somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাস রঙ্গ - ১

০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীতে মানব সৃষ্ট রীতিগুলো যে স্থান কাল পাত্র ভেদে পরিবর্তনশীল তা বলা বাহুল্য। কানুনের কঠোরতার মাঝেও যে চরম বৈষম্য গুলো সুপ্ত ও উপেক্ষিত থাকে তা হয়তো অনেকেরই অজানা। তবে বৈচিত্র মাঝে মাঝে বিনোদনেরও খোরাক জুটায়।

এক
বছরাধিকাল আগের কথা। ফেইসবুকের ইনবক্সে এক জামাইকান সহকর্মীর প্রশ্ন “তুমি তোমার ইন্টারেস্টএ “ম্যান” অ্যান্ড “ওয়াম্যান” লিখেছ কেন? তুমি কি বাই?!! জাস্ট আস্কিং। এমনিতে ক্রিকেট নিয়ে তার সাথে অনেক কথা হতো। সে নাকি ক্রিকেটার কাইরন পোলার্ডের স্কুল ফ্রেন্ড। এমনকি গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে তার দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫৮ রানে প্যাকেট করার পরদিন তাকে লাঞ্চ করাতে হয়েছিল পূর্ববর্তী ওয়াদা অনুযায়ী।
যাহোক খুদে বার্তাটি দেখে আমি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম। দ্রুত তাকে জবাব পাঠানোর তাগিদ অনুভুব করলাম। আমি বললাম দেখো আমি ছেলে হিসেবে মেয়েদের প্রতি আগ্রহী হবো সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ফেইসবুকে আমার অনেক শিক্ষক, আত্মীয় স্বজন ও ছাত্রছাত্রী আছে, তাই ওভাবে লিখা। তাছাড়া এখনো ভার্চুয়াল সাইটের উপর আমরা নির্ভরশীল নই। জবাবে সে বললো, “ম্যান, আমি তো আরও আশা করেছিলাম তুমি একজন মুসলমান হিসেবে গর্ব করে উল্লেখ করবে যে তুমি নারীর প্রতি আগ্রহী। আর তুমি কি জানো জ্যামাইকাতে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড!”
এই যাত্রায় তাকে বুঝাতে পেরে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।


দুই
চাকুরীতে ইতি মধ্যে কয়েক মাস গত হয়েছে। আমার ম্যানেজার থেকে শুরু করে অনেকেই দেখছি আমার প্রতি বেশ আন্তরিক। কথোপকথনের এক পর্যায়ে সবার মৌলিক প্রশ্ন “তোমার গার্ল ফ্রেন্ড কেমন আছে?” আমি শুরুর দিকে বেশ বলিষ্ঠ কণ্ঠে জবাব দিতাম “আমার কোনো গার্ল ফ্রেন্ড নাই!” তাদের অনেকে আমার জন্য আফসোস করতো, তাতেও সমস্যা ছিল না। কিন্তু যখন দেখলাম অতি উৎসাহী কেউ কেউ অন্য কিছু ভাবছে, তখন কৌশল পরিবর্তন করে মিথ্যার আশ্রয় নিলাম, বললাম আমার ফিয়ান্সে আছে। এবং খুব শীঘ্রই আমি তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি!

তিন
গত বছর রমযানে ইফতারির সময় নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছিলাম। তখন এখানে বেড়ে উঠা এক বাংলাদেশী সহকর্মী সহ ঠিক করলাম আমরা কাছের কোন হালাল রেস্তোরাঁতে একসাথে ইফতারি করবো। ছেলেটি বেশ মেধাবী ও সাহসী বটে। ইফতারিতে একটু বেশী সময় ব্যায় করার জন্য কর্তব্যরত জুইশ ম্যানেজার যখন একটু জবাবদিহি করতে গেলো সে কাল বিলম্ব না করে বিষয়টি ঊর্ধ্বোতন মহলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিলেন। ওমা সাথে সাথে মহিলার পরিবর্তিত সূর। অতঃপর আমাদেকে জিজ্ঞাসা করলো তোমাদের ঈদ কবে? ইফতারিতে কি খেয়েছ? বেশি করে পানি খাবে তা না হলে ডিহাইড্রেশন হবে। জবাবে সহকর্মী একটু রসিকতার সূরে বললো আমি তা জানি কারণ আমি একটি মেডিক্যাল স্কুলে অধ্যায়নরত।


চার
নিত্য যাতায়তের জন্য অধিকাংশ সময় সাবওয়ে (পাতাল রেল) ব্যাবহার করতে হয়। এমনিতে নিউ ইয়র্কের পাবলিক ট্রান্সপোটেশন সিস্টেম খুবই ভালো। মাঝে মাঝে রাতের বেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে দু একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে এই যা। অধিকাংশ সময় সাবওয়েতে ভ্রমণ করার সময় ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে দাড়িয়ে থাকতে হয়। আর অ্যামেরিকান নারীরা নাকি স্কুলের সেশনকে মাথায় রেখে গর্ভধারণ করে। যাতে বাচ্চারা সঠিক বয়সে স্কুলে যেতে পারে। তাই মাঝে মাঝে ম্যাটারনিটিকে সম্মান জানাতেই আসন ছেড়ে দিতে হয়। আর যদি নেহাত আসন গ্রহণ করতেই হয় তাহলে আমি সচরাচর পুরুষের পাশে না বসে মহিলাদের পাশে বসি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৃদ্ধাদের সাথে। একদিনতো কাজ থেকে আসার সময় ক্লান্তিতে খানিকটা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ ট্রেনের গতি কমে আসাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমার পাশের বৃদ্ধা স্প্যানিশ মহিলা। মৃদু হেসে বললো
ঃ“ওলা কোমস্তা?”
ঃ সি মুই বিয়ান, সেনিওরা।
ঃ ডারমিইয়েন্তে?
ঃ পকও, আমিগা।
ট্রেনে মাহিলাদের পাশে বসার কারণটা মনসতাত্ত্বিক, এমনিতে নিউ ইয়র্কে সমকামী-বিবাহ জায়েজ হয়েছে কিছুদিন আগে। তাই সব পাবলিক প্লেসে লোকজনের মাঝে একধরণের অস্থিরতা দৃশ্যমান।



পাঁচ
আগের বাসার হিটারটা ঠিকভাবে কাজ করছিলো না, তাছাড়া লীজ এর সময়ও ফুরিয়ে আসছে। নতুন বাসার সন্ধান করতে হবে। নিরাপত্তার দিক থেকে জুইশ নেইবড়হুড গুলোর সুনাম রয়েছে বেশ। তারা নিরাপত্তাজনিত কারনে একত্রে বসবাস করে। আর নিউ ইয়র্কের বর্তমান মেয়র যেহেতু একজন উদার পন্থী ইহুদী, তাই তাদের সুযোগ সুবিধার কোনো কমতি নেই। যাহোক বাসার খোঁজ করতে গিয়ে এক আলবেনিয়ান কেয়ারটেকাকের সাথে পরিচয়। তার সাথে পরিচয় পর্বে সে আমার ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস ও চাকুরী সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করে তার জুইশ মালিক কে ফোন করলেন। আমার হাতে ফোন সেটটি দেওয়ার পূর্বে সে তার মালিককে বললো পাকিস্তানী এক ব্যাক্তি আপনার সাথে এপার্টমেন্ট ভাড়ার ব্যাপারে কথা বলতে চান। আমি বললাম আমি পাকিস্থানী না, বাংলাদেশী।
কিছু বুঝে উঠার আগেই জুইশ মালিক আমাকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তাদের মতো করে প্রশ্ন করতে লাগলো। আমি কি করি? বয়স কত? ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস কি? বিবাহিত না অবিবাহিত? কয়জন থাকবে? আমার গত বছরের টেক্স ফাইলে ইনকাম কত? আমি যদি ছাত্র হই তাহলে কিভাবে ভাড়া দিবো? ইত্যাদি, ইত্যাদি।
সব কিছু সঠিক ভাবে বলার পর ওপাশ থেকে বলে উঠলো।
ঃ অ্যাই সি ম্যান, বাট টু ম্যানি পিউপল!!
ঃ অনলি থ্রী ফর টু ব্যাডরুম এপার্টমেন্ট। হাউ কাম ইউ স্যে ইট’স টু ম্যানি?!
ঃ নো। আই ক্যান মেইক দ্যা ডিল, অ্যানিওয়ে।
ঃ ওকে, হাউ অ্যাবাউট মি, মাই ওয়াইফ, এন্ড সিক্স কিডস? নাউ ইউ ক্যান মেইক ইট, রাইট?

একথা বলার পর সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে লাইনটি কেটে দেয়। পাশে দাড়িয়ে মুসলিম আলবেনীয় কেয়ারটেকার আমার তামশা দেখছিলো। সে কিছুটা বিব্রত কারণ আমি রহস্য খুঁজে পেয়েছি বিধায়।
অর্থাৎ ওই জুইশ কোনো মুসলিমকে এপার্টমেন্ট ভাড়া দিবে না। আবার সে এই কথা সরাসরি বলতে অপারগ। কারণ সেই ক্ষেত্রে আমি বৈষম্য বা হেইট ক্রাইমের অভিযোগ আনতে পারি। সবশেষে পরিস্থিতি বুঝে ছয়টি বাচ্চার কথা বলার মানে হচ্ছে যে, তার বৈষম্য আমি বুঝতে পেরেছি, আর জুইশরা প্রচুর বাচ্চা ধারণ করে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৩১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×