somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বায়োচিপ/ দুই (সাইন্স ফিকশন)

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই.
বাংলাদেশ রোবট গবেষণা প্রকল্পে আমার বিষয় রোবটে বায়োচিপ। বায়োচিপ পুরনো বিষয়। প্রাণী দেহাবশেষ থেকে চিপ তৈরি করে রোবটের সিস্টেমে ইন্সটল করলে রোবটের ইন্টেলিজেন্স অনেক বেড়ে যায়। এটাই বায়োচিপ। এই মুহূর্তে মূলত কিছু বাগ নিয়ে গবেষণা চলছে, সেটা অনেকখানিই এগিয়েছে। ফোর্থ জেনারেশনের বায়োচিপযুক্ত রোবটগুলোর অনেক আচরণই বিজ্ঞান বিশ্বে একটা বিস্ময়। এই চিপগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে অনেকেই সন্দেহে ভোগে। পরীক্ষামূলক ভাবে যে কটা রোবটে ইন্সটল করা হয়েছে তারা সবাই- ধারনার বাইরে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ করে গেছে। বেশ কয়েকটা দুর্ঘটনার পর বায়োচিপ গবেষণা ঝিমিয়ে পড়ে। রবোটিক্সের ছাত্র হওয়ায় সব খবরই আমার জানা ছিল। তবু রিসার্চের সাবজেক্ট হিসেবে বায়োচিপ বেছে নেয়ায় অনেক শিক্ষকই বাধা দিয়েছিলেন।

আমার যুক্তি ছিল- আমি অ্যাডাপ্টেড বেবি। এক ধনী নিঃসন্তান দম্পতি মধ্যবয়সে অনাথাশ্রম থেকে আমাকে সংগ্রহ করেছিলেন। তারা আমাকে খুবই ভালবাসতেন। কোন ইচ্ছেতেই কখনো বাধ সাধেননি। মেধাবী হওয়ায়- সেরা ইন্সটিটিউশন গুলোতে পড়িয়েছেন। একটা দুঃখজনক দুর্ঘটনায় দু'জন একসঙ্গে পৃথিবী ছাড়লেও ব্যাংকে আমার জন্য প্রচুর টাকা রেখে গেছেন। তারপরও তাদের মৃত্যু মানসিকভাবে আমার জন্য ছিল বিরাট আঘাত। সারাজীবন পড়াশোনায় মনোযোগী থাকায় তেমন কাছের কোন বন্ধু কখনোই ছিলনা। তারাই ছিলেন আমার একমাত্র আপনজন। বিশাল পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একা হয়ে গিয়েছিলাম। বেঁচে থাকাটা কিছুদিন খুব ভারী একটা বিষয় বলে মনে হওয়ায় একাডেমিক ইন্টারেস্টেই সম্পূর্ণ মনোযোগ ঢেলে দেই। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ গবেষণা আমাকেই মানায়। শিক্ষকরা বরাবরই আমার মেধাকে উৎসাহিত করতেন। ভালও বাসতেন। কোনভাবে নিরস্ত করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত মেনে নেন।

হ্যারি আমার হাত থেকে মোবাইল সেটটি নিয়ে দ্রুত হাতে- সেটাকে খুলে ফেলল। রোবটের হাতের কাজ দৃষ্টি দিয়ে অনুসরণ করা খুব শক্ত। কিছুক্ষণের মধ্যে সূক্ষ্ম একটা চিপ হাতে নিয়ে বলল, 'মেইন ট্রান্সলেটর চিপটা ঝামেলা করছে। কোম্পানিকে বলে নতুন চিপ আনাতে হবে।' এটা একটু অস্বাভাবিক ব্যাপার। আজকের যুগে ট্রাকিওন কোম্পানির যে কোন চিপ নষ্ট হওয়া প্রায় অসম্ভব। সম্ভাব্য সব রকমের নিখুঁত জিনিস তৈরি করে ওরা। তবু মেনে নিতে হল। বললাম, 'এক্ষুণি ব্যবস্থা কর। ফোন ছাড়া আমি অচল।' হ্যারি ওর কমিউনিকেশন ডিভাইস ব্যবহার করে রবোটিক ভাষায় দ্রুত কিছু তথ্য বিনিময় করে আমার দিকে তাকাল। ওরা বলল, 'নতুন প্রযুক্তি আইনের কারণে অন্তত একদিন সময় লাগবে।'

'তাহলে নতুন একটা সেট কিনে ফেল'।

'কেনা সমস্যা না। কিন্তু আপনি জানেন- নতুন সেটের লাইসেন্স পেতেও সেই একদিন সময়।' আজকাল সব কিছুতেই লাইসেন্স লাগে। এই কমিউনিকেশন ডিভাইসগুলোতে এত কিছু ইন্সটল করা থাকে যে সরকার কিছুতেই ভেরিফিকেশন ছাড়া ব্যবহার করতে দেয় না। পরিচিত কোম্পানির পরিচিত ডিভাইস হলেও না। আমি হতাশায় নখ চিবুতে শুরু করলাম। 'তাহলে কি করা যায়?'

হ্যারি আমাকে আস্বস্ত করে বলল, 'অসুবিধা নাই এই সময়টা আপনার কমিউনিকেশন মিডিয়া করে নিচ্ছি আমাকে। যে কোন যোগাযোগ আমার মাধ্যমে হলে টেনশন ফ্রি থাকতে পারবেন।' অসহায়ভাবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে অস্বস্তির সংগে মেনে নিলাম ব্যাপারটা। এমনিতে সমস্যা হবার কথা না। কিন্তু রোবট যন্ত্র হলেও- তার আচার আচরণ মানুষের কাছাকাছি। প্রাইভেসী ভেঙে যাওয়ার মত একটা অনুভূতি কাজ করে ভেতরে। তাও ভাল যে বাসায় কিছু বায়োচিপ এনে রেখেছিলাম- হ্যারির সিস্টেমে ইন্সটল করার জন্য। ভাগ্যিস করা হয়নি।

এ ধরণের বিপদজনক কাজ কেন যেন আমাকে খুব টানে। সত্যি যদি করে ফেলতাম তাহলে আমার প্রাইভেসী ভেঙে কি যে করে ফেলত আল্লাহ মালুম। বায়োচিপ সেট করা রোবটের আচরণ কখনো আগাম অনুমান করা যায় না। ন্যাচারালি তুমুল ভদ্র। কিন্তু যে কোন মুহূর্তে ভায়োলেন্ট হয়ে উঠতে পারে। তবে ঠিক কোন কোন কারণে হয় সেটাই একটা রহস্য। আমার আপাত গবেষণা- এই নিয়েই। বেশ কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে কিছু প্রিভেন্টিভ নিয়ে কাজ করছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×