somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবী রাসুলএর সমালোচনা করলে কি সমস্যা? আল রাজির দোহাই....

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগ কর্তৃপক্ষরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার পরে ধর্মান্ধ মামাবাড়ির আবদার আরো বারবে আগেই আন্দাজ করেছিলাম। কৌশিক ভাইএর পোস্টে তারে একজন তো বলেই ফেললো, আপনে নাস্তিক, তাও আবার ঢাকডোল পিটাইয়া ঘোষনা দেন! এত্ত বড় সাহস। আজকে রাইতে দাবি উঠেছে ব্লগে ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (স)এর কোন সমালোচনা করা যাবেনা, এবং এই জাতীয় পোস্ট সব ডিলিট করতে হবে। কেনরে বাবা? ধর্মীয় সেন্টিমেন্টএর দোহাই দিয়া সকল সমালোচনা বন্ধ করে রাখলে ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ছাগু হিজুরা যখন নবীর দোহাই দিয়া আকাম কূকাম জায়েয করবে তখন তার বিপরীতে দাঁড়ানের নৈতিক শক্তি অবশিষ্ট থাকবে কি?

আমি তাই আল রাজির দোহাই দিয়া আজকে নবী রাসুলএর সমালোচনা করবো। আল রাজি (৮৬৫-৯২৫) কে ছিলেন? তিনি ছিলেন মধ্যযুগীয় আরব দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক। তার লেখা বই আল-হাবি বা কনটিনেন্স ১৬ শতক পর্যন্ত ইউরোপে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই হিসাবে স্বিকৃত ছিলো।

আল রাজি একটা বই লিখছিলেন "মাহারিক আল আম্বিয়া" নামে, যার বাঙলা অর্থ হবে "নবীদের ভন্ড চাতুরি"। আলোচ্য বইএ তিনি যুক্তি তুলে ধরেন যে ইশ্বর তার সৃষ্টির কিছু বিশেষ ব্যক্তির কাছে নিজেকে প্রকাশ করবেন, অন্যদের কাছে করবেন না, এর কোন যৌক্তিকতা নাই। ওহী নাজিল এবং নবুওয়াতএর ধারণাকে তিনি ভন্ডামি বলে অস্বিকার করেন। এই প্রসঙ্গে তৎকালিন মুসলিম দুনিয়ার আরেক বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী আবু হাতিম' (তার ডাকনামও আল রাজি ছিলো)এর মতে আল রাজি ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন আয়াতএর স্ববিরোধীতার উল্লেখ করে সেগুলোকে নবীদের ভন্ডামি হিসাবে প্রমান করার চেষ্টা করেন। আবু হাতিম এর প্রবল বিরোধী ছিলেন। দুইজনএর মধ্যে অনেক তর্ক হয়। আবু হাতিম মূলত নবীদের মিরাকল ঘটানোর ক্ষমতাকে তাদের নবুওয়াতএর প্রমান বলে দাবি করেন। জবাবে আল রাজি যা বলেন তা আবু হাতিমএর ভাষায় -

" নিজেরে নবী বলে দাবি করেনাই কিন্তু এই জাতীয় মিরাকল ঘটাইছে এমন লোকও তো দুনিয়ায় কম নাই। এই বলে আল রাজি হাত সাফাই এবং জাগলিং করা লোকজনের উদাহরণ দেন, যারা বল্লমের উপরে নাচে, ধারালো তলোয়ারের উপর দিয়া হাটে। তিনি এর সাথে ডাইনি ও জাদুকরদের সুর করে ছন্দবদ্ধ মন্ত্র উচ্চারণের উদাহরণ দেন। এসব উদাহরণ দিয়ে তিনি নবীদের মিরকালককে নবুওয়াতএর চিহ্ন বলে অস্বিকার করেন"।

এছারাও কোরআনকে যারা নবীর সবচেয়ে বড় মিরাকল বলে দাবি করে এবং এইরকম আরেকটা কোরআন লিখে দেয়ার চ্যালেঞ্জ করে তাদের চ্যালেঞ্জএর জবাবে রাজি বলেন -

" তোমরা দাবি কর যে প্রামানিক মিরাকল একটা আছে, আর সেই মিরাকল হইলো কোরআন। তোমরা কও, যে এই কোরআনকে অস্বিকার করবে তারা পারলে এইরকম আরেকটা কিছু তৈরি করে দেখাউক। আমি বলি, অবশ্যই, এইরকম আরো হাজারটা তৈরি করা যাবে, সুবক্তা পন্ডিত আর সাহসি কবিদের সৃষ্টিকর্ম থেকে এইরকম আরো হাজারটা তৈরি করা যাবে,এমনকি সেগুলোতে ভাব এবং ভাষার গঠন আরো ভালো হবে এবং আরো কম কথায় বেশি ভালো ভাবে বোঝানো যাবে”।

মাহারিক আল আম্বিয়া'তে আল রাজি ওহি সর্বস্ব ধর্মমতের প্রবল সমালোচনা করেন। তার মতে এই জাতীয় ধর্মের অনুসারীরা মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারেনা। তিনি বলেন -

"ওহী সর্বস্ব ধর্মের অনুসারীরা ধর্ম শেখে তাদের নেতাদের মুখে শুনে শুনে। এরা নিজ ধর্মের মৌলিক বিশ্বাসএর ক্ষেত্রে যুক্তি তর্ক এবং অনুসন্ধান অস্বিকার করে"।

" যখনি এমন কোন ধার্মিক ব্যাক্তিকে তার ধর্মের পক্ষে যুক্তি এবং প্রমান দিতে বলা হয়, তখনি সে জ্বলে ওঠে, রেগে যায় এবং প্রশ্নকারির রক্ত ঝরায়। এরা যৌক্তিক মতামতকে অস্বিকার করে, প্রতিপক্ষকে হত্যা করে। এদের কারণেই সত্য নিস্তদ্ধ হয়েছে"।

এই জাতীয় ধার্মিকদের কিছু সাধারণ বক্তব্য আল রাজি লিপিবদ্ধ করেন যেই বূলিগুলা তারা ধর্ম সম্বন্ধে কোন যুক্তি তর্কের মুখোমুখি হলেই তোতাপাখির মতো আওরাতে থাকেন। এর মধ্যে কিছু হচ্ছে -

* যে ধর্মিয় বিষয় আশয় যুক্তির মাপকাঠিতে মাপতে চেষ্টা করে সে সবসময় কনফিউশনে থাকবে।

* আল্লাহর বিষয়ে চিন্তা কইরোনা, আল্লাহর সৃষ্টি নিয়া চিন্তা করো।

* ধর্মীয় বিষয়ে দ্বিমত বা ভিন্নমত করলে কাফির হতে হবে।

* অলঙ্ঘনিয় ভাগ্য হইলো আল্লাহর গোপন বিষয়। এগুলা নিয়া প্রশ্ন কইরো না।

* অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা ভালো না। অতীতে বহু জাতি এইরূপে ধ্বংস হইয়া গেছে।

শেষ যেই তোতাপাখির বূলিটা দিলাম এইটা ১২ শতকএর পরে মুসলিম দুনিয়ায় বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। সেই সুবাদে আল রাজির মতো দার্শনিক বিজ্ঞানীদের কাফির ঘোষনা দেয়া হয়। কিন্তু তাতে মুসলিম দুনিয়া কি ধ্বংসের হাত থেইকা রক্ষা পাইছে? না পায় নাই। আল রাজির বই পইড়া অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা কইরা ইউরোপে রেনেসা হইছে। আর মুসলিম জাতির লোকজন এই একবিংশ শতকে আইসা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে করতে ব্লগএর মতো মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্লাটফর্মে আইসা দাবি তোলে যে নবীদের সমালোচনা করা যাবেনা।


(ব্যক্তিগতভাবে আমি নবুওয়াত বিষয়ে আল রাজির সাথে পুরাপুরি একমত না। নবী রাসুলদের গড়পরতায় ভন্ড বলতেও আমি রাজি না। কিন্তু ব্লগের মত প্রকাশএর স্বাধীন ঐতিহ্যের গলায় ফাশ পরাইতে তৎপর অতি ধার্মিকদের অতি ধর্ম তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ রাজির দোহাই মানলাম )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৩৪
৭৮টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×