somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামুর সম্প্রদায়িকতা কিংবা প্রতিক্রিয়াবিহীন গৌতম বুদ্ধ

০১ লা অক্টোবর, ২০১২ রাত ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুরেশ কুমার দাশ


মানুষ হিসাবে আমাদের মর্যাদাকে আমরাই মহিমান্বিত করতে পারছিনা। এ কয়দিনের মধ্যে আমাদের এ বীভৎস রূপটা দেখা গেছে। যা আমরা অনেকে লুকাতে চেয়েও পারিনা। এমন কি কারণে প্রতিদিনের চেনা জানা ও সুখ দুঃখের সম্পর্কটাকে জ্বেলে-পুড়ে, মেরে-কেটে উদ্বা¯ত্তু করে দিতে হচ্ছে তা বোঝা মুশকিল। রাষ্ট্র, পুলিশ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোন আশ্রয় না থাকলে শেষ পর্যন্ত আমরা কি ধর্মে ধর্মে হানাহানি করতাম। প্রতিদিনের জানা শোনা মানুষটিকে হত্যা করতাম, আগুনে জ্বালিয়ে দিতাম তার পরিবার পরিজন সহ ঘরবাড়ি। কিংবা ধর্ম শালা, প্রার্থনার ঘর, মূর্তি-মন্দির, মসজিদ -প্যাগোডা। সত্যি ভাবতে ভীষণ উদ্বেগ হচ্ছে। ভয় হচ্ছে। গা শিউরে উঠছে। আমার জানা শোনা প্রতিবেশিকে আমি আগুনে পুড়ে মারছি, কিংবা তিনি আমাকে। সত্যি আমরা কি ধর্ম বাঁচানোর জন্য এসব করে যাচ্ছি। আর ধর্মের জন্য সবাই কি এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।
খুব কম সময়ের মধ্যে কিছু সাম্প্রদায়িক জ্বালাও -পোড়াও এবং নির্মম নিষ্ঠুর হত্যার ঘটনা ঘটে গেছে। শুরু হল বার্মার রোহিঙ্গা মুসলমান নিধন যজ্ঞের মাধ্যমে। এরপর ভারতের আসাম রাজ্যে। যদিও আসামের ঘটনা বেশি প্রচার মাধ্যমে আসেনি। এরপর বাংলাদেশের রামুতে। সেখান থেকে জ্বালাও-পোড়াও ছড়িয়ে পড়ল পটিয়া, উখিয়া,টেকনাফ পর্যন্ত।
রামুতে ১২টি বৌদ্ধ মন্দির পোড়ানো, বৌদ্ধদের ব্যাপক ঘরবাড়ি জ্বালাও পোড়াও, গৌতম বুদ্ধের মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনার সঙ্গে ব্যাপক প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা ছিল বার্মার রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতনের। কারণ এদেশে বৌদ্ধরা মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়েছে খুব কমই। তাই এ ঘটনা একেবারে নতুন ধরনের। তারপর এটার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে আমেরিকায় হজরত মোহাম্মদকে(সাঃ) মর্যাদাহানি করে নির্মিত সিনেমার সঙ্গে। কারণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী যে যুবকের ফেসবুক- পোস্টে কোরান অবমাননার ছবি দেয়া হয়েছে তাতে বিদেশি এক মহিলাকে দেখা গেছে। যা ওই অভিযুক্ত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বি যুবক শেয়ার করেনি। সেটা অন্য কেউ ট্যাগ করেছে অথবা...। মোট কথা ঘটনা ঘটানোর জন্য বার্মা হয়ে আমেরিকা তারপর কক্সবাজারের রামু। সেখান থেকে টেকনাফ উখিয়া ও পটিয়া। এটা এখন কতটা থামানো যাবে তা ভাবনার বিষয়।
এটা গুরুতর ভাবনার বিষয় এ কারণে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে এর আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে মন্দির ভাঙ্গা থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘর পর্যন্ত ঘিরে ফেলেছিল। এমন কি উগ্রপন্থি মুসলমানরা নিজেরাই মসজিদ ভেঙ্গে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা বা অপচেষ্টা করেছিল বলে শোনা গেছে। তখন কিন্তু বার্মার ঘটনা বা আমেরিকার ঘটনা ঘটেনি। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে রাঙ্গামাটির সাম্প্রতিক ঘটনাটিও।
বিষয়গুলোকে রাষ্ট্র বা বর্তমান সরকার নিজের অবস্থান থেকেই দেখছে। এর বাইরে কিছু নয়।
আমি এ মুহূর্তে এ লেখায় তথাকথিত সংখ্যালঘু শব্দটা আনছি। রামুর ঘটনায় আপাতভাবে যদি ওই বৌদ্ধ যুবককে দায়ি হিসেবে ধরে নিই তাহলে পূর্ববর্তি ঘটনাগুলোর জন্য দায়ি কারা ছিল। রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে যেমন তাদের তথাকথিত মৌলবাদি অংশ বিশেষ করে একের পর এক জ্বালাও পোড়াও শুরু করে তেমনি সংখ্যালঘুরাও তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলে যদি একই তাণ্ডব শুরু করে তাহলে বাস্তব পরিস্থিতিটা কি দাঁড়ায়। এটা কি একটা ভয়ঙ্কর দৃশ্য হয়ে উঠবে না। এরপর আমাদের রাষ্ট্রের সম্পর্ক, সামাজিক সম্পর্ক , প্রতিবেশি হিসেবে সম্পর্ক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং মানবিক সম্পর্কের কী ব্যাখ্যা দেব। মনে রাখতে হবে মানুষ হিসাবে আমরা প্রত্যেকে তো প্রতিক্রিয়াপ্রবণ ও সংবেদনশীল। নাকি ধর্ম বিশেষে এ প্রতিক্রিয়া ও সংবেদন আলাদা। কিন্তু বাস্তবতা হল যেখানে বা যে দেশে যারা সংখ্যাগুরু তাদের প্রতিক্রিয়াটা যেন আলাদা ধরনের। এটা বার্মাতেও দেখা গেছে, ভারতেও দেখা গেছে- পৃথিবীর সর্বত্র এমনই দেখা গেছে। তাহলে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নয় পৃথিবীতে সংখ্যালঘুদের জান মাল রক্ষা করার যেন বাস্তব কোন উপায় নেই। একটা কিছু ঘটে যাওয়ার পর - কারো কারো সম্বিত ফেরে। ভারতের গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২ হিন্দু অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় ২১ বছর সাজা দেয়ার খবর পড়েছি সম্প্রতি। এর বাইরে সাম্প্রদায়িকতার কোন বিচার হয়েছে খুব একটা শোনাও যায়নি।
এখন আসছি যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া বানচালের জন্যই এমনটি ঘটাচ্ছে বলে সরকার বার বার বলছে। মৌলবাদী অংশ এবং জামাত ইসলামির সম্পৃক্তার কথা বলছে। কই হাটহাজারির ঘটনায় কোন মৌলবাদি বা জামাত ইসলামীর লোকজনকে অভিযুক্ত হিসাবে সনাক্ত করা হয়নি। কিংবা এরপর সবকিছুই তো ধামাচাপা পড়ে গেছে। অতীতে সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর বিচার হয়েছে - তাও শোনা যায়নি। নাকি রাষ্ট্র মৌলবাদী বা রাজনীতির সুবিধাবাদী অংশকে ভয় পায়। যারা শুধু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই বিনষ্ট করছে না সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থাপনা ও সেখানে প্রার্থনার দেব -দেবিও ভাঙ্গচুর করছে। বাস্তবতা কি এটাই যে সংখ্যালঘুদের ইশ্বরও পৃথিবীর সর্বত্রই দুর্বল। কিংবা প্রতিক্রিয়াবিহীন।
যুদ্ধাপরাধের ইস্যুর সঙ্গে যদি সত্যিই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের বর্তমান বাস্তবতা থাকে তাহলে এদেশে সংখ্যালঘুদের জন্য আরও ভয়ঙ্কর দিন অপেক্ষা করছে। কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষিত ও সচেতন মুসলমান মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাথে পাকবাহিনীর হাতে প্রথমে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সংখ্যালঘুরা। এ বিষয়টি যারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলে তাদের মনে রাখা দরকার।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×