somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিকশার টানে বাংলাদেশে

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিসিলিয়া আমি কিতাজিমা। জাপানি এই তরুণ চিত্রপরিচালক রিকশার টানে একাধিকবার এলেন বাংলাদেশে। মুগ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশের রিকশা দেখে। ঠিক করেছেন, আগামী বছর আয়োজন করবেন এক রিকশা-উৎসবের। এ ছাড়া নির্মাণ করবেন রিকশা নিয়ে তথ্যচিত্র

সিসিলিয়া আমি কিতাজিমা বাংলাদেশে প্রথম এসেছিলেন গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। জাপানের এই তরুণ চিত্রনির্মাতার পরিকল্পনা ছিল, এশিয়ার কয়েকটি দেশ নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করবেন। নানা কারণে সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। খানিকটা হতাশই হয়েছিলেন কিতাজিমা। তবে সেই হতাশা ভুলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের রিকশা দেখে! এত কিছু থাকতে রিকশা! পুরান ঢাকায় রিকশায় করে ঘুরতে ঘুরতে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন কিতাজিমা, ‘জাপানের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো। জীবনযাপনের মান অনেক উন্নত। কিন্তু সেখানে আনন্দ খুঁজে পাই না আমি। অথচ বাংলাদেশ দারুণ আনন্দ-জাগানিয়া একটা দেশ। বিশেষ করে এখানকার রিকশাচালক আর রিকশা দেখে মনে হয়েছে, এখানে অনেক রং! অনেক দুঃখ-কষ্ট থাকলেও এখানে প্রাণ আছে!’
প্রাণের স্পন্দন পেয়েছেন বলেই বাংলাদেশের রিকশাচালক, রিকশা আর রিকশাচিত্র নিয়ে কাজ করতে চাইছেন কিতাজিমা। কী ধরনের কাজ? রিকশায় প্রবল ঝাঁকুনি, তার পরও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই রেস, মানে দীর্ঘ দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশের টোকিও ম্যারাথনের কথা বলতে পারি। এটা খুব বিখ্যাত হয়ে গেছে। এ রকমই একটা রেসের আয়োজন করতে চাই। এই রেস হবে রিকশার। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা থেকে একজন করে রিকশাচালক তাঁদের রিকশা নিয়ে অংশ নেবেন এতে। মোট কথা, একটা রিকশা-উৎসবই করতে চাইছি আমরা।’
জানিয়ে রাখা ভালো, জাপানি এই পরিচালক প্রথমে একদম ব্যক্তিগত উদ্যোগেই বাংলাদেশের রিকশা নিয়ে কাজ করার কথা ভেবেছিলেন। তবে এখন তাঁর পাশে অনেকেই দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) চাইছে কিতাজিমার সঙ্গে থাকতে। আগামী বছর বাংলাদেশে জাইকার উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করার ৪০ বছর পূর্তি হবে। এ উপলক্ষে নানা কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই তারা কিতাজিমাকে প্রস্তাব দিয়েছে আগামী বছরের মার্চ মাসে তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও জাপানের দুই দূতাবাস এবং জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনও যুক্ত আছে কিতাজিমার উদ্যোগের সঙ্গে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসেছিলেন কিতাজিমা। আমাদের সঙ্গে কথা হলো ২৭ সেপ্টেম্বর। জন্ম আর্জেন্টিনার বুয়েনেস এইরেসে, বেড়ে ওঠা জাপানেই। বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্রের এই নির্মাতা কাজ করছেন জাপানের টেলি ইউজ ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। ২৯ সেপ্টেম্বর জাপানে ফিরে যাওয়ার আগে জানালেন, কেবল রিকশা রেসই নয়, ওই রেসের সময় সব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করবেন তিনি। সেটা দিয়েই হবে তথ্যচিত্র। এ ছাড়া পরে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র তৈরিরও পরিকল্পনা আছে তাঁর। ‘তথ্যচিত্র তৈরি করব ঠিক করেছি। আর ঠিক করেছি, ৬৪টি জেলার রিকশাচালকেরা তাঁদের এলাকার চেয়ারম্যানদেরও নিয়ে আসবেন সঙ্গে। ওই রেসের সময় চেয়ারম্যানরা বসে থাকবেন রিকশায়। তাঁদের হাতে থাকবে নিজ নিজ এলাকার অধিক উৎপাদিত ও বিখ্যাত সব পণ্য। যেমন ধরুন, টাঙ্গাইল থেকে যিনি আসবেন, তাঁর হাতে থাকবে টাঙ্গাইল শাড়ি। বগুড়া থেকে যিনি আসবেন, তার হাতে থাকবে দই।’
এমনটা কেন করবেন? ব্যাখ্যা করলেন কিতাজিমা, ‘এই রেসের মাধ্যমে রিকশাওয়ালা ও সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষের মধ্যে যে দূরত্ব, সেটা ঘোচানোর ইঙ্গিত থাকবে। এ ছাড়া যিনি দই নিয়ে আসবেন, তিনি সবাইকে বলবেন, “দেখো, এটা আমাদের এলাকার দই, অনেক বিখ্যাত।”’
তার মানে এই উদ্যোগে বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণও আছে? মাথা নাড়লেন কিতাজিমা, ‘হ্যাঁ, আছে। কারণ, রেসের সময় আমরা বাংলাদেশিদের পাশাপাশি অনেক জাপানিকেও আমন্ত্রণ জানাব। তাতে করে রিকশাচালকদের এলাকার পণ্যের প্রচার হবে। পাশাপাশি রিকশাও যে পর্যটনশিল্পে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, তা দেখানো যাবে।’
একইভাবে রিকশাচিত্রের ব্যাপারেও সমাজের দুই স্তুরের শিল্পীদের একসঙ্গে করতে চান কিতাজিমা। রিকশা-উৎসবে রেসের পাশাপাশি বাংলাদেশের নামজাদা চিত্রশিল্পীদের পাশে বসে ছবি আঁকবেন রিকশাচিত্রকরেরাও। এসব মিলিয়ে হবে উৎসব।
পুরান ঢাকার অলিগলি ঘুরতে ঘুরতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো! রিকশা থেকে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে কিতাজিমা বলেন, ‘আগামী নভেম্বর মাসে আবার বাংলাদেশে আসব। তখন সবার সঙ্গে বৈঠক করে ঠিক করব, উৎসবটা কীভাবে হবে না-হবে। তবে রেস হবে জাতীয় সংসদের সামনে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিও মিলেছে। আসলে এই দেশের সবাই এত ভালো, প্রথমবার এসেই মুগ্ধ হয়ে গেছি। বিশেষ করে এই রিকশাওয়ালাদের দেখুন, বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে কত কষ্টই না করছেন! কিন্তু মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগেই আছে।

সূএ:
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×