somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বলছি - খুলনার এক যুবরাজ হাসান সাইদ টিপুর কথা

০১ লা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(লেখাটি 'কবি ও কাব্য' ভাইয়ের কাছে থেকে ধার করা)


১৯৬৭ সালের ১৬ ই জানুয়ারী খুলনার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয় এক ছোট্ট এক শিশু। সেই ছোট্ট শিশুটি এক সময় বড় হতে থাকে আর তার দুরন্ত ডানপিটে স্বভাব বাড়তে থাকে। সাথে সবাইকে মুগ্ধ করার মতো আরও একটি চমৎকার গুন আল্লাহ তাকে জন্মের সময়ই দিয়ে দিয়েছিলেন যাকে বলে ঈশ্বরপ্রদত্ত। হ্যাঁ, সেই ঈশ্বরপ্রদত্ত সুকণ্ঠ দিয়েই ছেলেটি সবাইকে গান শুনিয়ে মুগ্ধ করতো। তা হোক স্কুলে অথবা বন্ধুদের আড্ডায় সবখানেই ছিল সেই প্রাণবন্ত কণ্ঠ। ধীরে ধীরে যে ছেলেটি একদিন হয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের অন্যতম যোদ্ধা ও সবার প্রিয় 'টিপু' ভাই। হ্যাঁ বন্ধুরা ! আজ আমাদের প্রিয় অবসকিউর ব্যান্ড এর প্রিয় 'টিপু' ভাইয়ের ৪৫ তম জন্মদিন। প্রিয় টিপু' ভাইকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। যিনি বাংলা ব্যান্ড/পপ সঙ্গীতে অমর হয়ে থাকবেন তাঁর কালজয়ী সব গান দিয়ে।

খুলনার কাছে বাংলা সংগীত অনেক অনেক ঋণী। যে খুলনা থেকে লালন এর জন্ম সেই খুলনা থেকেই যুদ্ধপরবর্তী স্বাধীন বাংলার বাংলা গানের নতুন এক যুগের সব কাণ্ডারিদের আমরা পেয়েছি। খুলনা থেকেই পেয়েছি টিপু ও অবসকিউর, মেজবাহ ও ডীফরেনট টাচ,দেশ সেরা গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী প্রিন্স মাহমুদ এর মতো সব সেরাদের। যারা আমাদের গুরু আজম খান, পিলু মমতাজ, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ সাই ও ফকির আলমগির এর শুরু করা যুদ্ধকে এক বিশাল প্রাপ্তি তে পরিণত করেছেন। আর আমাদের বাংলা গানকে করেছেন আরও সমৃদ্ধশালী।

টিপু’র ছেলেবেলাটা আর দশজনের মতোই কেটেছে। লেখাপড়ায় ভালোই ছিলেন তিনি। গান করতেন নিজের মনে। বাংলা গান খুব বেশি গাওয়া হতো না, গলা খুলে ইংরেজি গানই বেশি করতেন। স্কুল কলেজে গানের জন্য বিখ্যাতই ছিলেন টিপু। বন্ধুরা টিপুকে পেলেই জেঁকে ধরতো আর তিনিও একটার পর একটা গান গেয়েই চলতেন।

টিপু যখন কলেজে পড়তেন তখন প্রায়ই ক্লাসমেটদের সঙ্গে রিকশায় ঘুরে বেড়াতেন। তার ভাষ্যমতে, ‘তখন এটাই ছিলো আমাদের এক ধরনের আনন্দ করা উপায়। রিকশা যেমন চলতে থাকত, তেমনি চলত আমাদের পালা করে গান গাওয়া। মানাম আহমেদ আমার সহপাঠী ছিলেন। তিনি গান করতেন, সঙ্গে আমিও।’

তখন ১৯৮৪ সাল। একদিন মানাম আহমেদ টিপুকে প্রস্তাব দেন ব্যান্ডে যোগ দিতে। ব্যান্ড সংগীতের স্বর্ণযুগে নিজেকে যুক্ত করতে দ্বিধা করলেন না টিপু। তিনি যোগ দিলেন চাইমে। টিপু জানালেন, ‘১৯৮৪ সালে আমি চাইমে যোগ দিই। টিএসসিতে আমার অডিশন হয়। সেই সময় টুলু ভাই ছিলেন চাইমে। তিনি টিপুকে সিলেক্ট করেন এবং তখন টিপু চাইমে ইংরেজি গান গাইতে শুরু করেন।

তবে টিপু খুব বেশি দিন ছিলেন না চাইমে। বছর খানেক পর তিনি উপলব্ধি করলেন, তার বাংলা গান করা উচিত। নিজের একটি ব্যান্ড গড়ে তুলবেন বলেও সিদ্ধান্ত নিলেন। অনেক ভেবে-চিন্তে তিনি জন্মস্থান খুলনায় চলে গেলেন। সেখানেই কয়েকজন মিলে তৈরি করলেন একটি ব্যান্ড। নাম দিলেন অবসকিউর। এমন নামকরণের কারণ সম্পর্কে টিপু বললেন, ‘অবসকিউর মানে অস্বচ্ছ বা অস্পষ্ট। আমরা লুকিয়ে থাকা জনপ্রিয়তা অর্থে নামটি ব্যবহার করেন টিপু ও তাঁর সহযোদ্ধারা । তখন একটি হারমোনিয়াম এবং গিটার নিয়ে ব্যান্ড তৈরি করে বাড়ির নিচের একটি পরিত্যক্ত ঘরে তাঁরা প্র্যাকটিস করতেন’।

ব্যান্ড গঠনের পর গান গাওয়ার চেয়ে গান লেখা এবং সুর করার কাজটাই বেশি হতো তাদের। এভাবে তারা ৩০টি গান তৈরি করে ফেলেন। এরপর সারগাম স্টুডিওর রেকর্ডারের সঙ্গে টিপুর পরিচয় হয়। অবসকিউরের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে যান তিনি। গান রেকর্ডিং করে ক্যাসেট বের করার কথা বলেন তিনি। এমন অসাধারণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি টিপু।
সেই সেলফ টাইটেল প্রথম 'অবসকিউর' ব্যান্ড এর অ্যালবাম বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের ইতিহাসে চিরঠাই করে নেয়। যেখানে পেয়েছিলাম ' মাঝরাতে চাঁদ' ছাইড়া গেলাম মাটির পৃথিবী' 'ভণ্ড বাবা' 'মমতায় চেয়ে থাকা' মত ১২ টি সেরা গান। যা সেই ছোটবেলা থেকে আজো হৃদয়ে গেঁথে আছে এবং থাকবে চিরকাল ।

এরপর ১৯৯০ সালে বের হয় ২য় অ্যালবাম যেটিও সেলফ টাইটেলড । যার মাঝে পাই ' তুমি ছিলে কাল রাতে', খোদা 'তোমায় ডাকবো যখন' 'আধার ঘেরা স্বপ্ন ' সন্ধ্যা আকাশ' ' দৃষ্টিরই সীমানায়' এর মত চিরসবুজ ও চিরকাল মনে রাখার মত প্রিয় সব গান। এরপরে খানিক বিরতি দিয়ে ৯৩/৯৪ এর দিকে আসে অবসকিউর এর একটু অন্যরকম রকিং অ্যালবাম 'স্বপ্নচারিণী' যেখানে এতদিনের চেনা শান্ত শিষ্ট, রোমান্টিক 'টিপু' অনেক দুর্দান্ত, বুকের ভেতর জমে থাকা কোন ক্ষোভ যেন বারুদ হয়ে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে সেইরকম একটি অ্যালবাম ছিল 'সপ্নচারিনি'। এই অ্যালবাম এর আগে খুলনার ২ জনপ্রিয় তারা ফ্রম ওয়েস্ট (প্রিন্স মাহমুদ) ও ডীফরেন্ট টাচ (মেজবাহ) কে নিয়ে একটি অসাধারণ ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম "আবেগ' বের করে অবসকিউর । যে অ্যালবাম এর প্রতিটা গানই ছিল 'আবেগ' নিয়ে খেলা করা দুর্দান্ত সুন্দর সব গান।

'স্বপ্নচারিণী' অ্যালবাম এর 'সপ্নচারিনি' 'তুমি অকারণে ' 'আধার ঘেরা রাত' 'সেই তুমি কোথায়' 'সেই তুমি' র মত দুর্দান্ত কিছু গান। এরপর অবসকিউর কে আর পাওয়া না গেলেও শ্রোতারা প্রিয় 'টিপু' কে পেয়েছিল সবসময় বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবাম এর চরম জনপ্রিয় ও দুর্দান্ত সব গানে। সেই মিক্সড অ্যালবাম এর যুগে শ্রোতারা পায় প্রিয় 'টিপু'র প্রথম একক অ্যালবাম 'একাকী একজন' । যা এক কথায় একটি অসাধারণ অ্যালবাম ছিল। যেখানে 'টিপু' আবার সেই পুরনো শান্ত শিষ্ট বিরহের আগুনে জ্বলা সুন্দরতম একজন মানুষ। সেই অ্যালবাম এর 'একাকী একজন' 'আমার আমি ছাড়া' 'আমার মন' গানগুলো ছিল চোখে জল আসার মত সব গান। ব্যক্তিগত জীবনে শহীদ আলতাফ মাহমুদ এর কন্যা শাওন মাহমুদ কে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার যিনি 'টিপু'কে সর্বক্ষণ অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন গান করার জন্য।

২০০৭ থেকে আবার নতুন রূপে অবসকিউর এর হাল ধরে ফিরে আসেন 'টিপু' ও অবসকিউর। বাংলা গান যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন সেই ইতিহাসের একটি উজ্জ্বলতম তারা হয়ে জ্বলজ্বল করে বাংলা গানের আকাশে জ্বলবে যে তারাটি তাঁর নাম 'টিপু'। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, গানের প্রতি ভালোবাসা আর স্রোতাদের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সবসময় বাংলা গানের সম্ভারকে এক একটি ফুল দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন তাদর মধ্য টিপু অন্যতম। আজকের এই ভালো ও শ্রুতিমধুর মানসম্পন্ন বাংলা গানের দুর্ভিক্ষের সময়কে যারা দূর করতে পারেন তাদেরই একজন টিপু। তাঁদের ফিরে আসাটা এবং আবার সেই কাণ্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ দেখার জন্য কোটি কোটি বাংলার মানুষ আশায় বুক বেঁধে আছে। কারন তাঁদের যে আছে অনেক তারার ভিড়ে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলতে থাকা একটি তারা যার নাম টিপু! যিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি। তিনি যে বাংলা গানেরই এক 'যুবরাজ' ,যার কণ্ঠে সুরের মুচ্ছনায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে আর আমাদের মুক্তি দিবে কোটি কোটি বাংলা গান পাগল স্রোতাদের খাদের কিনারায় যাওয়া মানহীন বস্তাপচা গানের এই আকালের যুগ থেকে ।
শুভ জন্মদিনে হে যুবরাজ তোমাকে জানাই কোটি কোটি প্রাণের ভালোবাসা ও সালাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×