somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামুর ঘটনা, মহানবী (সাঃ) এর বানী এবং আমার কিছু কথা।

০২ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সব সময় এক অনন্য উদাহরণ। এ দেশে সব সময় হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই এক সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসবাস করে। একে অন্যর সুখে দুখে পাশাপাশি অবস্থান করেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে একে অপরকে সহযোগিতা করেন। ঈদ পূজা পাশাপাশি সময়ে হয়, একে অপরকে এসব অনুষ্ঠানে অভিনন্দিত করেন।

কিন্তু কিছুদিন আগের রামুর ঘটনা বাংলাদেশ এর মতো এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে এক কলঙ্কজনক ঘটনা। ধর্মের নাম নিয়ে কিছু মানুষের অন্য ধর্মাবলী মানুষের উপর এমন অমানবিক অত্যাচার যেন এক ন্যাকারজনক অধ্যায়।

আসুন দেখি আমাদের ইসলাম ধর্মে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে কি বলা হয়েছে।

মহানবী (সাঃ) তার বিদায় হজ্জ এর বক্তব্যতে বলেছিলেন "হে লোকসকল, তোমরা শোন- কোন আরবের উপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আবার কোন অনারবের উপরও আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোন কালোর উপর সাদার এবং সাদার উপর কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেননা, সবাই আদম থেকে এবং আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। শ্রেষ্ঠত্ব যাচাইয়ের মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া ।"


অর্থাৎ যেখানে মহান আল্লাহ্‌তায়ালার প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে, তিনি নিজেই যেখানে সাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য উদাহরণ সেখানে আমরা তাঁর উম্মত হয়ে কেন এমন কাজ করি যেটা ইসলাম কখনই সম্মতি দিবে না। রামু তে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা আর যাই হোক না কেন মুসলমান না। ধর্মের নাম ধারী কিছু মানুষ। ফেসবুক এ যে পোস্ট এর কারনে যে এই ঘটনা ঘটল তাতে ওই বৌদ্ধ ছেলেটা কিভাবে দোষী হল। কেউ যদি আপনাকে কোন পোস্ট এ ট্যাগ করে সে জন্য তো আপনি কিছু করতে পারেন না। যে অ্যাকাউন্ট থেকে ট্যাগ করা হল তাঁকে না ধরে তাঁর বিরুদ্ধে বেবস্থা না নিয়ে কেন এতো গুলো নিরিহ মানুষ কে এমন অমানুষিক অত্যাচার করা হল। আর যারা এমন অত্যাচার করলো এরা কারা ।

সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে মহানবী (সাঃ) আরও বলেছেন,

"যদি কোন ব্যক্তি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী অমুসলিম নাগরিক বা মুসলিম দেশে অবস্থানকারী অমুসলিম দেশের কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও লাভ করতে পারবে না, যদিও জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বৎসরের দুরত্ব থেকে লাভ করা যায়।" সহীহ আল-বুখারী, হাদীস ৬/২৫৩৩

তিনি আরও বলেন, "বিধর্মীকে হত্যা করা তো দূরের কথা, বিধর্মীদের সাথে অভদ্র আচরণ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। তাদের ধর্মবিশ্বাস বা উপাস্যদেরকে গালি দিতেও নিষেধ করা হয়েছে। মুসলিম তার নিজের বিশ্বাসের শ্রেষ্টত্ব বর্ণনা করবেন, তবে কারো অনুভূতিকে আহত করবে না।"

পবিত্র আল কুরআন, মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার এক অসীম নিদর্শন যাতে কোন ভুল নাই। এই কুরআন কে গবেষণা করে কত কিছু আবিষ্কৃত হল, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। পৃথিবীর বড় বড় মনীষী, বিজ্ঞানী সবাই এক বাক্য স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে এটা একটা নির্ভুল কিতাব।

এই মহাগ্রন্থে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা অনেক কিছু বলেছেন। যা এক অনন্য দলিল।

পবিত্র কুরআন এ মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন, " আল্লাহ্ কে ছেড়ে যাদেরকে তাঁরা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না; কারণ এতে তারাও সীমালংঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্কে গালি দিবে।" ঃ আল-আন'আম, আয়াত ১০৮

"সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্দ্বকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়" ঃ সুরা বাকারা, আয়াত ২১৭


" আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি। আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু। আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)। সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সম্মান রক্ষা করারও বদলা রয়েছে। বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর জবর দস্তি করেছে, তোমরা তাদের উপর জবরদস্তি কর, যেমন জবরদস্তি তারা করেছে তোমাদের উপর। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন। " : সুরা বাকারা, আয়াত ১৯০-১৯৪

"আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন! আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন। শীঘ্রই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি-সামর্থ খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তি-সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা।" : সুরা নিসা, আয়াত ৮৪

ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম এই ধর্মের ধর্ম গ্রন্থ এতো সুন্দর করে দেয়া আছে যে আমরা কিভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে চলব, এর পর ও কেন এতো হানা হানি। অনেকেই দেখছি একটা নির্দিষ্ট দল কে দায়ী করার চেষ্টা করছে। আমি বলছি না তাদের কোন দোষ নেই আবার আমি এটাও বলছিনা যে তাদের ই দোষ। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এটার সুরাহা না করতে পারলে অদুর ভবিষ্যতে দেখা যাবে বাংলাদেশ এর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। কে বা কারা এমন করছে আর তাদের পেছনে কে আছে সেটা বের করা টাই অনেক জরুরী হয়ে পড়েছে। আমরা চাই না ধর্মীয় সম্প্রীতির এই দেশ টা আবার কোন আফগানিস্তান, পাকিস্থান, আর ইরাক এর মতো ধ্বংসস্তূপ এ পরিনত হোক। :|





সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৫৩
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ মনটা কেমন যেন অনেক কিছু চিন্তা করছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



সকালের মৃদু আলোয় মোড়ানো একটি মনোরম দৃশ্য ধরা পড়েছে এই ছবিতে। এটি একটি খোলা জায়গা, যেখানে সবুজের সমারোহ এবং প্রকৃতির ছোঁয়া স্পষ্ট। ছবির বাম দিকে গাছের সারি এবং ডান... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুর জন্য ট্রেনিং সেন্টার খুলতে আগ্রহী আপনারা?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ৩০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩০





সামুতে ব্লগিং করতে হলে কীভাবে করতে হবে,হিটপোস্ট,কমেন্ট বাড়বে সেইজন্য ট্রেনিং সেন্টার চালু করা প্রয়োজন মনে হচ্ছে; নাহয় সচলায়তনের মত গায়েব হয়ে যাবে;পরে দেখা যাবে সামুর মৃত্যুর খবরও অন্য কোনো ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও :: দু শ'রও বেশি পুরোনো ব্লগারের প্রোফাইল পিকচার নিয়ে একটি মিউজিক ভিডিও

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে সামহোয়্যারইন ব্লগের দু শ'রও বেশি ব্লগারের প্রোফাইল পিকচার নিয়ে বানানো একটা মিউজিক ভিডিও শেয়ার করেছিলাম। যে-সব ব্লগার ঐ সময়ে অ্যাক্টিভ ছিলেন, প্রোফাইল পিকচারগুলো তাদের ছিল।



কয়েকদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রহস্যময় কলা

লিখেছেন বিষাদ সময়, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৩১




এই কলা শব্দটা আমার কাছে পুরাই বিভ্রান্তিকর। নারীদের কলা বলতে যে ছলাকলা সেটা ভালই বুঝি। সেই ছলাকলা দেখে গলা বাড়ালেই যে ষোলকলা পূর্ণ হয় সেটাও জানা। কিন্তু এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ দরজা

লিখেছেন মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৬


বাইরে ঝুম বৃষ্টি। বাইরে ঘোর অন্ধকার, বিদ্যুৎ নেই। মা চুলায় খিচুড়ি দিয়েছে। ঘ্রাণে চারপাশ ছেয়ে আছে। সাথে বেগুন ভাজা, ইলিশের দো পিয়াজি, দই-কাতলা, রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়ি ঘন্ট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×