somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে উপদল ও দাওয়াতও তাবলিগ, এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত প্রসঙ্গ

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাসূল স. বলেছিলেন, কেয়ামত তথা মহাপ্রলয়ের আগেই এই উম্মত ৭৩ ভাগে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে শুধু একটি হবে নাজাতপ্রাপ্ত। এই হাদিসটি একটি ভবিষ্যৎবাণী এবং প্রিয়নবীর মু’জেযাও বটে। কিন্ত উম্মতের জন্য বড়ই দুঃখজনক এবং নির্মম বাস্তব।
কিন্ত এই মাধ্যমে সুযোগ সন্ধানী, বা অতিউৎসাহী ধরণের মানুষেরা লোকমনে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকেন। যেকোন নতুন মাধ্যম দেখলেই নতুন ফেরকা বা ‘ইসলামে আরেকটি দলের উদ্ভব হয়েছে’ বলে বলে মূলত তারা ইসলামের মান ক্ষুণ্ন করার দুঃখজনক চেষ্টাই করে যান। আমরা বলবো না তারা এমন কাজ ইচ্ছা করেই করেন, বরং আমাদের অজ্ঞতাই এক্ষেত্রে মহাভূমিকা পালন করে।
মূলত ইসলামে ফেরকার অর্থ কী এবং কখন একটি জামাত বা দলকে ফেরকা বলা যায় এ সম্পর্কে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জানাশুনা নেই বললেই হয়। তাই এখানে প্রথমেই আমরা উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ আলেম মাওলানা মনযুর নো’মানী রহ. এর একটি অতিপ্রাসঙ্গিক আলোচনা তুলে ধরছি। “কোন সম্প্রদায় কখনো এ ঘোষণা দিয়ে সৃষ্টি হয় না যে, সে একটা সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে উঠেছে। বরং তার নিজস্ব ধর্মীয় চিন্তাধারা, মতামত ও দাবীসমূহই তাকে উপদল বা সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে তোলে। আপনি যখন একথা বলবেন যে, পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও খাঁটি সত্য কেবল আপনার কাছেই রয়েছে এবং আপনিই তার দাওয়াত নিয়ে খাড়া হয়েছেন, আপনি ছাড়া অন্যন্য মুসলমান, ওলামায়ে কেরাম ও মাশায়েখে এ’জামের নিকট যে দ্বীন আছে, তা-ও আংশিক অথবা বাতিল মিশ্রিত এবং আপনার দাওয়াত গ্রহণ করা তাঁদের জন্য আবশ্যক, যদি গ্রহণ না করে তাহলে তাদের ‘পজিশন’ ও মর্যাদা তাই হবে যা ইহুদী জাতির ছিল, তখন আপনিই তো আপনার এবং অন্যান্য মুসলমান জাতির মধ্যে পার্থক্য ও ভেদ রেখা টেনে দিচ্ছেন এবং এভাবেই আপনা-আপনিই একটা স্বতন্ত্র সম্প্রদায়ের জন্ম হয়ে যায়। যদিও বা আপনি হাজারো বার ঘোষণা করেন না কেন, ‘আমরা কোন সম্প্রদায় নই এবং আমরা সম্প্রদায় সৃষ্টির বিরোধী’।”
এর আলোকেই আমরা বুঝতে পারি কারা ফেরকা, এবং কারা ফেরকা নয় বরং অধুনা মাধ্যম মাত্র।
এবার আসুন তাবলিগী দাওয়াত সম্পর্কে। বাস্তব কথা হলো আমি এবং অন্য কেউও এখন পর্যন্ত কারো মুখে শুনিনি যে, দাওয়াত ও তাবলিগের ব্যক্তিবর্গ কখনো দাবি করেছেন, তাদের এই দাওয়াতই একমাত্র খাঁটি। বাকিরা ভুল বা আংশিক সত্যের মাঝে আছে। এবং তারা উম্মতের মাঝে তাওয়াতুর বা ধারাবাহিকভাবে হাজার বছর ধরে চলে আসা সকল বিষয়েই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’কে অনুসারণ করেন।
সুতরাং দাওয়াত ও তাবলিগকে ভিন্ন ফেরকা বা ভ্রান্ত মতবাদ মনে করার আসলে কোন অবকাশই নেই। যদিও এই ভুল এখন অনেক কমে এসেছে, তবু যারা করে থাকেন তাদের প্রতি নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করার আহ্বান রইলো।
প্রসঙ্গতই বলতে হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত কারা। সুন্নাত তো হলো প্রিয়নবী স. এর ত্বরীকা বা পথ ও পন্থা। আর সাহাবাগণই হলেন জামা’আত। প্রতি যুগেই তাদের সঠিক অনুসারী বাস্তব ছিলো। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এইযুগে যারা সু্ন্নাত এবং সাহাবা জামা’আতের অনুসরণ-অনুকরণ করবে আসলে তারাই প্রকৃত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত।
মনে রাখবেন, মধ্যবর্তী এই সুদীর্ঘ চৌদ্দশ বছরে বিগত হওয়া সত্যপন্থী ওলামাদের কারো, বা কোন বিরাট সংখ্যকের সাথে যদি, আপনার ধর্মীয় চিন্তাধারা, মতামত ও দাবিগুলো সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি সৎ পথের দিশা হারিয়ে ফেলছেন এবং নিজের অজান্তেই আরেকটি নতুন চিন্তাধারা জন্ম দিচ্ছেন।
কারণ, সাড়ে চৌদ্দশ বছর পর আপনার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক খাটিয়ে আপনি যা বুঝেছেন তা প্রকৃত দ্বীন না, বরং প্রকৃত ও সত্য তো সেটা যা, নবিজী স. আমাদের শিখিয়ে গেছেন, এবং উম্মতের বিশ্বস্ত ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণের মাধ্যমে তাওয়াতুর বা ধারাবাহিকভাবে আল্লাহ তাআলা নিজের দ্বীনকে পূর্ণ সংরক্ষণ করেছেন এবং আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন।
কিন্ত অনেক জ্ঞানী মানুষ আছেন যারা, পূর্বসূরী সত্যপন্থী ওলামাগণের এই অনুগ্রহ(বাস্তবে তা আল্লাহরই অনুগ্রহ) অস্বিকার করেন। এবং অনাকাঙ্খিতভাবে দাবি করে বসেন যে, ‘তাঁরা কুরআন-হাদিস বুঝেননি, বুঝেছি আমরা। তারা ছিলেন ভুল বা আংশিক দ্বীনদার। আজ এত বছর পর আমরা ঐ সকল বিষয় বুঝে ফেলেছি, তারা যা নবিজীর নিকটবর্তী যুগের হয়েও বুঝতে পারেন নি’ ।
আশ্চর্য ! সত্যিই আশ্চর্য না হয়ে যাবো কোথায় ? নবিজী স. বলেছিলেন, আমার এই যুগ সর্বোত্তম, তারপর পরবর্তী যুগ, তারপর পরবর্তী যুগ……….। এই জ্ঞানী মানুষদের জ্ঞানের স্পর্ধা দেখে বড়ই আশ্চর্য হতে হয় !
১৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×