somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিবন্ধীদের জন্য মা-বাবার দরদ

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সন্তানের জন্য মা-বাবার টান তো নতুন কিছু না। কিন্তু সে সন্তান যখন জন্মগতভাবে দুরারোগ্য কোনো ত্রুটিযুক্ত থাকে - যাদের জন্য সারা জীবন শুধু করেই যেতে হয় - পাওয়ার কিছু নেই - কোনো আশা নেই- তাদের জন্য মা-বাবার যে কি পরিমাণ বিশেষ দরদ থাকে - আমার দেখা তার দু’টি চিত্র তুলে ধরছি:
১. চৌদ্দ বছরের ছেলে অরুণ। মাস খানেক আগে প্রায় মরণাপন্ন অবস্থায় তাকে আমি রিসিভ করি আইসিইউতে। সে আর শ্বাস নিতে পারছিল না। হাত-পাগুলো নীল। মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছিল না। এমন সুন্দর ও সুঠাম এক কিশোরের আজ শ্বাস নেয়ার শক্তিই প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে। অগত্যা তাকে ইনটিউবেট (শ্বাসনালীতে টিউব) করে ভেন্টিলেটরে (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) দিলাম। যাহোক, পরক্ষণে মা-বাবার কাছ থেকে জানা গেলো সে ডাউন্স সিন্ড্রোমের রোগী। আর তার বর্তমান সমস্যার ধরন বিবেচনা করে তার মাইয়েস্থেনিয়া গ্র্যাভিস (মাংসপেশির শক্তিহীনতা) হয়েছে বলে গণ্য করা হলো।

একবার ভাবুন, জন্মগত প্রায় অমোচনীয় একটি রোগের সাথে আবার আরেকটি দীর্ঘমেয়াদী রোগের আক্রমণ! ভয়ঙ্কর ব্যাপার! এদের সিক্রেশন খুব বেশি হওয়ায় কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রে থাকাকালীন অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। তবুও বিশেষ যত্ন, নির্দিষ্ট ওষুধ (গামা-গ্লোবিউলিন, বেশ এক্সপেন্সিভ), ডাক্তার-নার্সদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও পরিচর্যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমতে প্রায় ৩ সপ্তাহ পর তাকে ভেন্টিলেটর থেকে মুক্ত করা গেলো। এখন সে মোটামুটি স্বাভাবিক, তবে ডাউন্সের রোগী তো!

তাকে নিয়ে মা-বাবার যে উৎকণ্ঠা আর তৎপরতা আমি দেখেছি - তা সত্যিই অনেক চিন্তার উদ্রেক করে! গত ১৪ টি বছর মা তাকে নিজে তুলে খাইয়ে দিয়েছেন, অনেক সময়ই তার বিছানাও পরিষ্কার করতে হয়েছে, রাখতে হয়েছে চোখে চোখে। আইসিইউতে ভর্তি হবার প্রথম দিকে আমি তার অবস্থা যখন তাদেরকে বর্ণনা করি - সে কি কান্না! এরপরও সকাল-বিকাল-রাতে-মধ্যরাতে-শেষরাতে-ভোরে যখনই আমি গিয়েছি - মাকে - কখনো কখনো বাবাকে বাইরে বসে থাকতে দেখেছি। এতটুকু হতাশা বা অনীহা তাদের মধ্যে কখনো লক্ষ্য করিনি। মায়ের মুখটি ঠিক যেন শুকিয়ে যাওয়া একটি বাসি বেলী ফুলের তোড়া!

বারবার মায়ের প্রশ্ন - ডাক্তার সাহেব, আমার ছেলের অবস্থা কেমন? কবে ভালো হবে? অথচ তারা খুব ভালো করেই জানেন যে, সে এই রোগ থেকে ভালো হলেও তার আসল রোগ থেকে তো মুক্তি নেই। কোনদিনও স্বাভাবিক কোনো বৈষয়িক কাজে আসবে না সে। আমি ডরমিটরিতে ফিরে একাকী প্রায়ই ভাবি - মানুষের জীবনে একজন মায়ের যে কি অবস্থান - তা কি আমি ঠিকভাবে বুঝতে পেরেছি? সবাই কি পেরেছে? ক’জন পারে?


২. আরেকটি ৫ মাসের বাবু এসেছে আইসিইউতে। জন্মগতভাবে তার হার্টে রয়েছে এক মহা-গোলযোগ! ট্র্যান্সপজিশন অব গ্রেইট ভেসেল্‌স এবং ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট। অর্থাৎ হৃদযন্ত্র থেকে বড় রক্তনালীগুলো উল্টোভাবে বের হয়েছে এবং দু’চেম্বারের মাঝখানে রয়েছে একটি বড় ছিদ্র। অবশ্য এই ভিএসডি’র জন্যই সে এখনো বেঁচে আছে। তবে এর কারণে তার আবার হয়েছে পালমোনারী হাইপারটেনশন। বাচ্চাটির অবস্থা খুবই খারাপ। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট! তাকে ওপেন-হার্ট ডাবল-সুইচ অপারেশন করা হবে। বেশ জটিল এটি। তবে ফলাফল খারাপ না। কিন্তু প্রবল ঝুঁকি তো রয়েছেই। এই মা’কেও দেখলাম কিভাবে তিনি সারাদিন-সারারাত শুয়ে থাকা বেবীটিকেও যেন তাঁর বুকে তুলে আগলে রেখেছেন। তাঁর আরেকটি সন্তান যেন কাছেই আসার সুযোগ পাচ্ছে না। ফরমুলাটি যেন এরকম: যে যত বেশি নাজুক - তার প্রতি দরদ তত বেশি!

তাই ভাবি, মা’দেরকে আল্লাহ কি দিয়ে বানিয়েছেন! একদম ছোটবেলার কথা তো আর আমাদের মনে নেই। কি কষ্টই না করতে হয়েছে মা’কে? কিন্তু তার প্রতিদানে আমরা মা-বাবার আনুগত্য, সেবা-যত্নে, পরিচর্যায় কতটুকু সচেতন ও বাস্তবে তৎপর?

মহান আল্লাহ বলেন:
আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়াতে লেগেছে দু’বছর। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে তোমাদের। [সূরা লোকমান: ১৪]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×