somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“ও বাবা, তুমি এভাবে কাঁদছ কেন, বলতো ? তুমি এতটা পাগল কেন?”

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিচ্ছেদ............


“ও বাবা, তুমি এভাবে কাঁদছ কেন, বলতো ? তুমি এতটা পাগল কেন?”

কাল রাতে টিভিতে একটি স্থিরচিত্র দেখলাম- বড় একটি হাতের তজনী আর মধ্যমা শক্ত করে ধরে আছে ছোট্ট-কচি একটি হাত। দৃশ্যটি দেখে বুকটা হু হু করে উঠল! আমার জীবনে এ দৃশ্যটি কখনো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। আজ থেকে আট বছর আগে আমার হাতটি ঐ বড় হাতের তজনী আর মধ্যমা থেকে ছুটে গেছে। এখন যদিও আমি নিজেই ঐ বড় হাতটির জায়গায় চলে এসেছি দৃশ্যতঃ, কিন্তু মন খুঁজে বেড়ায় আ
মার হাতের চেয়ে বড় যে হাত, তাঁকে-আমার বাবার হাত। আমার বাবাকে সর্বশেষ যখন দেখি, তখন তিনি হাউ-মাউ করে কাঁদছিলেন কাঁচের ওপাশে; পাগলের মত একবার এপাশ, আরেকবার ওপাশে যাচ্ছিলেন। দিনটি ছিল ১৪ এপ্রিল, ২০০৩। পুরো কাঁচের এপাশে আমার কাছে যদিও তাঁর কান্নার শব্দ আসছিল না, কিন্তু তাঁর হাহাকার, বাচ্চা ছেলের প্রিয় খেলনা হারানোর কান্না, তাঁর অস্থিরতা- অদৃশ্য তরঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছিল চারপাশে আর আমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছিল। কাঁচের এপাশে ইমিগ্রেশন লাইনে দু বছর এগার মাস বয়সী নুবাহকে কোলে নিয়ে আমার হাসব্যান্ড কচি আর আমি সাত মাস বয়সী নূশাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি; আমার পি, এইচডি স্টাডির ফাকে আমি দেশ এসেছি বাচ্চাদের জাপান নিয়ে যেতে ।
যারা আমার বাবা প্রফেসর ডঃ শহীদুল হক কে চিনেন (ফুড টেকনোলজী বিভাগ; বা, ক, বি) তাঁরা জানেন-আমি কি ছিলাম তাঁর ; তাঁর পৃথিবীর কতটা জুড়ে ছিলাম আমি! বাবা-মেয়ের ভালবাসার সে এক কাহিনী! লিখব লিখব করেও লিখতে পারছি না। গুছিয়ে লিখতে হলে নাকি সময়ের দূরত্বে গিয়ে লিখতে হয়! বাবা চলে গেছেন অন্য এক জগতে, পবিত্র মক্কার মাটিতে শুয়ে আছেন আট বছর হয়ে গেল কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আট সেকেন্ডও কাটেনি, সময় থেমে আছে আমার বুকের ভেতরে। তাই এখনও নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারিনি, কবে পারব কে জানে ! কোনদিন কি পারব? আমার বাবার কথা লেখা দরকার। বাবার গল্প বলবে হাজারো বাবা, এমনি হাজারো মানুষের কথা। আমাদের ভালবাসার এই গল্প আলো দেখা “ডিসারব” করে, দারুন ভাবে। কিন্তু কিছুতেই লিখতে পারছিনা। কেন পারছিনা ? বুকের ভেতরের এই ক্ষরণ বন্ধ হবে কবে আর আমি কবে লিখতে পারব বাবাকে নিয়ে! এই ক্ষরণ আদৌ বন্ধ হবে কি কখনও ?
জীবনের প্রয়োজনে যখন আমাকে ছাড়তে হল বাবার আর মেয়েদের ছাড়তে হল আমার, বাবা আঁকড়ে ধরলেন আমার মেয়েদের, তাঁর নাতনীদের। আমার দু-মেয়ের জন্মমুহূর্ত থেকে বাবা আমার মেয়েদের এত ভালবাসা দিয়েছেন, এমনভাবে তাঁর নাতনীদের লালন-পালন করেছেন যে- “মাটিতে রাখেননি যদি পিঁপড়া কাটে ওদের, মাথায় রাখেননি যদি পোকা কামড়ায় তাঁর নাতনীদের।“ মা-ছাড়া দুই নাতনীকে তিনি বুকে রেখেছেন, স্রেফ বুকে। তাই বিচ্ছিন্নতার সেই ১৪ এপ্রিল, ২০০৩ রাতে বিমানবন্দরে কাঁচের ওপাশে ওভাবে আমার বাবার কান্নার কারন বুঝা সম্ভব শুধু আমার বাবা আর আমার, আর কারো নয়। একই সাথে তাঁর পুরো পৃথিবী আঁধার করে দিয়ে তাঁর জীবনের তিন-তিন টি আলো চলে যাচ্ছে, কি করে সহ্য করবেন তিনি! আমার শূন্যতা একদিন তিনি ঘুচিয়েছেন নাতনীদের দিয়ে, মেয়ে আর নাতনীরা যখন একই দিনে একই সঙ্গে চলে যাচ্ছে দূরে, বহুদূরে তখন এই এত এত শূন্যতা তিনি পূরণ করবেন কি দিয়ে, কাকে দিয়ে? তাঁর মত “কন্যাপাগল” মানুষ থাকবেনটা কি নিয়ে! মাঝে মাঝে মনে হয়, নাকি তিনি ভেবেছিলেন- মেয়ে আর তাঁর নাতনীদের সঙ্গে সেদিনই তাঁর শেষ দেখা! যদি সে রাতে কাঁচের দেয়াল পেড়িয়ে ওপাশে ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাতে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করতে পারতাম- “ ও বাবা, তুমি এভাবে কাঁদছ কেন, বলতো ? তুমি কি পাগল নাকি ? এভাবে কেউ কাঁদে ? মানুষের মেয়ে কি বিদেশে পড়তে যায় না? দরকারে নাতনীরা দূরে যায় না ? এভাবে কেউ কি কাঁদে ? তুমি এভাবে কাঁদছ কেন? তুমি এতটা পাগল কেন? কেন বাবা, বলতো ?”

With due respect and regards

Prof. Dr. Fatema Hoque Shikha
Department of Fisheries Technology
Bangladesh Agricultural University
Mymensingh-2202
e-mail: [email protected]

(েলখাটা এ বছেরর বাবা িদবেস িলখা)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×