somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাহিরে যা দেখছেন তা ভেতরের নয়

১১ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ একজন বিপদগ্রস্ত,তার চোখে পানি, চুল উসকোখুসকো,মলিন চেহারাটায় হতাশা বা দুশ্চিন্তার ছাপ।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ক্ষুধাত-পিপাসাত,চোখ দুটি লাল, বিধ্বস্ত অবয়ব। অথচ আপনি হাত বাড়িয়ে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন-আপনি কেমন আছেন? এটা এমন যে কেউ উত্তপ্ত কড়াইয়ে কষ্ট যন্ত্রনায় দগ্ধ হচ্ছে,কোন বিষাক্ত সাপের দংশনে বেদনায় কাতরাচ্ছে,কিংবা কোন সন্ত্রাসী-দুবৃত্ত-ডাকাত-অস্ত্রধারীর তাড়া খেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘমাক্ত শরীরে আপ নার কাছে আসার পর তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা।মুখের ভাষা কানে না পৌছলে চোখে দেখে যে কিছুই বুঝেনা সে চোখ থাকতেও অন্ধ।আসলে আমি যেটি বলতে চাচ্ছি মুখের ভাষা নয় চোখের ভাষা আর শরীরের ভাষাটাই হৃদয়ের ভাষা। এই ভাষা বুঝতে অক্ষম হলে তাকে সক্ষম ভাবাটা দোষেরই বটে।

সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখে আহ্!উহ্!উফ্!ইস্!বলার কোন মূল্য নেই।ছিঁড়া জামাকাপড় পরনে অথচ আপনি মাথায় হাত বুলালেন,দু’দিন ধরে যে খায়নি তার চোখের অশ্রু মুছে দিলেন-এতে খুব বেশি যায় আসেনা।তার মানে এই শান্তনা বাণী শুনানো কিংবা দরদমাখা মুখের মিষ্টি কথার আশ্বাস জানানোকে আমি নেতিবাচক মূল্যায়ন করছি এমনটা নয়। তবে আমি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির পাশে থেকে তার সংকট নিরসনের কাযকর উদ্যোগ বা ভুমিকাকে স্বাগত জানাতে চাই।যার যেটার শূণ্যতা তা পূরণ করে দিন, যৌক্তিক প্রয়োজনটা মিটিয়ে দিন,যেটার জরুরী চাহিদা তা সরবরাহ করুন-সমস্যার সমাধান বা সম্ভাবনার বিকাশ হলে এতেই আপনার সহানুভূতিশীল হৃদয় আর সহমমিতা প্রকাশ পাবে।

অযৌক্তিক কেড়ে নেয়াতে খুব বাহাদুরী নেই।একটি ছোট্ট শিশুর হাত থেকে তার অনেক বেশি প্রিয় পুতুলটি কেড়ে নিতে চাইবেন সে কাঁদবে,মায়ের বুক খালি করে তার সন্তানটি নিয়ে নিবেন মা অভিশাপ দিবে,প্রেমিকের কাছ থেকে তার প্রাণপ্রিয় প্রিয়সীকে দূরে ঠেলে দিতে চাইবেন সে বাধা দিবে,কোন নেতা কিংবা পীরকে আক্রমণ করবেন তার ভক্ত অনুসারী বা কমীরা প্রতিরোধ করবে। একজন জুতা পালিশ ওয়ালার কাছে কালি ও ব্রাশের মূল্য বেশি,পেশাদার ফটোগ্রাফারের কাছে ক্যামেরার মূল্য বেশি,আটিস্ট এর কাছে রংতুলির মূল্য বেশি,নাপিতের কাছে কেচি ও ব্লেডের মূল্য বেশি,লেখকের কাছে কাগজ ও কলমের মূল্য বেশি,ধমপ্রচারকের কাছে ধমগ্রন্থের মূল্য বেশি।অথাৎ একজন ব্যক্তির জীবন ও জীবিকা জড়িয়ে আছে যে কম ও দায়িত্বের সাথে অন্যের কাছে তা যত তুচ্ছই মনে হোক না কেন তার কাছে তা অনেক বেশি মূল্যবান।ফলে কাউকে তার ব্যক্তিত্ব ও আত্মপরিচয়কে আঘাত করে কোন কিছু বলাই তার অপ্রিয় মানুষ হবার জন্যে যথেষ্ট।

সকল পেশার মানুষের প্রতি সম্মান জানানোতেই উদারতা, বড়ত্ব, মানবিকতা, মনুষত্ব, বিশালত্ব।আপনি যখন অসুস্থ হন ডাক্তারের কাছে যান,আইনী ঝামেলায় পড়েন আইনজীবীর কাছে যান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের কাছে আলোকিত মানুষ হবার উদ্দেশ্যে যান,বিচার সালিশে রাজনীতিবিদের কাছে যান। এটা ঠিক সবার জন্যে সব সময় সবাই গুরুত্বপূণ নাও হতে পারে।যেমন-একজন লেখকের কাছে প্রকাশকের যে কদর,একজন সাংবাদিকের কাছে সম্পাদকের যে কদর হয়ত একজন রিক্সাচালকের কাছে এই পেশাগত ভিন্নতার সমান মূল্য নাই থাকতে পারে।আমি বলতে চাচ্ছি,কোন কাজকেই অসম্মান করা,তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়। ভেবে দেখুন আপনাকে জীবনে কতবার নাপিতের কাছে যেতে হয়েছে,মুচির কাছে যেতে হয়েছে।ভাবতে পারেন যদি গাড়ির ড্রাইভাররা কখনো গাড়ি-ট্রেন না চালায়,মাঝিরা নৌকা চালানো বাদ দেয়,লঞ্চ-স্টিমার-জাহাজে চালক না থাকে, পাইলট বিমান না চালায়-স্থবির হয়ে পড়বে সবকিছু,থমকে যাবে গতিশীলতা।বাবুচি যদি রান্না ছেড়ে দেয়, নাসরা যদি সেবা করা ছেড়ে দেয়,পিয়নরা যদি ফরমায়েশ না শুনে,সুইপার-হেলপাররা যদি তার দায়িত্ব পালন না করে তবে স্বাভাবিক কমপ্রবাহ কতটা বাধাঁগ্রস্ত হবে।অথচ অনেকে প্রত্যেকটা মানুষকে সম্মান করাতো দূরে থাক সম্মানের মনোভাবটাও পোষণ করেন না।

এখন সামষ্টিকভাবে মানুষের চরিত্রের অধ:পতনটা বেশি ঘটছে মনে হয়। একজন চরিত্রহীন মানুষও গণমানুষের সমথন পেয়ে নেতা হচ্ছেন। যদি দুনীতি, সন্ত্রাসকে মানুষ মেনে না নিত তবে দুনীতিবাজ-সন্ত্রাসীরা নিবাচিত হতে পারতেন না।অথাৎ পাপী বা অপরাধীকেও সম্মান জানানোর মত মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যাচ্ছে।যখন কোন বেআইনী কাজে যুক্ত মানুষকে মেনে নেয়া হয় তখন সে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে উৎসাহিত হয়।একজন খারাপ মানুষকে লালন পালন করা হল না কিন্তু স্বীকৃতি দেয়া হল-এতে কি অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির পথকেই সুগম করা হল না? কালো টাকার মালিক যদি সমাজের চোখে মানুষের চোখে সম্মানের আসনে সমাসীন হউন তবে নৈতিকভাবে দুবল মানুষগুলোকে কি অবৈধ পথে আয়-উপাজনে অনুপ্রাণিত হন না? আর এভাবেই নরকরাজ্য গড়ায় সামষ্টিক প্রয়াসটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরলতা,সততা,স্পষ্টবাদীতা কি কমে যাচ্ছে? মন থেকে পছন্দ হয়না তবু নেতার আনুকূল্য পাবার আশায় প্রশংসা করছে। বসের দিক নিদেশনা ভুল মনে হলেও কোন সমালোচনা ছাড়া নিদ্বিধায় মেনে নিচ্ছে।আচার ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হয়েও কোন প্রাপ্তির লোভে গুণকীতন করছে।বুকে চাপা কষ্ট নিয়েও লোক দেখাতে হাসছে।অলস সময় কাটায় এমন ব্যক্তিও অন্যের কাছে নিজেকে বেশি গুরুত্বপূণ করে তুলে ধরতে ব্যস্ততা দেখাচ্ছে।খুব কম শিক্ষিত হয়েও কোট ট্যাই পরিধান করে বাংলা ইংরেজি মিশ্রিত ভুল উচ্চারণে কথা বলে বেশি পান্ডিত্য দেখাচ্ছে।গরীব দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও চাইনিজ-ফাস্টফুড খেয়ে নিজেকে বিত্তশালী অথশালী প্রমাণ করতে চাইছে।অসহায় কৃষকের সন্তান হয়েও রিক্সা-সিএনজি-ট্যাক্সি নিয়ে চলছে,পায়ে হাঁটাকে এড়িয়ে চলছে।আসলে সে যা তা নয় বরং সে যা নয় তাই অপরকে বুঝাতে চাচ্ছে। এইযে লুকোচুরি এটা শুভ লক্ষণ নয়।বাহিরটা দেখে ভেতরটা বুঝা দুষ্কর হয়ে পড়ছে।মুখোশে ঢেকে যাচ্ছে সবকিছু।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×