somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবাস্তব নয়

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখমুখ কুঁচকে সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো পার্থ । মাথা নিঁচু করে পা দিয়ে আগুনটা নিভিয়ে নাকমুখ দিয়ে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে নিজের মনেই যেন বিড়বিড় করে বলল , " আর বাচঁতে ইচ্ছা করেনা দোস্ত । "

এর আগে অনেককিছু শুনলেও এমন কথা শুনিনি । অপরিচিত লাগে পার্থকে । যে হাসিখুশি প্রানের বন্ধু ক্লালের ফাস্ট সেকেন্ড পার্থ রোজ একসাথে বসার জন্যে আগে থেকে এসে আমার জন্য জায়গা রেখে বসে থাকতো , যে সবসময় ওপেনিং ব্যাট করতে নেমে কতো খেলা একাই জিতিয়ে এনেছে আমাদের , ক্লাশের সবচেয়ে বখাটে ছেলে মাজেদ একবার গাঁজার পুড়িয়া খাওয়াতে চাওয়ায় যে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো তারসাথে এই চোখমুখ কোটরে বসে যাওয়া , নিকোটিনের বিষে ঠোঁট কুঁচকুচে কালো করে ফেলা পার্থর কোন মিল খুঁজে পাই না ।

- “ কি করবি এখন ? “
-“ জানি না । তিনমাস ধরে কোন খোঁজখবরই নেই ওর । ওর বাবা মোবাইলটাও নিয়ে নিয়েছে । এই তিনমাসের প্রতিদিন ওদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থেকেছি । একদিনও দেখা পাইনি । “

পার্থকে কিছু বলার ছিলো । আসলে ঐ জন্যেই দেখা করতে আসা । আরেকটু পরে বলবো ভেবে আবার প্রশ্ন করি , ওর বাবা তোকে দেখে নি কোনদিন ?

- “ প্রায় রোজই দেখেছে । অনেকবার হুমকি দিয়েছে এরআগে । আর কাল বাবাকে ডেকে নিয়ে বলল আরেকদিন যদি আমাকে তাদের বাড়ির আশেপাশে দেখে খুন করে ফেলবে । বাবাও বলে দিয়েছে তার বাসায় আর জায়গা হবে না । কাল সারারাত বাইরেই ছিলাম । বাবা গেট খোলে নি । সারারাত রাস্তায় ছিলাম । আপুর বাসায়ও যাই নি । দুলাভাই আমাকে একদমই দেখতে পারে না । “

চেহারা দেখে মনে হলো না খেয়ে আছে সারাদিন । সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম না । সেদিনই নতুন টিউশনিটার বেতন পেয়েছিলাম বলে পকেটে কিছু টাকা ছিল । একসাথে খাওয়ার কথা বলতে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল ক্ষুধা নেই , খেয়েছে । মিথ্যাও বলা শেখে নি আজো ভালমতো , সহজেই ধরে ফেললাম । রাগ হয় পার্থর বাবার উপর । ছেলেকে পৃথিবীতে এনে সুন্দর একটা নাম দেওয়া ছাড়া আর কিছু কি করেছেন তিনি ? ভেবে পেলাম না । একটা কাজ করেছিলেন অবশ্য । পার্থর মা মারা যাবার দেড় বছরের মধ্যে নিজ দায়িত্বে তড়িঘড়ি করে আরেকজন মা নিয়ে এসেছিলেন ওর জন্য । একটু চিন্তাও হলো পার্থর জন্য । কণার বাবা যদি ওমন কথা বলে থাকে তাহলে তা করেও ফেলতে পারেন । ঐ লোক এম.পির পিএস । আমাদের এলাকায় কুখ্যাত মানুষ ।

যা বলতে এসেছিলাম তা আর বললাম না । দুই তিনটা অর্থহীন আশ্বাসের কথা , যা আমি নিজেই বিশ্বাস করি না , শুনিয়ে উঠে চলে এলাম । কণার কোমড় ঢাকায় বেশ শার্প চেহারার একছেলের প্রায় খামচি দিয়ে জড়িয়ে রিকশায় করে ঘোরার দৃশ্যের কল্পনা আমার বন্ধু নিতে পারবে না । আর কণার মোবাইল নেই কথাটাও ভুল । ডান হাত ঐ ছেলের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢুকিয়ে বা হাতের মোবাইল নাড়তে নাড়তে গল্প করতে আমার নিজের চোখে দেখা । এখন এসব বললে মনেহয় ও সুইসাইড করে ফেলতে পারে । কিছুটা সময় যাক , একটু স্থির হোক আগে ।

সময় পাওয়া গেলনা । তিনদিন পর সকালে খবর পেলাম স্টেশনের প্লাটফর্ম থেকে একটু দূরে রেল লাইনের ওপর পার্থর লাশ পাওয়া গেছে । শরীর পেট থেকে দু টুকরো । মাথা , বুক আর গলার কয়েকজায়গায় ছুরির পোঁচ আর পাড় দেয়ার গর্ত । পুলিশ ব্যাপরটা সুইসাইড হিসেবে চালিয়ে দিলো । পার্থর ছোট মুদীর দোকান চালানো বাবাও কোন মামলা করার সাহস পেলেন না ।

পার্থকে যেদিন কবরে রেখে এলাম আকাশ ভেঙ্গে সেদিন বৃষ্টি নেমেছিল খুব ।

***

কণাকে মাঝেমাঝে দেখি রাস্তায় । পাশের ছেলে আবার বদলে গেছে । ওকে হাসতে দেখে মাথার ভেতর যেন আগুন ধরে যায় । রাগে মনে হয় পাগল হয়ে যাব । ইচ্ছে করে মাজেদের থেকে এক বোতল এসিড এনে ছুড়ে মারি সুন্দর, নিষ্পাপ মুখটায় আর না হয় সবাই মিলে একদিন কিডন্যাপ করে . . . . . . . তারপর ওদের বাড়িতে ঢুঁকে খুন করি ওর বাবাকে । কিছুই করতে পারি নি এখনো । চোখের সামনে ভালোই আছে কণা ।

কণারা ভালোই থাকে ।

( অবাস্তব নয় )
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×