somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্চুয়াল বনাম বাস্তব জীবন

১১ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন অ্যাপস-এর নকশা করার প্রবণতা বাড়ছে
হাতের স্মার্টফোনটির অ্যাপস আইকনগুলোর দিকে কি মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখেছেন কখনো? ক্যালেন্ডার, ক্যালকুলেটর, বুকশেলফ ইত্যাদি বহু অ্যাপ্লিকেশনে সমৃদ্ধ আপনার স্মার্টফোন। কিন্তু ফোনের ওই ক্যালেন্ডার কিংবা টেবিলঘড়ি অথবা ক্যালকুলেটরগুলোর জন্য যে ধরনের আইকন ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো কি দেখতে বাস্তব জীবনের ক্যালেন্ডার কিংবা টেবিলঘড়ি অথবা ক্যালকুলেটরের মতো? ব্যাপারটি নিয়ে সম্প্রতি বিশ্ব বিখ্যাত টাইম সাময়িকীতে ছাপা হওয়া এক নিবন্ধে খোঁজা হয়েছে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে বাস্তব দুনিয়ার মিল। আলোকপাত করা হয়েছে, বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ার চেহারায় একটা বাস্তবসম্মত চেহারা আনার সম্ভাবনা ও ক্ষেত্র নিয়ে।
টাইম-এর নিবন্ধটিতে অবতারণা করা হয়েছে স্কিউমরফ (Skeuomorph) প্রসঙ্গের। এই স্কিউমরফ শব্দটি অনেকের কাছে নতুন ও কাঠখোট্টা ঠেকলেও ডিজিটাল দুনিয়ায় এই স্কিউমরফ প্রসঙ্গ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও বিতর্ক। ১৮৯০ সালে হেনরি কোলি মার্চ নামের একজন ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ একটি প্রবন্ধে প্রথম শব্দটি ব্যবহার করেন। এর মানে হচ্ছে, কোনো বস্তুর চেহারা বা নকশায় এমন কিছুর উপস্থিতি, যার বাস্তব জীবনে কোনো ব্যবহার নেই। অথচ নকশায় জিনিসটির উপস্থিতি আলংকারিক। হেনরি কোলি মার্চের ওই স্কিউমরফ শব্দ যে একুশ শতকে ডিজিটাল দুনিয়াকে টালমাটাল করে দেবে, তা কি ১৮৫০ সালে বসে তিনি ভেবেছিলেন?
ডিজিটাল দুনিয়া এত দিন দাঁড়িয়ে ছিল হেনরি কোলি মার্চের স্কিউমরফের ওপর। ১৯৮৪ সালে অ্যাপল কোম্পানির ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার যখন প্রথম বাজারে এল, তখন গ্রাফিকাল ইউজারস ইন্টারফেসের অনেক কিছুর মধ্যেই এই স্কিউমরফের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। ম্যাকিনটোশে যে ডেক্সটপ আইনগুলোর ব্যবহার হয়েছিল, সেগুলো মানুষকে বাস্তব জীবনের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল, কিছুটা অবাস্তব চেহারা নিয়ে। ডিজিটাল দুনিয়ায় স্কিউমরফিজমের শুরু সেই থেকে। এরপর সেই অ্যাপলই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য মানুষের নাকের ডগায় এনে দাঁড় করিয়েছে কিছুটা অবাস্তব চেহারায়। বাস্তবের সঙ্গে অ্যাপলের অনেক কিছুরই মিল না থাকলেও সেগুলো দিয়ে মানুষ ডিজিটাল দুনিয়ায় চিনে নিয়েছে বাস্তব জগৎকে। হয়তো ডিজিটাল বিপ্লবের প্রাথমিক সময়ে ও রকম কিছুর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল ব্যবহারকারীদের মধ্যে দাবি জোরালো হচ্ছে, ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে বাস্তব দুনিয়ার বন্ধনটাকে আরও জোরালো করতে।
অ্যাপলের পর মাইক্রোসফটও ডিজিটাল দুনিয়ায় স্কিউমরফিজমের পৃষ্ঠপোষক। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজের বিভিন্ন মডেলে স্কিউমরফিজমের যথেষ্ট উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কিন্তু ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে বাজারে ছাড়া উইন্ডোজ-৮ যাঁরা ব্যবহার করেছেন, তাঁরা একবাক্যে স্বীকার করবেন, উইন্ডোজ-৮-এর মাধ্যমে স্কিউমরফিজমকে অনেকটাই পেছনে ফেলার পথে হেঁটেছে মাইক্রোসফট।
অ্যাপল অবশ্য বেশ আগে থেকেই তাদের নকশায় বাস্তবতার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। সম্প্রতি, প্রতিষ্ঠানটির সফটওয়্যার বিভাগের দায়িত্ব এসে পড়েছে হার্ডওয়্যার ডিজাইনিং বিভাগের প্রধান জোনাথম ইভের হাতে। এই ভদ্রলোক আবার স্কিউমরফের ঘোর বিরোধী মানুষ। শোনা যাচ্ছে, তিনি আইওএসের বিভিন্ন স্কিউমরফিক নকশার পরিবর্তন এনে বাস্তবিক দুনিয়ার সঙ্গে এর সংগতি আরও বাড়াতে চলেছেন। সামনেই অ্যাপল আইওএস-৭ ও ওএসএক্স ১০.৯ অপারেটিং সিস্টেম দুটির উদ্বোধন করতে যাচ্ছে। এই দুটি নতুন অপারেটিং সিস্টেমে যে স্কিউমরফিজমের উপস্থিতি অনেকটাই কম হবে, সেটা নিয়ে বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠেছে ইতিমধ্যেই।
তার মানে, এটা পরিষ্কার যে ভবিষ্যতে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা অন্যান্য কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমে বহু বাস্তবিক অ্যাপস-আইকনের সমারোহ ঘটতে যাচ্ছে। ট্র্যাশ-ক্যানের ওই ‘কিছুটা বাস্তব, অনেকটাই অবাস্তব’ ব্যাপারটি আর থাকছে না উইন্ডোজ কিংবা আইওএসের নতুন সংস্করণগুলোয়।
তবে, সবকিছু আমূল পাল্টে দেওয়ার একটা সমস্যা আছে। একটি সফটওয়্যার দিনের শেষে একটি ‘সফটওয়্যার’ই, বিষয়টি ভুলে গেলে আবার সমস্যা। ফুটবল খেলার একটি অ্যাপস বা সফটওয়্যারের সবকিছুকে যদি বাস্তব চেহারা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়, তাহলে ভার্চুয়ালিটির তো আর কোনো ব্যাপার থাকে না। মাঠের খেলা আর ভার্চুয়াল খেলার মধ্যে পার্থক্য থাকুক না। স্কিউমরফিজম তো আর জীবননাশী কোনো ব্যাপার হয়ে দেখা দেয়নি।
টাইম সাময়িকী অবলম্বনে
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৪৩
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×