রোববার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা এনেছে জিম্বাবুয়ে।
Published : 05 May 2013, 07:01 AM
রোববার বুলাওয়ায়োর কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৫২ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৭ ওভার ৫ বলে ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে।
অষ্টম ওভারে ১৬ রানের মধ্যে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল (৬) ও মোহাম্মদ আশরাফুলের (৮) বিদায়ে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। দুজনই ব্রেন্ডন টেইলরের হাতে ধরা পড়েন।
তৃতীয় উইকেটে মমিনুল হকের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের ৪৪ রানের জুটি প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে মুশফিক (২৬) এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লে চাপে পড়ে যায় অতিথিরা।
দুবার জীবন পেলেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন নি শুরু থেকেই নড়বড়ে মমিনুল (২৪)। ১৮ রান পর তিনি এল্টন চিগুম্বুরার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হলে একশর আগেই সাজঘরে ফিরেন প্রথম চার ব্যাটসম্যান।
পঞ্চম উইকেটে নাসির হোসেনের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের ৩৬ রানের জুটি বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানের দিকে যাচ্ছিল। এই জুটিও ভাঙ্গে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে।
৩১তম ওভারে আম্পায়ারের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তে ভীষণ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন ক্ষুব্ধ সাকিব (৩৪)। এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (৩১) সঙ্গে ৩৬ রানের আরেকটি জুটি গড়েন নাসির।
ছন্দে থাকা নাসিরও (৩৬) নিজের ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উইকেটরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল তুলে দিতে গিয়ে টেইলের হাতে সহজ ক্যাচ দেন তিনি। নাসিরের বিদায়ের পর জিয়াউর রহমানও (১২) দ্রুত বিদায় নিলে বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
লড়াইয়ে পুঁজি এনে দেয়ার জন্য অতিথিরা তাকিয়ে ছিল সহ-অধিনায়কের দিকে। কিন্তু দলকে হতাশ করে দলীয় ২১৩ রানে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনিও সাজঘরে ফেরেন।
সেখান থেকে দলের রান আড়াইশ পেরুনোর কৃতিত্ব নয় নম্বর ব্যাটসম্যান রাজ্জাকের। ক্যরিয়ারের প্রথম অর্ধশতকে পৌঁছানো বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫৩ রানে। তার ২২ বলের ইনিংসে ৫টি ছক্কা ও ৪টি চার।
৪৪তম ওভারের পঞ্চম বলে জিয়া বিদায় নিলে মাঠে নামেন রাজ্জাক। প্রথম ৩ বলে মাত্র ১ রান নেন তিনি। টেন্ডাই চাতারার করা ৪৫ ওভারের শেষ বল লং অফের ওপর দিয়ে সীমানা ছাড়া করা পাল্টা আক্রমণে যান তিনি।
শিঙ্গিরাই মাসাকাদজার করা পরের ওভারের শেষ দুই চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে রানের গতি বাড়ানোর কাজটা নিজের কাঁধেই নেন তিনি। পরের দুই ওভারে ‘শান্ত’ই ছিলেন রাজ্জাক। কাইল জার্ভিসের ফাইন লেগ দিয়ে সীমানা করা ছাড়া এক-দুই করেই রান নেন তিনি।
৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে শিঙ্গিরাইকে আবার ছক্কা হাঁকান রাজ্জাক। স্টেডিয়ামের বাইরে গিয়ে পড়া সেই বল আর মাঠে ফেরেনি।
নিজের প্রথম অর্ধশতকে পৌঁছাতে জার্ভিসের করা শেষ ওভারে ১৩ রান প্রয়োজন ছিল রাজ্জাকের। প্রথম ও তৃতীয় বল কোনো রান না এলেও দ্বিতীয় ও চতুর্থ বলে বিশাল দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে আড়াইশ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান তিনি।
কাভার দিয়ে পঞ্চম বল সীমানা ছাড়া করলে নিজের অর্ধশতক ও দলের আড়াইশ রান দুই লক্ষ্য পূরণ হয়।
২১ বলে অর্ধশতকে পৌঁছে আশরাফুলের রেকর্ড ছুঁয়েছেন তিনি। ২০০৫ সালের জুনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৪ রান করার পথে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ড গড়তেও ২১ বল খেলেছিলেন আশরাফুল।
৩৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে চিগুম্বুরা জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৯ রানে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (১৫) বিদায় নিলেও দ্বিতীয় উইকেটে সিকান্দর রাজার সঙ্গে ভুসিমুজি সিবান্দার ৬৫ রানের জুটি জিম্বাবুয়েকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যায়।
দলীয় ৯৪ রানে দুজনই সাজঘরে ফিরলে বড় একটা ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা। সতেরতম ওভারে সাকিব এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সিবান্দাকে (৪৯) এবং পরের ওভারে শফিউল সাকিবের ক্যাচে পরিণত করেন রাজাকে (২৩)।
চতুর্থ উইকেটে টেইলের সঙ্গে শন উইলিয়ামসের ৭৩ রানের চমৎকার জুটি জিম্বাবুয়েকে চালকের আসনে নিয়ে আসে। ৩৫ ওভারের প্রথম বলে জিয়া টেইলরকে (৩৭) মিডউইকেটে মমিনুলের ক্যাচে পরিণত করে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন।
কিন্তু পঞ্চম উইকেটে ম্যালকম ওয়ালারের (৩৯*) সঙ্গে ম্যাচ সেরা উইলিয়ামসের ৮৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি জিম্বাবুয়েকে সহজ জয়ই এনে দেয়। শেষ পর্যন্ত ৭৮ রানে অপরাজিত থাকেন উইলিয়ামস। তার ৭৫ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ১টি ছক্কা।
বাংলাদেশের পক্ষে শফিউল ৫১ রানে ২ উইকেট নেন।
বুধবার একই মাঠে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২৫২/৯ (তামিম ৬, আশরাফুল ৮, মমিনুল ২৪, মুশফিক ২৬, সাকিব ৩৪, নাসির ৩৬, মাহমুদুল্লাহ ৩১, জিয়া ১২, রাজ্জাক ৫৩*, শফিউল ৪, রবিউল ০*; চিগুম্বুরা ৩/৩৯, চাতারা ২/৩৩, উৎসেয়া ১/৪৭, জার্ভিস ১/৫২, শিঙ্গিরাই ১/৬৪)
জিম্বাবুয়ে: ৪৭ ওভার ৫ বলে ২৫৩/৪ (হ্যামিল্টন ১৫, সিবান্দা ৪৯, রাজা ২৩, টেইলর ৩৭, উইলিয়ামস ৭৮*, ওয়ালার ৩৯*; শফিউল ২/৫১, সাকিব ১/৪২, জিয়া ১/৪২)