somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্রষ্টার অপার সৃষ্টি মানব শরীর - চলুন জানি নিজের শরীর সম্পর্কে -২

১২ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রক্তের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্যতা বজায় রাখাঃ


আগের পর্ব থেকে আমরা জানি রক্তের মাধ্যমে সমস্ত শরীরের কোষ সমূহে পুষ্টি সরবরাহ করা হয় এবং বর্জ্যকে অপসারণ করা হয় । যার ফলে শরীরের কোষ সমূহ জীবিত থাকে এবং আমরা বেচে থাকি । এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়াও আরো অন্যান্য যেসব কর্মকান্ড রক্তের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো রক্তের মাধ্যমে সমস্ত শরীরের তাপমাত্রাকে একই লেভেলে রাখা কোন কারণে যদি শরীরের কোন অংশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় বা লোপ পায় - তখন রক্তের মাধ্যমেই তার ভারসাম্য রক্ষা করা হয় ।

রক্তের মাধ্যমেই সমস্ত শরীরে তাপ পরিবহণ করা হয় এবং আর্টারী যা রক্ত দ্বারা পরিপূর্ণ তার মাধ্যমে তাপমাত্রা সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়া হয় , ব্যাপারটা যেন অনেকটা পাইপের মাধ্যমে একটা পুরো বিল্ডিংয়ে গরম পানি সরবরাহ করা । কিন্তু বিল্ডিং এর ব্যবস্হায় যেখানে বয়লার হলো গরম পানির উৎস, সেখানে শরীরে তাপমাত্রার উৎস হলো শরীরের কোষ সমূহ । স্রষ্টার তৈরী অপূর্ব নিয়ম হলো - কোষ সমূহের উৎপাদিত তাপমাত্রাকে সম ভাবে সমস্ত শরীরের কোষ সমূহে বন্টন করে দিয়ে তাপমাত্রার লেভেলকে একই মাত্রায় রাখা হয় ।

যদি শরীরের তাপমাত্রা বন্টন করার এই সিস্টেমটা না থাকত, তবে আমাদেরকে গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হতে হত । এর ফলে শরীরের যে কোন নড়াচড়ার পর - যেমন উদাহরণ স্বরূপ দৈাড়ের কারণে বা ভারী জিনিষপত্র নাড়াচাড়া করার ফলে হাত এবং পায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যেত কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশের তাপমাত্রার কোন পরিবর্তন হতনা - এই ভারসাম্যহীনতার কারণে পুরো শরীরে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতো এবং শরীরের রাসায়নিক প্রক্রিয়ারও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্হ হতো । যা একটি সুস্হ শরীরকে অসুস্হ করার জন্য যথেষ্ট । এজন্য সমস্ত শরীরে একই তাপমাত্রার লেভেল ধরে রাখা খুবই জরুরী - যা রক্তের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বজায় রাখছেন ।



আবার যখন আপনার শরীরে কোন কারণে অত্যধিক তাপমাত্রার সৃষ্টি হয় তখনও ঘামের গ্লান্ড সমূহের সাথে রক্ত একত্রে কাজ করে শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে নিয়ে আসে । রক্তের পরিবহণ তন্ত্রগুলো যা চামড়ার নিচে অবস্হিত, তা প্রসারিত হয়ে রক্তের অতিরিক্ত তাপমাত্রাকে বায়ুতে মুক্ত করে দেয় । যখন আমরা প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম করি তখন আমাদের চেহারা যে রক্তিম হয়ে যায় এর অন্যতম কারণ হলো রক্তের পরিবহণ তন্ত্রের প্রসারণ । এই প্রসারণের ফরে শরীরের কোষ সমূহের তাপ মাত্রা বের হয়ে যেতে সাহায্য করে ।

আবার উল্টো ভাবে শরীরকে সম্পূর্ণরূপে ঠান্ডা হওয়া থেকেও রক্ত সুরক্ষা করে থাকে । যখন আমরা প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভব করি তখন আমাদের চামড়াকে বিবর্ণ দেখায় কারণ চামড়ার নীচে অবস্হিত রক্তের পরিবহণতন্ত্র সমূহ তখন সংকুচিত হয়ে যায় । শরীরে অবস্হিত তাপ যেন বের হয়ে যেতে না পারে সেজন্য সেই সময় শরীরের সে সমস্ত অংশের রক্তের পরিমাণ কমে যায় - যা তাপমাত্রা ধরে রাখতে সহায়তা করে ।



রক্তের মাধ্যমে শরীরের রোগ সমূহের প্রতিরোধঃ


রক্তের আরেকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন কোষ সমূহকে পরিবহণ করা । যদি কোন বাহিরের ক্ষতিকর কিছু কোনভাবে শরীরে ভিতর প্রবেশ করে ফেলে- যেমন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া , তখন রক্তে অবস্হিত এন্টিবডি এবং leucocytes দ্বারা সেগুলোকে নির্জীব করে দেয়া হয় । এছাড়াও রক্তের রোগ প্রতিরোধ কোষ সমূহ নিয়মিত সমস্ত শরীরে ঘুড়ে বেড়ায় এবং পর্যবেক্ষণ করে যাতে অবান্ছিত কোন কিছু শরীরে প্রবেশ করেছে কিনা তা খুজে বের করার জন্য ।

এখন কেউ যদি বলে রক্তের এই নিপূণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, রোগ দমন করার যোগ্যতা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের উপায় বাই চান্স তৈরী হয়ে গিয়েছে কোন স্রষ্টা ছাড়াই - এমনি এমনি , তাহলে কি আপনি তা বিশ্বাস করবেন ? এটাকে কি একটা পাগলের প্রলাপ বলে মনে হবে না আপনার ? এগুলো যে কত জটিল এবং স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া তা এই অল্প কথায় বুঝানো সহজ নয় । আপনারা যদি নিজ চোখে দেখতে পারতেন যে- রক্ত কি সব কাজ করছে - তাহলে আপনারা তার কিছুটা অনুধাবন করতে সক্ষম হতেন ।


আল-কুরআনে মহান আল্লাহ বলেনঃ

'তোমরা কি দেখ না আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন ? এমন লোকও আছে - যারা জ্ঞান , পথ নির্দেশ ও উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বাক বিতন্ডা করে ?

হে মানব জাতি ! তোমরা তোমাদের পালন কর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবেনা এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবেনা । নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য । এতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে ।
(সূরা-লোকমানঃ২০ এবং ৩৩)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×