somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসৎ ও ভগবান

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্ববিদ্যালয়ে জনৈক অধ্যাপক ক্লাস নিচ্ছিলেন । অধ্যাপক ছিলেন নাস্তিক প্রকৃতির । পড়াতে পড়াতে খানিকটা উপহাসের ঢঙ্গেই তিনি তার ছাত্রদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন--- “যা কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে তার সবই কি ভগবান সৃষ্টি করেছিলেন ?” সকল ছাত্র চুপ । শুধু একজন ছাত্র উত্তর দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল ।
ছাত্র ১ – হ্যাঁ তিনিই সৃষ্টি করেছিলেন । ভগবানই সমস্ত কিছুর স্রষ্টা ।

অধ্যাপক ভ্রু কুঞ্চিত করে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “ভগবানই সব সৃষ্টি করেছেন ?”

ছাত্র ১ – হ্যাঁ স্যার, ভগবানই নিশ্চিতরূপে সবকিছু সৃষ্টি করেছে ।

অধ্যাপক – ভগবান যদি সবকিছু সৃষ্টি করে থাকেন, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই অসৎকেও তৈরী করেছেন, যেহেতু অসতের অস্তিত্ব রয়েছে । অতএব, আমরা যা করি আমরা তাই, কর্মের এ নীতি অনুসারে ভগবানকেও আমরা অসৎ রূপেই ধরে নিতে পারি । তাই না ?

অধ্যাপকের এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক যুক্তিটি ছাত্রটি কোন উত্তর প্রদান করতে পারল না । চুপ করে গেল । সেই অধ্যাপক তখন যেন জিতে গেছেন এই মনোভাব নিয়ে বললেন, ধর্ম বিশ্বাস আসলে কতগুলো গল্পগাথা মাত্র – এই ধরনের কথা ছাত্রদের মধ্যে বলতে লাগলো । সেই সময় ক্লাসের অন্য একটি ছাত্র হাত তুলে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, “স্যার আমি কি একটি প্রশ্ন করতে পারি ।” “হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ।” অধ্যাপক সম্মতি দিলেন ।

ছাত্র ২ – স্যার, ঠান্ডার কি আদৌ কোন অস্তিত্ব রয়েছে ?

অধ্যাপক – এটা আবার কি ধরণের প্রশ্ন ? নিশ্চয়ই ঠান্ডার অস্তিত্ব রয়েছে । কেন, তুমি কি কখনও ঠান্ডার অনুভব লাভ কর না ?

ছাত্র ২ – প্রকৃতপক্ষে স্যার, ঠান্ডার অস্তিত্ব নেই । পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র অনুসারে আমরা যাকে বাস্তবে ঠান্ডা বলে মনে করি, সে হল উষ্ণতা বা তাপের অনুপস্থিতি । প্রতিটি দেহ বা বস্তুর বিচার্যের জন্য তখনই গ্রহনীয় হয় যখন তার মধ্যে শক্তি থাকে বা শক্তি তার মধ্য দিয়ে সঞ্চারিত হয় । আর তাপ বা উষ্ণতা হল সেই বস্তু যা দেহ বা বস্তুর মধ্যে থাকে বা দেহ বা বস্তুর মধ্যে শক্তির সঞ্চার ঘটায় । চরম শূণ্যতা (-৪৬০ ডিগ্রী ফারেনহাইট) হল সামগ্রিকভাবে তাপের অনুপস্থিতি । এবং সকল বস্তু সেই তাপমাত্রা নিস্ক্রিয় বা প্রতিক্রিয়া অসমর্থ হয়ে যায় । অতএব ঠান্ডার কোন আলাদা অস্তিত্ব নেই । আমরা এই শব্দটি সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র তাপহীনতায় আমরা কেমন অনুভব করি তা বর্ণনা করার জন্য । স্যার, অন্ধকারের কি কোন অস্তিত্ব আছে ?

অধ্যাপক – নিশ্চয়ই আছে ।

ছাত্র ২ – স্যার, আবার আপনি ভুল করলেন । প্রকৃতপক্ষে অন্ধকারের কোন অস্তিত্ব নেই । বাস্তবে অন্ধকার হলো আলোর অনুপস্থিতি । আলোকে আমরা নিরীক্ষণ করতে পারি বা অধ্যয়ন করতে পারি, কিন্তু অন্ধকারকে পারি না । প্রকৃতপক্ষে আমরা নিউটনের রশ্মিদ্বারা (Prism) সাদা আলোকে ভেঙ্গে অনেক রঙে পরিণত করতে পারি এবং প্রতিটি রঙের বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wave length) অধ্যয়ন করতে পারি, পরিমাপ করতে পারি । কিন্তু আপনি অন্ধকারকে পরিমাপ করতে পারেন না । একটি সাধারণ আলোক রশ্মি অন্ধকার জগতকে ভেঙ্গে দিয়ে তা আলোকিত করতে পারে । কিন্তু আপনি কিভাবে জানবেন কোন নির্দিষ্ট জায়গাটি কতখানি অন্ধকার ? আপনি সেটা বিচার করবেন সেখানে আলোর পরিমানের উপস্থিতি বিচার করে । তাই নয় কি ? অন্ধকার শব্দটি মানুষ ব্যবহার করে, আলোর অনুপস্থিতিতে কি ঘটে তা বর্ণনা করার জন্য । এছাড়া আলাদাভাবে অন্ধকার বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই । স্যার, অসৎ’এর কি অস্তিত্ব রয়েছে ।

অধ্যাপক এবার কি বলবেন ঠিক ভেবে পেলেন না । অনিশ্চিত রূপে ইতস্ততঃ করে বললেন –হ্যাঁ নিশ্চয়ই, আমি ইতিমধ্যেই তা বলেছি । আমরা প্রতিদিনিই তা দেখতে পাচ্ছি, মানুষের প্রতি মানুষের অমানবিকতা পৃথিবীর সর্বত্র কত রকমের হিংস্রতা আর অপরাধ । এগুলি অসৎ’এর প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয় ।

ছাত্র ২ – না, স্যার, অসতের প্রকৃতপক্ষে কোন অস্তিত্ব নেই । অসৎ হচ্ছে ভগবানের অনুপস্থিতি মাত্র । এটা ঠিক অন্ধকার বা ঠান্ডার মতো একটি শব্দ, যা মানুষ সৃষ্টি করেছে, ভগবানের অনুপস্থিতি বর্ণনা করার জন্য । ভগবান অসতকে সৃষ্টি করেনি । যখন মানুষের হৃদয়ে ভগবানের প্রতি প্রেমের উৎসারণ বা প্রকাশ ঘটে না সেই অবস্থাটিকে বর্ণনা করার জন্য মানুষ অসৎ (Evil) শব্দটি সৃষ্টি করেছে । ঠিক যেমন তাপের অনুপস্থিতিতে ঠান্ডা বা শীতলতা আসে, আলোর অনুপস্থিতিতে অন্ধকার আসে, তেমনই ভগবানের অনুপস্থিতিতে অসৎ বা অশুভের আগমন হয় ।

ছাত্রটির কথা শুনে সেই অধ্যাপক চুপ করে বসে থাকলেন । এতক্ষণ যে ছাত্রটি তাঁর অধ্যাপককে এত কথা বলেছিল, তার নাম কি জানেন ? এই ছাত্রটি পরবর্তীকালে এক বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানিকরূপে খ্যাত হয়েছিলেন । তাঁর নাম, “অ্যালবার্ট আইনষ্টাইন”

[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/nATHAMUK_1348461340_1-189203_3773614455749_76400815_n.jpg



বি:দ্র:সংগৃহিত
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৩৯
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×