somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেহুলা–লক্ষিন্দর এপিসোড –জেনে নিন

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেহুলা–লক্ষিন্দর , নামযুগল না শোনার যৌক্তিকতা খুবই কম, কিন্তু বেহুলা–লক্ষিন্দর এর ইতিহাস এবং বেহুলার বাসর যা কিনা এদেশেই হয়ত সময় বা অন্য কারনে অনেকেরই ঘুরে আসা হয়নি। যাহোক এসম্পর্কে জানলে বোধহয় মন্দ হবেনা ,অন্ততঃ যারা জানেন না।
গত ঈদের ছুটিতে বন্ধুরা মিলে গিয়েছিলাম বেহুলার বাসর দর্শনে।
বগুড়া শহর থেকে মাত্র ১০ বা ১১ কিলোমিটার দূরেই গোকুল মেধ নামক স্থানেই বেহুলার বাসর।



স্থাপনাটি সমতল হতে বেশ উঁচু প্রায় ৫০ ফিট এবং বহু স্তরবিশিষ্ট একটি দুর্গের মত। স্তরে স্তরে বহু কক্ষ। কিন্তু এতগুলোর মধ্যে কোনটি বেহুলার বাসরঘর ছিল তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। তা ছাড়া সব কটি কক্ষের আকৃতিগত কাঠামোও প্রায় একই রকম। সব থেকেউপরে একটি গোলাকৃতি কক্ষ রয়েছে এবং ধারণা করা হয় এটিই হয়তো বাসরঘর ছিল।






চলুন এখন জেনে নিই বেহুলা–লক্ষিন্দর পুরাণঃ


বেহুলা–লক্ষিন্দর চরিত্র প্রাচীন বাংলার মনসামঙ্গল নামক গ্রন্থে বর্নিত আছে। এখানে চাঁদ সওদাগর ছিলেন শিবের অন্যতম ভক্ত।
চাঁদ সওদাগরের পুত্র লক্ষিন্দর ও তার ব্যবসায়ীক সতীর্থ সাহার কন্যা বেহুলার জন্ম হয় একই সময়ে। দুটি শিশুই একসাথে বেড়ে ওঠে এবং একে অপরের জন্য সম্পুর্ণ উপযুক্ত বলে গণ্য হয়।
চাঁদ সওদাগর শিবের একনিষ্ঠ পূজারী হওয়ায় অন্য কোন দেবতার আরাধনা করতেন না। অপরদিকে শিবের কন্যা মনসা ছিলেন সর্পদেবী, কিন্তু তিনি কোথাও পূজিতা হতেন না। পিতা শিব তাঁকে বলেন যে যদি কোন ভক্তিমান শিবের উপাসক প্রথম মনসার পূজা করেন তাহলেই তাঁর পূজার প্রচলন সম্ভব। তখন মনসা চাঁদ সওদাগর কে নির্বাচন করে তাঁকেই অনুরোধ করেন মনসা পূজার আয়োজন করার জন্য, কিন্তু শিবের উপাসক চাঁদ সওদাগর মনসার প্রস্তাবে অস্বীকৃত হন। তখন রাগে মনসা তাঁকে অভিশাপ দেন যে তাঁর প্রত্যেক পুত্রের জীবন তিনি বিনাশ করবেন। মনসার শাপে এইভাবে একে একে লখিন্দর ব্যতীত চাঁদ সওদাগরের সকল পুত্রই সর্পদংশনে নিহত হয়। তাই লখিন্দরের বিবাহের সময় চাঁদ সওদাগর অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে দেবতা বিশ্বকর্মার সাহায্যে এমন বাসর ঘর তৈরি করেন যা সাপের পক্ষে ছিদ্র করা সম্ভব নয়।
কিন্তু সকল সাবধানতা স্বত্ত্বেও মনসা তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সমর্থ হয়। তার পাঠানো একটি সাপ লক্ষিন্দরকে হত্যা করে। প্রচলিত প্রথা অনুসারে যারা সাপের দংশনে নিহত হত তাদের সত্কার প্রচলিত পদ্ধতিতে না করে তাদের মৃতদেহ ভেলায় করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হত এ আশায় যে ব্যক্তিটি হয়ত কোন অলৌকিক পদ্ধতিতে ফিরে আসবে। বেহুলা সবার বাঁধা অগ্রাহ্য করে তার মৃত স্বামীর সাথে ভেলায় চড়ে বসে। তারা ছয় মাস ধরে যাত্রা করে এবং গ্রামের পর গ্রাম পাড়ি দিতে থাকে। এই অবস্থায় মৃতদেহ পঁচে যেতে শুরু করে এবং গ্রামবাসীরা তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে করতে থাকে। বেহুলা মনসার কাছে প্রার্থনা অব্যাহত রাখে। তবে মনসা ভেলাটিকেই কেবল ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
একসময় ভেলাটি মনসার পালক মাতা নিতার কাছে আসে। তিনি নদীতীরে ধোপার কাজ করার সময় ভেলাটি ভূমি স্পর্শ করে। তিনি মনসার কাছে বেহুলার নিরবচ্ছিন্ন প্রার্থনা দেখে বেহুলাকে তার কাছে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে চোখের পলকে বেহুলা ও মৃত লক্ষিন্দরকে স্বর্গে পৌছে দেন। মনসা বলেন, তুমি তাকে (লখিন্দর) ফিরে পাবার যোগ্য, কিন্তু এটি কেবলি সম্ভব হবে যদি তুমি তোমার শ্বশুড়কে আবার আমার পূজারী করতে পার।
“আমি পারব,” বেহুলা জবাব দেয় এবং সেই সাথেই তার স্বামীর মৃতদেহে জীবন ফিরে আসতে শুরু করে। তার ক্ষয়ে যাওয়া মাংস ফিরে আসে এবং লক্ষিন্দর তার চোখ মেলে তাকায়। এরপর লক্ষিন্দর বেহুলার দিকে তাকিয়ে হাসে।
তাদের পথপ্রদর্শক নিতাকে নিয়ে তারা পৃথিবীতে ফিরে আসে। বেহুলা তার শ্বাশুড়ির সহযোগীতায় চাঁদ সওদাগরকে মনসার উপাসনা করতে সম্মত করেন।:D
সেই লক্ষিন্দরের ভিটে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে । এলাকাবাসীর কাছে আজও তা বেহুলার বাসরঘর নামেই পরিচিত।

ঘুরে আসতে চাইলে বগুড়া শহর থেকে সিএনজি করে যাবেন গোকুল নামক স্থানে। একই সাথে ঘুরে আসবেন মহাস্থানগড় গোবিন্দভিটা।

ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য। B-)B-)

আর বেহুলা–লক্ষিন্দর পুরাণ বিভিন্ন ওয়েবপেজ থেকে সংগ্রহ মুল কাহিনী টুকু সহজ ও সংক্ষিপ্ত ভাষায় উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।

ছবিঃ নিজ






সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৪০
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×