somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন একা মানুষের গল্প ......

০২ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যে ছেলেটা দিনের পর দিন একলা একলা তালা বদ্ধ একটা ছোট ঘরে বড় হয়েছে , তার জীবন আর কতটা ভাল হতে পারে বলতে পারিস ? সেই ছেলেটা যাকে তার বাবা মার অস্তিত্ব অনুভব করতে হত ঘুম এর মধ্যেই। হয়তো সকালে অফিস এ যাওয়ার সময় আদর মাখা চুমুর স্পর্শে , কিংবা রাত্রে অফিস থেকে আগত ক্লান্ত হাতের কোমল ছোঁয়ায় , অথবা হয়তো ঘুম এর মধ্যেই আধা জাগ্রত ছেলেতা কে খাইয়ে দেওয়ার মধ্যে।

যে শত ইচ্ছার পরও বাবা মা কে রাত নয়টা দশটার আগে কখন ও কাছে পেত না । যার সময় কাটতো তালা দেওয়া বন্ধ দরজা বা জানালার ফাক দিয়ে রাস্তায় খেলতে থাকা বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে , কিংবা ওর বন্ধুদের তাদের ভাই বোনদের সাথে পাগলামি দেখে । তবু ওদের খেলার সাথী ছিল । কিন্তু ছেলেটার সাথী ছিল নির্জনতা আর আঁধার । যার ছিল না ঘরের বাইরে যাবার অধিকার কারণ মুখোশ পরা ছেলেধরা রা নাকি বাইরে বস্তা নিয়ে দাড়িয়ে আছে হয়তবা !

ছেলেটা কে মাঝে মাঝেই ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যেত দরজার গোঁড়ায় । ঘুমিয়ে যেত বাবা মার অপেক্ষা করতে করতে ।
কখন তার বাবা মা আসবে , দরজার তালাটা খুলে তাকে কোলে নিবে । তাকে একটু আদর করবে, একটু স্নেহ করবে ।
সেই ছোট থেকেই ছেলেটাকে এভাবে ভালবাসাহীন হয়ে বড় হতে হয়েছে । তার ছিল না একটা ভাই কিংবা বোন যার সাথে সে সময় কাটাবে । কেন জানি ছোট থেকেই ছেলেটার একটা বোন এর খুব শখ । জানতো না সে , সবার সব ইচ্ছা পুরণ হয়না । জানতো না এভাবেই তাকে থাকতে হবে সারাটা জীবন ।

সেই ছেলেটা ...... ছোটবেলা থেকেই যে একটু ভালবাসা খুজে ফিরেছে । অথচ এর জন্যে তাকে কত কাদতে হয়েছে বা এখন ও কাঁদতে হয় তা কি তুই জানিস ?
যেখানেই কেউ একটু ভালবেসেছে , তার কাছে ছুটে গিয়েছে। কখন ও মরিচিকার দেখা পেয়েছে, কখন ও বা মিথ্যে কুহেলিকা । কখন ও বা ভালবাসার ডাক ই তার অব্দি পৌঁছায়নি। সময়ের সাথে সাথে অন্তর এন্টার্কটিকার মত জমে গেল । এর পর আর সে পিছে তাকায়নি ।

বাবা মা । এই দুইটি মানুষ ছাড়া তার কেউ ছিল না। যে টুকু নাম মাত্র ভালবাসার ছোঁয়া পেয়েছে তা এই দুজনার অনেক কস্টের ফল। হয়তো তাই ই এক ছোট্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ থেকে একা ছেলেটা কিছুটা উদ্ভ্রান্ত, কিছুটা ছন্নছাড়া, কিছুটা বোকা । না না, ভুল বললাম অনেক খানি ই বোকা ।
ছেলেটা আজ বড় হয়েছে , বিশ্ববিদ্যালয়ে পরে । বাসা থেকে অনেক দূরে। এখন সে অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছে । অথচ বুঝেনা কি করে তার অতি হিসাবি মা প্রতিদিন তার সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে টাকা নষ্ট করে। তার ব্যস্ত বাবা তাকে এক নজর দেখার সব সময় জন্যে উতলা হয়ে থাকেন । ছোটবেলাতে যাকে একটা চকলেট এর টাকার জন্যে কাঁদতে হয়েছে, আজ তাকে টাকা প্রয়োজন না হলেও পাঠাতে দ্বিধা বোধ করছেন না।

এই ভালবাসাটা সে ছোটবেলায় অনেক চেয়েছে, অনেক কান্নাকাটি করেছে । কিন্তু হয়তো বাবা মা ইচ্ছাসত্ত্বেও দিতে পারেননি । চাচা চাচি রা হয়তো দেওয়ার প্রয়োজন বধ করেননি , ফুপুরা ছোট বাচ্চাকে হয়তো গ্রহণ করতে পারেননি । দাদির সময় হয়তো তার মেয়ের বাচ্চগুলোকে দেখতে চলে গেছে, ছোট্ট ছেলেটা কে কোনদিন কোলে নাওয়ার ও তার টাইম হয়নি । সে তখন এগুলোকেই নরমাল ধরে নিত ।
আসলেই ছোটবেলাটা অনেক সুখের । কারণ টা জানিস? কারণ তখন আমরা অবুঝ থাকি ......

জানিস এখন একা একা পরে থাকি সব সময় । আমি সুখি না থাকি কিন্তু যাতে কেউ কখন ও আমাকে দুঃখ না দিতে পারে । আমাকে দেখলে কেউ বুঝবেও না আমার মাঝে কত দুঃখ লুকিয়ে । কেউ বুঝবে না আমার ঐ বোকা বোকা হাসিটার পিছনে কত কান্না জমা আছে । সারা দিন আমার এখন তদের সাথে হেসে খেলে কেটে যায় ।

জানিস আজ কেনও ছাদ এ চিত হয়ে শুয়ে জোৎসনা দেখছি ? আমি যাকে ভালবেসেছিলাম তার আজ বিয়ে । শুয়ে শুয়ে তাই আজ নিজের জীবনের সুখ এর স্মৃতি গুলো মনে করছি ...
আসিফ আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো আমার চোখ দিয়ে জল পড়ছে ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল ওর ।
আসিফ ঃ, যে তোকে এতটা কষ্ট দিলো তার জন্য কেনও চোখের জল ফেলছিস তুই ? সব ভুলে যা ।
কান্না ভেজা চোখে ওর দিকে তাকালাম আমি,আমাকে দেখে পুরা বুকটা জুরে হাহাকার করে উঠল ওর। সেই দৃষ্টি একজন সর্বস্‌সো-হারা মানুষের।তাই ও সান্তনা দিয়ে কষ্টটা আর বাড়াতে চাইলো না।
তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে , ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, কেনও তুই এমন রে ?
শোন আসিফ এই আমি জীবনে সব কিছুই পেতে পেতে হারিয়েছি রে । কখন ও কিছু ধরে রাখতে পারিনি । সব এই ভালবাসার কাঙ্গাল টাকে ছেড়ে চলে যায় রে । সবার ভালবাসার অনেক দাম । তারপরও আমি ভালো আছি । অনেক ভালো আছি । কেনও জানিস ? আমার মা বাবা এর জন্য । তারা ছোটবেলায় হয়তো আমাকে ততটা সময় দিতে পারেন নি , যা আমি চেয়েছি তা দিতে পারে নি । কিন্তু তারা সব সময় আমার পাশে ছিলেন । আমার প্রতিটা সিধান্তে তারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন । আর তাই আমি এখন তাদের জন্য বেঁচে আছি । তাদের নিয়ে অনেক অনেক ভালো আছি ।

আসিফ পাগলটা আর চোখের পানি আটকাতে পারলো না ।আমার মত অবুঝ, বদরাগী , একটু খামখেয়ালি বন্ধুটাকে জরিয়ে ধরলো শক্ত করে ।।
আর আমি তখন ওই দূর আকাশ তার দিকে তাকিয়ে গুন গুন করতে লাগলাম......

সারাদিন কাটে আমার হেসে খেলে
শুধু রাত জানে আমি কতোটা কষ্টে
সবাইকে বলি প্রান খুলে হাসতে
কিন্তু নিজের হাসিতেই শূন্যতা রয়েছে
সবাই দেখতে থাকে চঞ্চল দুরন্ত সত্ত্বা তাকে
কেউ বুঝতে পারেনা নিঃসঙ্গটা আমাকে গ্রাস করেছে
সবাই জানে আমি অনেক অনেক সুখী
কিন্তু আমি জানি আমি কি বয়ে বেড়াচ্ছি
সকল হাসি আর সকল কান্না
একই মানুষের দুই সত্ত্বা
কোনটা প্রকাশ পায়
কোনটা পায় না...........................।।


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:৫৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×