somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথিত বিশ্ব প্রবীণ দিবস বাংলাদেশে বাড়ছে পারিবারিক বন্ধনহীন প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে পাশ্চাত্য কালচারের বৃদ্ধাশ্রম

০২ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল পালিত হলো বিশ্ব প্রবীণ দিবস। বিশ্বের সব প্রবীণের জন্য নির্ধারিত একটি বিশেষ দিন। এই দিন প্রবীণদের নিয়ে বলা হয় হাজারো কথা। কিন্তু যোগফল শূন্য। প্রবীণদের নিয়ে কথার ফুলঝুরি ছুটলেও তাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না।
সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ প্রবীণ। তাদের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি। মূলত গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৬৮ বছর। স্বাধীনতা অর্জনের সময় এ দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৩৯ দশমিক ৯৩ বছর। ১৯৮০ সালে তা বেড়ে ৫৫ দশমিক ২৪ এবং ১৯৯০ সালে ৬০ বছরে উন্নীত হয়।
এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রতি ১০ জনের একজন ৬০ বছর কিংবা তারও বেশি বয়সের মানুষ। ২০৫০ সালে এ হার গিয়ে দাঁড়াবে প্রতি ৫ জনে ১ জন। আর ২১৫০ সালে প্রতি তিনজনে ১ জনের বয়স ৬০ বছর কিংবা তারও বেশি হবে। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবীণ নর-নারীর সংখ্যা প্রায় সোয়া কোটি আর শহরে মোট জনসংখ্যার সাড়ে সাত শতাংশ প্রবীণ এবং গ্রামাঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ প্রবীণ।
দেশের অর্ধেকেরও বেশি প্রবীণ পরিবারের সদস্যদের হাতে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে। এসব প্রবীণরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজ সন্তান, পুত্রবধূ, জামাতা, নাতি-নাতনী এমনকি জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে বলে ওই গবেষণায় দেখানো হয়েছে।
দেশের ৮৮ দশমিক ৪ ভাগ প্রবীণ মানসিক নির্যাতন, ৮৩ দশমিক ৩ ভাগ অবহেলা ও ৫৪ দশমিক ৪ ভাগ অর্থনৈতিক প্রবঞ্চনার শিকার হচ্ছে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীরা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার অপদস্থ হচ্ছে বেশি।
প্রবীণ ব্যবস্থাপনা রীতিমতো আমাদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। প্রতি বছর বয়স্ক মানুষের বড় একটা অংশ অবসর নিচ্ছে কাজ থেকে, যাদের অভিজ্ঞতাকে রাষ্ট্রযন্ত্র সেভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। তাদের স্বাস্থ্যগত বিশেষ ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। এমনকি তাদের চলাচল, পুষ্টি প্রভৃতির ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদিও সরকারি চাকুরেদের অবসরের পর কিছুটা অর্থের ব্যবস্থা থাকে; তবে অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত এবং দিনমজুরদের ক্ষেত্রে এটি নেই।
বাংলাদেশের মতো দেশের প্রবীণদের সমস্যাগুলোকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে; যথা : ১. স্বাস্থ্যগত, ২. পেশা, আয় তথা অর্থনৈতিক এবং ৩. মনো সামাজিক।
বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবীণদের আয় খুবই কম, তাই প্রবীণ নর-নারীর ক্রয়ক্ষমতা থাকে খুবই সামান্য। এর প্রভাব পড়ে তার দুর্বল দেহের উপর। প্রবীণের এই আর্থিক দীনতা স্বভাবতই তাদের শারীরিক অসুস্থতার অন্যতম কারণ বলা যেতে পারে। আর্থিক ও শারীরিক এ অবস্থায় প্রবীণরা পরিবার ও সামাজিকভাবে উপেক্ষা, অবহেলা, বঞ্চনা ইত্যাদি অনাকাঙ্খিত অবস্থার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে যেসব প্রবীণ নারীর স্বামী নেই, সন্তান ছাড়া নিজের সম্বল বলতেও কিছু নেই, তাদের জীবন কীভাবে কী নিয়ে কাটে? এমনও দেখা গেছে, নিজের গড়া সুরম্য দালানের বারান্দার এক কোনায় ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধা মায়ের।
প্রবীণদের অসহায় জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল হলো ‘বৃদ্ধ নিবাস’। যৌথ পরিবারের ভাঙন, একক পরিবার গঠন এবং পারিবারিক ভূমিকার পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশেও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিপুলসংখ্যক ‘বৃদ্ধ নিবাস’ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
ব্যক্তিগত ও বেসরকারি উদ্যোগে কিছুসংখ্যক বৃদ্ধ নিবাস গড়ে উঠেছে, কিন্তু এ-গুলোতে প্রবীণ নর-নারীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশের প্রবীণদের নিয়ে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য গবেষণা নেই। যেহেতু বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে জনমিতি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, সমাজসহ সব ক্ষেত্রে, তাই এ বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে এমন নীতিমালা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার, যার মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে প্রবীণদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত হয়। প্রবীণ নর-নারীদের জীবনের শেষ দিনগুলো যাতে সুন্দরভাবে কাটে, সেটাই কাঙ্খিত ও বাঞ্ছিত।
মূলত: আজকে প্রবীণদের যে দুঃখ দুর্দশা তথা প্রবীণদের প্রতি সন্তানের মায়া-মমতাহীনতার কথা বলা হচ্ছে এর জন্য এক অর্থে প্রবীণরাই দায়ী। কারণ আজকের প্রবীণরা তাদের সন্তানদের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে। সেই শিক্ষার রেশ ধরেই পাশ্চাত্য কালচার বৃদ্ধাশ্রমের প্রচলন হয়েছে। অথচ প্রবীণরা যদি সন্তানদের বস্তুবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত না করে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে বা শিক্ষায় শিক্ষিত করতো তাহলে তাদের মধ্যে ইসলামী চেতনা কাজ করতো। এবং তারা পিতা-মাতা উনাদের হক্ব আদায় সম্পর্কে সচেতন ও সক্রিয় থাকতো।
মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেও কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মাতা-পিতা উনাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বলেছেন- ‘আর তোমাদের প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা উনাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত-আনুগত্য করো না এবং পিতা-মাতা উনাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করো; যদি উনাদের একজন বা উভয়ই তোমাদের সামনে বার্ধক্যে উপনীত হন তবে তুমি উনাদের প্রতি উহঃ (ঘৃণা বা দুঃখ ব্যঞ্জক) শব্দটিও বলো না এবং উনাদেরকে ধমক দিও না এবং বলো উনাদেরকে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। এবং উনাদের সামনে মুহব্বতের সাথে নম্রভাবে বাহু নত করে দাও এবং (মহান আল্লাহ পাক উনাকে) বলো- আয় মহান আল্লাহ পাক! উনারা (অর্থাৎ পিতা-মাতা) শৈশবে আমাকে যেভাবে স্নেহ-যত্নে লালন-পালন করেছেন, আপনিও উনাদের প্রতি সেভাবে সদয় হউন।’ (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত শরীফ ২৩-২৪)
পিতা-মাতা উনাদের মর্যাদা বলতে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘মা উনার পদতলে সন্তানের বেহেশত।”
তিনি আরো আরো ইরশাদ করেন, ‘পিতা উনার সন্তুষ্টিতে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি, পিতা উনার অসন্তুষ্টিতে মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি।’ কাজেই বেহেশতে যেতে হলে অবশ্যই উনাদের সেবা করতে হবে এবং উনাদের অনুগত থাকতে হবে। উনাদের হক্ব আকায় করতে হবে। এবং এজন্য সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে। উনাদেরকে কখনই বৃদ্ধাশ্রমে ঠেলে দেয়া যাবেনা বা ফেলে রাখা চলবেনা।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×