somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ফোটোগ্রাফী- ১১

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন বেশি রাত নয়, মাত্র সাড়ে ন’টা, রাস্তায় লোকজনের চলাচল থামেনি, তারই মধ্যে একটি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে যৌন অত্যাচার শুরু করে গুটিকয়েক পেঁচি মাতাল। পথচারীরা দাঁড়িয়ে পড়ে সেই দৃশ্য দেখে, আরও কয়েক লক্ষ মানুষ সেই বাস্তব দৃশ্যটি দেখতে পায় টিভি-র সম্প্রচারে, প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে। সাধারণত এ ধরনের ছবি প্রায়ই দেখা যায় ইদানীংকার অনেক সিনেমায়, বলাই বাহুল্য সে সব সাজানো। এ ঘটনা দেখানো হয়েছে, যাকে বলে ‘লাইভ’, অত্যাচারিত মেয়েটির মুখ স্পষ্ট, সে কোন স্কুলে পড়ে, তার নাম, এ সবও জানানো হয়েছে। কী করে তা সম্ভব হল? সেখানে দৈবাৎ উপস্থিত ছিলেন এক জন দক্ষ ফোটোগ্রাফার, তিনি ভিডিয়ো ক্যামেরায় পুরো দৃশ্যটি তুলে রাখেন, যাতে ওই সব নিপীড়নকারীর বাঁদরামি এবং মেয়েটির অসহায় কান্না আর বাঁচার চেষ্টা, সবই ফুটে ওঠে নিপুণ ভাবে। এক জন ফোটোগ্রাফারের পক্ষে এটা খুবই কৃতিত্বের ব্যাপার। নিউজ ফোটগ্রাফি হিসেবে খুবই বিরল দৃষ্টান্ত। তবু এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে হইচই শুরু হয়, ক্যামেরাম্যানটির পক্ষে আর বিপক্ষে শুরু হয় তর্কাতর্কি। ক্যামেরাম্যানটির বক্তব্য ছিল এই যে, এই ছবি থেকে অত্যাচারীদের মুখ চেনা অনেক সহজ হবে, তাদের শাস্তির পথও সুগম হবে। অন্য পক্ষের বক্তব্য, এক জন ক্যামেরাম্যান তো শুধুই ফোটো-জার্নালিস্ট নন, তিনি তো এক জন দায়িত্বশীল নাগরিকও বটে। ততক্ষণ ধরে ওই ছবি তোলায় ব্যস্ত না থেকে, তিনি কি মেয়েটিকে বাঁচাবার কিছু চেষ্টাও করতে পারতেন না? তিনি তো একা ছিলেন না, সেখানে অন্যান্য দর্শকও উপস্থিত ছিলেন!

এই উপলক্ষে আমার মনে পড়ল আর একটি ঘটনা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জাপানে। সে দেশের অর্থমন্ত্রী এক দিন তাঁর এক বান্ধবীকে নিয়ে লাঞ্চ খেতে এসেছিলেন এক নামকরা রেস্তোরাঁয়। সে সব দিনে পৃথিবীর কোনও দেশেই মন্ত্রী বা সরকারি ক্ষমতাবানদের জন্য এত নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাহুল্য ছিল না। তাঁরা অনেক স্বাধীন ভাবে রাস্তাঘাটে বেরুতে পারতেন। সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে নাইট শো-এ সিনেমা দেখার পর পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন, এ দৃশ্যও তো আমরা দেখেছি! যাই হোক, সে দিন সেই রেস্তোরাঁয় অকস্মাৎ দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল খোলা তলোয়ার হাতে এক আততায়ী। সে সোজা দৌড়ে এসে অর্থমন্ত্রীর পেটে তলোয়ার ঢুকিয়ে দিল। সেই গমগমে আহারালয়ে অন্য সবাই ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল। অর্থমন্ত্রীর পাশের টেবিলেই বসে ছিলেন এক বিখ্যাত সংবাদপত্রের ফোটোগ্রাফার, তিনিও আততায়ীটি ঢোকার সময়ই দেখতে পেয়েছিলেন, ইনস্টিঙ্ক্ট-এর বশেই ক্যামেরা হাতে নিয়ে তিনি তুলে ফেললেন সেই হত্যাদৃশ্য।

এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য দেশের সমস্ত সংবাদমাধ্যমের শিরোমণিদের সুপারিশে সেই ফোটোগ্রাফারকে দেওয়া হয় বছরের শ্রেষ্ঠ ফোটো জার্নালিস্টের সম্মান। এবং আগামী দু’বছরের জন্য কোনও পত্র-পত্রিকায় তাঁর ছবি নিষিদ্ধ হয়ে যায়, এই শাস্তি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, ছবি তোলার বদলে ফোটোগ্রাফারটি যদি তাঁর ক্যামেরাটি ছুড়ে দিতেন সেই আততায়ীর দিকে, তা হলেও হয়তো সেই অর্থমন্ত্রীর প্রাণ বাঁচানো যেত।

ছবিটি তোলা হয়েছে একদম সঠিক মুহূর্তে। তবে মুহূর্তটি কিন্তু সুখকর নয়। ছবিটাতে ভিয়েতনাম বাহিনীর এক যোদ্ধা হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। আর পিস্তল তাক করে আছে ভিয়েতনাম এর তৎকালীন তাঁবেদার সরকার এর অনুগত সেনাবাহিনীর জেনারেল নিগুয়েন। তখন ক্যামেরা হাতে কাছেই ছিলেন NBC এর ফটোগ্রাফার এডি এডামস। এডি সাহেব এই মুহূর্তটির ছবি তুলার জন্য ক্যামেরা তাক করে টিপে দেন বাটন। ঠিক সেই মুহূর্তেই জেনারেল নিগুয়েন হাত করা পরিহিত এই বিপক্ষ বাহিনীর যোদ্ধাকে গুলি করে দিয়েছেন ।সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যায় অসহায় সেই যোদ্ধা। এডি সাহেব ফিল্ম ওয়াশ করে আবিষ্কার করেন তিনি যেই ছবি তুলেছেন তা ধারন করেছে ঐ যোদ্ধার কপালে বুলেট প্রবেশের সেই মুহূর্ত!!!

এই ছবি আমেরিকায় প্রকাশের পর আমেরিকান জনগন ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। একসময় আমেরিকা ভিয়েতনাম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ভিয়েতকং বাহিনী জয় লাভ করে যুদ্ধে। সেই দেশপ্রেমিক সেনার দল মাতৃভূমি উদ্ধার করে তাঁবেদার রাজাকারি বাহিনীর হাত থেকে। জেনারেল নিগুয়ান পালিয়ে যায় আমেরিকায়।

এডি এডামস এর এই ছবি জয় করেছে পুলিতসার সহ অসংখ্য পুরুস্কার!!!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×