মতিঝিলে হেফাজতের অবস্থানকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘাত এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশের ঘোষণার মধ্যেই রাজধানীতে সব ধরনের সভা মিছিল জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে মহানগর পুলিশ।
Published : 06 May 2013, 05:52 AM
পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার বেলা ১১ টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মহানগরীতে এই নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।
মহানগর পুলিশের যুগ্ন কমিশনার মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববারের ঘটনার প্রেক্ষিতে কয়েকটি প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল সভা সমাবেশ ডাকায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।”
রোববারের ঘটনায় হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাধাসহ সব ধরনের ফৌজদারি অপরাধের জন্য মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতকে যারা অর্থ দিয়ে এবং নানাভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জামায়াত শিবির সরাসরি হেফাজতকে সহযোগিতা করেছে- এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।”
মতিঝিলে হেফাজতের অবস্থানকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও ব্যাপক তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে সোমবার ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেয় দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল।
আওয়ামী লীগ জানায়, হেফাজতের তাণ্ডবের প্রতিবাদে বেলা ৩টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তারা সমাবেশ করবে।
আর হেফাজতের পক্ষে অবস্থান প্রকাশকারী বিএনপি বেলা ২টায় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের সময় দেয়।
রোববার গভীর রাতে আইন-শঙ্খলা বাহিনী ১৫ মিনিটের সাঁড়াশি অভিযানে মতিঝিলে অবস্থান নেয়া হেফাজতকর্মীদের উৎখাত করে।
১৩ দফা দাবিতে সকালে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর রোববার দুপুর থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করে হেফাজতকর্মীরা। এরই মধ্যে সমাবেশস্থলের এক বর্গকিলোমিটোরের মধ্যে সিপিবি অফিসে হামলা হয়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ফাটানো হয় হাতবোমা।
এক পর্যায়ে গুলিস্তান থেকে নয়পল্টন ও বিজয়নগর হয়ে কাকরাইল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। দফায় দফায় সংঘর্ষে নিহত হন তিনজন। হেফাজতকর্মীরা রাস্তার দুই পাশে ফুটপাতের বহু দোকান পুড়িয়ে দেয়। এই সহিংসতার পেছনে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাও ছিল বলে পুলিশের দাবি।
সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতকে সন্ধ্যার মধ্যে মতিঝিল ছাড়ার আহ্বান জানানো হলেও অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি। আর তাতে বিএনপি প্রধানের সমর্থনও পায় তারা।
নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও হেফাজতকর্মীদের সমাবেশ ও সংঘর্ষ চলতে থাকায় সারা দেশেই উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে।
এরপর গভীর রাতে মতিঝিলে অভিযান চালিয়ে মতিঝিল থেকে হেফাজতকর্মীদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অভিযানের বিষয়ে র্যাব-১ এর অধিনায়ক কিসমত হায়াৎ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তাদের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে আলোচনা চালিয়ে গেছি।
“তাদের বোঝাতে চেয়েছি, তাদের দাবি মানা হবে, তারা যেন অবস্থান ছেড়ে যায়। কিন্তু তারা সেই আহ্বান উপেক্ষা করায় আমরা অভিযানে বাধ্য হয়েছি।”