somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ইনোসেন্স অব মুসলিমস" ও মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মাথায় ঢুকে না হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে ব্যাঙ্গ করার হীন চেষ্টায় নির্মিত ছবিটি নিয়ে এত লাফা-লাফির কি আছে! বিটিভিতে একসময় আলিফ লায়লার সিরিয়াল প্রচার করা হতো। তাতে কখনও দেখা যেত, পটভূমিতে উত্তাল সমুদ্র আর তার উপর দোদুল্যমান নৌকা। নৌকায় এক বিপদগ্রস্ত নাবিক। দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায় পেছনের সমুদ্র, নাবিক আর নৌকার চিত্রায়িত দৃশ্য এক সময়ের না। সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে নৌকার দুলুনি মেলে না! নৌকার দুলুনির সাথে নাবিকের দুলুনি মেলে না। নৌকা নড়ে বামে, নাবিক অতি অভিনয় করে লাফায় ডানে। নাবিকের অভিব্যক্তি একরকম, তার কণ্ঠস্বরে প্রতিক্রিয়া আরেক রকম। স্পষ্ট বোঝা যেত ঐ নৌকা আর তাতে চড়ে থাকা নাবিকটারে অন্য কোন খান থেকে কেটে এনে সমুদ্রের ভিডিওটাতে বসিয়েছে। অতি নিম্নমানের এডিটিং।
সেই আলিফ লায়লার সস্তা সেট’গুলোর, নিম্নমানের এডিটিঙের কথা মনে করিয়ে দেয় হজরত মুহাম্মদ (সঃ) কে ব্যাঙ্গ করে (করার চেষ্টায়) তৈরি করা ছবি "ইনোসেন্স অব মুসলিমস"।

পটভূমিতে মরুভূমির ওয়াল পেপার টাঙ্গিয়ে, আনাড়ি অভিনেতাদের দিয়ে, তাদের রীতিমত প্রতারিত করে এই ছবি তৈরি করেছে ছদ্ম নামের এক আউল ফাউল পরিচালক। ছবি দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায় অভিনেতা অভিনেত্রীরা জানে না তারা কি নিয়ে ছবিটা করছে। কারণ যখনই কোন চরিত্র রসুল মুহাম্মদ (সঃ)'এর বা আয়েশা (রা:)'এর নাম বলে তখন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উচ্চারণ ভঙ্গির, তাদের ঠোঁটের নড়াচড়ার সাথে সংলাপ মেলে না। অভিনেতা অভিনেত্রীরাও দাবি করেছে যে পরিচালক তাদের বলেছিল যে মরুভূমির এক অভিযান নিয়ে হচ্ছে ছবিটি।

এরকম একটা হীন উদ্দেশ্যে নির্মিত সস্তা মানের ছবি দিয়ে এত সহজে পুরো পৃথিবীকে এইরকম আলোড়িত করা যায়! অদ্ভুত, অবিশ্বাস্য। আমিতো বলব যৎসামান্য অর্থ ও অকিঞ্চিৎকর মেধার বিনিয়োগে দারুণভাবে সফল হয়েছে নির্মাণকারী ও অর্জিত হয়েছে ছবির একমাত্র উদ্দেশ্য। মুসলমানদের এত সহজে ক্ষুদ্ধ-বিক্ষুব্ধ করা যায়, এত সহজে তাঁদের বিশ্বাসে আঘাত করা যায়! আর তা করতে পারে যে কেউ? যে কোনভাবে! একটা ফালতু লোক যা ইচ্ছা গালগালি, কদর্যতায় ভরে দিয়ে কিছু একটা তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করে দিলেই হয়ে গেল ইসলামের অপমান! এই পরিচালক’কে চরম ভাবে সফল করছে স্বয়ং মুসলমানরাই। ছদ্মবেশের অন্তরালে বিজাতীয় এক তৃপ্তির হাসি হাসছে সে এখন। সে কি এই’ই চায়নি?

বিশ্বাস খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর ভক্তি, শ্রদ্ধা, অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস, শ্রদ্ধা থাকবে হৃদয়ে অতি উচ্চ অবস্থানে গভীরভাবে প্রথিত। সামান্য বেলচা, দুই ইঞ্চির হাতুড়ী নিয়ে এর ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে যদি কেউ নামে, হাসির দমকেই তার উড়ে যাওয়া উচিৎ। অথবা উপেক্ষা হতে পারে এইরকম প্রচেষ্টার বিপরীতে আত্মবিশ্বাসী আক্রান্তের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রতিক্রিয়া। আমার আত্মাভিমানকে আঘাত করার যোগ্যতা অর্জন এত সহজ হওয়া উচিৎ নয়।

ছোটকালের একটা সময়ের কথা মনে পরে। আমি যে এলাকায় বাস করতাম তার সীমানা ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল একটা বিশাল বস্তি। নাম ছিল বাস্তুহারা বস্তি; সবাই মুখে বলত “বাস্তয়ারা”।
তো আমাদের কলোনির খেলার মাঠে প্রায়ই ঐ বস্তির ভাগ্যহত, দৃশ্যত নোংরা ছেলে-পেলেগুলো আসত। ভদ্রলোকের ছেলেপেলের সচ্ছল জীবন, পোশাকআশাক আর এই দিকে নিজেদের করুন, কষ্টের জীবনের ভয়াবহতার মাঝের চরম অসমতা দেখে তাঁদের মধ্যে আমাদের নিয়ে এক অদ্ভুত উপহাসের জন্ম নিত বোধ করি। তাই এরা প্রায়শই আমাদের দেখলেই অকারণেই গালাগালি করত। এই গালি কি সেই গালি? জঘন্য, অকথ্য! মান বাঁচাতে তাদের ধরে ঠেঙাতে গেলে যেত পালিয়ে। পুনরায় ধীরে ধীরে ফিরে এসে দূর থেকে গালাগালি অব্যাহত রাখত। ধরতেও পারতাম না, সহ্যও করতে পারতাম না। এই দেখে দারুণ মজা লুটত ছেলেগুলি। পরে আমরা যা করতাম তা হল উপেক্ষা। এইভাবে একদিন তারা উৎসাহ হারাল। এই ভাগ্যহত বস্তির ছেলেগুলোর সাথে ঐ পরিচালকের তুলনা দিয়ে তাঁদের ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়। এই উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চাইলাম যে উপেক্ষার চেয়ে ভাল অস্ত্র আর কিছুই হতে পারে না। যখন কেউ অকারণে অপমান করার হীন চেষ্টা করে, তবে তা যেন ব্যর্থ চেষ্টা হয়। ঐ পরিচালকও পালিয়ে আছে এখন। বাজি ধরে বলতে পারি এই ছবি’ই তার শেষ ছবি নয়। এই সফলতা তাকে আরও গালাগালি করার অভিসন্ধি করতে উৎসাহিত করল। বরং আরও অনেক’কেই। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় যৌক্তিক, সুস্থ, ও উন্নাসিক উপেক্ষার প্রতিরক্ষাই দুর্ভেদ্য।
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×