somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরিয়ার বিপ্লব বদলে দিতে পারে মুসলিম বিশ্ব

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিরিয়া সম্পর্কে লিখতে গেলেই আমার কাজের জায়গায় সিরিয়ান সহকর্মী ও বন্ধু বাসাম দাহানের কথা মনে পড়ে । যার কাছ থেকে জেনেছি সিরিয়ার অনেক কথা তাই আজকের এ লিখাটা সম্ভব হয়েছে বাসামের এবং এক বাংলাদেশী ভাই, মাহবুব সাহেবের একটি ইমেইলের জন্য। অতএব এ লেখার ক্রেডিট বাসাম ও মাহবুব সাহেবের প্রাপ্য । চেষ্টা করব লিখাটা যত সম্ভব দীর্ঘায়িত না করতে।

সিরিয়াতে এখন যা হচ্ছে তা দেখলে যে কোন বিবেকবান মানুষের মনে দু:খ লাগার কথা। তবে মুসলিম উম্মাহর একটি দেশে সরকার বিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত এভাবে রক্তক্ষয়ী আভ্যন্তরীণ যুদ্ধে রূপ নেয়ায় সে দেশের মানুষের এ করুণ অবস্থার জন্য প্রতিটি মুসলিমের হৃদয় আরো অধিক ব্যথিত হওয়ার কথা। আল্লাহর রাসুল বলেছেন।

“"মুসলিম উম্মাহর একটি শরীরের মত. যদি চোখ ব্যথা হয় তাহলে পুরো শরীর ব্যথা হয় এবং যদি মাথা ব্যাথা হয় তাহলে পুরো শরীর ব্যথা হয় "

আরব বসন্তের গন-বিপ্লবের আঘাতে একে একে তিউনিসিয়া, মিশর, লিবিয়া ও ইয়েমেনর স্বৈরাচারী শাসকদের পতনের পর আশা করা গিয়েছিল সিরিয়ার শাসক বাশার আসাদেরও পতন হবে শীঘ্রই কিন্তু দেখা যাচ্ছে তা না হয়ে গণহত্যা চলতেই আছে। ক্ষমতালিপ্সু এ জঘন্য স্বৈরশাসক ও তার হুকুমবরদার তলপিবাহকদের মানুষ হত্যার নেশা যেন শেষ হবার নয়। শুরুতে এ আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ সরকার বিরোধী প্রতিবাদ মিছিল।

অন্যান্য আরব দেশের আন্দোলনের মত সিরিয়া জনতার স্লোগান ছিল একই,“আস্ শাব ইউরিদ ইসকাত আল নেজাম” অর্থাৎ “জনতা চায় এ শাসন ব্যবস্থার বিদায়”

কিন্তু আসাদ সরকার দেশের জনতা কি চায় তা শুনতে রাজি না বরং জনতার দাবী বন্ধ করতে শুরু করে নিরীহ জনতার উপর সামরিক শক্তি দিয়ে আক্রমণ । নিরস্ত্র মিছিলকারীর উপর চলে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণ, শুরু হয় রক্তপাত ও গণহত্যা। আর যে সব সৈনিক বেসামরিক জনতার উপর গুলি ছুড়তে চায় নাই তাদেরকেও হত্যা করে সামরিক আইনে। তাই সেনাবাহিনী থেকে অনেক সৈন্য পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় প্রাণ বাঁচাতে। ট্যাংক, দূরপাল্লার কামান,হেলিকপ্টার গান-শিপ ও বোমারু বিমান ব্যবহৃত হচ্ছে নগর ও গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। ধ্বংস করা হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ী। সাম্প্রতিক এক খবরে প্রকাশ সরকার বিদ্রোহ দমন অভিযানে দশ লক্ষের ঊর্ধ্বে (১.২ মিলিয়ন) বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে। প্রাণের ভয়ে নিজের বসত বাড়ী ছেড়ে মানুষকে আশ্রয় নিতে হচ্ছে পাশের দেশের উদ্বাস্তু ক্যম্পে। তবে সিরিয়া যতই রক্তাক্ত হচ্ছে, মৃত্যুর হার যতই বাড়ছে ততই বাড়ছে নরপশু আসাদ ও তার সরকার উচ্ছেদের সংগ্রাম। আর এ সংগ্রাম যে দিন সফল হবে তখন থেকে শুরু হবে মুসলিম বিশ্বের বিশেষ করে আরব দেশের সত্যিকার ট্যার্নিং পয়েন্ট। কেন তা হতে পারে সে প্রসঙ্গেই আজকের আলোচনা।

প্রথমেই সিরিয়ায় ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জানা দরকার

ইসলামী বিশ্বে সিরিয়া বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এই জন্য যে সিরিয়ার ব্যাপারে মহানবী (স:) অনেক ভবিষ্যৎ বানী করে গিয়েছেন। সিরিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য অতি সমৃদ্ধ । আরবদের কাছে সিরিয়ার এলাকা “বালাদে শাম” বলে পরিচিত। পবিত্র কোরআনের সুরা রুমের সেই “ফি আদনাল আরদি” বা নিকটতর নিম্ন এলাকার দেশ হল সিরিয়া। সিরিয়াতে মানব ইতিহাসের প্রধান প্রধান সভ্যতার চূড়ান্ত সংঘাতগুলি হয়েছে। সেটি যেমন ইরানীদের সাথে গ্রীক ও রোমানদের, তেমনি খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের। সিরিয়ার ভূমিতেই মুসলমানগণ তৎকালীন বিশ্বশক্তি রোমানদের পরাজিত করে প্রধান বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভূত হয়। মুসলিম বীর সালাউদ্দিন আয়ুবী এ ভূমিতেই ইউরোপীয় ক্রসেডার বাহিনীকে পরাজিত করে মুসলিমদের হৃতগৌরব উদ্ধার করেছিলেন।

সিরিয়ার উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠাকে অতীতে প্রতিটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিই গুরুত্ব দিত। ইসলামের ইতিহাসেও দেখা গেছে,সিরিয়ার উপর দখলদারিতে যারা সফল হয়েছে তারাই মুসলিম উম্মাহর উপর শাসক রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ)র রাজনৈতিক শক্তি এবং তার হাতে উমাইয়া রাজবংশ গড়ে উঠার মূল কারণ,সিরিয়ার উপর তাঁর দখলদারি। সিরিয়ার গুরুত্বও শুধু ভৌগলিক কারণে নয়,রাজনৈতিক,আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় কারণেও। ইহুদী, খৃষ্টান ও ইসলাম –এ তিনটি প্রধান ধর্মের লালনভূমি হল সিরিয়া। অপরদিকে আরব জাতীয়তাবাদের জন্মভূমি যেমন সিরিয়া,তেমনি আরব সোশালিস্টদের কেন্দ্র ভূমিও হল সিরিয়া। তেমনি কেন্দ্র-ভূমি হল ইসলামপন্থীদেরও। নাসিরুদ্দিন আল-বানীর মত স্কলার ও ইমাম তায়মিয়ার মত মোজ্জাদ্দেদগণ সিরিয়া থেকেই মুসলিমদের পুণর্জাগরণের চেষ্টা করেছিলেন।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে সিরিয়া অতীতের ন্যায় আজও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ,তেল বা গ্রাসের বিশাল ভাণ্ডার না থাকলেও বিশ্বের মানচিত্রে দেশটির ভৌগলিক অবস্থানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুর্বৃত্তদের কবলে পতিত বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতার বর্তমান বিশ্বে সম্পদশালী ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বিপদও আছে। তাই ঔপনিবেশিক শক্তির কবলে পড়ে সিরিয়া বিভক্ত হয়েছে ৫ টুকরোয়। সাম্রাজ্যবাদীদের পলিসিই হচ্ছে ডিভাইড এন্ড রুল! অবশ্য শুধু সিরিয়া নয়,ঔপনিবেশিক শক্তির কবলে পড়ে কোন মুসলিম ভূগোলই অক্ষত থাকেনি। মধ্যপ্রাচ্যের আজকের ভূগোলিক যে মানচিত্র আমরা দেখি তা সম্পূর্ণ কৃত্রিম এবং গড়া হয়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ পূরণে। তুরস্কের ইসলামী সাম্রাজ্য অটোমান অ্যাম্পায়ার (ওসমানিয়া সাম্রাজ্য) ছিল মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য বড় বাধা তাই প্রথম মহাযুদ্ধে জয়ী হওয়ার কারণে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা এই সাম্রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো করে ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, সৌদি আরব ইত্যাদি অসংখ্য তাঁবেদার রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। “দি আরবস” বইয়ের লিখক বিবিসি সংবাদদাতা পিটার ম্যান্সফিল্ড লিখেছেন,কায়রোর এক চায়ের টেবিলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল এক কলমের খোঁচায় জর্ডান নামে এক রাষ্ট্রের জন্ম দেন। অথচ এমন একটি রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ভিত্তি যেমন ছিল না, প্রয়োজনও ছিল না। এসব রাষ্ট্রের কোনও কোনটিতে জাতীয়তাবাদী বিপ্লব ঘটে এবং ব্রিটিশ আধিপত্যের অবসানের সূচনা হয়। এই আধিপত্য ধরে রাখা এবং মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের তেল-স্বার্থ পাহারা দেওয়ার জন্য ব্রিটেনের ব্যালফুর সাহেবের ঘোষণা অনুযায়ী আরব ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া হয়।

সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত
রাজনৈতিক দখলদারি বা অর্থনৈতিক শোষণের চেয়ে বড় প্রয়োজন কোন জাতিকে স্থায়ী ভাবে পঙ্গু বা দুর্বল করার জন্য তাহলো সেটির ভৌগলিক বিভক্তি করন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সিরিয়াকে অধিকৃত করার পর দেশকে খণ্ডিত করা হয় পাঁচ টুকরোয়। কারণ তাদের আশংকা ছিল,সিরিয়া অখণ্ডিত থাকলে সেখান থেকেই উদ্ভব হবে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রের। জন্ম নিবে আরব ঐক্য। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর সিরিয়ার মূল অংশের উপর দখলদারি দেয়া হয় ফ্রান্সকে। দেশটিতে ১৯১৯ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ২৭ বছর ফ্রান্সের শাসন বলবত থাকে। ফ্রান্স তার ২৭ বছরের শাসনকালে মুসলিম শক্তিকে ধ্বংস করা জন্য ভৌগলিক বিভক্তি বা অর্থনৈতিক শোষণের পাশাপাশি যে বড় ক্ষতিটা করে তাহলো সেক্যুলারাজিম ও আচ্ঞ্চলিক জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রচার ও প্রতিষ্ঠা দিয়ে। আধুনিকতার নামে কুলশিত করে ইসলামী চিন্তা-চেতনা ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রেও। মুসলিম দেশে সেক্যুলারিস্ট শাসনের এটিই হল সবচেয়ে বিপদজনক কুফল। ফ্রান্সের হাতে সিরিয়ায় সেটাই ঘটেছে।
তবে ভৌগলিক বিভক্তি টিকসই করার মোক্ষম মাধ্যম হল সে দেশে জনগণের মাঝে গভীর ঘৃণা এবং সে ঘৃণার ভিত্তিতে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের জন্ম দেয়া। দখলদার ফ্রান্স প্রশাসন সিরিয়ায় সেটিই করেছে। ফল দাঁড়িয়েছে, হাজার বছরের অধিক কাল ধরে সূন্নী,শিয়া,খৃষ্টান,দ্রুজ,তুর্কমান,কুর্দি যে সিরিয়াতে একসাথে শান্তিতে বসবাস করে আসছিল ফ্রান্সের মাত্র ২৭ বছরের শাসনে সেটি অসম্ভব হয়ে পড়ে। ঘৃণার সে আগুনে অবিরাম জ্বলছে লেবানন,এখন সে আগুণ সিরিয়াতেও ছড়িয়ে দিতে তারা ব্যস্ত। আর সে আগুণের ফেরি করছে ইসলাম বিদ্বেষী বামপন্থি নাস্তিক ও সেক্যুলারিস্টগণ। মুসলিম দেশগুলো ভাঙ্গাতেই তাদের আনন্দ, এক সাথে থেকে সমস্যা সমাধানে বা দেশ গড়াতে নয়। তাই মুসলিম দেশগুলো যতই বিভক্ত হয়েছে ততই বেড়েছে তাদের বিজয়োৎসব।

সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন:
সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ হল সূন্নী। শতকরা মাত্র ১৩ ভাগ আলাভী শিয়া এবং শতকরা ১০ ভাগ খৃষ্টান। অথচ ফরাসীদের শাসনামলে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সংখ্যাগরিষ্ঠ অফিসার রূপে যাদের নিয়োগ দেয়া হয় তাদের অধিকাংশই হল আলভী শিয়া,এবং পরিকল্পিত ভাবে দূরে রাখা হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সূন্নীদের। বর্তমান শাসক বাশার আল-আসাদের পিতা হাফিজ আল-আসাদ ছিলেন আলাভী শিয়া (অবশ্য অনেক শিয়াও আলাভীদেরকে মুসলিম মনে করেন না।),ফলে সেনাবাহিনীতে তাঁর প্রবেশ ও সেনাবাহিনীতে তার দ্রুত প্রমোশনও সহজ হয়ে যায়। শুধু সিরিয়ায় নয়,সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমুহের সর্বত্র একই কৌশল। সংখ্যাগরিষ্ঠদের উপর শাসন করতে তারা কোয়ালিশন গড়ে সংখ্যালঘুদের সাথে। অধিকৃত বাংলায় একই রূপ কুকর্ম ঘটিয়েছিল ঔপনিবেশিক ইংরেজগণ। বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম হলেও, দেশ শাসনে তারা বর্ণ বিদ্বেষী কাদেরকে পার্টনার রূপে বেছে নিয়েছিল তা সবারই জানা আছে । তাদের হাতে তুলে দেয় দেশের ব্যবসাবাণিজ্য ও জমিদারি। অন্য দিকে এক শ্রেণীর গোঁড়া মোল্লাদেরকে ব্যবহার করে ইংরেজি শিক্ষার বিরোদ্ধে ফতোয়া দিয়ে মুসলিম সমাজকে আধুনিক শিক্ষা থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
সিরিয়াতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ফ্রান্সের নীতি হয়ে দাঁড়ায় মুসলিমদেরকে দ্রুত দরিদ্র ও দুর্বল করা ও আলাভীদেরকে ক্ষমতাশীল করা। সে সাথে শুরু হয় আধুনিকতার নামে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। ফলে সিরিয়ার উপকূলীয় নগরী লেবাননকে পরিণত করা হয় সমগ্র আরব ভূমিতে মদ্যপান,নাচ-গান,উলঙ্গতা, অশ্লিতা ও ব্যভিচারের প্রধানতম কেন্দ্রে। যার নাম হয়েছিল প্রাচ্যের প্যরিস!

সিরিয়ায় আলাভী শিয়া গোত্রীয় কুশাসন:
হাফিজ আল-আসাদ ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৭১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর। তাঁর মৃত্যু হয় ২০০০ সালে। ক্ষমতায় বসানো হয় তাঁর পুত্র বাশার আল-আসাদকে। হাফিজ আল-আসাদ তার তিরিশ বছরের শাসনে মুখে আরব জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের কথা বললেও আসল লক্ষ্য ছিল সিরিয়ার উপর আলাভী শিয়াদের গোত্রীয় শাসনকে সুদৃঢ় করা এবং সে সাথে নিজ পরিবারের রাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা দেয়া। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আলাভীদের নিয়োগ দেয়া হয়,এবং মৃত্যুর পর নিজ পুত্র বাশারকে পরবর্তী শাসক রূপে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বপ্রকার ব্যবস্থা নেয়।

মিশর,তিউনিসিয়া,ইয়েমেন বা লিবিয়ার স্বৈরাচারী শাসকবর্গ সেনাবাহিনী থেকে তেমন সমর্থন পায়নি বলে পরিবর্তন এসেছে দ্রুত কিন্তু সিরিযার ব্যপারে তা হচ্ছে না! সিরিয়ার সেনাবাহিনীর জনবল প্রায় ৪ লাখ। অফিসারদের অধিকাংশই আলাভী,ফলে চলমান বিপ্লব দমনে বাশার পাচ্ছে সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের পূর্ণ সমর্থন। সেনাবাহিনীর ট্যাংক, দূরপাল্লার কামান,হেলিকপ্টার গান-শিপ ও বোমারু বিমান ব্যবহৃত হচ্ছে নগর ও গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। জনগণের রক্ত ঝরাতে সেনাবাহিনী একটুও পিছুপা হচ্ছে না। জনগণের অর্থে কেনা গুলি ব্যবহৃত হচ্ছে জনগণের বিরুদ্ধে। ব্রিটেন-ভিত্তিক Observatory of Human Rights এর মতে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ অবধি ২৬ হাজার সিরিয়া বাসীর মৃত্যু হয়েছে। সাম্প্রতিক এক হিসাবে জানা যায় এ পর্যন্ত ঘরবাড়ী ধ্বংসের ক্ষতির পরিমাণ ৩৬,৫ বিলিয়ন ডলারের ঊর্ধ্বে ছাড়িয়ে গেছে। দিন দিন এ বিপ্লব আরও রক্তাক্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিন লাখ সিরিয়ান উদ্বাস্তু রূপে আশ্রয় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী জর্ডান, তুরস্ক, লেবানন ও ইরাকে। প্রতিদিন শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছে হাজার হাজার মানুষ।

শুরু হয়েছে জাগ্রত জনতার সংগ্রাম:
আরব বিশ্বের নতুন রাজনৈতিক ভূগোল নির্মাণের কাজটির শুরু হবে হয়তো সিরিয়া থেকেই। কারণ,আরব বিশ্বে আজ যে বিপ্লব শুরু হয়েছে সেটি প্রথমে শুরু হয়েছিল সিরিয়ার জনগণের দ্বারাই। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাদের কোরবানী ছিল অনন্য। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পিতা হাফিজ আল আসাদের শাসনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে একমাত্র হামা নগরীতে প্রাণ দিয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। স্বৈরাচারী হাফিজ আল-আসাদের ট্যাংক বাহিনী গুড়িয়ে দিয়েছিল এ নগরীর বিশাল অংশ। এ কারণেই ইসরাইল ও মার্কিনীদেরও বড় ভয় হল এই সিরিয়া। ফলে সিরিয়াতে আজ যে বিপ্লব শুরু হয়েছে সেটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে না গিয়ে দিন দিন রক্তাক্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চক্র ব্যস্ত দেশটিকে আরও দুর্বল করা নিয়ে। এ বিষয়টি আরব বিশ্বের ইসলামের পক্ষ শক্তি যেমন বুঝে তেমনি ইসলামের শত্রুপক্ষও বুঝে। তাই সিরিয়ার চলমান লড়াইটি আজ আর শুধু সিরিয়ানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দেখা যায় পাশের দেশের মুসলিম যুবকরাও এসে শামিল হচ্ছে এ সংগ্রামে। স্বৈরাচার মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশে বিশেষ করে দুর্বৃত্তদের প্রভাব মুক্ত স্বাধীন ও বিশ্বজনীন ন্যায় নীতির ভিত্তিতে ও একটি সুন্দর শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই শুরু হয়েছে এ সংগ্রাম যাকে থামানো কঠিন হবে সাম্রাজ্যবাদীর পক্ষে । এ বিপ্লব যতই তীব্রতা পাচ্ছে ততই দুশ্চিন্তা বাড়ছে আধিপত্য-বাদী ইহুদী ও সাম্রাজ্যবাদীদেরই। দুশ্চিন্তা বাড়ছে সেক্যুলারিস্ট,সোশালিস্ট ও ন্যাশন্যালিস্টদেরও। যতই দিন যাচ্ছে ততই এ লড়াই পরিণত হচ্ছে এক নির্ভেজাল সংগ্রামে।

জনগণের শক্তি বনাম স্বৈরাচারের শক্তি:
বাসামের সঙ্গে আলাপ করলে বুঝা যায় সিরিয়ার জনগণের কাছে এটা এখন পরিষ্কার যে পশ্চিমা শক্তিরা চায় সিরিয়াতে স্বৈরাচার বিলুপ্ত হয়ে এমন কেউ আসুক যারা তাদের কথামত চলবে। তাই হয়তবা তেমন কাউকে না পাওয়ায় তারা সাহায্য করতেও তেমন এগিয়ে আসছে না।
ইউরোপ আমেরিকার ক্ষমতাসীনরা মন থেকে চায় না দেশটিতে দেশপ্রেমিক জনগণের তথা ইসলামের পক্ষের শক্তির বিজয় হউক। বাশার আল-আসাদের ইরানের সাথে বন্ধুত্ব নিয়ে তাদের আপত্তি থাকলেও তাঁর সেক্যুলারিস্ট নীতি ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি তাঁর প্রেম নিয়ে তারা প্রচণ্ড খুশি। ৯/১১ এর পর টেরোরিষ্ট সন্দেহ করে মার্কিনীরা যাদেরকে নানা দেশ থেকে গ্রেফতার করতো তাদেরকে রিমান্ডে পাঠিয়ে নৃশংস অত্যাচারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের জন্য সিরিয়ায় পাঠানো হতো (এখানে দেখুন)। মার্কিনীরা এমন কুকর্মকে “রেন্ডিশন” বলে থাকে। এমন এক তাঁবেদার স্বৈরাচারের বদলে স্বাধীন সরকারের প্রতিষ্ঠা কি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কাছে কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
মিশর, তিউনিসিয়া,লিবিয়া ও ইয়েমেনে স্বৈরাচারী শাসনের বিলুপ্তিতে তারা আদৌ খুশি নয়।তারা ছিল তাদের পরম মিত্র। তাই চক্রান্ত হচ্ছে ইসলামের নামে বদনাম ছড়াতে তথাকথিত ইসলামী উগ্র পন্থিদেরকে দিয়ে সংঘাত ও সংঘর্ষ বাঁধাতে। তবে আরব দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন।

বিজয় অনিবার্য এবং সম্ভাবনা বিশাল
বর্তমান বিশ্বে মুসলিমদের সংখ্যা বিপুল,সম্পদও বিশাল। কিন্তু যা নাই তা হল সৎ নেতৃত্ব ও ইসলামের ন্যায় নীতির ভিত্তিতে একটি সমাজ । সাম্রাজ্যবাদীরা চায় মুসলিমরা ভোগ বিলাসিতায় মত্ত হয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে লিপ্ত থাকুক। কেননা এসব দেশে একটি গণতান্ত্রিক সুস্থ সুশীল সমাজ গড়ে উঠুক তা তাদের কাম্য নয়। মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে আশাপ্রদ দিকটি হল, মুসলিম দেশের জনগণ বিশেষ করে যুব সমাজ এখন জেগে উঠেছে। নিজেদের সম্মান মর্যাদা পুন:উদ্ধারের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সাম্রাজ্যবাদী সেবা দাসদের দুর্বৃত্ত শাসন উচ্ছেদ করার সংগ্রামে যার শেষ হবে একদিন মুসলিম উম্মাহর খিলাফত প্রতিষ্ঠার মধ্যমে। সে ভবিষ্যতবাণী আল্লাহর রাসুল করেছেন। সে দিন হয়তবা বেশী দূরে নয় ইনশাল্লাহ। আরব বিশ্বের সৌভাগ্য হল সিরিয়ার জনগণ এখন মৃত্যুকে আর ভয় করে না এবং তাদের দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহর সাহায্য আসলে কোন বাঁধাই আর বাঁধা থাকেনা। তাই মিছিলে মিটিংয়ে কিংবা সরকারী বাহিনীর উপর আক্রমণে তাদের কণ্ঠ গর্জ উঠে আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে। তাদের স্লোগান হচ্ছে “মাআন্ না গাইরাক ই আল্লাহ। অর্থাৎ “আমাদের সাথে আপনি ছাড়া কেউ নাই ইয়া আল্লাহ।“ সিরিয়ান বিপ্লবীদের আপলোড করা এমন একটি ভিডিও পাওয়া যাবে না যেথায় “আল্লাহু আকবর” একাধিকার শুনা না যায়!
তাই সিরিয়ায় জনগণ আসাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রামে লিপ্ত তার বিজয় অনিবার্য তা নিয়ে কোন কি সন্দেহ নাই। বরং সম্ভাবনা বিশাল। সেটি মধ্যপ্রাচ্যের শুধু নয়,সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস পাল্টাতে। শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না।

বিশেষ দ্রষ্টব্য
নিচের যে ভিডিওগুলা দেয়া হল তার প্রথমটাতে এক জায়গায় দেখা যায় স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট আসাদের সৈন্যরা সরকার বিরোধী এক সিরিয়ান যুবককে গর্তে ফেলে জীবন্ত কবর দিচ্ছে। ছেলেটা দাড়িয়ে আছে গর্তের ভিতর আর সৈন্যরা গালি দিয়ে দিয়ে যুবকের উপর বুল ডোজার শাবল দিয়ে মাটি ফেলে তাকে জীবন্ত কবর দিল! কি করুন দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাস হবে না! মানুষ মানুষের সাথে এরকম পশুর চেয়েও অধম ব্যবহার করতে পারে? আর ভিডিও পুরাটা দেখলে শুনা যায় ইসলামী শেখরা বক্তব্য রাখছেন যে কেন তারা সিরিয়ার চলমান বিপ্লবের উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ আছে বলে মনে করেন?
http://www.youtube.com/watch?v=sLNLc6KgfLM



শহীদের লাশের দাফনের এক করুণ দৃশ্য দেখেন:

http://www.youtube.com/watch?v=vNynetCwi7s

মিছিলকারীর উপর সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণের আরেকটি দৃশ্য
http://www.youtube.com/watch?v=TfHL0wo51TI


নিচের ভিডিও আল-জাজিরা টিভি থেকে

http://www.youtube.com/watch?v=VnvPXspjLtU
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:৩৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×