somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিহাদ বনাম যুদ্ধ

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘জেহাদ’ বা ‘জিহাদ’ মূলত আরবী শব্দ। জিহাদ ( جهاد‎), যার অর্থ সংগ্রাম; কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের জন্য সমগ্র শক্তি নিয়োগ করাকে বোঝানো হয়।বর্তমান বিশ্বে জিহাদ বলতে মানুষ তরবারীর যুদ্ধকে বা অস্ত্র-শস্ত্রের যুদ্ধকে বুঝে থাকে, যা মোটেও ঠিক নয়। এই ধারণাটি সৃষ্টি হয়েছেও কিছু স্বার্থন্বেষী, ভ্রান্ত মানসিকতা সম্পন্ন লোকের জন্য। যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য অস্ত্র-শস্ত্রের জেহাদটিকে মূল জেহাদ বানিয়ে ফেলেছে। অথচ মূল জেহাদ এটা নয়। ইসলাম ধর্মে মহানবী (সঃ) -এর সঙ্গে কাফেরদের যতগুলো যুদ্ধ হয়েছিল, সেই যুদ্ধগুলো নিছক নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য ছিলো। কাফেরেরা বা অবিশ্বাসীরা যখনই মহানবী (সঃ) ও সাহাবাদের উপর আক্রমণ করেছে তখনই প্রতিহত করতে মহানবী (সঃ) বাধ্য হয়েছেন। ইতিহাসের পাতায় এ সব যুদ্ধকে আমরা কেবল আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ হিসাবেই দেখতে পাই। তাবুকের যুদ্ধে জয়লাভ করার পর মহানবী (সঃ) বলেন, “রাজানা মিনাল জিহাদে সাগিরা ইলাল জিহাদে কাবিরা” অর্থাৎ “আমরা ছোট জেহাদ (জিহাদে সাগিরা) হতে বড় জেহাদের (জিহাদে কাবিরা) দিকে ফিরে এসেছি।”-(তিরমিজি শরীফ)। প্রশ্ন উঠেছিল, বড় জেহাদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? মহানবী (সঃ) বলেছিলেন, আপন নফ্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটাই হলো জেহাদে আকবর বা জিহাদে কাবিরা তথা বড় জেহাদ তথা আসল জেহাদ। আর ‘জেহাদে আসগর বা জিহাদে সাগিরা হল ছোট জেহাদ। কাফেরদের বিরুদ্ধে অস্ত্রযুদ্ধে জয়লাভ করাই যদি একমাত্র জেহাদ বলে আমরা ধরে নেই, তাহলে মহানবী (সঃ)’র এরকম উপদেশ দেবার অর্থ কী হতে পারে? আর তিনি জেহাদকে ভাগই বা করে দেখালেন কেন? কেন তিনি অস্ত্র-সস্ত্রের যুদ্ধকে জেহাদে সাগীর বা ছোট জেহাদ বললেন? তাহলে জেহাদে আকবর বলতে তিনি কী বুঝাতে চেয়েছেন? নিজের রিপুদোষগুলোর বিরুদ্ধে তথা ইন্দ্রিয়গুলোর বিরুদ্ধে তথা এক কথায় নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকেই জেহাদে আকবর বলেছেন। মহানবী (সঃ) বলেন, “আল্ মুজাহিদু মান্ জাহাদা নাফসাহু ফি তা আতিল্লা” অর্থাৎ “একমাত্র মোজাহেদ সবসময় নফসের বিরুদ্ধে আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য জেহাদে মশগুল থাকে।” জেহাদ দুই প্রকার : প্রথমটি বাহিরের শত্রু হতে আপন ভূখণ্ডকে উদ্ধার করার জেহাদ বা আত্মরক্ষার জেহাদ আর দ্বিতীয়টি হলো আপন নফ্সের সঙ্গে যে খান্নাসরূপী শয়তানটি বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে, উহার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা। কারণ, শয়তানকে আল্লাহ দুইটি স্থান ছাড়া আর কোথাও অবস্থান করার অনুমতি দান করেন নি, অর্থাৎ সৃষ্টিজগতের কোথাও শয়তানের থাকবার অনুমতি নাই একমাত্র জিন এবং মানুষের অন্তর ছাড়া। তাই জিন এবং মানুষের অন্তরটি যখন খান্নাসরূপী শয়তান হতে মু্ক্ত হয়ে যায় তখন সমস্ত দেহখানি পাকপবিত্র হয়ে যায়। মানুষ যখন নির্জনে মহানবী (সঃ)’র হেরাগুহার মতো স্থানে একাকী ধ্যানসাধনায় মগ্ন হয়ে নফ্সের সঙ্গে মিশে থাকা খান্নাসরূপী শয়তানটিকে তাড়িয়ে দেবার জেহাদে রত থাকে তখনই সেই নফ্সটিকে বলা হয় নফ্সে লাউয়ামা তথা সংগ্রামরত নফ্স তথা যুদ্ধরত নফ্স তথা জেহাদে রত থাকা নফ্স। এই জেহাদ বাহিরের অস্ত্র হাতে নিয়ে জেহাদ করা নয়, বরং ধ্যানসাধনায় ডুবে থেকে আপন নফ্স হতে খান্নাসকে তাড়িয়ে দেবার অথবা খান্নাসকে মুসলমান বানিয়ে ফেলার জেহাদ।
পবিত্র কোরআনে- আল্লাহর পথে জেহাদের কথা তথা খান্নাসের বিরুদ্ধে জেহাদের কথা বলা হয়েছে আবার আত্মরক্ষার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে জেহাদের কথাও বলা হয়েছে।

ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্কে ভয়-শ্রদ্ধা করো, আর তাঁর দিকে অছিলা অন্বেষণ করো, আর তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। - 5:35

উপরোক্ত আয়াতটিতে আল্লাহর পথে জেহাদ করার কথা বলা হয়েছে। এই জেহাদ তরবারি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করার জেহাদ নয়, এই জেহাদ মানুষ হত্যা করার বন্দুক কাঁধে নিয়ে ঘোরাঘুরির জেহাদ নয়, এই জেহাদ আপন নফ্সের সঙ্গে যে খান্নাসরূপী শয়তানটিকে পরীক্ষার উদ্দেশে দেওয়া হয়েছে তাকে তাড়িয়ে দেবার জেহাদ, তাকে মুসলমান বানাবার জেহাদ। এখানে আল্লাহর পথে বলতে কী বোঝানো হয়েছে? বোঝানো হয়েছে যে আল্লাহকে পাবার পথে যে সমস্ত বাধা বিপত্তিগুলো সামনে এসে দাঁড়ায় সেগুলোকে পরাভূত করে সত্যের মধ্যে ডুবে যাবার জেহাদ। ইহা কোনো বৈষয়িক বিষয়ের ভাগ বাঁটোয়ারার জেহাদ নয়।









সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:২৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×