somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোল্লা কি বস্তু ???

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

...যে প্রশ্ন করছিলাম, এই যে ভেতরের ন্যাজ, এর উদ্ভব কোথায়? আমার মনে হয় টিকিতে ও দাড়িতে। টিকিপুর ও দাড়িস্তান ই বুঝি এর আদি জন্মভূমি। পশু সাজবার মানুষের একি 'আদিম' দুরন্ত ইচ্ছা!- ন্যাজ গজাল না বলে তারা টিকি দাড়ি জন্মিয়ে যেন সান্তনা পেল।

......হিন্দুত্ব মুসলমানত্ব দুই সওয়া যায়, কিন্তু তাদের টিকিত্ব দাড়িত্ব অসহ্য, কেননা ঐ দুটোই মারামারি বাধায়। টিকিত্ব হিন্দুত্ব নয়, ওটা হয়ত পন্ডিত্ব। তেমনি দাড়িও ইসলামত্ব নয়, ওটা মোল্লাত্ব। এই দুই "ত্ব" মার্কা চুলের গোছা নিয়েই আজ যত চুলাচুলি!............
- কাজী নজরুল ইসলাম (হিন্দু-মুসলমান)


রবীন্দ্রনাথএরও দাড়ি ছিলো। দাড়িওয়ালা নাস্তিকএর অভাব নাই বাংলাদেশে। দাড়ি আমারও আছে। দাড়ি এই দেশে অনেকেই রাখে। সুতরাং, এই সহজ বিষয়টা নজরুলএর না বুঝার কোন কারন নাই। তিনি এইখানে দাড়ি রাখাটাকে ইসলামএর প্রতিক হিসাবে যেই ক্লাস প্রচার করে এবং ব্যাবহার করে সেই মোল্লা ক্লাসকে ইঙ্গিত করেছেন। টাকনুর নিচে কাপড় পড়লেই অথবা মুঠি সমান বা তারচেয়ে বড় দাড়ি রাখলেই কেউ আরেকজনএর চেয়ে বেশি ভালো মানুষ হয়না, বেশি বড় মুসলমানও হয় না। দাড়ি মানব দেহের একটা বায়োম্যাটারিয়াল মাত্র। এইটারে চেছে ফেলে দিয়ে অথবা নানান ভাবে কাটাকুটি করে নানানরকম ফ্যাশন ভ্যালু তৈরি করা যায়। কিন্তু দাড়ির কোন বিশেষ নৈতিক, ধার্মিক, আদর্শিক বা আধ্যাত্বিক মূল্য নাই। এর সর্বোচ্চ যা আছে তা হলো আইডিন্টিকাল ভ্যালু। জগতে নানান জাতির নানান রকম দাড়ি রাখার ফ্যাশন আছে, নানান রকম চুল রাখার ফ্যাশনও আছে। আর দাড়ির এই আইডেন্টিটির জায়গাতেই আসলে নজরুলএর আসল আপত্তি। নজরুল মূলত মানবতাবাদী ছিলেন এবং রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনায় কিছুটা জাতীয়তাবাদী ছিলেন। স্বজাত বলতে তিনি মুসলমান বুঝতেন না, বুঝতেন এদেশীয়। অথচ এই স্বজাতকে দুই জাতে বিভক্ত করা হয় দাড়ি ও টুপির আইডিন্টিটি নির্ভর ধার্মিকতা দিয়ে। এইটা ধার্মিকতা না, বরং পুরোদস্তুর আইডিন্টিটি পলিটিক্স। এই পলিটিক্সএ টিকিপুর ও দাড়িস্তান কেন্দ্রীক জাতীয় চেতনার প্রচার করে। এই আইডেন্টিটি পলিটিক্সে নেতৃত্ব দেয় মোল্লা ও ব্রাক্ষ্মন পন্ডিতদের মতো পুরোত শ্রেণী। ব্রিটিশ আমলে এই শ্রেণীটা ছিল সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বেসিক ফোর্স, অথচ উপর দিকে নেতৃত্ব দিতো জিন্নার মতো সেকুলার লোকজন, যারা মদ খেয়ে ইসলামী জাতীয়তাবাদ প্রচার করতো। এই জিন্না ক্লাসএর লোকজন ইসলামকে আইডিন্টিটি হিসাবে নিয়েছিলো, আইডিয়ালিজম হিসাবে না। আধুনিক বাংলাদেশে এখনো এই শ্রেণীটাই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও সংস্কৃতির বেসিক ফোর্স, উপর দিকে জিন্না শ্রেণীর রাজনীতিবিদরা এখনো নেতৃত্ব দেয়, যারা নিজেদের দরকার মতো এই সাম্প্রদায়িক মোল্লা শ্রেণীর সাথে কখনো আপোশ করে, কখনো বন্ধুত্ব করে, কখনো এদেরকে ব্যাবহার করে এবং মাঝে মাঝে এদের ফাপোর মারে আবার নিজেরাও ফাপোর খায়। এই দুই পরস্পর নির্ভরশীল শ্রেণী যতদিন নিজেদের মধ্যকার এই ক্ষমতা সম্পর্ক বজায় রাখবে ততোদিন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ হবেনা, সম্ভাবনা থেকেই যাবে।

নজরুল এইখানে মোল্লা বলতে যা বুঝাইছেন আমিও মোল্লা বলতে তাই বুঝি। মোল্লা এমন একটা ক্লাস যেই ক্লাস ইসলাম নিয়া সদাই আইডেন্টিটি পলিটিক্সএ রত। সেইটা কখনো ওয়াজের মাঠে আবার কখনো রাজনীতির ময়দানে। ওয়াজএর মাঠে এবং রাজনীতির ময়দানে ইসলাম নিয়া এই আইডিন্টিটি পলি্টিক্সএক আমরা মেনে নিয়েছি, একে আমরা প্রতিরোধ করিনাই। কিন্তু এই আইডেন্টিটি পলিটিক্স যখন মন্দির পোড়ায়, বৌদ্ধ মুর্তি পোড়ায় তখন আমরা চমকে উঠি, ভয় পাই। তখন আমাদের টনক নড়ে। অথচ ওয়াজের ময়দানে এবং রাজনীতির মাঠে ইসলাম নিয়া আইডেন্টিটি পলিটিক্স যদি না হইতো তবে মন্দির পোড়ানোর মতো ঘটোনা ঘটতে পারতোনা।

উল্লেখ্য, আমি ইসলামএর একেবারেই কোন রাজনৈতিক ব্যাবহারএর বিরুদ্ধে না। ইসলাম সম্পর্কৃত যেই কোন সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক চর্চা বা আন্দোলন হইতে পারে। এই অধিকার এই দেশের প্রত্যেকটা মানুষএর আছে। কিন্তু এই রাজনীতি হয় আইডেন্টিটির রাজনীতি তাইলে সেই রাজনীতি বাংলাদেশের রাজনীতি হতে পারেনা, সেইটা দাড়িস্তানের রাজনীতি। আমরা ইতিপূর্বে দাড়িস্তান দেখেছি, ইসলাম বিষয়ক আইডেন্টিটির রাজনীতি আমাদের দাড়িস্তান চিনাইছে। এই দাড়িস্তানএর নাম পাকিস্তান। অথচ এখনো আমরা এই দাড়িস্তানএর রাজনীতিকে নির্মূল করতে পারিনাই।

আমি এর জন্যে সবাইরে দোষ দেই। এই দেশের সাধারণ মানুষরে দোষ দেই, যারা বার বার দাড়িস্তানী শোষকদের হাতে শোষিত হইয়াও তাদের আইডিন্টিটি রাজনীতি দিয়া বারবার প্রভাবিত হয়। আমি দোষ দেই এই দেশের প্রত্যেকটা বড় রাজনৈতিক দলকে যারা এই দাড়িস্তানী রাজনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে নিজেদের নানান রাজনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্যে।

এই দাড়িস্তানের রাজনীতি আজকে বুদ্ধ মুর্তি পোড়াচ্ছে। ভবিষ্যতে সংসদ পোড়াবে। তারপরে হুশ হইলেও হইতে পারে। কিন্তু তখন হুশ হলে লাভ হবে কি?

(ব্লগার হাসুইন্যা'র মোল্লা বলতে এখানে নজরুল কি বুঝাইছেন বা আমি কি বুঝি সেই প্রশ্নের উত্তরে।)
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×