somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা তুমি শুধু আমার কল্লোলকেই চাইতে আর আমিও তাই চাই **

০২ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ অনেকদিন পর লিখতে বসলাম। ছোট থেকেই আমার বাবার সান্নিধ্যে এতটাই আচ্ছন্ন থাকতাম যে বাইরের কাউকে আমার জানার কোন আগ্রহ হইনি। বাবা আমাদের সব বই পড়তে দিতেন। ৭ বছরেই আমাদের ঠাকুরমার ঝুলি,গোপাল ভাড়, কমিকস, সুকুমার রায় সমগ্র , উপেন্দ্রকিশোর রায় সমগ্র শেষ করিয়েছেন। অনেক কিছুই বুঝতাম না।তারপরও সন্দেশ পত্রিকা আর দেশ সমগ্র সব বাধাই করে নিয়ে এসেছিলেন।তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরন করতেন। লেখালিখির প্রবল ইচ্ছে কিন্তু কেন জানি লিখতেন না। সব বই পড়তেন। আর সব সাহিত্যিকদের অনেক শ্রদ্ধা করতেন।আম্মার সাথে ৭ বছরের প্রেমের বিয়েতে তাই শামসুর রহমান অনেক আশির্বাদ করে লেখা দিয়েছিলেন।তখনকার এক পত্রিকায় সেই বিয়ের আশির্বাদ নিয়ে লেখা ছাপিয়েছিল। শামসুর রহমান, শওকত আলী(আমার মেঝোবাবু[আব্বার বড় ভাই]), ওয়াহিদুল হক, সাঞ্জিদা আপা, হুমায়ন ফরীদি, হুমায়ন আহমেদ,কবি জাহিদুল হক, আর কুয়াশা দাদু সবাই আব্বাকে অনেক ভালবাসতেন।
আমার ৬ বছরেই গানের জন্য হারমুনিয়াম, তবলা। গানের + স্কুলের মাষ্টার রেখে দিয়েছিলান। পিন্টু স্যার আসতেন। খুবই রুচিসম্মত ঘরের ছেলে ছিলেন।তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি এখন আমেরিকায় ফুল স্কলারশীপে বিয়ে-শাদি করে সেটেলড।
তারপর আমাকে সবচেয়ে ছোট বয়সে ছায়ানটে ভর্তি । আমি হাত পাও নাড়তে পারি না ঠিকমত। ৩ বছরেই আম্মা শাড়ি, টার্সেল দিয়ে বেনী করিয়ে ছায়ানটে নিয়ে যেতেন। আর কোন মানুষের সাথে আলাপ করে সেই ডেপথ পেতাম না। তাই আমি গুনে গুনে মানুষের সাথে কথা বলতাম।
ক্লাস ফাইভেই সব ধরনের বই , সত্যজিৎ রায় , হুমায়ন আহমেদ, আবার স্কুলে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে। বাসায় হরদম দাবা খেলা, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন,সব খেলেছি। বিশ্বকাপ ফুটবলে /ক্রিকেটে যেমন হইচই বাসায় তেমনি অলিম্পিকেও হইচই। আব্বার বন্ধু/আত্মীয়দের নিয়ে সেই হইচই। আশে-পাশের সবার সাথেই তেমনিই ভাব-বিনিময়ে আড্ডাবাজি।
কলেজে ভর্তির আগেই শেক্সপিয়ার, কিটস, অস্কার ওয়াইল্ড , রবীন্দ্র , শরৎ, বঙ্কিম সমগ্র, জহির রায়হান।পাশের দেশের সমরেশ বসু ও মজুমদার, শীর্ষেন্দু, নিহারঞ্জন। যত ক্লাসিক সব শশষ করেছ। আড্ডাবাজি বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে কম করেছি দেখে বিবিসির যত ভাল অনুষ্ঠান, বিটিভির সব সিরিয়াল, ইংরেজী ক্লাসিক যত মুভি, বাসায় ভিসিপির সুবাদে ব্রুসলি - সব হিন্দী বই , ইংরেজী সিনেমা সব দেখেছি। বিটিভির গঠনমুলক অনুষ্ঠান শেষে রাজনৈ্তিক মতধারা নিয়েও আব্বার সাথে বাক-বিতঙ্গা করেছি। আমার জীবনে মাদার তেরেসা, মহাত্মা গান্ধী আর জোহান অফ আর্ক খুবই প্রগাড় ছায়া ফেলেছিল। হালের অনুরন্ধি রায়কেও আমার বেশ শ্রদ্ধা লাগে। আন-সান সুচির সংগ্রাম। নেলসন মেন্ডেলার অবিরাম সংগ্রাম শেষে বিজয়ের হাসি । সবই আমাদের আলোচলার বিষয় থাকত।
তাই আমি শপিং মলে ঘুড়ে জামা বানানোর জন্য সময় নষ্ট করিনি>>
আমি ছিলাম আমার মানুষিক বিকাশে। আজ কিছুটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি । প্রয়োজনে আজ আর দশটা মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলি। কিন্তু আমি তার মতই আমার ভাব বিনিময়ের মানুষকে খুজে বেড়াই।
আব্বাই ছিলেন আমার জগৎ। তাই কোনদিন অন্য কোথাও আগ্রহ জন্মেনি। আমার সব জামা-কাপড় নিজের হাতে তৈরি, যখন যা চাইতাম তাই এনে হাজির করতেন। আমার জন্মদিনে ডায়েরী আর পূজার সংখ্যা দেশ, আনন্দমেলা । আমার কবিতা লেখা-লেখি আমার সব মানুষিক বিকাশে উৎসাহী ছিলেন। আর একটু সাজাসাজি করতে চাইলে রাগ করতেন। বলতেন বাইরের সাজ দিয়ে মানুষকে বিমোহিত কর না। নিজের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরো। আর তা দিয়েই বিমোহিত কর। তাই বুঝি একটু বেশি দেখতে ভালো ছিলাম দেখে কারো সাথে মিশতেই দিতেন না। আমিও ছিলাম না। তাই আজ যখন আব্বা ছাড়া আমার দ্বিতীয় জন্মদিন পালন করছি আমার কল্লোলে যিনি বেশী খুশি হতেন। তাকে আমি তাকে জানাতে চাই আমি আছি বেচে , কিন্তু শুধু আমার জীবনে কল্লোলই নেই। তুমি ছাড়া আমার জীবনে কল্লোল থাকবে কি করে বল ???
বাবা,
তুমি শুধু আমার কল্লোলকেই চাইতে আর আমিও তাই চাই আজকে।
আর কিছুই চাই না আমার জন্মদিনে শুধু আমি আমার কল্লোলকেই চাই **
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:১৯
২১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×