somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কখনও প্রশ্ন তোলেনি, কেন তিনি জঙ্গি, কেন তাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আড়াই বছর ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ধানমন্ডির ৬/এ এলাকায় ‘গ্রে’ কালারের একটি বাড়ি। বাড়িটির সামনে ২৪ ঘণ্টা একদল লোক ঘুর ঘুর করছেন। কেউ বাড়িতে প্রবেশ করলে বের হয়ে আসার পর তাকে এখানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। কাউকে আবার বাড়িতে প্রবেশ করার আগেই ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবেই তীক্ষ্ম নজরদারি রাখা হচ্ছে এ বাড়ির বাসিন্দা ও আগত অতিথিদের ওপর। বাড়ির একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরীরের উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মাওলা ও তার পরিবার। তাই এ সরকারের চার বছরে এ বাড়ির সামনে অবিরাম বসিয়ে রাখা হয়েছে ডিবি, এসবিসহ নানা সরকারি বাহিনী। এ বাড়িতে গোলাম মাওলার পরিবার ছাড়াও তার শ্বশুর-শাশুড়ি ও আরেকটি পরিবার থাকে।
পরিবারের অভি-যোগ, নজরদারির নামে দিনে দিনে বেড়েছে রাষ্ট্রীয় হয়রানি। বাড়ির সামনে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা কিছু বিক্রি করতে এলে তাদের এদিকে না আসার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। কোনো আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে এলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলে তাদের শরীর চেক করা হয়, এখানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়। তাই এ বাড়ির সামনে সহজে কেউ আসতে চায় না। মেয়েদের কোরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য আসা মৌলভী ও পড়াতে আসা প্রাইভেট টিউটরকে নানাভাবে হয়রানি করায় এখন আর কেউ পড়াতেও আসেন না। জঙ্গির সন্তান বলে গোলাম মাওলার মেয়েদের সঙ্গেও কেউ মিশতে চায় না। বাড়ির অন্য বাসিন্দারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারছে না। সারাক্ষণ সরকারি লোক ঘুর ঘুর করায় শিশুরা বাড়ির গেটের সামনে যেতে ভয় পায়। সরকারের এমন অনভিপ্রেত নজরদারির কারণে অস্বস্তি ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এ বাড়ির বাসিন্দারা। এমন আতঙ্ক, উত্কণ্ঠা আর নজরদারির খড়গে পড়ে একরকম অস্থির দিন কাটছে এ পরিবারটির। তারা সরকারের এমন আচরণকে জুলুম দাবি করে আল্লাহর কাছে এর বিচার চান। সরকারকে অনুরোধ করেন অন্তত শিশু সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ দেয়ার জন্য।
প্রসঙ্গত, কথিত নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল গোলাম মাওলাকে। এ মামলায় তিনি আপিল বিভাগ থেকে জামিন পেয়ে গত চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে বের হয়ে আসার সময় তাকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশের একটি দল। এরপর পাঁচদিন তার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে গোলাম মাওলার স্ত্রী শাহিদা আহমেদ। সম্মেলনের পর ২৪ সেপ্টেম্বর গুলশানস্থ মার্কিন দূতাবাসের সামনে কিছু যুবকের বিক্ষোভের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার দেখায় ডিবি। পরে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ১ অক্টোবর গোলাম মাওলাকে আদালতে হাজির করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ নতুন আরেকটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ড চায়। আসামিপক্ষ একে সাজানো মামলা উল্লেখ করে আসামির জামিন চায়। এ উভয় আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের ডিবির হয়রানি : অধ্যাপক গোলাম মাওলা যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন সেই বাড়িটি সব সময় ঘিরে রাখে সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন। এ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে আছেন ওই বাড়ি বাসিন্দারা। গোলাম মাওলার শ্বশুর লতিফ আহমেদ বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে আমার বাসার সামনে ডিবি-এসবির লোকজন সারাক্ষণ পাহারা দিচ্ছে। আমার বাসায় ৯ জন শিশু রয়েছে। তাদের কোরআন পড়াতে মৌলভীরা আসেন। বাসার বাইরে গেলে এসবির লোকজন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। কেন এ বাসায় এসেছে জানতে চায়। এ কারণে কয়েকজন মৌলভী চলে যান। প্রাইভেট টিউটর ইংলিশ পড়াতে আসেন। তাদের গেটে ধরে হয়রানি করে। তাই কেউ বাসায় পড়াতে আসতে চায় না। আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন বাসায় বেড়াতে এলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। শুধু এইটা না, আমাদের বাসার সামনে পানওয়ালা, মোরগওয়ালা, তরকারিওয়ালা যারা আসে তাদেরও ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করে। তারা সর্বক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা ভিকটিম। কিছুই বলতে পারছি না। লোকজন এ বাড়িতে ঢুকতে ভয় পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরকে বিনা অপরাধে হ্যান্ডকাফ লাগিয়েছে। একজন সহকর্মী টিচারও এর প্রতিবাদ করলো না। কি আর বলার আছে’
আর্থিক টানাপোড়েন, মেয়েদের ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কা : গোলাম মাওলার চার মেয়ে। বড় মেয়ে তাসনিম শাঈরা সাঈদ রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে এ লেভেল পাস করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অ্যাডমিশন টেস্ট দেবে সে। দ্বিতীয় মেয়ে নাজিহা আজমাইন সাঈদ এ বছর এ লেভেল পরীক্ষা দেবে। তৃতীয় মেয়ে সিলমি সানিয়া সাঈদ তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। ছোট মেয়ে সামিয়া মারিয়ম সাঈদ কেজি টুতে পড়ছে। লতিফ আহমেদ বলেন, ‘তারা সবাই বাবার মতো মেধাবী। বড় দুই মেয়ে গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে পাস করেছে। ছোট দু’জন ক্লাসে ফার্স্ট। ওদের পড়ার খরচ অনেক। মামা, চাচারা সাধ্যমতো সাহায্য করছেন। এসব নিয়ে মেয়েরা হীনম্মন্যতায় ভোগে। কোথায়, কোন সাবজেক্টে ভর্তি হবে বাবা ছাড়া এসব সিদ্ধান্ত কে নেয় বলেন’। স্বামীর অবর্তমানে গোলাম মাওলার স্ত্রী পরিবারের হাল ধরেছেন। তিনি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ‘এডভাইজর’ হিসেবে কাজ করছেন।
সামাজিক আনন্দ থেকে বঞ্চিত একটি পরিবার : গোলাম মাওলার পরিবারের ভাষ্যে, ‘সোসাইটিতে খুব হ্যারাসড হচ্ছেন তারা’। গোলাম মাওলার শাশুড়ি এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘর থেকে বের হতে পারি না, আমার ঘরে মানুষ আসতে পারে না। আশপাশের কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বললে সরকারি লোকজন তাদের হয়রানি করে। তাই কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। আমার নাতিরা খেলতে যেতে পারে না। তাদের সঙ্গে অন্য শিশুরা মিশতে চায় না। ওরা স্কুলে গেলে ক্লাসমেটরা বলে জঙ্গির মেয়ে, সন্ত্রাসের মেয়ে। বাসায় এসে আমাকে প্রশ্ন করে, কেন বাবা সন্ত্রাসী হলো। বাবা কি আসলেই সন্ত্রাসী নানু ভাই?’
একটু থেমে তিনি আবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার কাছে লিফলেট ছাড়া আর কী পেয়েছে সরকার। বন্ধুরা তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না। গোলাম মাওলার মেয়ে শুনলে অনেকে ভয় পায়। কথা বলতে চায় না। এ নিয়ে প্রায়ই মন খারাপ করে থাকে মেয়েগুলো। বাড়ির সামনে সব সয় সরকারি লোক থাকায় কেউ তেমন একটা আসতেও চায় না। ওরা ছোট মানুষ। অথচ ওদের কোনো আনন্দ নেই। ওরা বাসা থেকে বের হতে গেলেই দেখে একদল লোক বাসার সামনে দাঁড়ানো। তাই ভয়ে ওরা গেটের কাছেও যায় না।’ তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের আর কোনো অপরাধ নেই। আমরা আল্লাহকে ভালোবেসেছি। এটাই আমাদের পরিবার। সেই আল্লাহর কাছেই এর বিচার চাইলাম। আসলে আমাদের পরিবারটা আজ শেষ। এখানে আনন্দ-হাসি বলতে কিচ্ছু নেই। সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। কখন কি ঘটে।’
জীবনের সব পরীক্ষায় ‘ফার্স্ট’ সৈয়দ মাওলা : পরিবার সূত্র জানায়, ১৯৫৭ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার পূর্ব আসকামরা গ্রামে সৈয়দ পরিবারে জন্ম গোলাম মাওলার। বাবা সৈয়দ তাজুল ইসলাম। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড মেধাবী ছিলেন। ছোটবেলায়ই তিনি মাকে হারান। কৈশোর না পেরুতেই হারান বাবাকে।
১৯৭৩ সালে কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ফার্স্টস্ট্যান্ডসহ এসএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসিতে ফার্স্টস্ট্যান্ড অর্জন করেন। তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। ১৯৮০ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক পাস করেন। ১৯৮২ সালে স্নাতকোত্তরেও প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে নিজ বিভাগেই লেকচারার হিসেবে যোগ দেন গোলাম মাওলা। ১৯৮৫-৮৬-৮৭-তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার নির্বাচিত হন। ’৮৭ সালে ‘অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর’ হিসেবে পদোন্নতি পান। একই সালে বিয়ে করেন ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে (সিএসই) স্নাতক পাস করা শাহিদা আহমেদকে। ১৯৯১ সালে তিনি লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অজর্ন করেন। ব্রিটিশ সরকার তার শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে লন্ডনের নাগরিকত্ব নিয়ে সে দেশে থেকে যেতে বলে। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে দেশে চলে আসেন। গোলাম মাওলার বড় ভাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ‘ডেপুটি ডিরেক্টর’র দায়িত্ব পালন শেষে অবসর নেন। আরেক ভাই ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ‘কনসালটেম্লট’ হিসেবে কাজ করছেন। লতিফ আহমেদ জানান, গোলাম মাওলা ডায়াবেটিস, বেক পেইনসহ নানা রোগে ভুগছেন। দীর্ঘ সময় কারান্তরীণ থাকায় তার শারীরিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। শরীরের ওজন অর্ধেক কমে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা : পরিবারের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে কথিত জঙ্গি হিসেবে আখ্যা দিয়ে দীর্ঘ সময় কারান্তরীণ রাখলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। তারা কখনও প্রশ্ন তোলেনি, কেন তিনি জঙ্গি, কেন তাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আড়াই বছর ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। লতিফ আহমেদ বলেন, আমরা ভিসি স্যারের সঙ্গে বহুবার দেখা করেছি। তিনি আমাদের ব্যাপারটা দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিসি বলেন, সরকার জঙ্গি বলে একটা লোককে আটক করল আর আমরা সবাই মেনে নিলাম। একটি মানবাধিকার সংগঠনও এ প্রশ্নটা করল না ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আআমস আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক ব্যক্তিগত মামলায় জড়ালে প্রশাসন লিগ্যাল এইড না। গোলাম মাওলা গুম হয়েছেন—তার স্ত্রীর এমন অভিযোগের পূর্বে এ নিয়ে ডিবির সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমার সঙ্গে কেন কথা হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে অনেক ব্যাপার আছে। অফিসে এসে দেখা করো আমার সঙ্গে। এ নিয়ে কথা বলবো।
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর কর্মকারের সঙ্গে দেখা করে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো রাষ্ট্রের ব্যাপার। এখানে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত বা বক্তব্য নেই। এক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্টের কিছু করার নেই।’ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে আপনাদের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘তার রাজনৈতিক আইডোলজি কী। রাষ্ট্র কী মনে করছে এটা আমরা কী করে বলব। এখানে আমাদের কী করার থাকতে পারে। তুমি আমাকে কোট করে আবার কিছু লিখো না। এ ব্যাপারে আমি কথা বলতে ইচ্ছুক নই।’
পিতার অপেক্ষায় মেয়েরা : আল্লাহকে আর কতবার বললে মুক্তি মেলবে বাবার!
লতিফ আহমেদ বলেন, ছোট মেয়ে সামিয়াকে গত ঈদে নিয়ে গেলাম বাবাকে দেখাতে। এর আগেরবার দেখা হওয়ার সময় মেয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিল বাবা তুমি কবে বাসায় আসবে। বাবা বলেছিল ‘তুমি আল্লার কাছে দোয়া করো মা’। এবার ঈদের সময় বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ‘বাবা আর কতদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তুমি ছাড়া পাবে বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে ও।’ সেদিন বাবাকে নিরুত্তর দেখে ওর কান্না আর থামেনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ওরা পাঁচ ছয় বছরের বাচ্চা। জেলখানার দেয়াল অনেক উঁচু। ওরা তাই কথা বলার সময় বাবাকে দেখতে পায় না। আমরা বহু চেষ্টা করেছি, বহুবার আবেদন করেছি বাবা-মেয়েকে মুখোমুখি কথা বলার একটু সুযোগ দেয়ার জন্য। কারা কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত সেই সুযোগ দেয়নি। বাচ্চারা বাবাকে কাছে না পেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বাবার কথা মনে পড়লে ওরা প্রায়ই কাঁদে। বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য বায়না ধরে। কিন্তু আমাদের কী করার আছে এটা ওদের বোঝানো যায় না। সরকার এ মানবিক আবেদনটিও গ্রহণ করেনি।’
সেজো মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সিলমি সানিয়া সাঈদ বলেন, ‘আব্বুর সাথে এখন কথা হয় না। আগে কথা হতো। আব্বু আমাকে মার্কেটে নিয়ে যেতো। আর সামিয়াকে (ছোট) নিয়ে যেত স্কুলে।’ ‘বাবা বাসায় না থাকায় তোমার কী খারাপ লাগছে’—জানতে চাইল কেঁদে ফেলে সিলমি। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে, আব্বু কবে আসবে জানি না। ছোট মেয়ে সামিয়া কোনো কথা না বলে তার পিতা কবে বাসায় ফিরে আসবে জানতে চান এ প্রতিবেদকের কাছে।
রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার অধ্যাপক গোলাম মাওলার পরিবার : আল্লাহকে আর কতবার বললে তুমি ছাড়া পাবে বাবা : মেয়ের প্রশ্ন
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৭:২১
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×