somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘামসূত্র ফিরিস্তি ।। টোকন ঠাকুর

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘামসূত্র বাংলা ভাষার একটি নতুন শব্দবন্ধ- সংগোপন ও প্রকাশ্যে আমার দাবী। যদিও, ঐতিহাসিকভাবে ভারতবর্ষে কামসূত্র ছিল এবং তা এখনো প্রতাপশালীভাবেই আছে। সেই অর্থে ঘামসূত্র নবাগত। নবাগত বলেই, আশা করা যায় ঘামসূত্রেরও একটা প্রভাব পড়বে আমাদের ভাষা-সামাজিকতায়। তবে পার্থক্য, কামসূত্র গদ্যভিত্তিক, ঘামসূত্র কবিতায় প্রণীত। কামসূত্রের বিপণন যত, ঘামসূত্রের তত নয় এবং সেটাই স্বাভাবিক। কামসূত্র যতখানি বিস্তৃত, ঘামসূত্র সেখানে নব-উন্মেষিত। কামসূত্রের লেখক বর্তমানের কেউ নয়, ঘামসূত্রের লেখক চলতি রচনারই লেখক। কামসূত্র একটি প্রতিষ্ঠিত শব্দবন্ধ, ঘামসূত্র এখন প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নে। আমার একটি ভাললাগা এই যে, আমি সেই ঘামার্ত মানব সন্তান, যে কীনা ঘামসূত্র শব্দবন্ধের অভিভাবক। এই অভিভাবকত্বের প্রমাণ হিসেবে বলতে পারি, ২০১১ সালের কোনো এক সংখ্যায় সমকালীন বাংলা ভাষা-সাহিত্যের মাসিক ‘কালি ও কলম’ পত্রিকায় আমার ৬ টি কবিতা ছাপা হয়েছিল ‘ঘামসূত্র ও অন্যান্য কবিতা’ নামে। অবশ্য ‘কালি ও কলম’ এ প্রকাশের আগে ঘামসূত্র রচিত হয় আমারই খাতার মধ্যে। খাতা থেকে একদিন ছাপার অক্ষরে গেল পত্রিকার পাতায়। তারপর এলো বইমেলা ২০১২। নতুন প্রকাশনা সংস্থা গদ্যপদ্য থেকে ঘামসূত্র প্রকাশিত হল বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায়। ঘামসূত্রের প্রচ্ছদ করলেন শিল্পী ধ্রুব এষ। ২০১২ বইমেলায় প্রকাশিত আমার একমাত্র বই, কবিতার বই_ ঘামসূত্র। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে আমার প্রিয় দুজন মানুষকে, যারা কী না বাঙালির জাতীয় জীবনেরও খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্ব। একজন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, দ্বিতীয়জন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ঘামসূত্র কাব্যগ্রন্থের গ্রন্থস্বত্ব পেয়েছে আমার দুই ভাগ্নি, বর্ষা বিভাবরী ও তোর্সা তাথৈ। এটি পাঁচ ফর্মার বই। প্রায় ৬৫ টির মতো কবিতা স্থান পেয়েছে ঘামসূত্রে। চাই, ঘামসূত্র ছড়িয়ে পড়ুক, আপনার চোখে পড়ুক, হাতে পড়ুক। পড়ে দ্যাখেন, কী সূত্র রয়েছে এই বইটাতে?

এবারে ঘাম নিয়ে কিছু কথা বলা যাক, তাহলে সূত্র বেরিয়ে আসবে আবছাআব। মনে রাখা দরকার, আমি এক ঘামার্ত যুবক। পরিপার্শ্বের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাংলার কয়েকজন যুবক মিলে যে পরিমাণ ঘামে, আমি একাই ঘামি তার তুলনায় বেশি। এটা আমার আশেপাশের সবাই জানে। তারা দেখেছে, তারা দেখছে হামেশায়। দরদর করে ঘাম, ঝরঝর করে করে ঘাম ঝরে পড়ে আমার শরীর থেকে। যাই হোক_

২০০২ তে সম্ভবত, কোলকাতায় গেছিলাম কয়েকদিনের জন্য। দিল্লি থেকে সার্ক রাইটার্স ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. অজিত কৌর চিঠি পাঠালেন সার্ক রাইটার্স ফাউন্ডেশনের ঢাকা দপ্তরে। ঢাকা থেকে তরুণ লেখকদের কোলকাতায় যেতে হবে, সেমিনার করতে হবে, কবিতা পড়তে হবে ইত্যাদি। শাহ্‌নাজ মুন্নী, বায়েজীদ মাহবুব ও আমাকে নির্বাচিত প্রতিনিধি করা হলো সার্কের ঢাকা দপ্তর থেকে। স্থপতি ও অনুবাদক, আমাদের বন্ধু বায়েজীদ নগর ভবনের অনুমতি না পাওয়ায় যেতে পারল না। গেলাম আমি ও মুন্নী। যদিও, কোলকাতায় গিয়ে দেখলাম বাংলাদেশ থেকে আরও একজন লেখিকা হিসেবে কোলকাতায গেছেন এবং তার নাম মঞ্জুলিকা জামালী। এই জামালীকে আমাদের লেখালেখির ভুবনে আমি কখনো দেখিনি। যাই হোক, কোলকাতায় গিয়ে আমরা নানারকম অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছি। ভালই লাগছিলো। কিন্তু তখন ছিল মে মাস। কোলকাতায় মে মাসের গরম কেমন হয়- তা আমার ধারণাতেও ছিল না। সিডিউল অনুযায়ী একদিন গেলাম মহাশ্বেতা দেবীর বাড়িতে, সে যাত্রায় গাইড হয়ে সঙ্গে নিয়ে গেলেন তাঁর ও বিজন ভট্টাচার্যের পুত্র নবারুণ ভট্টাচার্য, বিখ্যাত কবি ও লেখক। গেলাম দেবেশ রায়ের বাড়িতে। গেলাম বেলুর মঠ, কফি হাউস, কলেজ স্ট্রিট, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ- নানান জায়গায়। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম এ শ্রেণির পক্ষ থেকে আমাদের ফুল-সম্বর্ধনা দিল। বক্তৃতা করলাম। একদিন গেলাম গোর্কি সদনে বাংলা ছবি 'শিল্পান্তর' এর প্রিমিয়ার শো তে। কিন্তু সব জায়গাতেই তুমুল গরম। সমগ্র কোলকাতা গরমে ঘামছে। পাল্লা দিয়ে ঘামছি আমি। সে কী ঘাম! আমরা ছিলাম গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট হোস্টেলে। একদিন, সারাদিন এত ঘর্মাক্ত হলাম ট্যাক্সিতে, ট্রামে, বাসে, যে- হোস্টেলে ফিরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ঘামের সেই অসুস্থতা ছিল ভয়াবহ।

রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ বিচলিত হয়ে পড়ল আমার অসুস্থতা দেখে। মুন্নী আর জামালী আমাকে সেবাযত্ন করতে ব্যস্ত হল। হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রী পূর্ব ইউরোপের দেশ, রোমানিয়ার তরুণী সুগু, সুগু ডানা, সেও ছুটে এলো চাইনিজ বামের কৌটা হাতে। সেই বাম মলম আমার কপালে ঘষতে লাগলো সুগু। আমার অসুস্থতার মুল কারণ ছিল, সারাদিন আমি এতটাই ঘেমেছি যে, শরীর পানি শূন্যতায় আক্রান্ত। সে রাতে, কোলকাতা শহরে আমার বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল। শেষপর্যন্ত যে মরিনি, তার প্রমাণ, পরদিন সন্ধ্যায় আমাদের শেষ অনুষ্ঠানে হাজির হতে পেরেছিলাম। কবি নবনীতা দেব সেনের সঞ্চালনায় কবিতা পাঠ, কোলকাতার জয়দেব বসু, রুপক ..., বিশ্বজিৎ পাণ্ডা ও মন্দাক্রান্তা সেন এবং বাংলাদেশ থেকে যথাক্রমে শাহনাজ মুন্নী, মঞ্জুলিকা জামালী ও সবশেষে আমি। ফলে, আমার জীবনে ঘামের ঘটনা ঘামসূত্র লেখার বহু আগে থেকেই ঘটে চলেছে, প্রমাণিত। দু:খ, জয়দেব দা গতবছর হঠাৎ চলে গেলেন।

তাছাড়া কাম, তাছাড়া ঘাম, তাছাড়া সূত্র, তাছাড়া টোকন ঠাকুর- তাছাড়া কি হয়? হয় না। কাম করব আর ঘাম ছুটবে না, তা তো হয় না। তাই, কামের যেমন সূত্র আছে সূত্র নেই, ঘামেরও তেমন সূত্র আছে সূত্র নেই। ঘামসূত্র গ্রন্থের সহায়ক গ্রন্থ গ্রীষ্ম, গ্রীষ্মের নেপথ্যে নারী। দ্বিধা নেই স্বীকারোক্তিতে, নারীবিহীন কামসূত্র বা অথবা ঘামসূত্র কিছুতেই সম্ভব নয়।

প্রিয় পাঠক, যদি কখনো পড়েন, ঘামসূত্র পড়তে পড়তেই টের পাবেন, আপনিও এর বাইরে নন। আপনিও জানেন, দেখেছেন যে, ঘাম আপনার জীবনেও কী মারাত্মক ফ্যাক্টর হয়ে আছে। কাম ছাড়া যেমন মানুষ হয় না, ঘাম ছাড়াও তা হয় না। মানে ভালোবাসাই হয় না। এককথায়, ভালোবাসা ঘাম ছাড়া জমে না বা বিচ্ছুরিতও হয় না। ঢাকার কাঁটাবনের কনকর্ড এম্পোরিয়াম মার্কেটের গদ্যপদ্য এই গ্রন্থের প্রকাশনা সংস্থা। বইটা ওখানেই পাওয়া যায়।
তাহলে ঘামসূত্র পড়ে নিন, নিজ স্বার্থেই।


.......................................................
দ্বৈরথ/ সম্পাদনা: গাব্রিয়েল সুমন
..........................................................
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×