somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আই সি ইউ (করুন অভিজ্ঞতা)

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাচ্চাটি প্রিমেচুউর বেবী ছিল। জন্মের সময় তার ফুসফুসের পূর্ণাঙ্গ গঠন হয়নি। বেবী ছিল ধানমন্ডির নামকরা এক বেসরকারি হাসপাতালে। অনেক দিন আইসিইউ তে ছিল। সেসময় আমি অনেক করুন ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। এমন দুইটি অভিজ্ঞতা এখন সবার সাথে শেয়ার করছি।
(১)
আইসিইউ এর বাইরে দুঃচিন্তায় সময় কাটাচ্ছে রোগীর স্বজনেরা। রোগী সকলেই শিশু বিশেষতঃ সদ্যজাত শিশু। স্বজনদের বেশিরভাগই শিশুর বাবা। সদ্য বাবা হয়েছেন কিন্তু কারো মুখে হাসি নেই। সন্তানের মূমুর্ষ অবস্থা। বাচবে কি মারা যাবে ঠিক নেই। বেশিরভাগ শিশুই জন্মের পরপরই জটিল সমস্যায় ভুগছে। চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল। মায়েরা কেবিন বা ওয়ার্ডে অসহ্য মানুষিক যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে।
আইসিইউ তে সন্তানের কাছে যাবার অনুমতি কারো নেই, এমন কি মায়েরও না। বিকেলে কিছুক্ষন আইসিইউ এর একপাশে গ্লাসের পর্দা সরিয়ে দেওয়া হয়। বাবা - মা হুমরি খেয়ে গ্লাসের সামনে দাড়ায়। দুর থেকে শিশুর মুখ দেখতে না পেলেও অবয়ব দেখতে পায়।শিশুগুলোর নাকে নল, মুখে নল, হাত-পায়ে স্যালাইনের পাইপ। কোন শিশু হাত – পা নাড়া চড়া করলে বাবা-মা র চোখে আনন্দের অশ্রু চিক চিক করে উঠে।
বিভিন্ন রোগীর স্বজনদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠছে। ঝড়ের মধ্যে সকলে একই নৌকার যাত্রী।সকলে নিজের কষ্টের কথা বলছেন, একে অপরকে সান্তনা দিচ্ছেন।
এক বাবাকে দেখলাম এক মাস যাবৎ বাচ্চাকে ভেন্টিলেটর (লাইফ সাপোর্ট) চালিয়ে যাচ্ছেন। ৩২ দিন পর ডাক্তাররা নিশ্চিত করলেন বাচ্চা বাচবে না। বাবা তখনো ভেন্টিলেটর চালিয়ে যেতে বলল। প্রতিদিন শুধু ভেন্টিলেটর খরচ ১০,০০০ টাকা। অন্যান্য খরচতো আছেই। জমি বিক্রি করে তিনি খরচ চালাচ্ছিলেন। বাবার মুখে শুনলাম, “বাচ্চা বাচবে না, কিন্তু ডাক্তারদের কিভাবে বলব এখনি লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে আমার বাচ্চাটিকে মেরে ফেলেন”।৩৮ দিনের মাথায় বাচ্চাটি মারা গেল। মা উচ্চ স্বরে কাদছে।মায়ের মতো বাবা উচ্চ স্বরে কান্না করেনি। চোখ মুছতে মুছতে তিনি হাস্পাতাল হতে বিদায় ব । যাবার সময় আমার বাচ্চার আরোগ্য কামনা করয গেলেন।
উল্লেখ্য তার হাসপাতাল বিল(ঔষধ, প্যাথলজিকেল টেস্ট ছাড়া) হয়েছিল সাত লক্ষ টাকার উপর। হাসপাতাল এক টাকাও কনসেশন করেনি। অবশ্য অধিকাংশ টাকা পূর্বেই শোধ করা হয়েছিল। ২/৩ দিন পর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাগাদা দেন ডিও পরিশোধের জন্য।
(২)
আমার বেবী আইসিইউ তে থাকার সময়কার আর একটি ঘটনা। তখন একই সাথে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের আইসিউ তে ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য বিশেষ কার্যক্রম (ফিউমেগেশন) চলছে। ঢাকার আর কোথাও সরকারী হাসপাতালে শিশুদের জন্য ভেন্টিলেশন মেশিন নেই ( ২০০৯ সাল)/ একদিন দেখলাম হাসপাতাল গেইটে এক সিএনজি থেকে দুই মহিলা ও এক পুরুষ নামছে। এক মহিলার কোলে ছোট এক শিশু।নাকে নল, অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। অক্সিজেনের সিলিন্ডার পুরুষটি বহন করছে।শিশুটি যে নলের মাধ্যমে পর্যাপ্ত অক্সিজেন নিতে পারছে না তা স্পষ্ট। শরীর নীল বর্ণ ধারন করেছে। অক্সিজেনের অভাবে ছোট্ দেহটি মোচড় খাচ্ছে।ভেন্টিলেটর প্রয়োজন।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছিল।সেখানে ভেন্টিলেশনের ব্যাবস্থা না থাকায় এখানে নিয়ে এসেছে।
পোশাক ও চালচলনই বলে দিচ্ছে তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। হাসপাতালের রিসেপ্সনে বসা টাই পরা ভদ্রলোক নড়ে চড়ে বসলেন।তাদেরকে প্রথমেই জানিয়ে দেওয়া হল, প্রতিদিন ভেন্টিলেটর খরচ ১০,০০০ টাকা ও আইসিইউ চার্জ ৫০০০ টাকা। ঔষধ, প্যাথলজিকেল টেস্ট ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিদিন আরো পাঁচ-দশ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।আর ভর্তির সময় প্রায় ৩০,০০০ টাকা অগ্রিম দিতে হবে।
পরিবারটি সিদ্বান্ত নিতে পারছে না। এমন ব্যায়বহুল চিকিৎসা তাদের সাধ্যের বাইরে।ফিরে গেলে বাচ্চার মৃত্যু (কষ্টকর মৃত্যু) নিশ্চিত। মা শুধু চিৎকার করে কাদছে। বাবা শেষ পর্যন্ত সিদ্বান্ত নিলেন। রিসেপ্সনে বসা ভদ্রলোককে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে অনুরোধ করলেন বাচ্চাটিকে ভর্তি করতে। পরদিন সকালে বাকি ২৫০০০ টাকা দিবেন।ভদ্রলোক রাজী হলেন না। আমরা অনেকে অনুরোধ করলাম, চাপ দিলাম।শেষ পর্যন্ত ভদ্রলোক কর্তৃপক্ষের সাথে ফোনে আলাপ করে কিছু শর্ত আরোপ করে বাচ্চাটিকে ভর্তি করালেন।
বাবা ধার কর্জ করে চার দিন পর্যন্ত বাচ্চার চিকিৎসা চালাতে পারলেন। একদিন দেখলাম অসুস্থ বাচ্চাটিকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন।মা বাচ্চাটিকে শক্ত করে বুকে ঝড়িয়ে ধরেছেন। নাকে অক্সিজেন নল। অক্সিজেনের অভাবে দেহটি কুকড়ে যাচ্ছে। শোনা যায় অতি শোকে পাথড়।মা আর চিৎকার করছে না।নীরবে চোখের পানি ফেলছেন। তার ভেতরতা যে ক্ষতবিক্ষত তা সহজে অনুমেয়।সন্তানকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুপুরীতে। বাবার চোখে মুখে দেখলাম কষ্ট আর পরাজয়ের বিষাদ।

নিজেদের কষ্টের মাঝেও আমরা সবাই হতবিহবল।আমাদের অনেকের চোখ অশ্রুতে ভিজে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৭:১২
৩৫টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×