!!!!!!!!! অনন্তের একটা সাক্ষাৎকার দেখলাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে। এর
আগে আরেকটা ঈদের অনুষ্ঠানে হাস্যকর উচ্চারনে ইংরেজী বলে আমাদের মন
কাড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। তাকে নিয়ে ব্যাক্তিগতভাবে আমিও বেশ হাসি ঠাট্টা করেছি।
তার কথা বলা, উচ্চারণ, আর ইউ পোম গানা, ইউ ইট বাংলাদেশী ফুড, এই জাতীয় কথা হাজার
ঝামেলার মধ্যে বেশ আনন্দ দিয়েছে বলা বাহুল্য। গত দুইদিন ধরে অনন্ত সাহেবের
দুইটা সিনেমা দেখলাম।
একটি হচ্ছে খোঁজ-দা
সার্চ এবং অন্যটি হচ্ছে দা স্পীড। সিনেমা দেখেছি, গভীর রাতেপ্রাণ খুলে হেসেছি, এই
লোকটার পিন্ডি চটকে খানিকটা স্বর্গসুখ লাভ করেছি। কিন্তু ঘটনা ঘটলো গত শনিবার।
ব্যাপারটা চোখ খুলে দেবার মত, এবং পুরো ঘটনাটি আমাকে আসলে লজ্জাই দিয়েছে।
গত শনিবারে হার্ডফোর্ডশায়া রে গিয়েছিলাম আমার এক ভাতিজার বিয়ে খেতে।
ভাতিজা ব্রিটিশ বাঙালী, শিক্ষিত এক যুবক। তার বিয়ে হচ্ছে এক ইংলিশ মেয়ের সাথে।
স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রহ ছিলো দেখবার যে বাংলাদেশী ছেলে এবং ইংলিশ মেয়ের বিয়ের
অনুষ্ঠানটা কেমন হয়। যাকে বলে বিরাট আয়োজন। ফাইভ স্টার হোটেলে এ এক ভয়াবহ অর্থ
ব্যায়ের অনুষ্ঠান।
আমন্ত্রিতদের দুই অংশে ভাগ করে ফেলা যায়। এক অংশ ইংলিশ আরেক
অংশ বাংলাদেশী। এই বাংলাদেশী অংশে আবার রয়েছে ব্রিটিশ
বাংলাদেশী যারা জন্মের অনেক পরে এখানে এসে সিটিজেন হয়েছেন, এখানে জন্ম
নেয়া ব্রিটিশ বাংলাদেশী। আর ৪ থেকে ৫ জন ছিলেনপাকিস্তানী, আফ্রিকান
এবং ভারতীয়।
ডিনার পর্ব শুরু হোলো বিরাট হলঘরে।
হলঘরের এক পাশে ৫ জন মেয়ে বিরাট বিরাট
ভায়োলিন আর সামনে নোট নিয়ে বিভিন্ন সুর বাজিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে মন দিয়ে শুনিনি।
একটু ভালো করে শুনে প্রথম গানটার সুর ধরে ফেললাম। কাল হোনা হো সিনেমাটির
মিউজিক। এরপর যত শুনি তত বেশী চমকে যাই।
একে একে বেজে উঠলো হিন্দি সিনেমার
সব পরিচিত গান গুলো। এদেশের মেয়েদের হাত ধরে ধরে বেজে উঠলো হিন্দি ছায়াছবির
সুর ঝংকার। মনটা এত খারাপ হলো, বলার মত না। মনে হচ্ছিলো, একটা বাংলা গানের সুরও
কি হতে পারতোনাএই বিয়েতে? আসলে বাংলা গানের চেয়েও এই
ছেলে মেয়েরা বেড়ে উঠেছে হিন্দি গানের প্রভাবে, সারাটি জীবন ইংল্যান্ডে থেকেও।
ঠিক তখনই আমার মনে পড়লো নায়ক অনন্তের কথা।
এই ভঙ্গুর ও সম্পূর্নভাবে ঝুঁকিপূর্ণ
একটা ইন্ড্রাস্ট্রিতে এই ছেলেটি কোটিকোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। খরচ সাশ্রয়
করেছে নিজে ও স্ত্রীকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে, অপরিচিত ছেলে মেয়েদের কাস্ট করে। মন
দিয়েছে ভালো প্রিন্ট, ভালো একশনতৈরীর দিকে। নিজের প্রতিই এক ধরনের খারাপ
লাগা শুরু হয়ে গেলো। কত মক করেছি অনন্তকে নিয়ে।
আর "ইউ পোম গানা, ইউ ইত
বাংলাদেশী ফুড" বলে ফেসবুকে কত ইয়ার্কি করেছি। অথচ একবারও ভাবিনি যে, এই
ছেলেটি বাংলাদেশি সিনেমাকে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়েদেবার জন্য এই রাস্তায় নেমেছে।
অথচ আমরাই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে রক্তাক্ত করেছি। সে নিজেই স্বীকার করেছে তার
উচ্চারণ, অভিনয় খারাপ, এই দিকে তাকে ভালো করতে হবে। তারপরেও
আমরা আসলে তাকে ছাড় দেই নি।
আমরা চাই এখন, এই মুহুর্তেই। আমরা কি এই
ছেলেটিকে উৎসাহ দিয়ে পারিনা তার থেকে ভালো কাজটি, তার সর্বশ্রেষ্ঠ
পারফরমেন্সটি বের করে আনতে? হিন্দী ছবি আজকের এই অবস্থানে কি একদিনে এসেছে?
আমরা আসলে এমনটাই করি সব সময়। নিজেদেরকেই নিজেরা মারি, নিজেদেরকেই
নিজেরা খোঁচাই, হত্যা করি। একজন ভারতীয়কেও আমি দেখিনি যে তারা তাদের হাস্যকর
অভিনেতা (যেমন গোবিন্দ), অভিনেত্রীদের নিয়ে এইভাবে সারাদিন
ফেসবুকে লেগে থাকে? এমনকি বুয়েটের আন্দোলনের মত এত জরুরী একটি বিষয়েও
আমরা অনন্তকে মক করতে ছাড়িনি, বুলি (bully) করতে ছাড়িনি। আমরা এতই মারাত্নক এক
জাতি।
আমাদের আর কোনো শত্রুর দরকার নেই। নিজেরাই আমরা নিজেদের
পিন্ডি চটকাবার জন্য যথেষ্ঠ।
আর এই সুযোগেই আমাদের বাচ্চাদের মনে ঢুকেছে "ডোরেমন, ছাম্মাক ছাল্লো, মাই নেম
ইজ শীলা" আর যতসবগারবেজ। কে জানে একদিন আমাদের মৃত দেহ সৎকারের সময়
বেজে উঠবে করুন কোনো হিন্দি ছবির গান। সেদিন আর খুব বেশী দূরে নয়।
কৃতজ্ঞতাঃ- নিঝুম মজুমদার
[আমার বউ E বিশ্বসুন্দরী পেজ থেকে সংগৃহীত ] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।