রিপার বয়স এখন ১৩ । বেশ বড় বড় ভাব ওর মধ্যে । কিছুদিন আগেও যে মেয়েটি ছুটোছুটি করতো এখন কেমন যেন বদলে গিয়েছে । পোশাক আশাক এর ব্যপারে ও ভীষণ সচেতন। সারাদিন একটু পর পর আয়না দেখছে । কিছুদিন হল ও নিজেও শারীরিক পরিবর্তন টের পাচ্ছে। মেয়ের এরকম পরিবর্তনের ওর মা বাবাও ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন । ওর মা বেশ বুঝতে পারছে এই সময়ে মেয়েকে বড়দের জগতে নিয়ে আসার দায়িত্ব তার উপর ই বর্তায়। কিন্তু কিভাবে কথাগুলো শুরু করবেন তা নিয়েই ভীষণ চিন্তায় আছেন উনি ।
অবশ্য এই বিষয় টি নিয়ে শুধু তার একার দুশ্চিন্তা না। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো অনেক মা বাবার এই বয়ঃসন্ধির বিষয়টা শেখাবার ব্যাপারে সন্ধিহান থাকেন । সন্তানটি ছেলে হোক অথবা মেয়ে যাই হোক না কেন । কিভাবে এই বিষয়টির অবতারনা করবেন , অথবা কিছু বলা উচিত কিনা এইসব ব্যাপারে এই ধরনের অনেক প্রশ্ন আসে । এরপর চুপ করে যান ।ফলে বন্ধু বান্ধব বা বইপত্র থেকে ভুলভাল যা হোক শিখে ফেলে। তারপর জীবনের নানা প্রান্তে ভুল করে ফেলে । তখন মা বাবা সব ভুল চাপিয়ে দেন বয়ঃসন্ধিপ্রাপ্ত ছেলে বা মেয়েটির উপর । এই সমস্যা এড়াতে আপনার সন্তানকে সাহায্য করুন তার বদলে যাওয়া জগতটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।
১।বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর আগেই ওকে বড় হয়ে ওঠার ব্যপারটি সহজ সরল ভাষায় বোঝান। শরীরে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে সেগুলো বোঝান। লজ্জা পাবেন না । কারন এটাতে কুণ্ঠিত হওয়ার কিছু নেই । জীবনের এই পর্যায় গুলো প্রতিটি মানুষকে পার হতে হয় ।এমন ভাবে বোঝান যেন সে ভয় না পেয়ে ভরসা পায়।
২। ওর সাথে বন্ধুর মত মিশুন। এই সময় অনেক ছেলেমেয়ে এগ্রেসিভ হয়ে যায় । জিনিসপত্র ভাংচুর করে। ওদেরকে বোঝান যে জিনিসপত্র গুলো তাদেরই । এগুলো ভাংলে তারই ক্ষতি । নিজের চিন্তা ভাবনা ওদের উপর চাপিয়ে দেবেন না। বাড়ির পরিবেশ ডিসিপ্লিন জর্জর না করে খোলামেলা করে তুলুন।
৩। ওকে নতুন জিনিস বুঝতে জানতে সাহায্য করুন। ওর বন্ধু বান্ধব কে নিমন্ত্রণ করুন। ওদের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করুন । তাহলে বুঝতে পারবেন সে কি রকম বন্ধু বান্ধব এর সাথে মিশছে ।
৪। নিজেকে প্রতিনিয়ত আপডেট করুন । পুরনো সংস্কারের বেড়াজালে আটকে থাকলে আপনার সন্তানের অবজ্ঞার পাত্র হবেন । কম্পিউটার ব্যবহার না জানলে শিখে নিন। ওকে বলুন আপনাকে সাহায্য করতে। কোন বিষয় সন্তান কে শেখাবার আগে নিজে তথ্যটা জানেন কিনা সেটা অবশ্যই যাচাই করে নিন ।
৫। এই সময় আপনার সন্তান নানা ধরণের ইমোশনাল ক্রাইসিসের সম্মুখীন হতে পারে । তার মধ্যে বন্ধুবিচ্ছেদ বা প্রেম থাকাও অসম্ভব কিছু নয় । গোয়েন্দাগিরি না করে ওদের নিজস্ব জীবন সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করুন। সন্তানরা কোন সংকটে পড়লে মাবাবার কাছেই প্রথমে আসে। বিরক্ত না হয়ে ওদের কথা শুনুন । হাসিমুখে সহজ ভাবে উত্তর দিন । ও যেন ভরসা পায়। মানসিক সংকটে যেন সে আবার আপনার কাছেই আসে সেই পথ টুকু খোলা রাখুন ।
৬। বাসায় প্রচুর বই রাখুন । যেন বই পড়ার একটা অভ্যেস গড়ে ওঠে । শুধুমাত্র টিভি বা ইন্টারনেট যেন তার অবকাশ যাপনের উৎস না হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৪৬