somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজলের ঠিকানা

০১ লা অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাজলের ঠিকানা
কাজী খোরশেদ আলম

দুঃখ-কষ্ট অনুভব করার মতো ধরার বুকে কেউ তার নেই। মা-নেই; তবে কে তার দুঃখ বুঝবে। দুঃখ গুঁছানোর দায়-দায়িত্ব নিবে কে? একটু আদর যতœ করবে, মায়া-মমতা দিয়ে বুকে টেনে নিবে। বাবা বোবা সেজে আছে ; সৎ মায়ের এরূপ আচরন দেখেও ভাল-মন্দ বিছু বলে না। শুধু মাত্র চেয়ে চেয়ে থাকে। অন্তরের অভ্যান্তরে যে ব্যাথা অনুভব হয় না , তা কিন্ত নয়। তবু মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়- এছাড়া কোন গতি নেই । বর্তমান যুগের নারীদের গলায় যে জোর; পুরুষরা তাদের কাছে পরাস্থ না হয়ে পারে না। যে কোন পুরুষ এক সময় না এক সময় নারীর কাছে আত্মসমর্পন করতে হয়; চিরকুমার ব্যতিত। নারীদের বলা হয়Ñপুরুষের রিমোট কন্ট্রোল । কারণ একটা নারী ইচ্ছা করলে পুরুষকে ভাল করতে পারে আবার খারাপও করতে পারে। তার বাহ্যিকরূপে মোহিত করে মায়াজালে বন্দি করে। পৃথিবীর সকল ফাঁদ থেকে উদ্ধার হওয়া যায় কিন্ত নারীর ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন; এমন কি সাধু সন্ন্যাসী পর্যন্ত রক্ষা পায় না।
নারীরা পারে না এমন কাজ নেই । তারা ইচ্ছা করলে সকল কাজ নিমিষে হাসিল করতে পারে।
দিন যায় দিন আসে কিন্ত বয়স তো আর থেমে থাকে না। সে তার গতিতে বেড়েই চলে। তাকে ধরে এক জায়গায় স্থির রাখার ক্ষমতা কারো নেই। এরই মধ্যে কাজল শিশু ও কিশোর বয়স অতিক্রম করে যৌবনে পর্দাপন করল। নব যৌবনের আলো ফুটে উঠেছে দেহে। সারা শরীরে রূপ যেন ঢেউ খেলছে। পূর্ব আকাশে প্রাতের বেলায় যখন রাঙা হাসি হেসে সূর্য উঠে তখন তাকে যেমন আকর্ষণীয় লাগে; তার রাঙা হাসি সবাই ভালবাসে । তদ্রুপ নব যৌবন প্রাপ্ত মেয়েকে আকর্ষণ লাগে; সবাই ভালবাসে- মনে মনে কাছে পাওয়ার আশা-আকাক্ষা ও মনব্যঞ্জণা পোষণ করে থাকে। পরিবর্তন হয়ে গেল দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গের কলা-কৌশল । তাকে দেখে মনে হচ্ছে- বাগানের মধ্যে ফুটন্ত তরতাজা একটি গোলাপ। কিন্ত পরিচর্যাহীন এক বাগানে ফুটেছে ; তাই তার কদর কম। কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে তাকে। একবার দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সাঁজ-গোজ করতে পারলে না জানি ; কত সুন্দর লাগত ! সারা গায়ে তাকে নিয়ে গুঞ্জণ । লোকে বলে- গোবরে পদ্ম ফুঁটেছে।
কাজলের রূপ যৌবনের ঝলকানি দেখে অনেকেই মুগ্ধ হয়েছে। দুর থেকে ভালবাসে, কাছে পেতে চায় ; মনের খায়েস ও যৌন চাহিদা মেটাতে চায় কিন্ত আপন করে নিতে চায় না । গরীবের মেয়ে যে যেভাবে পারে মন্তব্য করে, নানান কথা বলে। গরীব বলে মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়। এই সমাজে গরীবের কোন স্থান নেই, মান সম্মান নেই , ইজ্জত নেই, মূল্য নেই; আছে শুধূমাত্র গঞ্জনা ও অপবাদ ।
কাননে পুষ্প প্রস্ফুটিত হলে হাজার ভ্রমরের গুঞ্জণ শুনা যায় আর এই গুঞ্জণ ক্ষণিকের জন্য Ñ চিকালের জন্য নয়। তাই গরীবরা হয় ধনীদের আনন্দ উল্লাসের বস্তু । বর্তমান সমাজে নব যুবতী মেয়েদের দোষ-ত্র“টির বালাই নেই; চলতে-ফিরতে , উঠতে-বসতে প্রতিক্ষেত্রে দোষ। নিজেকে রক্ষা করে চলা বেশ কঠিন কাজ।
যুবতী মেয়ে ঘরে থাকলে , বাপ-মায়ের মাথায় বিরাট এক বোঝা থাকে। যতদিন না ভাল পাত্রস্থ করা যায়। গরীবের ঘরে জন্ম নিয়েছে বলে বিয়ের কোন গন্ধ নাই। আপন মা নেই বলে কারো মাথা ব্যাথাও নেই। সৎ মা মনে করেনঃ যত দিন ঘরে রাখা যায় দাসী বানিয়ে সকল কাজ-কাম কড়ায় গন্ডায় আদায় করা যাবে। নিজে নবাবজাদি সেজে বসে থাকতে পারবে। এছাড়াও বর্তমান যুগকে বলা যায়, যৌতুকের যুগ। যৌতুকের ছোবলে কত নারীকে অকালে বৃক্ষের পাতার মতো ঝড়ে যেতে হচ্ছে । যৌতুক বিরোধী হাজার রকমের আইন- এই দেশে প্রচলিত আছে কিন্ত কি লাভ ? এই থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল ।
আইন থাকে খাতার পাতায় -এছাড়া আর কিছু নয় । বাংলা আনাচ-কানাচ এমন কোন জায়গা নেই; যেখানে যৌতুক মুক্ত নিঃশ্বাস নেওয়া যাবে। পাত্রের বাবা মায়েরা এত যৌতুক পিপাসু যে তাদের পিপাসা মিঠানো বড় কষ্ট সাধ্য ব্যাপার । পাত্রের কপাল এতই মন্দ যে-তারা এখন বাজারের পন্য; টাকায় বেচাকেনা হয় । তাই কনের বাবারা কন্যা সন্তান জন্মের সাথে সাথে ব্যাংকে টাকা জমা করতে থাকে; যাতে একটা ভাল পাত্র ক্রয় করতে পারে। কিন্ত কাজলের কি হবে? তার তো কোন টাকা পয়সা নেই। তাহলে কি তার জীবনে স্বামীর সুখ জুটবে না। দেখতে দেখতে যৌবনের সকল আলো মলিন হয়ে নিবু নিবু হয়ে যাচ্ছে । যৌবন সাগরে রূপ আর ঢেউ খেলে না। কেমন জানি নিস্তেজ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। স্বামীর মুখ দেখা আর হচ্ছে না। যদিও কোন পয়গাম আসে তা আবার যৌতুকের জন্য ফিরে যায়। যত সুন্দর আর রূপবতী হউক তাতে কি ? কাঁচা টাকা চাই !কাঁচা টাকা।
সৎ মা বলল- মুখ পোড়া । বেডা লইয়া ভাইগ্যা যাইতারচনা । এত টেহা কই পায়াম - তোরে বিয়া দেউনের লাইগ্যা।
কাজল চোখের জল ফেলে আর ভাবে হায় আল্লা! এই কি মন্দ কপাল আমার।
কত স্বপ্ন দেখছে। স্বামীর বাসর সাজাবে ফুলে ফুলে । রূপ যৌবন সব স্বামীর হাতে অর্পন করবে। এই বয়সের প্রতিটি মেয়েই মনে মনে কল্প বাসর সাজাতে ভালবাসে। ভাল স্বামী পেলে সকল চাওয়া-পাওয়ার অবসান ঘটে । যৌতুক পিপাসু বাপ-মায়েরা মনে করেন- একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেওয়া মানে ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা । ব্যাংকে টাকা জমা থাকলে যে কোন সময়ে টাকা উঠিয়ে পকেটে লওয়া যায়। তদ্রুপ ছেলে থাকলে যে কোন সময় বিবাহ করিয়ে মোটা অংকের টাকা পকেটে লওয়া যায়।
অবশেষে তার ললাটে ভাগ্যর চন্দ্রিমা উদয় হল; সুখ দেবতা হাতে ধরা দিল। উজান গায়ের রমিজের সাথে তার বিয়ের কথা পাকা হয়। রমিজ রিক্সা চালায়। সরকারী জায়গায় থাকে। সহায়-সম্ভল বলতে নিজ দেহটা। এছাড়া একটা কানা করিও নেই । এত কিছু জানার পরেও কাজলের বাবা সোনার টুকরো মেয়েটাকে রমিজের হাতে তুলে দিল। যৌতুক হিসেবে দিল একটা রিক্সা । যা দিয়ে কোন মতে চলতে- ফিরতে পারবে।
রমিজ রাজ কন্যার সাথে রাজ্য জয় করল । সারা গায়ে ডাক পড়ে গেল- রমিজ এত সুন্দর বউ পাইল কই ? আহা! কি রূপ ? রূপেরে রূপে খায়! কেউ বলল- হালার ভাগ্য কত ভাল। পরীর মতন সুন্দর বউ পাইছে । আবার কেউ বলল- আ-হা! যেন পূর্ণিমার চান।
রমিজ ও কাজলের গড়া সংসার সুখের মধ্যে ভাসছে। তাদের মধ্যে প্রখর ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছে। একে অপরকে খুবই ভালবাসে। তাদের সংসারে টাকা পয়সার অভাব থাকতে পারে কিন্ত ভালবাসার অভাব নেই। রমিজ যা রোজগার করে আনে তা উভয়ে সমান ভাগ করে খায়। এভাবে কেটে গেল দুটি বছর । কাজলের মুখে হাসি ফুটে উঠল । সৎ মায়ের দেওয়া সকল কষ্টের কথা ভুলে গেল। নারীরা এমনই কোমল মনের অধিকারী একটু ভালবাসা পেলে ভুলে যায় শত সহস্র কষ্ট- বেদনা। ভুলে যায় অতীতের সকল ব্যাথা। তাদের মন জয় করতে পারলে ; স্বর্গীয় সুখ উপভোগ করা সম্ভব । রমিজ ও কাজলের মাঝে মধ্যে টুকি-টাকি ঝগড়া যে হয় না তা কিন্ত নয়। ঝগড়া হলে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আবার তারা ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়।
গরীবের কপালে সুখ বেশি দিন সয়না। দুঃখ যে তাদের একমাত্র সম্ভল। সুখ স্থির থাকে কিভাবে?
রমিজ মরন ব্যাধি ক্যান্সারে আাক্রান্ত হয়। কাজলের চোখে জল টল-মল করছে। কোন হসপিটালে তাকে ভর্তি করতে রাজি হয় না। সবাই বলে-আপনেরা খুব বেশি দেরি করে ফেলেছেন। এখন আর কিছু করার নেই। তার যদি কোন সাধ-ইচ্ছা থাকে পুরন করে দিতে পারেন।
রমিজ শয্যাশায়ী । কাজলকে শয্যার পাশে ডেকে বলল-বউ। আমার বেলা শেষ হয়ে আসছে। তোমাকে কিছু দিয়ে যেতে পারলাম না-বউ। তুমি ক্ষমা কর-বউ; ক্ষমা কর! কাজলের নেত্রে জল গড়িয়ে পড়ছে। ডাক্তাররা পনের দিনের সময় দিয়েছে। ধীরে ধীরে তার জবান বন্ধ হয়ে গেল ।শুধু মাত্র শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। সময় বয়ে চলছে-রমিজের জীবন প্রদীপ টিম টিম করে জ্বলছে।
পশ্চিম দিগন্তে সূর্য অস্তবিত হল- চারদিক অন্ধকারে ঢেকে গেল। রমিজের জীবন লীলা সাঙ্গ হল। সারা বাড়ি জুড়ে কান্না-কাটির রোল পড়ল। দাফন-কাফন সেরে সবাই বসল Ñ কাজলের কি হবে তার একটা বিহিদ ব্যবস্থা করতে । বাবা তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেল । স্বামীর ভিটা ছেড়ে আসতে তার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। তবু ছেড়ে যেতে হল । এই তো ; মেয়েদের জীবন। আপন ছেড়ে পরকে আপন করতে হয় আবার পরকে ছেড়ে চলে যেতে হয় অনেক দূরে।
এবার সৎ মায়ের অত্যাচারের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেল। সারা বেলা একবার খাবার খেতে পায়। তার সাথে আরও কত রঙের কথা , তার ইয়ত্তা নেই । কথাগুলো এত বিষাক্ত যে কাল সাপের বিষকেও হার মানাবে । সকল কুল হাড়িয়ে সে এখন অসহায়। খেয়ে না খেয়ে কাটে তার দিন। দিনে রাতে অভিরাম চোখের পানিতে সিক্ত হয় তার বক্ষদেশ । কি তার দুঃখ ? এই দুঃখের গভীরতা কতটুকু বাহির থেকে কেউ তা অনুভব করতে পারবে না। তাই দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে বেছে নিল....,.,.,.,.,.,.,.,.,.,.,.,.,.,।








০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×