somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাইকেল মধুসূদন দত্ত অবিভক্ত বাংলার যশোহর জেলায় কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত সাগরদাঁরি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন- ২৫ জানুয়ারি, ১৮২৪ । মধুসূদনের যখন সাত বছর বয়স, সেই সময় থেকেই তাঁকে কলকাতায় বসবাস করতে হত।বিদ্বান ইমামের কাছে তিনি বাংলা, ফারসী ও আরবি পড়েছেন। সাগরদাঁড়িতেই মধুসূদনের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়।মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা কবিতার প্রথম আধুনিক কবি পুরুষ। মধুসূদন ছিলেন পিতা মাতার বড় সন্তান। পড়াশুনা করেন প্রথমে কলকাতা হিন্দু কলেজে এবং পরে ১৮৪৮ সাল থেকে পিতার অর্থ সাহায্য বন্ধ হলে ১৯৪৮ সালে কবি মাদ্রাজে গমন করেন।, তিনি কোথাও টাকা দিতে হলে তার পকেটে হাত দিতেন এবং যা আসতো যত টাকা সব দিয়ে দিতেন কখনো গুনতেন না। সেই মধুসুদন দত্ত বিলেতে গিয়ে অর্থাভাবে কি কষ্ট করে দিনাতিপাত ই না করেছেন, তার আরো খারাপ অবস্থা হতো যদি না ঈশ্বর চন্দ্র এগিয়ে আসতেন। তবে তার সাথে সক্রেটিস এর মিল আছে, সক্রেটিস মনে করতো সে মরে গেলে অনেক ভালো বন্ধু পাবে, আর তিনি মনে করতেন বিদেশে গেলে তিনি মুল্যায়ন পাবেন।

পাশ্চাত্য জীবনের প্রতি প্রবল আকর্ষণের ফলেই হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। ১৮৪৮ সালে মাদ্রাজ যাত্রা করেন । সেখানকার সাত বছর প্রবাসকালে শিক্ষক, সাংবাদিক ও কবি হিসেবে সামাজিক প্রতিষ্ঠা লাভ করেন । মাদ্রাজ যাবার পরেই তিনি ইংরেজ রমণী রেবেকা ম্যাক্টাভিসকে বিবাহ করেন ।১৮৪৯ সালে রচনা করেন ইংরেজী কাব্য "The Captive Ladie" । মধুসূদন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাই অচিরেই কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি. এল. রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। আশৈশব কবির বিলেত যাওয়ার বাসনা ছিল। ১৮৬২ সালের ৯ই জুন কবি ব্যরিস্টারি পরার জন্য আবার বিলেত পাড়ি দেন। ১৮৬৬ সালে লন্ডনের গ্রেজিন ইউনিভার্সিটি হতে ব্যরিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।তাঁর প্রথম সনেট, "বঙ্গভাষা"। বাংলা সাহিত্যের সেরা সনেটগুলোর একটিও বটে। ১৩/১৪ টি ভাষা তাঁর আয়ত্তে ছিল যার মাঝে ছিল: গ্রীক, ল্যাটিন, ইতালীয়, হিব্রু, ফরাসি, জার্মান ইত্যাদি।

১৮৫৮ সালে রচনা করেন শর্মিষ্ঠা নাটক ।শর্মিষ্ঠার পরে ১৮৬০ সালে মাইকেল রচনা করেন একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ নামে দুটি প্রহসন। ১৮৪৩ সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট মধুসূদন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপর ওই বছরই ১৩ ফেব্রুয়ারি মিশন রো-তে অবস্থিত ওল্ড মিশন চার্চ নামে এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁকে দীক্ষিত করেছিলেন পাদ্রী ডিলট্রি। তিনিই তাঁর "মাইকেল" নামকরণ করেন।১৮৬০ সালেই মধুসূদন রচনা করেন পদ্মাবতী নাটকটি। এটিও পৌরাণিক নাটক। তবে এই নাটকের ভিত্তি পুরোপুরি ভারতীয় পুরাণ নয়। গ্রিক পুরাণের ‘অ্যাপেল অফ ডিসকর্ড’ গল্পটি ভারতীয় পুরাণের মোড়কে পরিবেশন করেছেন মধুসূদন। মধুসুদনের মনে ছিল না কোনো মুসলিম-বিদ্বেষ। তাই তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’র মতো প্রহসন লেখা।

সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।

পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। মধুসূদন রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ যুবতীকে বিবাহ করেন। উভয়ের দাম্পত্যজীবন সাত বছর স্থায়ী হয়েছিল। রেবেকার গর্ভে মধুসূদনের দুই পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম হয়। মাদ্রাজ জীবনের শেষ পর্বে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার অল্পকাল পরে মধুসূদন এমিলিয়া আঁরিয়েতা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ করেন। আঁরিয়েতা মধুসূদনের সারাজীবনের সঙ্গিনী ছিলেন। এদিকে মাইকেল তাঁর এক কপি দ্য ক্যাপটিভ লেডি বন্ধু গৌরদাস বসাককে উপহার পাঠালে, গৌরদাস সেটিকে জে ই ডি বেথুনের কাছে উপহার হিসেবে পাঠান। উক্ত গ্রন্থ পাঠ করে অভিভূত বেথুন মাইকেলকে চিঠি লিখে দেশে ফিরে আসতে এবং বাংলায় কাব্যরচনা করতে পরামর্শ দেন। মাইকেল মধুসুদন দত্ত প্রথম ঘোষণা করেন বাংলা ভাষার বিজয়বাণী। মাইকেল তার অন্যতম চতুষ্পদী কবিতা ‘বঙ্গভাষা’তে বলেছেনঃ ‘হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবিধ রতন;-/ তা সবে, (অবোধ আমি) অবহেলা করি,/ পর-ধন লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ/ পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি’ ।

মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য। কৃষ্ণকুমারী নাটক রচনার পর মাইকেল কাব্যরচনায় পুরোদমে মনোনিবেশ করেন। শেষ জীবনে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে বেঙ্গল থিয়েটারের কর্ণধার শরচ্চন্দ্র ঘোষের অনুরোধে তিনি মায়াকানন নাটকটি রচনায় হাত দেন। নাটকটি তিনি শেষ করতে পারেননি।মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেননি। তাছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগ অধিগ্রহণ করেছে। এখানে তৈরি করা হয়েছে মধুপল্লি। বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে কবির আবক্ষ মূর্তি। বাড়ির উঠোনে জমিদারবাড়ির ঠাকুরঘর। তারপর প্রতিটি ঘরে কবির ব্যবহূত বিভিন্ন আসবাব রয়েছে। কবির বাড়ির পূর্ব ও পশ্চিম পাশ দিয়ে সরু ধারায় বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনেই রয়েছে স্মৃতিময় বাদামগাছ। মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি যেতে হলে প্রথমে যশোরে আসতে হবে, যশোর বাস টার্মিনাল থেকে বাসে কেশবপুর আসতে হবে। ৩২ কিলোমিটার পথের বাসভাড়া ২৫-৩০ টাকা। এরপর কেশবপুর থেকে পশ্চিমে ১২ কিলোমিটার ব্যাটারিচালিত গাড়ি অথবা ভ্যানে যাওয়া য়ায়। ভাড়া ২০ টাকা। সাগরদাঁড়িতে থাকার জন্য পর্যটনের একটি মোটেল আছে। ভাড়া ৩০০ টাকা।

কবি তার জীবনের শেষ দিন গুলো তে এসে জন্মভুমির প্রতি তার ভালবাসার চিহ্ন রেখে গেছেন। তার সমাধিস্থলে নিচের কবিতাটি লিখা রয়েছে:

দাড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে!
তিষ্ঠ ক্ষনকাল!
এসমাধি স্থলে
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে
যেমতি বিরাম)মহীর পদে মহা নিদ্রাবৃত
দত্ত কূলদ্ভব কবি শ্রীমধু সূদন!
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×