somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় সরকারিভাবে ১১টি সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। আবার দেশের অভ্যন্তরেই স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গঠিত হয় আঞ্চলিক গেরিলা বাহিনী। যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রশিক্ষণ, যুদ্ধক্ষমতা, রণচাতুর্য, নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতাকামী মানুষের হৃদয় জয় করতে সমর্থ হয়েছিলো। সাধারণত ব্যক্তি নামেই এ সব বাহিনীর পরিচয়। এসব বাহিনীর মধ্যে টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকী (পরবর্তীতে বীর উত্তম)’র নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘কাদেরিয়া বাহিনী’, ফরিদপুরের হেমায়েত উদ্দিন (পরবর্তীতে বীর বিক্রম)’র নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘হেমায়েত বাহিনী’, ময়মনসিংহে মেজর আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘আফসার বাহিনী’, যশোরে আকবর হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘আকবর বাহিনী’, মানিকগঞ্জে ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘হালিম বাহিনী’, নাগরপুরে আবদুল বাতেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘বাতেন বাহিনী।’ সিরাজগঞ্জে আবদুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘পলাশডাঙ্গা যুব শিবির’ নামে মুক্তিযুদ্ধের একটি সশস্ত্র সংগঠন। সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে সাধারণ মানুষ পলাশডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ‘মির্জা বাহিনী’ নামে অভিহিত করে থাকে।
১৯৭১ সালের মে মাসে সিরাজগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) কামারখন্দের (বর্তমানে উপজেলা) ভদ্রঘাট গ্রামে এতদাঞ্চলের স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদ, বিদ্রোহী বাঙালি সেনাসদস্য, ইপিআর সদস্য, আনসার সদস্য ও ছাত্র-যুবকদের সমন্বযে গঠিত হয় পলাশডাঙ্গা যুব শিবির। শহর থেকে দূরে ভদ্রঘাট ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ ঘাটি। পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরেই ছাত্র-যুবকদের রিক্রুট করে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং দেওয়া হতো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পলাশডাঙ্গা ক্যাম্পের কার্যক্রম ও অপারেশন এরিয়া সিরাজগঞ্জের সমগ্র দক্ষিণ এলাকা, পাবনার ফরিদপুর, সাথিয়া, বগুড়ার শেরপুর, চলনবিল এলাকাসহ রাজশাহীর গুরুদাসপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। সম্পূর্ণ সামরিক কায়দা-কানুনে পরিচালিত এই ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিলো ৬ কোম্পানি। কখনো কখনো পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ৫০/৬০টি ভাসমান নৌকায়ও এই ক্যাম্পের কার্যক্রম চলতো। সিরাজগঞ্জের তারাশ থানার অস্ত্র লুট, পাবনার ফরিদপুর থানার অস্ত্র লুট, সাথিয়া থানার অস্ত্র লুট, কালিয়া হরিপুর ব্রিজে রাজাকার অপারেশন, ঝাঐল ব্রিজে রাজাকার অপারেশন, রাজশাহীর গুরুদাসপুর থানার অস্ত্র লুট, ভদ্রঘাটের যুদ্ধ, নওগাঁর যুদ্ধসহ প্রায় অর্ধশতাধিক যুদ্ধে পলাশডাঙ্গা যুব ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের সংক্ষিপ্ত সাংগঠনিক কাঠামো উল্লেখ করছি :

মহাপরিচালক : আবদুল লতিফ মির্জা। ছদ্মনাম : স্বপন কুমার। তৎকালীন ছাত্রনেতা। পরবর্তীতে এমপি।
কমান্ডার-ইন-চিফ : সোহরাব আলী সরকার। ছদ্মনাম : অশোক বাবু। সিরাজগঞ্জ কলেজের ছাত্র সংসদের তৎকালীন ভিপি। বর্তমানে জেলা কমান্ডার সিরাজগঞ্জ।
অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডার-ইন-চিফ : বিমল কুমার দাস। বর্তমানে এ্যাডভোকেট, জজকোর্ট, সিরাজগঞ্জ।
অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডার-ইন-চিফ : শ.ম আমজাদ হোসেন মিলন।
প্রধান অস্ত্র প্রশিক্ষক
অপারেশন পরিচালক ও
ব্যাটালিয়ন কমান্ডার : লুৎফর রহমান খান। ছদ্মনাম : অরুন। তৎকালীন বাঙালি সেনাসদস্য।
১ নং কোম্পানি কমান্ডার : আবদুস সামাদ সরকার। তৎকালীন বাঙালি সেনাসদস্য।
২ নং কোম্পানি কমান্ডার : মোজাফফর হোসেন মোজাম। তৎকালীন বাঙালি ইপিআর সদস্য।
৩ নং কোম্পানি কমান্ডার : আবদুস সালাম। তৎকালীন বাঙালি সেনাসদস্য।
৪ নং কোম্পানি কমান্ডার : আবদুল বাছেদ। তৎকালীন বাঙালি সেনাসদস্য।
৫ নং কোম্পানি কমান্ডার : আবদুর রহমান। তৎকালীন বাঙালি সেনাসদস্য।
৬ নং কোম্পানি কমান্ডার : খলিলুর রহমান। তৎকালীন বাঙালি ইপিআর সদস্য।

এছাড়াও আবদুল আজিজ মির্জা, আতাউর রহমান, আবদুল হাই তালুকদার, ইফতেখার মবিন চৌধুরী জিল্লু, খোরশেদ আলম, গেদু মিঞা প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে কাজ করেছেন। পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য- সোহরাব আলী সরকার, মনিরুল কবির, লুৎফর রহমান মাখন, শফিকুল ইসলাম শফি, আবদুল আজিজ সরকার প্রমুখ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×