somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ইমাম গাজ্জালী (রহ )

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক অঞ্চলেই ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) হিসেবে বেশি পরিচিত, মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ ইমাম আল-গাজ্জালির ১০৫৮ সালে ইরানের খোরাসানের তুশ নগরীতে জন্মগ্রহণ ।তাঁর পিতা মুহাম্মদ তখনকার সময়ে একজন স্বনামধন্য সূতা ব্যাবসায়ী ছিলেন। গাজল অর্থ সূতা, নামকরনের এই সামঞ্জস্যতা তাই তাঁর বংশকে গাজ্জালী নামে পরিচিত করেছে।তিনি সে সময়ে ইরানের শিক্ষা নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেন। জ্ঞান অন্বেষণের জন্য তিনি দেশভ্রমণেও বেরিয়েছিলেন। ১১১১ সালে তিনি মারা যান।ইতিহাস থেকে জানা যায়, মৃত্যুর দিন ভোর বেলায় তিনি ফজরের নামাজ আদায় করেন এবং নিজ হাতে কাফনের কাপড় পরিধান করেন এবং শুয়ে পড়েন। এভাবেই এই নশ্বর পৃথীবি থেকে বিদায় নেন এই মহান দার্শনিক। ইরানের অমর কবি ফেরদৌসীর সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

ইমাম গাজ্জালী রঃ এর নাম আসল নাম আবু হামিদ মুহম্মদ। ইমাম গাজ্জালী র: এর পিতা ছিলেন দরিদ্র।তথাপি তিনি পুত্রের শিক্ষার জন্য চেষ্টার কোন ত্রুটি করেননি।ইমাম গাজ্জালী র: শৈশব কালেই পিতৃহীন হন।অন্তিম কালে তার পিতা তাহার জনৈক বন্ধুর কাছে দুই পুত্র আহমদ ও মুহম্মদ এর প্রতিপালনের ও শিক্ষার ভার অর্পন করেন এবং এ জন্য সামান্য অর্থ প্রদান করেন।তাহেরানে শিক্ষা সমাপ্তির পর ইমাম গাজ্জালী র: উচ্চ শিক্ষার জন্য জুরজান শহরে গমন করেন।এখানে তিনি হযরত ইমাম আবু নসর ইসমাইল র: এর তত্বাবধানে শিক্ষাগ্রহন আরাম্ভ করেন।প্রায় দশ বছর তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল সফর করে অবশেষে আবার তিনি বাগদাদে তিনি তৎকালীন দুনিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় বাগদাদের নেজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রেকটর নিযুক্ত হন। মাত্র ৩৪ বছর, এত অল্প বয়সেও তিনি অধ্যাপনা ও পরিচালনা কার্যে নিতান্ত দক্ষতা ও নিপুনতার পরিচয় প্রদান করেন । স্বয়ং বাদশাহ ও রাজপুরুষগণও রাজকার্যের জটিল সমস্যাসমূহে তাহার পরামর্শ গ্রহণ করতেন ।

ইমাম গাজ্জালী রা: এর যুগে পারস্যের সম্রাট ছিলেন সলজুক বংশীয় সুলতান রুকনুদ্দীন তোগরল বেগ। তিনি জানতেন যে কেবল কিতাব পাঠ আল্লাহর জ্ঞান লাভের জন্য যথেষ্ঠ নয়। ইহার জন্য দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন জীবন্ত উস্তাদের নিতান্ত প্রয়োজন।হাদিস শরীফে আছে জ্ঞান দুই প্রকার । এক প্রকার জ্ঞান হচ্ছে জবানী জ্ঞান, অন্য একটি ক্বলবী এলেম বা আত্বিক জ্ঞান।অবসর সময়ে তিনি কিছুসংখ্যক অতি আগ্রহী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করতেন এবং সময় সময় আলিমগনের সাথে জটিল বিষয়াদি সম্পর্কে আলোচনা করতেন।জ্ঞানের আলো বিতরনের উদ্দেশ্যে হযরত ইমাম গাজ্জালী র: এর এ পৃথিবীতে আবির্ভাব।বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডারে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা নিঃসন্ধেহে অতুলনীয়।এ মনীষি মাত্র ৫৫ বৎসরকাল জীবিত ছিলেন।পরম করুনাময় আল্লাহ পাক তাকে ইহজগত পর জগতে যথাযোগ্য মর্যাদা দান করুন, আমিন।ধর্ম তথা ইসলাম নিয়ে তথাকথিত বিতর্ক নিয়ে ইমাম আল গাজ্জালী (রহ) তার এহিয়াউ উলুমুদ্দীন গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

সে সময় হিন্দু সমাজ ছিল জাত-পাতের অত্যাচারে জর্জরিত। অপরদিকে মুসলিম পীর, ফকির, দরবেশরা বন্যার পানির মত নিয়ে আসছিলেন একটি ভেদাভেদহীন, সাম্যবাদী সমাজের বার্তা। সে বন্যা ঠেকানোর আদর্শিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক সাধ্য হিন্দু সমাজের ছিল না। তখন শ্রীচৈতন্য প্রেম ও সাম্যের বাণী প্রচার শুরু করেন। সে যাত্রা হিন্দু সমাজ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পায়।একই ধরণের উদ্যোগ রবীন্দ্রনাথও নিয়েছিলেন কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে। তার সময়েও হিন্দু সমাজ ছিল চরম আদর্শিক সংকটে। শিক্ষিত হিন্দুরা ধর্মবিরোধী বা খ্রীষ্ট ধর্মের অনুরাগী হয়ে পড়ছিল। সেই স্রোত ঠেকাতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাম্ম সমাজ।

আল্লামা নববী বলেন ,ইমাম গাজ্জালী র: এর সম্পুর্ন আয়ুষ্কাল(জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত) ও তার রচিত গ্রন্থাবলীর হিসাব আন্তে আমি গড় করে দেখেছি, তিনি গড়ে প্রত্যেকদিন ১৬ পৃষ্ঠা লিখেছেন।দর্শন,তর্ক,ইলমে কালাম, ধর্মতত্ব,মনস্তত্ত্ব,স্বভাব-বিজ্ঞান,নীতি-বিজ্ঞান,আধ্যাতিক তত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে তিনি গ্রন্হ রচনা করেন।তার রচিত গ্রন্হাবলীর মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। প্রখ্যত কবি দান্তে,মনিষী রেমন্ড মার্টিন,মনীষী সেন্ট টমাস একুইনাস,প্রখ্যাত ফরাসি মিসটিক ব্লেইসি প্যাসকেল ইমাম গাজ্জালী র: এর গ্রন্হরাজি হতেই তাদএর যুক্তি ও উদাহরন গ্রহন করেন এবং তার মতামতকেই প্রামান্য বলেই উল্লেখ করেন।তার ৪০ টি গ্রন্হ ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত ও প্রকাশিত হয়।

জ্ঞান একটি ভান্ডার যার চাবি হচ্ছে প্রশ্ন করা।সুতরাং জ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশ্ন কর। কেননা এতে চার ব্যাক্তি সওয়াব পায়। ১) প্রশ্নকারী ২) জ্ঞানী ব্যাক্তি ৩) স্রোতা এবং ৪) যে তাদের প্রতি মুহাব্বত রাখে ।কুখ্যাত হালাকু খাঁ বাগদাদ আক্রমন করে এবং বাগদাদের লাইব্রেরী ধ্বংস করে। হাজার হাজার মূল্যবান বই পত্র লুটপাট এবং ধ্বংস করে। বিভিন্ন রূপী হালাকু খাঁ ইসলামের অনেক ক্ষতি করেছে এবং করে যাচ্ছে।

এক ব্যক্তি জঙ্গলে হাটছিলেন। হঠাৎ দেখলেন এক সিংহ তার পিছু নিয়েছে। তিনি প্রাণভয়ে দৌড়াতে লাগলেন। কিছুদূর গিয়ে একটি পানিহীন কুয়া দেখতে পেলেন। তিনি চোখ বন্ধ করে দিলেন ঝাঁপ। পড়তে পড়তে তিনি একটি ঝুলন্ত দড়ি দেখে তা খপ করে ধরে ফেললেন। এবং ঐ অবস্থায় ঝুলে রইলেন। উপরে চেয়ে দেখলেন কুয়ার
মুখে সিংহটি তাকে খাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। নিচে চেয়ে দেখলেন বিশাল
এক সাপ তার নিচে নামার অপেক্ষায় চেয়ে আছে। বিপদের উপর আরো বিপদ
হিসেবে দেখতে পেলেন একটি সাদা আর একটি কালো ইঁদুর তার দড়িটি কামড়ে ছিড়ে ফেলতে চাইছে। এমন হিমশিম অবস্থায় কি করবেন যখন
তিনি বুঝতে পারছিলেন না, তখন হঠাৎ তার সামনে কুয়ার সাথে লাগোয়া গাছে একটা মৌচাক দেখতে পেলেন। তিনি কি মনে করে সেই
মৌচাকের মধুতে আঙ্গুল ডুবিয়ে তা চেটে দেখলেন। সেই মধুর মিষ্টতা এতই বেশি ছিল যে তিনি কিছু মুহূর্তের জন্য উপরের গর্জনরত সিংহ, নিচের হাঁ করে থাকা সাপ, আর
দড়ি কাঁটা ইঁদুরদের কথা ভুলে গেলেন। ফলে তার বিপদ অবিশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ালো।

ইমাম গাজ্জালী এই গল্পের ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, এই সিংহটি হচ্ছে আমাদের মৃত্যু,
যে সর্বক্ষণ আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সেই সাপটি হচ্ছে কবর। যা আমাদের অপেক্ষায় আছে। দড়িটি হচ্ছে আমাদের জীবন, যাকে আশ্রয় করেই বেঁচে থাকা। সাদা ইঁদুর হল দিন, আর কালো ইঁদুর হল রাত, যারা প্রতিনিয়ত ধীরে ধীরে আমাদে জীবনের আয়ু কমিয়ে দিয়ে আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আর সেই মৌচাক হল দুনিয়া। যার সামান্য মিষ্টতা পরখ করে দেখতে গেলেও আমাদের এই চতুর্মুখি ভয়ানক বিপদের কথা ভুলে যাওয়াটা বাধ্য। কুখ্যাত হালাকু খাঁ বাগদাদ আক্রমন করে এবং বাগদাদের লাইব্রেরী ধ্বংস করে। হাজার হাজার মূল্যবান বই পত্র লুটপাট এবং ধ্বংস করে।

ইসলামে জঙ্গিবাদ,মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণ হারাম এবং নিষিদ্ধ।*

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×