somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওদের রুখে দাও

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক.

নদীর পারে একটি নৌকা বাঁধা। রাতের অন্ধকারে নৌকার ভিতরের চার্জার লাইটের আলোয় গোল হয়ে বসে আছে কয়েকজন। এদের মধ্যে সর্দার টাইপের একজন কি যেন বলছে আর বাকিরা শুনছে।

শুন কেরামত! তুমি তোমার কাজ কিন্তু ঠিক মত কর নাই।

কোন কাজ বস!

বেকুব মহা বেকুব। এখনো বুঝ নাই।
না বস!

তুমি বর্না না ঢল মাইয়াটারে বিয়া না কইরা কোন হিসাবে আনলা?

কেন ? কি হইছে।

আরে বেকুব! বিয়া কইরা আনলে মানুষ ভাবতো জামাইয়ের সাথে শশুর বাড়ী গেছে। আর এখন ভাববো প্রেমিকের লগে পালাইছে। থানা পুলিশ কইরা মেছাকার করব। আমাগো বাড়তি টেনশন লাগাইলা।

বিয়া করতে চাইছিলাম বস! কিন্তু মাইয়ার বাপে আমারে পছন্দ করল না।

কেন টেকা দেও নাই। শুনছি হেরা অভাবি। টেকা পাইলেইতো ওগো দিল খুশ হইয়া যাইতো।
না বস। বর্নার বাপ অন্য কিসিমের।

তার মানে? খোলাসা কইরা কও।

হের বাপে মুক্তিযোদ্ধা ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তার এক পায়ে গুলি লাইগা পংগু হইয়া যায়।

তোমার কাছে হের হিস্টরি শুনেতে চাই নাই। আসল কথা কও।

আসলকথাই কইতাছি। পংগু মুক্তিযোদ্ধার ভাতা হেয় নেয় নাই। কয়-
দেশ স্বাধীন করছি, খয়রাত করনের লাইগা? মায়েরে শক্রগো থেইকা বাঁচাইছি। এইটা আমার ফরজ কাম। মায়ের সেবা করছি। মায়ের সেবা কইরা কেউ কোনদিন টেকাপয়সা লইতে পারে!

বস কনতো দেহি, হেরে টেকা দিয়া কিনতাম কেমনে?

তাইলেতা আরো জটিল হইল। বিষয়টা!
কেন বস?

আরে বেকুব মুক্তিযোদ্ধার মাইয়ারে ভাগাইয়া আনা হইছে। এমন মানুষগো প্রতি আলাদা নজর থাকে সবার।

আলাদা নজর!

সবাই এদের সম্মান করে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলা ওগো খোজখবর রাখে। হের যদি এইরকম লিংক থাকে তাইলে বিরাট সমস্যা হইয়া যাইব। তবে আশার কথা হইল ওর মাইয়াটা এখন আমাদের হাতে। তোর এই ভেজালের লাইগা অন্যমাইয়াগুলারে পার্টির কাছ নিতে পরাতাছি না। মাইয়াডারে মনে হয় ফেরত দেওন লাগতে পারে। দেখা যাক কি হয়।

ধরা খামু নাতো

ধরা খাইলে কোন অসুবিধা নাই। আমাদের বর্তমান সরকারের লগে উঠা বসা আছে। সমস্যা নাই। আর তা ছাড়া বর্ণা মাইয়াডারে ঢাল বানাইয়া বাচন যাইব।

কেমনে?

তুমি আজ রাইতে হেরে নিয়া বাসর করবা। আর এই ডিজিটাল মোবাইলটা দিয়া এইখানে সব ভিডিও করবা, ছবি তুইলা রাখবা। এরপর কি করন লাগে আমি বুঝমুনে।

জব্বর একখান পথ বাতলাইছেন।

কাজটা কিন্তু যত সহজে বললাম এতো সহজ না। খুব সাবধানে করন লাগব।

সীমান্তে নারীপ্রাচারকারী চক্র আবির্ভাব ঘটেছে। এই চক্রের প্রধান কাজ হচ্ছে গ্রামের গরিব ঘরের যুবতি মেয়েদের খুজে বের করা। তারপর মেয়ের পরিবারে সাথে কোননা কোন ভাবে ঘনিষ্ট হওয়া। টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করা। একসময় বিয়ে করা। তারপর নববধুকে নিয়ে নারিপাচার কারীদের কাছে সোপর্দ করা।

প্রায়ই গ্রাম থেকে একটি দুটি করে মেযে হঠাৎ হঠাৎ করে হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ কোন হদিস দিতে পারছে না। আজ খুজে পাওয়া যাচ্ছে না পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা রমিজের মেয়েকে।

দুই.

রমিজ! রমিজ! বাসায় আছ?

কে ? কে? ডাকে

আমি ফজলু চেয়ারম্যান

ও চেয়ারম্যান সাব! আসেন ।

তোমার মাইয়ার কোন খবর পাইলা।

নাহ! অখনো পাই নাই। কই যে গেল মাইয়াডা। (ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগল) আম্মা তুমি কই গেলা। আম্মা আম্মা!

কাইদোনা রমিজ! উপরে আল্লা নিচে আমি আছি চিন্তা কইর না। চারদিকে আমি খোজ লাগাইছি। কিছু মনে কইরো না, আচ্ছা তোমার মাইয়ার কারো সাথে কোন কিছু ছিল?

আম্মা আমার বাসায় থাইকা খালি বই পড়ত। কোনখানে যাইতো না। কারো লগে কোন কিছু থাকলে আমি জানতাম।

দেখো তোমার ডাংগর মাইয়া, সবকথা কি বাপরে কয়? আচ্ছা ভাবি সাব কিছু জানে?

চেয়ারম্যান সাব আমার মাইয়া এমন মাইয়াই না।
তারপরও ভাবিরে একটু ডাকেন। জিগাইয়া দেখি।

বর্নার মা কই গেলা । এইদিকে আস।

পর্দার অন্তরালে ঘোমটা টেনে কুলসুম বিবি আসল।

চেয়ারম্যান সাব জিগায় বর্নার কারো লাগে সম্পর্ক আছিল কিনা?

অন্য কারো সাথে ছিল কিনা কইতে পারিনা। তয় হারুনের সাথে ও মাঝে মাঝে দিঘীর পারে হাটত।

চেযারম্যান: হারুন টা কে?

কু. বিবি: আমার খালাত ভাইয়ের ছেলে। এইখানে মাঝে মাঝে আসত।

রমিজ: ওরেতো আমিই কইছি বোনটারে একটু সংগ দিতে।

চেয়ারম্যান: হারুন এখন কই?

রমিজ: ওতো গত পরশু ঢাকা গেছে। কি কাজ আছে বলে।

চেয়ারম্যান: ঘটনা তাইলে এইখানে প্যাচ খাইছে।
রমিজ: ঠিক বুঝলাম না কথাডার মাইনে।

চেয়ারম্যান: গতকাল থানায় গেছিলাম। থানায় জানলাম আমাদের এই এলাকায় নারী পাচরকারীর আনাগুনা শুরু হইছে। এরা মাইয়াগো বিয়া কইরা নিয়া পাচার কইরা দেয়।

হঠাৎ রমিজ চিৎকার করে কেঁদে উঠে। আমার আম্মা কই গেলো রে।

চেয়ারম্যান: আচ্ছা ভালা কথা। তোমার মেয়েরে হারুন কি বিয়ে করতে চাইছিলো।

রমিজ: না। হারুনতো বর্না থেইকা বছর দুই ছোট হইব। ও বর্নারে বড় ভইন জানে। তয় ওর সাথে ওর এক বন্ধু ছিল নাম হইল কি জানি --- মনে পড়ছে কেরামত উল্লাহ। ওর নাকি ঢাকায় কাপরের দোকান আছে। ওর লগে মাইয়াডার বিয়ার প্রস্তাব দিছিল। আমি রাজী হই নাই। পোলাডারে আমার সুবিধার মনে হয় নাই। হারুন অবশ্য কইল-
ফুপাজান এমন ছেলে হাতছাড়া করা ঠিক হইবনা। হেয় মোহরানা দিব নগদ ৩লক্ষ টাকা। সোনা দানা যা লাগে সাজাইয়া দিব।
কনতো দেখি আমি হইলাম মুক্তিযোদ্ধা আমারে হেয় টেকার লোভ দেখায়। লোভী হইলে আজকে অনেক সুখে থাকতাম।

চেয়াম্যান: আর বলা লাগবনা । তোমার মেয়ে ঐ কিসমতের লগেই গেছে। ও নারী পাচারকারীর সদস্য। থানায় দেখলাম এই নামে আরো অভিযোগ আছে।

কু.বিবি: ও আল্লা! আমার মাইয়া কই গেলোরে.... (বিলাপ করতে লাগলো)

চেয়ারম্যান : চিন্তা কইরেন না ভাবি সাব। পুলিশ অভিজানে নাইমা গেছে।

তিন.
ঘুটঘুটে আধার। বর্জার কুঠিরিতে আটকে আছে কিছু যুবতি। তারা সবাই প্রতারনা স্বীকার। কেউ তাদের বিয়ে করে এনেছে। কেউ তাদের চাকুরীর লোভ দেখিয়ে এনেছে। আজ তারা অসহায়ের মত আর্তনাদ করছে। সুনিয়া, হাফিজা, বর্ণা আরো অনেকে।

সুনিয়া- ও বইন আমার কি হইব। আমারে বিয়া কইরা শয়তান জামাল লইয়া আইছে। কই সোনার সংসার করমু। এহন বলে আমাগোরে বিদেশে পাচার কইরা দিব।

হাফিজা- আমরে কইছে বিদেশে চাকুরি দিব। ভালা বেতন দিব। অখনতো দেখতাছি পাচার করনের লাইগা এইহানে আটকাইছে।

বর্ণা- আমি বই পড়তে ভালাবাসি। বই পড়ার কারনেই কিসমত এর লগে আমার পরিচয় হয়। হারুন কইলো হের কাছে অনেক বই আছে। হেয় বই পড়ে। তারপর থেইকা হেয় আমার লাইগা প্রায়ই বই আনত। এইভাবে হের লগে আমার ভাব ভালবাসা হয়। হেয আমারে বিয়া করতে চায়। কিন্তু আমার বাবা রাজি না হওয়ায় গতকাল রাইতে হের লগে চইলা আসছি। পরে জানছি হারুনও এই দলের সদস্য। হেয়ই আমারে পলাইতে সাহয্য করছে। আল্লারে! আমি যদি আগে জানতাম এই শয়তানগুলা আমারে পাচার করার মতলবে আছে। তাইলে ওগো ফাদে পা দিতাম না। আমার বাবার কি হইব? আমার মায়ের কি হইব? গ্রামের মাইনষের কাছে আমার লাইগা আমার মুক্তিযোদ্ধা বাপের মাথাখান হেট হইয়া যাইব।

বর্ণাকে নিয়ে কিসমত অন্যএকটি বর্জাতে চলে যায়। রাতের আধারে চলে পাষবিক নির্জাতন। কিন্তু ছবি তোলা আর ভিডিও করা লাগেনি তার। এর আগেই অকথ্য নির্জাতনে প্রান হারায় সে।

হঠাৎ অন্ধকারে আলোর ঝলক । টর্চ এর আলোয় আলোকিত। শুনা গেল মানুষের গুঞ্জন। ভিতরে প্রবেশ করল পোষাকধারী পুলিশ।

প্রত্রিকার খবর:
সিমন্তবর্তি অঞ্চলে পাচারকালে ২০/২৫ জন নারী উদ্ধার। একজনের মৃত্যু। নারী পাচারকারীরা ঘা ঢাকা দিয়েছে। তাদের খুজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।


এটা একটা সিম্বলিক ঘটনা। এরকম অনেক নারী এভাবে প্রতিনিয়ত পাচার হয়ে যাচ্ছে। তারা আমাদের কারো কন্য, কারো বোন, কারো স্ত্রী। এদের রুখা আপনার আমার সকলের নৈতিক দায়িত্ব। আসুন ওদের রুখে দেই। আপনার এলাকায় এমন কোন সন্দেহ ভাজন কাউকে দেখলে নজর রাখুন। নিকটস্থ থানায় খবর দিন।
“ Don’t worry.
Allah can help us.
Nothing is impossible for him ”
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×