somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুয়াকাটা দেখতে গিয়ে ইলিশ মাছ ধরা এবং জীবন্ত ইলিশ দেখা হয়ে গেল!

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গেলাম কুয়াকাটা দেখতে। হয়ে গেলাম জেলে! ধরতে গেলাম ইলিশ। আহ! লোকমুখে কত শুনেছি ইলিশ নাকি সূর্যের আলো দেখার সাথে সাথে মারা যায়। আমরা অবিশ্বাসীর দল; শুধু শোনা কথায় আমাদের মন উঠেনা। বহুদিনের ইচ্ছা জ্যান্ত ইলিশ দেখব। সেই ইচ্ছা এভাবে হঠাৎ পূরণ হয়ে যাবে চিন্তাই করতে পারিনি। এবার কুয়াকাটা ভ্রমণে গিয়ে সেই ইচ্ছা পূরণ হলো।

ভ্রমণের নেশা আজন্ম।তবু সামর্থ্য, সুযোগের অভাবে খুব একটা ঘোরা হয়নি। এবার রমজানে ঈদের আগে পরে মিলিয়ে প্রায় এগার দিন ছুটি পাওয়া গেল। পুরনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হল। ঠিক হল ঈদের আগের ৫দিন কাজে লাগাব। তিন জন তিন জায়গায় থাকি।একসাথে মিলিত হয়ে যাত্রা শুরু করতে গেলে প্রায় দুদিন এর মত নষ্ট হয়। তাই ঠিক করলাম আলাদা আলাদা ভাবে যাব। গিয়ে একসাথে মিলব। আমার যাত্রা শুরু হল ফেনী থেকে। ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৭.৫০ এ মেঘনা এক্সপ্রেসে উঠলাম। গন্তব্য চাঁদপুর। রাত ১২ টায় পৌঁছলাম চাঁদপুর। তার পর বরিশালগামী রকেটে উঠলাম। উফ কী ভয়াভহ। বসা দূরে থাক দাঁড়ানোর কোন জায়গা নেই। জীবনের প্রথম নৌ ভ্রমণ! রাত বাজে একটা। চার ঘন্টা দাঁড়িয়ে ট্রেন ভ্রমণ করে শরীর চাইছে বিশ্রাম! আর এখানে দাঁড়ানোর কোন জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে রেলিংয়ের বাইরে দাড়িঁয়ে শক্ত করে রেলিং ধরে রইলাম। রেলিংয়ের বাইরে ফুট খানেক জায়গা। তারপর কালো নদী। এই ফুট খানেক জায়গাতেই আমি দাঁড়ানো। রেলিং থেকে হাত ফস্কে গেলেই হলো আরকি! দুচোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে। ঘুমের ঘোরে না আবার হাত ফস্কে যায়! বরিশাল পৌঁছতে সকাল ৭.৫০-৮.০০। ৬-৭ ঘন্টা কীভাবে কাটাবো এই ভয়ে আতংকে আমার ভ্রমণের সাধ চিরতরে মিটে গেল। যারা রকেটে বা লঞ্চে ভ্রমণ করেছেন তারা জানেন যাত্রীরা ডেকে চাদর বিছিয়ে শুয়ে বসে আরাম করে যায়। আমাদের রকেটেও যারা আগে আগে উঠেছেন তারা কী সুন্দর চাদর বিছিয়ে শুয়ে বসে ঘুমাতে ঘুমাতে যাচ্ছেন! আর আমি হতভাগা রেলিংয়ের বাইরে একফুট জায়গায় দাঁড়িয়ে আতংকে কাঁপছি। যা হোক দু ঘন্টা কোন মতে পার করলাম। এমন সময় আমার পাশে মেঝেতে যারা বসেছিল তারা একটু নড়ে চড়ে বসায় আধা বর্গফুটের মত জায়গা বেরুল। সুযোগ নষ্ট না করে তৎক্ষনাত বসে গেলাম! ঘুমের ঘোরে কেউ আপত্তি করল না। এবার আমার শরীর ভেতরে; পা দুটো রেলিংয়ের বাইরে । আহ! কী শান্তি! এতক্ষণ যে জার্নি কে মনে হচ্ছিল কখন শেষ হবে! কথন শেষ হবে! এখন মনে হতে লাগল চলুক যতক্ষণ চলতে পারে!

বিপদ!
রকেটের ভিতর এক বর্গ ইঞ্চি জায়গাও কেউ খালি রাখেনি। তাই এমাথা উমাথা যাতায়াত করতে চাইলে রেলিংয়ের বাইরে দিয়ে আমি যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম সেই একফুট জায়গা দিয়ে বিপজ্জনকভাবে যাতায়াত করতে হয়। এই করতে গিয়ে যে কয়েকটি যুবক বারবার আসা যাওয়া করছিল তাদের একজন পানিতে পড়ে গেল।একদম আমার সামনে থেকে। প্রথমে ঘুমের ঘোরে কেউ খেয়াল করেনি। শুধু ঝুপ করে একটা শব্দ হল। তারপর শুরু হল হৈ চৈ! পূর্ণ গতিতে এগিয়ে যাওয়া রকেট থামাতে থামাতে অনেক সময় লেগে গেল। তারপর উল্টো পথে ফিরতে লাগল সার্চ লাইট মারতে মারতে। একসময় পওয়া গেল লোকটাকে। আমার পক্ষে অন্ধকার নদীতে আধঘন্টা সাঁতার কেটে বেঁচে থাকা একেবারেই অসম্ভব হত। লোকটার দক্ষতার প্রশংসা করতেই হয়।
সকাল ৭.৩০ এ বরিশাল পৌঁছলাম। সেখান থেকে বাসে পটুয়াখালী। আমার বন্ধুরা এখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। তাদের সাথে বাসে করে কুয়াকাটা গেলাম।কুয়াকাটায় ঈদের আগে সব হোটেল মোটেল খালি। সরকারি একটা মোটেল আছে খুব সুন্দর। কিন্তু আমাদের সামর্থ্যের বাইরে হওয়ায় জেলা পরিষদ ভিআইপি ডাকবাংলোতে উঠলাম। নামে ভিআইপি হলেও খুবই শস্তা। এটাও সরকারি। তারপর গেলাম বিচে। এখানে অনেক মোটরসাইকেল কুয়াকটায় দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার জন্য ভাড়ায় চলে। একে রমজান তারউপর দুদিন পর ঈদ। পুরো সৈকতে পর্যটক নেই বললেই চলে। সব মটরসাইকেল চালক আমাদের পিছনে ঘুরতে লাগল।বিকেলের জন্য আমরা দুটি মোটর সাইকেল ঠিক করে ফিরে এলাম।

বিকেলে গেলাম পশ্চিম দিকে । এখানে সুন্দরবনের শুরুর অংশ দূর থেকে দেখা যায়। বীচের এদিকেও হালকা বন আছে। বনের অংশে বীচের শেষ মাথায় একটি ঝুপড়ি দোকান আছে। এখানে ইলিশ মাছ, কাঁকড়া পাওয়া যায়। আপনার সামনে কাঁকড়া ভেজে দেবে।

রাতে্ আবার গেলাম বীচে। ২০-২৫ টি নৌকা ছিল বালুর উপর। রাত ১১ টার মত বাজে। একটা নৌকার উপর বসে আছি। তারপর দেখি জেলেরা এসে একটা একটা করে নৌকা চালু করে সাগরে যা্চ্ছে। জিজ্ঞাসা করে জানলাম সাগরে জাল পাতা আছে। সেখানে যাচ্ছে ইলিশ ধরা পড়েছে কি না দেখতে।দিনে দুবার যায় একবার রাতে এই সময়। আরেকবার দিনে ১২টার দিকে। শুনেই তো মন চঞ্চল হয়ে উঠল। আমাদের নেবেন সাথে?জেলেরা বলল আমরা চাইলে দিনের বেলায় নিতে পারে।

আর কি চাই! পরদিন ১২ টার আগেই মাথায় গামছা বেঁধে আমরা তিনজন হাজির হলাম। নৌকার নিচে চাকা লাগিয়ে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হয় পানি পর্যন্ত। যখন যাচ্ছি তখন ভাটা। সমুদ্র অনেকটা দূরে। তারপর খোলা নৌকায় ঘন্টা খানেকের যাত্রা। যে পর্যন্ত গেলাম সেখান থেকে তীর সরু রেখার মত দেখাচ্ছিল।মোট ২৫টা জাল পাতা ছিল। সবগুলো একটা একটা করে টেনে দেখা হল। ইলিশ পাওয়া গেল মোটে ৬টা। তার মধ্যে চারটা মৃত। দুটা জীবন্ত! জাল থেকে ছাড়িয়ে নৌকায় নামানোর পর দুই বার মাত্র ঝাকি দিল। তারপর শেষ। তাহলে কথা সত্য । ইলিশ মাছ সূর্যের আলো দেখার সাথে সাথে মারা যায়। আমাদের জীবন্ত ইলিশ দেখার সাধ পূর্ণ হলো!


তবে ইলিশ ধরা অত্যন্ত কষ্টকর মনে হলো। এবং কম মাছ ধরা পড়লে খরচেও পোষায় না! যাতায়াতে শুধু জ্বালানীই লাগে ৫ লিটার। মানুষ তিনজন ।নৌকা, জাল। মাছ ধরা পড়ল মোটে ৬টা।আর কী রোদ! উফ শরীরের চামড়া স্পষ্টত দুই রংয়ের হয়ে গেল। যেটুকুতে কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল সেটুকু এক রং। বাকী অংশ আরেক রং!আমরা জেলেদের ৩০০ টাকা দিলাম।এবং সেই সাথে আমাদের সাথে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে চলে এলাম। এর পর আরও একরাত একদিন কুয়াকাটায় থেকে সবগুলো দর্শনীয় স্থান দেখে ঢাকায় ফিরে এলাম।একদিন পরেই ঈদ। এবার বাড়ি না গেলেই নয়!

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৩
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×