somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমিক যুগের যবনিকা, পিতা যুগের জন্মে

০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এলাকার বন্ধুদের মধ্যে প্রেমের সফলতার হার এখন পর্যন্ত শতভাগ। ’শতভাগ শাফল্য’র মধ্যে অবশ্য বিজ্ঞাপনের মতো একটা এস্টারিসক (*) আছে, যা ব্যাখ্যার দাবি রাখে। ক্রিকেট খেলায় যেমন ব্যাটসম্যানের রানের গড় বের করতে নট আউট ইনিংসগুলোকে হিসেবে ধরা হয় না, এখানেও তেমনি শতকরা বের করতে কেবল ’নট আউট’ ইনিংসগুলোকেই বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কারণ এক জীবনে কয়জনই বা প্রথম প্রেমেই পরিণয়ের সৌভাগ্য পায়?
বাবু, নাদিম, শুভ, আমি, রবু, জাহিদ...তালিকা নেহাত ছোট নয়, তবুও সাফল্য শতভাগ। পাইপ লাইনে আরও আছে। আর তালিকায় আজ যোগ হলো আরও একটি নাম। শহিদুল। শহিদুল সম্পর্কে একটা উদাহরণে ওর একটা পরিচয় দেয়া যায় তা হলো, ওর একটা ভিজিটিং কার্ড আছে। বলা বাহুল্য নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বানানো। নাম-ধাম, ফোন নাম্বার সব ঠিক আছে। পদবীর যায়গায় লেখা Affected Investor of DSE!

বন্ধুর প্রেম নিয়ে বন্ধুদের উত্তেজনা থাকেই। তবে গত কিছুদিন যাবৎ আমরা আরও বেশী উত্তেজিত বিভিন্ন ঘটনা পরম্বপরায়। মেয়ের বাসায় সব জেনে ফেলল। স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রেম তারা তাদের জীবন থাকতে মেনে নেবেন না, প্রয়োজনে মেয়েকে ত্যাজ্য করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আধুনিকমন স্বল্প কিছু অবিভাবক বাদ দিলে এই হলো কমন সিনারিও। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হবে। কিছুদিন মান-অভিমান, রাগ-দু:খ চলবে। এবং অবশেষে তারা সবাই মিলে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকবে।
তবে শহীদুলের প্রেমটা আলোচনায় কারণ, আমরা অনেকদিন জানতামই না এর খবর। যে ডিএসই’র একজন এফেক্টেড ইনভেস্টর বলে নিজের পরিচয় দিতে পারে তার কোন কথা সহজে বিশ্বাস করে ফেলা খুবই ঝুকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং তার থেকে কোন ’নিউজ’ পাওয়াও দুস্কর।
ইদানিং খবর পাচ্ছিলাম মেয়ের বাবা-চাচা ওকে বাসায় ডেকে নিয়েছে। আলোচনা চলছে। আমরা আশাবাদী ছিলাম যে ’আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে।’ তবে প্রকৃতপক্ষে সাধারণত আলোচনার মাধ্যমে কিছুই সমাধান হয়না। শহিদুলরা গত সপ্তাহে বিয়ে করে ফেলল। মেয়ে বাসায় বলল। শুরু হলো নির্যাতন-নিপীড়ন। আবার আলোচনার আহ্বান। মেয়ের বাবা-চাচারা হায়ারে বেশ কিছু ’ভাইলোক’ নিয়ে আসলেন। শহীদুলেরও চ্যানেল ভাল। ওর পক্ষেরও লোক কম হলো না।
বাসার লোকজন সব গ্রামে থাকায় আমার বাসায় ফেরার কোন তাড়া ছিল না, আমরাও রাত প্রায় বারোটা পর্যন্ত সভাস্থলে ছিলাম। সভার সার কথা হলো, শহীদুলকে মুরুব্বী নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব নিয়ে আসতে হবে। খূব সুন্দর কথা।
এরই মাঝে গতকাল সন্ধ্যায় ওরা মেয়েকে গোপনে গ্রামের বাড়ি পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। বাসার নিচে একটা সিএনজিও রেডি করা ছিল। আর ছিল আন্তজেলা বাসের টিকিট কাটা। মেয়ে যথাসময়ে তা শহিদুলকে অবহিত করে। সন্ধ্যা থেকেই একটা টানটান উত্তেজনা চলছিল আমাদের মধ্যে। মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকে বেড় হলেই শহিদুল মেয়েকে সোজা নিয়ে চলে যাবে।
আমাদের আড্ডার স্থল মেয়ের বাসার কাছাকাছিই। হঠাৎ হৈচৈ শুনে দৌড়ে গেলাম। শ খানেক লোক জড়ো হয়ে গেছে ততক্ষণে। ভিড়ের মধ্যে আমি শহিদুল বা ওর নববধূকে দেখতে পেলাম না। শুধু পেলাম শহিদুলের অসংখ্য গূণগ্রাহীকে!
আমি প্রেমিক পুরুষ। যেকোন প্রেমের সাফল্য আমাকেও জয়ী কওে, আমাকেও আনন্দ দেয়। আর বন্ধুর সফলতা হলে তো কথাই নেই। কিন্তু আমার উত্তেজনা হঠাৎ করেই ঠান্ডা হয়ে গেল মেয়ের বাবাকে দেখে। ভদ্রলোক খালি পায়ে রাস্তায় উদভ্রান্ত ছুটোছুটি করছেন। আমার প্রডন্ড মন খারাপ হয়ে গেল। প্রেমিক-প্রেমিকার সফলতার অপর পিঠে যে পিতা-মাতার এতখানি ব্যর্থতা থাকে এতখানি পরাজয় থাকে আগে কখনও অনভব করিনি। হঠাৎই আমিও পরাজিতের দলে যোগ দিলাম।
একটা কারণ হতে পারে, হয়তো আমাদের প্রেমিক যুগের শেষে পিতা যুগের আরাম্ভ হতে চলেছে।
অনেকেই অনেক কথা বোঝাচ্ছিলেন মেয়ের বাবাকে। কেউ একজন মেয়ের বাবাকে বোঝাচ্ছিল, আপনার মেয়ে তো আমারই মেয়ে। আপনার মেয়েকে আপনার কাছে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমার। আরেকজন বলছিলেন, মেয়েতো বাপের কথা কয় না। ওই পোলার কথাই কয়। কিংবা যে মেয়ে আপনাকে এমনে অপমান করল সেই মেয়ের জন্য আপনে এমনে কানতাছেন?
এই কান্না কিছুটা অপমানের, কিছুটা পরাজয়ের তবে সিংহভাগটাই বোধহয় বাৎসল্যের।
আমরা একে একে আড্ডায় ফিরলাম সবাই। সবাই মেয়ের বাবার উপরই ক্ষ্যাপা। সে-ই এই ঘটনাটার জন্য দায়ী।
আসলেই তাই। কারণ তিনি আগের রাতে পারিবারিকভাবে আলোচনার কথা বলেছিলেন। আমার বাকি বন্ধুরা বারবার এই কথাই বলছিল। তবে ভদ্রলোক হয়তো চেয়েছিলেন আরও ভালো একটা ছেলের কাছে মেয়েকে সমর্র্পণ করতে। তিনি চেয়েছিলেন আরেকটু মঙ্গলময় কিছূ। তিনিও হয়তো বুঝতেন মাথার যুক্তি ঠিক আছে, কিন্তু মনের যুক্তি?
বাসায় ফিরে তালা খুলে মাত্রই ঢুকলাম, অমনি শুভর ফোন। গত তিন চারদিন যাবৎ আমার বাসায় কেউ নেই। শুভ শহিদুল এবং মিশন দম্পতিকে নিয়ে আমার আসল। শুধু মনে একটু যা দ্বিধা ছিল তা হলো, বাড়িওয়ালি আন্টিরা বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে এত রাতে মেয়ে মানুষ নিয়ে আসার ঘটনাকে কোন পর্যন্ত না নিয়ে যায়। আমি দ্রুতই সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে হঠাৎ করেই ইতহাসের অংশ হয়ে গেলাম।
শহিদুলদের একরুমে দিয়ে আমি আর শুভ আরেক রুমে কম্পিউটার আর গল্প করেই সারা রাত পার করে দিলাম। শুভ নব্য বাবা। ওর ছেলের গল্প শুনছিলাম। বলছিল মাঝে মাঝেই মাঝ রাত পর্যন্ত কোলে নিয়ে থাকতে হয়। গত রাতে সারা রাতই কোলে নিয়ে রেখেছিল। আমি বললাম, কেন কান্নাকাটি করে নাকি?
ওর কথাটা খুব ভালো লাগলো, কান্নাকাটি করে না, তবে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। আর ওভাবে তাকিয়ে থাকলে নাকি কোল থেকে বিছানায় নামিয়ে দিতে মন চায় না।
এই অনুভূতি আমি এখনও জানি না।
শুধু মনে মনে ভাবলাম, এরকম কত রাত মিশনের বাবা-মা কি জাগেননি? এরকম কত রাত কি শহিদুল-মিশন জাগবে না?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×