বাংলাদেশের অনেক মেয়েই নিজেদের চেহারা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে।যারা মনে করছে তারা ততটা আকর্ষণীয় নয় তাদের মধ্যে নিজেদের আড়ালে রাখার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে।মন যখন বেশি আক্রান্ত হয় তখন নিজের ভালো মন্দ বিচার করতে পারে না। মানুষের মন এক রহস্যের খনি। একেকজনের মন- মানসিকতা একেকরকম। কারো মন সহজ-সরল, কারো মনে থাকে ভীষণ জটিলতা।নিজেকে সবাই ভালো বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। পঞ্চাশ দশকের শুরুর দিকে যখন মানসিক রোগ চিকিৎসার আধুনিক ঔষধ আবিষ্ককৃত হয় তখন মানসিক রোগ চিকিৎসায় বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়।‘যদি কারো চিন্তার পরিবর্তন, আবেগের পরিবর্তন, স্নৃতিশক্তির পরিবর্তন, বিচার-বিবেচনা বা বোঝার পরিবর্তন হয় এবং তা তার কথাবর্তা বা আচার আচারণে প্রকাশ পায় তাহলে তাকে মানসিক রোগে আক্রান্ত বলে মনে করা হয়।’‘ব্যক্তির ব্যবহারিক পরিবর্তন, তাতে যদি আশপাশের লোক কষ্ট পায় বা আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে কষ্ট পায় তবে বুঝতে হবে সে মানসিক রোগে আক্রান্ত।’মানসিক রোগ পৃথিবীর একেবারে আদিম যুগ থেকে চলে আসছে।
মানসিক রোগ নিয়ে আমাদের সমাজে রয়েছে নানা ভুল ধারণা। বাংলাদেশে ১৫ লাখ মানুষের জন্য গড়ে একজন বা তারও কম মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন এবং মোট বিশেষজ্ঞের মধ্যে অধিকাংশই রয়েছেন শহরাঞ্চলে।ফেসবুক নামটা এখন গ্রামে গঞ্জের মানুষের মুখেও শোনা যায়। ফেসবুকে বর্তমানে ব্যাবহারকারী রয়েছে প্রায় ৯৫ কোটি।বর্তমানে চাকুরিদাতারা ধরেই নেন যে আবেদনকারির ফেসবুক আ্যকাউন্ট আছে।বর্তমানে প্রায় ৯০% চাকুরিদাতাই আবেদনকারীর ফেসবুক প্রোফাইল জাচাই বাছাই করে চাকুরি দেন। সাইকোলজিস্টরা মনে করেন, ফেসবুকে কার্যক্রম একটি শক্তিশালী সামাজীক জীবন।কিছু মানসিক রোগী মানসিক বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তারের কাছেই যেতেই চান না। বিশেষ করে ’সিজোফ্রেনিয়া’ নামক জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীরা এমনটি বেশি করে। তারা একদিকে সন্দেহ প্রবন অন্যদিকে ভাবেন তাকে ‘পাগল’ বলে চিকিত্সা করানো হচ্ছে। আমেরিকার মতো উন্নত দেশে মারাত্মক মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা ৫ মিলিয়নেরও বেশি। মানসিক রোগ জাতি, ধর্ম, বর্ণ কোনো কিছুই বিবেচনা করে না।
শিশু জন্মের পর অনেক মায়ের মধ্যেই মনোভাবের কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যেমন, কোন কারন ছাড়াই কান্না,কাউকে সহ্য করতে না পারা, অকারনে অস্থিরতা এবং দুশ্চিন্তা। সাধারনত ডেলিভারির দশম দিনের মধ্যেই এ সমস্যা দূর হয়ে যায়। সর্বোপরি মাতৃত্বের বিরাট দায়িত্ব পালনের দুশ্চিন্তা ।মানসিক শারীরিক চাপ কমানোর জন্য পরিবারের সবার গর্ভবতি মায়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিৎ। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিৎ ।জটিল ও তীব্র মানসিক রোগ যেমন স্কিটজোফ্রিনিয়া, ম্যানিয়া ও অন্যান্য সাইকোটিক ডিজঅর্ডার (যেখানে রোগীর বাস্তবতার সাথে কোন সংযোগ থাকে না) এবং নিউরোটিক সমস্যা যেমন মাঝারি থেকে তীব্র বিষন্নতা, অবশেসন, শিশুদের অতিচঞ্চলতা (ADHD) প্রভৃতি বিভিন্ন মানসিক রোগ চিকিৎসায় ঔষধের কোন বিকল্প নেই ।মানসিক রোগের ব্যাপারে অধিকাংশই উদাসীন। এক সময় মানসিক রোগীকে ভাবা হতো অপরাধী হিসেবে। এই রোগে আক্রান্ত মানুষটির প্রতি নেতিবচক ও ভুল দৃষ্টিভঙ্গি সর্বত্র। মানসিক রোগ নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নেই এরজন্য দরকার সঠিক বিষয়টি জানা এবং সচেতন হওয়া।ইউরোপ-আমেরিকাতে একটি ছেলে তার মেয়ে বন্ধুকে একত্রে জড়াজড়ি করে চুমু খাবে এটাই তাদের সংস্কৃতিতে স্বাভাবিক। এটিকে কখনো অস্বাভাবিক আচরণ বলে মনে করে না বরং এর উল্টো হলেই তারা অন্য রকম দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করে। একই প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের কথাই ধরা যাক, ওপরের আচরণটি কোনো ছেলেমেয়ে জনসমক্ষে করে বসলে সেটিকে আমরা কি স্বাভাবিক বলতে পারব?
লেখাপড়া বাদ দিয়ে তার সন্তান ঘণ্টার পর ঘণ্টা কার সাথে কথা বলছে তা অভিভাবকেরই যাচাই করা দায়িত্ব । রাজধানী ও আশপাশে মোবাইল ফোনের ফাঁদে পড়ে প্রতিমাসে শতাধিক কিশোরী-তরুণী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রীরা বেশি মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদে পড়ে। সাধারণ জনগণের বেশিরভাগের ধারণা মানসিক রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধগুলি শুধুমাত্র ঘুমের জন্য ও উপসর্গ দূর করার কাজে লাগে, প্রকৃত সমস্যার সমাধান করতে পারেনা। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় সারাদেশে প্রাপ্ত বয়স্ক জনগণের উপর পরিচালিত এক জরিপে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিচিত্র তথ্য পাওয়া যায়। এদেশের শতকরা ৫৫.৪ জন জীন ভূতের আছর অথবা যাদুটোনাকে (Black magic or Evil spirit ) মানসিক রোগের অন্যতম কারণ মনে করেন। এমনকি বিজ্ঞানী ফ্রয়েডও এক সময় বলেছিলেন যে, হয়তো এমন একটা সময় আসবে যখন দেহের মধ্যেই মানসিক রোগের উৎসের সন্ধান পাওয়া যাবে।প্রতিটি মানুষই জীবনে কখনো না কখনো বিষণ্ন থাকে। সব ক্ষেত্রেই এটা কোনো মানসিক রোগ নয়। এক সময় তা চলে যায়। জীবনে এমন এক শেষ সময় আসে যাকে বলে বৃদ্ধ বয়স। এই বৃদ্ধ বয়সেও অনেক সময় ডিপ্রেশন দেখা দিয়ে থাকে।
মানসিক রোগ চিকিৎসায় অন্যতম জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা পদ্ধতির নাম ইলেকট্রোকনভালসিভ থেরাপী (ECT) যা তথাকথিত ‘শকথেরাপি’ নামে অধিক পরিচিত ।বর্তমানে আধুনিক মানসিক রোগ চিকিৎসা গ্রহণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা জনগণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছেনি। জিন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার জটিল পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ও কর্মক্ষমতার বিপর্যয় ঘটলে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে।পত্রিকায় দেখা যায় কেউ রোগীকে মাটিতে পুঁতে, গায়ে আগুন ধরিয়ে বিভিন্ন রকম শাস্তি দিয়ে ভয়ানক সব অপচিকিত্সা করিয়ে থাকে। তাবিজ-কবজ-মাদুলি- পানি, তেল পড়া দিয়েও অপচিকিত্সা করতে দেখা যায়। বর্তমান সময়ে অপচিকিত্সা গ্রহণের বেশ কিছু অন্যতম কারণ আছে, বর্তমান ডাক্তারদের ব্যবসায়ীক মনোভাবকে সাধারণ মানুষ ভাল চোখে দেখেনা তাই অপচিকিত্সায় আগ্রহী হয়। ডাক্তারের কাছে গেলে নানান ফী, টেষ্ট, হাসপাতালে ভর্তি ইত্যাদি মানুষকে চিকিত্সা বিমুখও করছে। আর সেই সাথে ভুলচিকিত্সা তো রয়েছেই।সিজোফ্রেনিয়া একটি বড় মাপের মানসিক রোগ।
এক লোক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে ঢুকে সোজা টেবিলের নিচে ঢুকে গেল। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তখনই কিছু না বলে খুব আস্তে ধীরে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে তাকে বোঝাল, তার মনোরোগ যাচাই করল। অবশেষে লোকটা বের হয়ে এলে তাকে ফি দিতে বলল বিশেষজ্ঞ।
লোকটা তো ফি দিলই না, বরং রেগে গিয়ে বলে উঠল, ‘কিসের ফি? উল্টো আপনি আমার বিল দেন। আমি কাঠমিস্ত্রি। আপনার টেবিল ঠিক করতে এসেছিলাম।’