somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি রওশন ইজদানী (১৯১৭-১৯৬৭)

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ পড়ছি "মোমেনশাহীর লোক সাহিত্য"। নেত্রকোনার পল্লীকবি 'রওশন ইজদানী"র (১৯১৭-১৯৬৭) লেখা বইটি বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। সম্প্রতি বাংলা একাডেমী গ্রন্থাগার থেকে দু্ষ্প্রাপ্য বইটির ফটোকপি সংগ্রহ করেছি। বাংলাদেশের লোক-সাহিত্যে এই বইটি নি:সন্দেহে একটি অমূল্য সংযোজন, যা কিনা আমাদের হারিয়ে যাওয়া অনেক ঐতিহ্যকে ধারন করেছে বইয়ের পৃষ্ঠায়। বইটির সুন্দর প্রচ্ছদপট একেছিলেন প্রানেশ কুমার মন্ডল। সে সময় বইটির দাম ছিল পাঁচ টাকা।

কবি রওশন ইজদানী আমাদের সাহিত্য পরিমন্ডলে এখন প্রায় বিস্তৃত একটি নাম। অথচ তিনি কেবল বহুপ্রজ কবি ছিলেননা, জসীম উদ্‌দীনের অনুসরনে সে সময়ে পূর্ব বাংলার লোক সংস্কৃতি অবলম্বনে তিনি নতুন শিল্প-সৃষ্ঠির স্বপ্ন দেখেছিলেন। রওশন ইজদানী সৃজনে ও মননে এদেশের লোক-সাহিত্যের সম্পদ সম্পর্কে যে প্রীতি ও মমতার পরিচয় দিয়েছেন তা অবিস্মরনীয়। আজ তার লেখা বইটি পড়তে বসে শ্রদ্ধার সাথে তাকে স্মরন করছি।

রওশন ইজদানী। প্রখ্যাত কবি ও প্রাবন্ধিক, লোকসাহিত্যের গবেষক ও সংগ্রাহক। রওশন ইজদানীর জন্ম ১৯১৭ সালে। তাঁর পিতার শেখ আলী কবির। দশম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি পড়াশুনা করতে পেরেছিলেন

লোকসাহিত্য নিয়ে তিনি অনেক লেখালেখি করেছিলেন। মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি সৈয়দ সুলতান ‘নবীবংশ’ এবং ‘রসুল বিজয়’ নামে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনভিত্তিক দু’টি সেরা কাব্য রচনা করেছেন। বিংশ শতাব্দীর কবি রওশন ইজদানী রসুল (সা.)-এর উপর একটি পুরো কাব্য ‘খাতামুন নবীঈন’ রচনা করেন। ফররুখ আহমদ ‘সিরাজাম মুনীরা’ নামে ৩০২ পংক্তির একটি দীর্ঘ কবিতা লেখেন। ‘খাতামুন নবী ঈন’ লিখে তিনি "আদমজী পুরস্কার" লাভ করেছিলেন। ১৯৬০ খ্রীস্টাব্দে সাহিত্য কর্মের জন্য তিনি আদমজী পুরস্কার পান।
পিতা- শেখ আলী কবির। গ্রাম-বিদ্যাবল্লভ, কেন্দুয়া। ১০ বছর বয়সে পিতা এবং ১৮ বছর বয়সে মাতৃ বিয়োগ হয়। পড়াশুনা ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত। প্রথম জীবনে গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৪৮ সনে আজাদ পত্রিকায় রিডিং সেকশনে চাকরি নেন। ১৯৪৮ সনে ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশনের প্রুফ রিডার গ্রেড ০১ পদে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে চাকুরিতে অবসর নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন এবং সাহিত্য সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি মূলত পল্লী কবি হিসেবে খ্যাত। তার গবেষনা গ্রন্থ মোমেনশাহীর লোক সাহিত্য ও পূর্ব পাকিস্তানের লোক সাহিত্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ চিনু বিবি-১৯৫১ মোতামুন নাবীয়িন (১৯৬০), বজ্রবানী (১৯৪৭), রঙ্গিলা বন্ধু (১৯৫১), ইউসুফ জুলেখা প্রভৃতি। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ভাঙ্গাবীনা (১৯৪৪), বজ্রবানী (১৯৪৭), নীল দরিয়া (১৯৪৬), রাহগীর (১৯৪৯) খ্যাতমুন নাবীঈন, মোমেনশাহীর লোক সাহিত্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ইসলাম জাহানের দুই সেতারা, খোলাফা-ই-রাশেদীন (১৯৭৯)
চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের অন্যতম কবি রওশন ইজদানী। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই কবি সাহিত্যের সকল শাখায়ই বিচরনণ করেছেন। কবি রওশন ইজদানীর প্রকাশিত গ্রন্থ ২৬টি এবং অপ্রকাশিত গ্রন্থ ১৮টি। পাঠ্য পুস্তক প্রকাশনার সংখ্যা ৬টি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো নীল দরিয়া, মরুর কাফেলা, হৃদয় বীণা, ভাঙ্গা বীণা, বজ্রবাণী, ইউসুফ জুলায়খা, পূর্ব পাকিস্তানের লোক সাহিত্য, মোমেনশাহীর প্রাচীন পল্লী ও সমাজ জীবন ইত্যাদী। নেত্রকোণার খাঁটি আঞ্চলিক ভাষায় রচিত কাব্যগ্রন্ধের জন্যই তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৬৭ সালে এই মহান কবি লোক সাহিত্যিক মৃত্যুবরণ করেন।

এখানে কবি রওশন ইজদানী'র দুটি ভাটিয়ালি গান তুলে ধরছি পাঠকদের জন্য। এই গান গুলো কবি রওশন ইজদানী'র বড় ছেলে জুলফিকার ইজদানীর সৌজন্যে প্রাপ্ত।

(এক)
পরান কান্দে- কান্দেরে নাইওয়ের লাগিয়া
-কবি রওশন ইজদানী

পরান কান্দে- কান্দেরে নাইওয়ের লাগিয়া-

পরের ঘরে একদিন আমার যায় বারো বছর,
আমি দারুন যমের ঘর করিলাম-দিলনা নাইওর।

বারো বছর গায় লাগেনা-বাপের বাড়ির বাও,
হাওয়া-বাতাস ঠান্ডা জলে শীতল হয়না গাও।

পরান কান্দে- কান্দেরে নাইওয়ের লাগিয়া-

আইলো গাঙে গেলো জোয়ার-গাঙে শুকায় পানি,
মোর অভাগীর এক নাইওরে গেলো জিন্দেগানী।

হইয়ে পঙ্খি উইড়্যা যাইতাম- হাওয়া ধরতাম পর,
জন্মের নাইওর কইর‌্যা যাইতাম এ্যাই নিলউখ্যার চর।

(দুই)
আজ এ সময়ে কে বাঁশি বাজায় সখী গো
-কবি রওশন ইজদানী

আজ এ সময়ে কে বাঁশি বাজায় সখী গো-
দারুন বাঁশির রব শোনা যায়-

সখী গো-
বন্ধের বাঁশি মন উদাসি পরান লইয়া যায়,
(তবু) কেনেবা এই বিষের বাঁশি (বন্ধে) নিরলে বাজায়।
প্রান সখী গো।

সখী গো-
বাঁশি বড় দারুন বাঁশি সকল সময় বাজে,
দারুন বাঁশির রব শুনিলে মন বসেনা কাজে।

পরান পঙ্খি যায় উড়িয়া পিংড়া থাকে ঠাঁয়।

সখী গো-
যে শুনে এই দারুন বাঁশি তার অন্তর হয় কালা
দিবানিশি নয়ন জলে বহে নদীনালা।

সে সুখের ঘরে দুখের অনল নিজ হাতে জ্বালায়-
প্রান সখী গো।

হাসান ইকবাল
২৫ চৈত্র, ১৪১৯, ০৯ এপ্রিল ২০১৩,
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:১০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×