মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ক দিয়েই মানুষ বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পারে। দ্রুত নিতে পারে কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত। গবেষকরা জানিয়েছেন, একটি পরিণত মানব মস্তিষ্কে প্রায় ১০ হাজার কোটি নিউরোন থাকে। এরা একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত।
প্রতিটি নিউরোন প্রতি সেকেন্ডে কয়েকশ' কোটি ধরনের হিসাব করে থাকে। তবে প্রতি মুহূর্তে মস্তিষ্কের সব ক'টি নিউরোনের সম্মিলিত কর্মকাণ্ড এখনও রহস্যে ঘেরা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মানুষের মস্তিষ্কের শক্তিকে কোনো একটি যন্ত্রের মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। আর এ জন্য তারা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এক কম্পিউটার তৈরির চেষ্টা করছেন। মানব মস্তিষ্কের রোগ নিরাময় করবে 'সুপার কম্পিউটার'।
মস্তিষ্কের রহস্যময় কাজ, এর আলাদা কোষ ও অণুস্তর এবং মস্তিষ্কের বিকল্প বা প্রতিরূপ তৈরির জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছেন। তারা মনে করছেন, এটা সম্ভব হলে মানুষের বিভিন্ন স্নায়ুবিক রোগ যেমন আলঝেইমার্স, পার্কিনসন্স, এমনকি চিন্তাশক্তির অবক্ষয় ইত্যাদি নিরাময়ে বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী অধ্যাপক হেনরি মার্করাম এ কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরির ব্যাপারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ক্যামব্রিজের ওয়েলকাম ট্রাস্ট স্যাঞ্জার ইনস্টিটিউটসহ সারা ইউরোপের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে তিনি কাজ করে চলেছেন। তারা এমআরআইয়ের মাধ্যমে প্রথমে মানব মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের ত্রিমাত্রিক ছবি তুলেছেন তিনি।
তারপর বিভিন্ন উদ্দীপনায় প্রতিটি নিউরোন ঠিক কিভাবে সাড়া দেয়, সেই তথ্য জোগাড় করে একটি সুপার কম্পিউটারে তুলে রাখার চেষ্টা করেছেন। আর এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ নিজেদের মধ্যে কীভাবে সংযোগ রক্ষা করে তা পরীক্ষা করে দেখছেন। অধ্যাপক হেনরি বলেন, 'এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের জটিলতাসহ আভ্যন্তরীণ নিউরোনের বিভিন্ন চিকিৎসা সহজেই করা যাবে। অনেক সহজ এবং নিখুঁতভাবে মস্তিষ্কের কাজ বোঝা সম্ভব হবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১২ বছরের মধ্যেই এ ধরনের কম্পিউটার তৈরি করা যাবে।
'
বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা সফল হলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা অনেক সহজ হয়ে যাবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিউরোনের বিভিন্ন ওষুধ মানব দেহের ওপর পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে যেসব বিধিনিষেধ আছে তা-ও থাকবে না। কারণ, এই গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি করা যাবে রোবট। আর এর আচার-আচরণ হবে একেবারে মানুষের মতো। ফলে এর ওপরেই বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব পরীক্ষা করা যাবে।
মস্তিষ্ক তার চারপাশে হাজারো বৈশিষ্ট্যসহ একটি ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করে। এটি দেখতে অর্ধবৃত্তাকার একটি 'ককপিট'-এর মতো। বিজ্ঞানীরা দেখবেন কিভাবে একটি ককপিট বিভিন্ন জায়গায় উড়ে যায় এবং কীভাবে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। এই গবেষণার ফলে প্রতি বছর একটি পল্গাটফর্মের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার বৈজ্ঞানিক কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ করা যাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ কাজের জন্য প্রকল্পটিকে এক বিলিয়ন ইউরো (৮২৫ মিলিয়ন পাউন্ড) অনুদানের ঘোষণাও দিয়েছে।
প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় দুশ' কোটি মানুষ মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু বেশিরভাগ রোগই সময়মতো চিহ্নিত হয় না। ফলে মস্তিষ্কের রোগের বিষয়টি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। আর তাই এই গবেষণার সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে কোটি কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ।
সূত্রঃ ডেইলি মেইল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।