরু করে দেহের সর্বাঙ্গীন সুস্থতায় ভূমিকা রাখবে অনেকখানি।
সচেতন থাকার পরও ঠাণ্ডা যদি লেগেই যায়, তবে সে ক্ষেত্রে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি করে খান। লেবু, জাম্বুরা, আমড়া, কামরাঙা, আমলকী খান প্রচুর পরিমাণে। এ ছাড়া এসব উপসর্গ থেকে আরাম পেতে তুলসী পাতার রস, আদার রস, মধু বা আদা মেশানো চা-ও খেতে পারেন নিয়মিত। ঠাণ্ডা লেগে অনেকেই টনসিলের সমস্যা বা গলা ব্যথার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে আরাম পাবেন। কারণ লবণ-গরম পানির মিশ্রণটি ইনফেকশনে ভালো কাজ করে। দিনে তিন-চারবার করে গার্গল করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন সহজেই। তবে শারীরিক সমস্যা বেশি মনে হলে অবশ্যই অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
লেখাটি আজকের দৈনিক বনিক বার্তা-য় প্রকাশিত
লেখা প্রকাশের লিঙ্কঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:০০