এবারে ঘাম নিয়ে কিছু কথা বলা যাক, তাহলে সূত্র বেরিয়ে আসবে আবছাআব। মনে রাখা দরকার, আমি এক ঘামার্ত যুবক। পরিপার্শ্বের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাংলার কয়েকজন যুবক মিলে যে পরিমাণ ঘামে, আমি একাই ঘামি তার তুলনায় বেশি। এটা আমার আশেপাশের সবাই জানে। তারা দেখেছে, তারা দেখছে হামেশায়। দরদর করে ঘাম, ঝরঝর করে করে ঘাম ঝরে পড়ে আমার শরীর থেকে। যাই হোক_
২০০২ তে সম্ভবত, কোলকাতায় গেছিলাম কয়েকদিনের জন্য। দিল্লি থেকে সার্ক রাইটার্স ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. অজিত কৌর চিঠি পাঠালেন সার্ক রাইটার্স ফাউন্ডেশনের ঢাকা দপ্তরে। ঢাকা থেকে তরুণ লেখকদের কোলকাতায় যেতে হবে, সেমিনার করতে হবে, কবিতা পড়তে হবে ইত্যাদি। শাহ্নাজ মুন্নী, বায়েজীদ মাহবুব ও আমাকে নির্বাচিত প্রতিনিধি করা হলো সার্কের ঢাকা দপ্তর থেকে। স্থপতি ও অনুবাদক, আমাদের বন্ধু বায়েজীদ নগর ভবনের অনুমতি না পাওয়ায় যেতে পারল না। গেলাম আমি ও মুন্নী। যদিও, কোলকাতায় গিয়ে দেখলাম বাংলাদেশ থেকে আরও একজন লেখিকা হিসেবে কোলকাতায গেছেন এবং তার নাম মঞ্জুলিকা জামালী। এই জামালীকে আমাদের লেখালেখির ভুবনে আমি কখনো দেখিনি। যাই হোক, কোলকাতায় গিয়ে আমরা নানারকম অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছি। ভালই লাগছিলো। কিন্তু তখন ছিল মে মাস। কোলকাতায় মে মাসের গরম কেমন হয়- তা আমার ধারণাতেও ছিল না। সিডিউল অনুযায়ী একদিন গেলাম মহাশ্বেতা দেবীর বাড়িতে, সে যাত্রায় গাইড হয়ে সঙ্গে নিয়ে গেলেন তাঁর ও বিজন ভট্টাচার্যের পুত্র নবারুণ ভট্টাচার্য, বিখ্যাত কবি ও লেখক। গেলাম দেবেশ রায়ের বাড়িতে। গেলাম বেলুর মঠ, কফি হাউস, কলেজ স্ট্রিট, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ- নানান জায়গায়। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম এ শ্রেণির পক্ষ থেকে আমাদের ফুল-সম্বর্ধনা দিল। বক্তৃতা করলাম। একদিন গেলাম গোর্কি সদনে বাংলা ছবি 'শিল্পান্তর' এর প্রিমিয়ার শো তে। কিন্তু সব জায়গাতেই তুমুল গরম। সমগ্র কোলকাতা গরমে ঘামছে। পাল্লা দিয়ে ঘামছি আমি। সে কী ঘাম! আমরা ছিলাম গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট হোস্টেলে। একদিন, সারাদিন এত ঘর্মাক্ত হলাম ট্যাক্সিতে, ট্রামে, বাসে, যে- হোস্টেলে ফিরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ঘামের সেই অসুস্থতা ছিল ভয়াবহ।
রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ বিচলিত হয়ে পড়ল আমার অসুস্থতা দেখে। মুন্নী আর জামালী আমাকে সেবাযত্ন করতে ব্যস্ত হল। হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রী পূর্ব ইউরোপের দেশ, রোমানিয়ার তরুণী সুগু, সুগু ডানা, সেও ছুটে এলো চাইনিজ বামের কৌটা হাতে। সেই বাম মলম আমার কপালে ঘষতে লাগলো সুগু। আমার অসুস্থতার মুল কারণ ছিল, সারাদিন আমি এতটাই ঘেমেছি যে, শরীর পানি শূন্যতায় আক্রান্ত। সে রাতে, কোলকাতা শহরে আমার বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল। শেষপর্যন্ত যে মরিনি, তার প্রমাণ, পরদিন সন্ধ্যায় আমাদের শেষ অনুষ্ঠানে হাজির হতে পেরেছিলাম। কবি নবনীতা দেব সেনের সঞ্চালনায় কবিতা পাঠ, কোলকাতার জয়দেব বসু, রুপক ..., বিশ্বজিৎ পাণ্ডা ও মন্দাক্রান্তা সেন এবং বাংলাদেশ থেকে যথাক্রমে শাহনাজ মুন্নী, মঞ্জুলিকা জামালী ও সবশেষে আমি। ফলে, আমার জীবনে ঘামের ঘটনা ঘামসূত্র লেখার বহু আগে থেকেই ঘটে চলেছে, প্রমাণিত। দু:খ, জয়দেব দা গতবছর হঠাৎ চলে গেলেন।
তাছাড়া কাম, তাছাড়া ঘাম, তাছাড়া সূত্র, তাছাড়া টোকন ঠাকুর- তাছাড়া কি হয়? হয় না। কাম করব আর ঘাম ছুটবে না, তা তো হয় না। তাই, কামের যেমন সূত্র আছে সূত্র নেই, ঘামেরও তেমন সূত্র আছে সূত্র নেই। ঘামসূত্র গ্রন্থের সহায়ক গ্রন্থ গ্রীষ্ম, গ্রীষ্মের নেপথ্যে নারী। দ্বিধা নেই স্বীকারোক্তিতে, নারীবিহীন কামসূত্র বা অথবা ঘামসূত্র কিছুতেই সম্ভব নয়।
প্রিয় পাঠক, যদি কখনো পড়েন, ঘামসূত্র পড়তে পড়তেই টের পাবেন, আপনিও এর বাইরে নন। আপনিও জানেন, দেখেছেন যে, ঘাম আপনার জীবনেও কী মারাত্মক ফ্যাক্টর হয়ে আছে। কাম ছাড়া যেমন মানুষ হয় না, ঘাম ছাড়াও তা হয় না। মানে ভালোবাসাই হয় না। এককথায়, ভালোবাসা ঘাম ছাড়া জমে না বা বিচ্ছুরিতও হয় না। ঢাকার কাঁটাবনের কনকর্ড এম্পোরিয়াম মার্কেটের গদ্যপদ্য এই গ্রন্থের প্রকাশনা সংস্থা। বইটা ওখানেই পাওয়া যায়।
তাহলে ঘামসূত্র পড়ে নিন, নিজ স্বার্থেই।
.......................................................
দ্বৈরথ/ সম্পাদনা: গাব্রিয়েল সুমন
..........................................................
[email protected]