এই তুই এরকম সারাদিন মোবাইল টিপিস কেন?
মোবাইল থেকে মাথা তুলে তাকায় আদনান। দিহার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসি দিয়ে আবার মোবাইল টেপাটিপিতে ধ্যানমগ্ন হয়। দিহা অবাক হয়। যখন থেকে দেখছে ছেলেটা ছেলেটা শুধু মোবাইল টেপাটিপিতেই ব্যাস্ত। ছেলেটাকে মোটামুটি চিনে ও।
রাজুদের ফ্রেন্ড। রাজু দিহার ক্লাসমেট। অন্য ডিপার্টমেন্ট এ পড়ে। কিন্তু থাকে সবসময় রাজুদের সাথেই। শাটল ট্রেনের পিছনে চিল্লাফাল্লা করা আর ঝুপরিতে বসে দিন কাটিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন কাজ নাই ছেলেগুলার।
তবে আদনান ছেলেটা একটু আলাদা। সবার মতো এরকম আড্ডাবাজিতে নাই। আড্ডায় থাকে ঠিকই কিন্তু চুপচাপ থাকে। বগীর পেছনে চিল্লাফাল্লা ( ওদের ভাষায় গান) করে ঠিকই কিন্তু বাকি সময়টা ব্যাস্ত ঐ মোবাইল টেপাটিপিতেই। শুয়ে, বসে, ট্রেনে দাড়িয়ে, হাঁটতে হাঁটতে, একটু পরপরই ওই মোবাইল এর দিকে তাকানো।
একসাথে আসে, একসাথে যায়, দিহা ভাবে কখনও তো তার সাথে একটা কথাও বলল না। ওই মোবাইলই তার সব। আজকে যাও একটু জিজ্ঞেস করলাম কি করে মোবাইল এ, কিছু না বলে খালি একটু মুচকি হাসে। ভাব তো কম না ছেলেটার।
-কি করস মোবাইল এ এতো?
-এইতো মিগ, ফেসবুক গুতাই।
(মাথা তুলে তাকাল আদনান)
একটু ভাবে দিহা। মিগ জিনিশটা আবার কি? ফেসবুক কি সেটা জানে। কিন্তু মিগ এর বেপারে একেবারে আনকোরা সে। তাই আর ঘাটায় না আদনানকে। রাজুর প্রায় সব স্ট্যাটাসেই কমেন্ট করে ছেলেটা।
দিহাও করে কমেন্ট, কিন্তু ফেসবুক এ সরাসরি আদনানের সাথে কোন কথা হয় নাই দিহার।
ছেলেটার এই মোবাইল টেপাটিপিতে কিছুটা বিরক্ত দিহা। ফ্রেন্ডদের সাথে আছে কথায় একটু কথাবার্তা বলবে তা না সারাক্ষণ আছে ওই মোবাইল নিয়ে। কিন্তু আবার একটু আগ্রহ ও জমে দিহার। কি আছে ওই মোবাইল এ?
কিছুদিন পরই একটা ফ্রেন্ড request ।
আদনান না ছেলেটা? আদনানই তো। accept করে দিহা। এরপর এ প্রায় দিহার সব স্ট্যাটাস এ আদনানের লাইক, কমেন্ট থাকতোই। chatting ও চলতে লাগলো সমান তালে। সব এ ঠিক আছে কিন্তু দিহা তাল মেলাতে পারে না যে ফেসবুক এ এতো ছটফটে ছেলেটা, এতো এতো কথা বলে কিন্তু সামনে কোন কথাই বলে না।
চোখের দিকে পর্যন্ত তাকায় না। এতই লাজুক ছেলেটা। চোখের দিকে তাকাবার টাইমই বা কই? সারাক্ষণ তো আছে ওই মিগ নিয়েই। এক ফ্রেন্ডকে বলে মিগ আইডি খুলে দিহা। খুলেই রিকুয়েস্ট পাঠায় আদনানকে।
এবার তো আরও বাঁদরামি শুরু হল ছেলেটার। মিগ এ পুরাই ভিন্ন এক মানুষ সে। বিশ্বাস হয় না দিহার। মনে হয় এই আদনান আর বাস্তবের আদনান এক না, দুইজন দুই ব্যাক্তি। কিন্তু অবিশ্বাসই বা করবে কিভাবে? সামনাসামনিই তো চ্যাট করছে ছেলেটা।
মুখে কথা বলতে না পারলে কি হবে? চ্যাট এ কথার তুবড়ি ছুটে আদনানের।
-এই তুই কি প্রেম করিস?
-হা করি তো।
- কার সাথে? ;-)
-তোর সাথে :p
-কেন করিস?
-কারন... I love you :-*
কেমন জানি অদ্ভুত লাগে দিহার। কথায় কথায় এরকম ছেলেটা I love you বলে কেন? অন্য কেউ বললে তো দিহার ভালো লাগে না, কিন্তু এই ছেলেটাকে কিছুই বলে না। তার ভালই লাগে শুনতে।
আর সবচেয়ে বেশি অবাক হয় এই ভেবে যেই ছেলে আজ এতদিন পরেও চোখের দিকে তাকিয়ে সামনাসামনি কথা পর্যন্ত বলতে পারে না সেই ছেলে বলে I love u. তবে কি ছেলেটা আমকে সত্যিই ভালবাসে?
একদিন দিহার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে আদনানকে ফোন করে রাজু। দিহা নাম্বার সেভ করে রাখে। এরপর মাঝে মাঝেই ফোন দিত দিহা। ছেলেটা কথা বলবে কি লজ্জাই তো কাটে না ওর। তবে দিহা বুঝতে পারে আদনানের প্রতি একটু একটু দুর্বল হয়ে পরছে ও।
রাতের বেলা ফোন দিয়ে অবশেষে একদিন বলেই ফেলল দিহা
- I think that I am fall in love with you…
এই বলেই ফোন কেটে দিলো সে। সাথে সাথেই একটা reply sms আসলো।
- I also think that I am fall in love with you…
দিহা আসলেই অবাক হয়... ছেলেটা কি ফাজলামি করতেছে? সে কি বুঝতে পারে নাই যে দিহা সিরিয়াস??? এরকম হাজারটা প্রশ্ন নিয়েই ঘুমাতে গেল দিহা।
পরবর্তী দুই বছরঃ
- গাছে গাছে পাখি গান গাইল...
- ফুলে ফুলে ভ্রমর বসলো...
- প্রজাপতিরা ডানা মেলল...
- ময়ূর পেখম মেলল...
- কোকিল কুহু কুহু করল...
- শরতের মেঘ আকাশে ভেসে বেড়াল...
- কাশফুল বাতাসে দোল খেল...
- কবুতর বাকবাকুম করল...
- সাদাকালো সপ্ন রঙিন হল...
দুই বছর পরঃ
দিহা বান্ধবীদের নিয়ে ক্যান্টিনে বসে আছে। ওইতো আদনান ঢুকছে ক্যান্টিনে।
পাশ দিয়ে চলে গেল, তাকালো পর্যন্ত না। প্রায়ই দূর থেকে দেখে আদনানকে দিহা। ছেলেটা এখন আর ঝুপড়ীতে বসে না। ট্রেনে এখনও কিছু ছেলেপেলে চিল্লাফাল্লা করে, কিন্তু সেটাকে এখন আর গান মনে হয় না। ক্লাশ শেষে আর দৌড়ে নিচে নামে না দিহা কারন এখন তো আর কেউ তার জন্য অপেক্ষা করে না।
ফেসবুকে এখনও অনেক অনেক কমেন্ট আসে, কিন্তু আদনানের কমেন্ট আসে না, ওর প্রোফাইলটা পর্যন্ত দেখতে পায় না দিহা। দেখবে কিভাবে? আদনান তো দিহাকে ব্লক করে রেখেছে। মিগ এ এখনও আদনানকে অনলাইন দেখা যায়... সবুজ বাতিটা জ্বলে, কিন্তু নক দিলে রিপ্লাই পাওয়া যায় না। অনেক সুখে আছে এখন আদনান। আদনানের সুখে দিহাও সুখী... হাসিমুখেই রাতে ঘুমাতে যায় দিহা...
“সত্যি ঘটনা দিয়ে লিখা কিন্তু ভিন্ন চোখ দিয়ে।
মাঝের climax টুকু বাদ দিলাম... সেটা নিয়ে লিখলে আরেকটি গল্প হবে...অন্য কোনদিন লিখবো”
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক- ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।